Wednesday, October 22, 2025

বঙ্গবন্ধুর খুনি মোসলেহ উদ্দিনের সন্তানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইসিকে সরকারের চিঠি


জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনির নাম পাল্টে তার সন্তানরা নিজেদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিয়েছেন। পলাতক খুনি রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেহ উদ্দিনের ছয় সন্তান তাদের বাবার নাম মো. রফিকুল ইসলাম খান হিসেবে উল্লেখ করে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিয়েছে। অবশ্য তারা জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করে পিতার নাম পাল্টে ফেলেছে, নাকি ভোটার হওয়ার সময়ই মিথ্যা তথ্য দিয়ে পিতার ভিন্ন নাম দিয়েছে তা স্পষ্ট নয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের সন্তানদের পিতার নাম পরিবর্তনের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি সংস্থার নজরে আসে। তারা বিষয়টি অনুসন্ধান ও তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে নিশ্চিত হয়েছে যে বঙ্গবন্ধুর ওই খুনির ছয় ছেলেমেয়ে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রে পিতার নাম মোসলেম উদ্দিনের স্থলে রফিকুল ইসলাম খান লিখেছে। ওই (পরিবর্তিত পিতার নামের) জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে তার তিনি ছেলে পাসপোর্ট এবং এক ছেলে ড্রাইভিং লাইসেন্সও সংগ্রহ করেছে বলে ওই সংস্থার অনুসন্ধানে উঠে আসে।

মোসলেহ উদ্দিনের ছয় সন্তানের মধ্যে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম খান, মো. মহিদুল ইসলাম ও সানাজ খান পিতার নাম রফিকুল ইসলাম খান ব্যবহার করে পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছে। একই নাম ব্যবহার করে আরেক ছেলে মাহমুদুল ইসলাম খান নিয়েছে ড্রাইভিং লাইসেন্স। তবে ওই সংস্থার প্রতিবেদনে অপর ছেলে মজিদুল ইসলাম খানের পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স বা অন্য কোনও সরকারি ডকুমেন্টস সংগ্রহের তথ্য নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রিসালদার মোসলেম উদ্দিনের সন্তানদের জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট এবং অন্যান্য জাতীয় ডাটাবেজে পিতার নাম পরিবর্তনের বিষয়টি রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ উল্লেখ করে সংস্থাটির পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ঘটনা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২১ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে ঘটনা তদন্তের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের মহাপরিচালককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী ও ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেল হত্যার আসামি রিসালদার মোসলেম উদ্দিনের ছেলেমেয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রে তাদের পিতার নাম বদল করে মো. রফিকুল ইসলাম খান অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এনআইডি অনুবিভাগকে নির্দেশক্রমে চিঠিতে অনুরোধ করা হয়েছে।

সূত্রে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়ার পর এনআইডি অনুবিভাগে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনা তদন্তে এরইমধ্যে কমিটি গঠন করা হয়েছে। পিতার নাম ভোটার তালিকা নিবন্ধনের সময় পরিবর্তন করা হয়েছে, নাকি পরবর্তী সময়ে এনআইডি সংশোধন করে পরিবর্তন হয়েছে—তা যাচাইসহ এর সঙ্গে ইসির কেউ জড়িত কিনা, তা তদন্ত হচ্ছে। কমিটির তদন্ত সাপেক্ষে রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের নাম তার সন্তানদের জাতীয় পরিচয়পত্রে অন্তর্ভুক্তসহ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের (এনআইডি) মহাপরিচালক মাহবুব আলম তালুকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ রকম একটি তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। আমরা বিষয়টি তদন্তের জন্য কমিটি করে দিয়েছি। ঘটনাটি কখন, কীভাবে এবং কার মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছে, সেটা খোঁজা হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি খুবই সিরিয়াস এবং স্পর্শকাতর। আমরা সিরিয়াসলি এটা দেখছি। এনআইডি’র কেউ জড়িত থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার ‍উপসচিব মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা একটি সোর্স থেকে তথ্য পেয়ে তা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগে চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছি। সেখান থেকে তথ্য না এলে এর বাইরে বিস্তারিত কিছু বলতে পারবো না।’

‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন ২০২৩’ অনুযায়ী—‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনও মিথ্যা বা বিকৃত তথ্য দেওয়া, অথবা তথ্য গোপন করার শাস্তি অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কোনও ব্যক্তি জাতীয় পরিচয়পত্র জাল করলে তিনি সাত বছরের কারাদণ্ড এবং অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’

একইভাবে ‘নিবন্ধন কার্যক্রম-সংশ্লিষ্ট কোনও কর্মচারী অথবা জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা, পরিচয়পত্র প্রস্তুতকরণ, বিতরণ ও রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনরত কোনও ব্যক্তি জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কোনও তথ্য-উপাত্ত বিকৃত বা বিনষ্ট করলে অনূর্ধ্ব সাত বছর কারাদণ্ড বা অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন’, বলে আইনে উল্লেখ রয়েছে।

উল্লেখ্য, এনআইডি অনুবিভাগ বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের অধীনে পরিচালিত হলেও এটাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করতে ইতোমধ্যে আইন সংশোধন করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে আগামী বছর (২০২৫) জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায় একজন নিবন্ধকের অধীন হবে।

বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি মোসলেহ উদ্দিন এখনও পলাতক রয়েছে। সে ভারতে পলাতক বলে কথিত রয়েছে। ২০২০ সালে ভারতে সে গ্রেফতার হয়েছিল বলে গুঞ্জন শোনা যায়। পরে অবশ্য ওই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মোসলেহ উদ্দিন ভারতে মারা গেছে বলেও অসমর্থিত সূত্রে জানা যায়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এরকম একটা বিষয় আমরা জেনেছি। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি।’




👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles