আমার বাবার স্বপ্ন ছিলো বড় ঘর দিবে ছোট বোনকে ধুমধাম করে বিয়ে দিয়ে পরে বিয়ে করবে। আমাগে সবাইরে ভালো রাখবে। আমার বাবার সেই স্বপ্ন পূরণ হলো না। আমার বাবারে ওরা মাইরে ফেলছে। ওদের সাথে কথা ছিলো মাছ ধরার বড় ট্রলারে গেম দিবে (সমুদ্র পার করবে)। ওরা ছোট নৌকায় যেখানে ৩০ জনের ধারণ ক্ষমতা সেখানে ৫২ জন পার করতে গিয়ে নৌকার খোলে ঢুকাইয়া মাইর্যা ফেলছে। আমি ওদের বিচার চাই।
শুক্রবার (৩ মে) বিকেলে আহাজারি করতে করতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন তিউনিসিয়ায় ভূমধ্যসাগরে নিহত রাসেল শেখের মা শিল্পী বেগম।
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার দিগনগর ইউনিয়নের ফতেপট্রি গ্রামের আবুল কাশেম শেখের স্ত্রী শিল্পী বেগম। তিউনিসিয়ায় ভূমধ্যসাগরে নৌকায় দালালদের নির্যাতনে আট বাংলাদেশি মারা গেছেন। এদের মধ্যে তিনজনের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে। রাসেল শেখ (২৩) মুকসুদপুরের ওই তিন জনের মধ্যে একজন। আটজনের মধ্যে গোপালগঞ্জের তিনজন, বাকি পাঁচজন পাশ্ববর্তী মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার।
শুক্রবার সন্ধ্যায় নিহত তিন জনের মরদেহ মুকসদুপুর উপজেলার নিজ নিজ গ্রামে পৌঁছায়। পরে তাদের মরদেহ দাফন করা হয়।
নিহত রাসেলের বাবা আবুল কাশেম শেখ বলেন, আমি গরীব মানুষ ফরিদপুরের ভাংগা এলাকায় ছোট্ট একটা চায়ের দোকান করে সংসার চালাই। অনেক কষ্ট করে সন্তানদের বড় করেছি। তিন সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে রাসেল। আমার কষ্ট লাঘব করতে ইতালিতে যেতে চেয়েছিলো। ভেবেছিলো ইতালি গিয়ে আমাকে একটু শান্তি দিবে। রাসেল বাড়ি থেকে যাওয়ার দুই দিন পর আমার মা (রাসেলের দাদি) মারা যায়। মায়ের কুলখানির দিনে ছেলের নিহতের খবর পেলাম। আল্লাহ আমার আর কত পরীক্ষা নিবে। একটু জড়িয়ে ধরতে পারলে বুকের হাহাকার কমতো কিনা? আমার মানিককে যারা এভাবে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে তাদের বিচার চাই।
মারা যাওয়া আট জন হলেন- গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বড়দিয়া গ্রামের দাদন শেখের ছেলে রিফাত শেখ (২৩), দিগনগর ইউনিয়নের ফতেপট্টি গ্রামের মো. রাসেল (২৩) ও গয়লাকান্দি গ্রামের পান্নু শেখের ছেলে ইমরুল কায়েস আপন (২২) এবং মাদারীপুরের রাজৈরের কোদালিয়া গ্রামের মিজানুর রহমান কাজীর ছেলে সজীব কাজী (১৯), পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের ইউসুফ আলী শেখের ছেলে মামুন শেখ (২২), সেনদিয়ার গ্রামের সুনীল বৈরাগীর ছেলে সজল বৈরাগী (২২), উত্তরপাড়া গ্রামের পরিতোষ বিশ্বাসের ছেলে নয়ন বিশ্বাস (২৪), কেশরদিয়া গ্রামের কাওসার (২২)।
স্বজনরা জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে সৌদি এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মরদেহগুলো পৌঁছায়। তখন মরদেহ নিতে ভিড় করেন তারা। কিন্তু ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহগুলো পাঠানো হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে।
মুকসুদপুর উপজেলার দিগনগর ইউনিয়নের ফতেপট্রি এলাকায় নিহত রাসেল শেখের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে স্বজনদের ভিড়, নিহতের মা শিল্লী বেগম আহাজারি করছেন তাকে স্বান্তনা দিচ্ছেন প্রতিবেশী ও স্বজনরা। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন শিল্পী বেগম। থেকে থেকে স্মৃতি মনে করে হাউমাউ করে কান্না করছেন; বলছেন, বাবা রাসেল তুই আমার বুকে আয়। তোর বিদেশ লাগবে না। অনেকেই অশ্রুসিক্ত, সবাই ঢাকা থেকে লাশ ফেরার অপেক্ষায় আছেন।
নিহতের মামা মো. কবীর শেখ বলেন, রাসেল চেয়েছিল পরিবারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল। রাসেল লাশ হয়ে এভাবে দেশে আসবে, সেটা কখনো আশঙ্কা করিনি আমরা।
তিনি আরও বলেন, দিগনগর ইউনিয়নের কানুরিয়া গ্রামের সুমন বলেছিলো ১৩ লাখ টাকা দিলে রাসেলকে আমরা ইতালি পৌঁছে দিবো। তারা নিয়ে যাওয়ার কয়েক দিন পর তাকে শারীরিক নির্যাতন করেছে, তিনদিন খেতে দেয়নি। তারপর ৩০ জন ধারণ ক্ষমতার একটি ছোট নৌকায় করে ৫২ জন লোক নিয়ে যাত্রা করে। এরমধ্যে ৯ জনকে নৌকার চালির (পাটাতন) নিচে লুকিয়ে নিয়ে যায়; সেখানে তাদের মৃত্যু হয়। আমরা এ দালালদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি করছি। যাতে করে অন্য কোনো মায়ের কোল খালি না হয়।
এদিকে মুকসুদপুরের দিগনগর ইউনিয়নের বড়দিয়া গ্রামে রিফাত শেখের বাড়ি গিয়ে দেখা যায় রিফাতের মা সুমা বেগম অধিক শোকে পাথর হয়ে গেছেন। কথা বলতে পারছেন না। শুধু বলছে আমার রিফাতকে কেনো এখনো আমার কাছে আনছে না। আমি রিফাতকে দেখতে চাই। কারো বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ নেই, আল্লাহ আমার রিফাতকে নিয়ে গেছে।
নিহত রিফাতের স্বজনরা জানান, রিফাতের বাবা দাদন শেখ ছেলের লাশ আনতে এয়ারপোর্টে গিয়েছে। স্বজনেরা কবর খুঁড়ে রেখেছে গতকাল সন্ধ্যায়। শুক্রবার সন্ধ্যায় মরদেহ আনা হলে দাফন করা হয়।
স্বজন, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ জানুয়ারি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলা ও মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায় বেশ কয়েকজন যুবক ইতালির উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন। প্রথমে তারা দুবাই হয়ে উড়োজাহাজে করে লিবিয়া পৌঁছান। পরে ১৪ ফেব্রুয়ারি লিবিয়া থেকে দালালদের মাধ্যমে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা হন তারা। মাঝপথে তিউনিসিয়ায় ভূমধ্যসাগরে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে যাওয়ার পথে তাদের নির্যাতন করা হয়। এতে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের রাঘদী ইউনিয়নের বড়দিয়ার রিফাত, দিগনগর ইউনিয়নের ফতেপট্রির রাসেল, গোহালা ইউনিয়নের গয়লাকান্দির আপন, মাদারীপুরের রাজৈরের কোদালিয়ার সজীব কাজী, পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের মামুন শেখ, সেনদিয়ার সজল বৈরাগী, কদমবাড়ির নয়ন বিশ্বাস এবং কেশরদিয়া গ্রামের কাওসার’র মৃত্যু হয়। এ ছাড়া এক পাকিস্তানি নাগরিকও মারা যান।
খবর পেয়ে কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় কোস্টগার্ড। স্বজনদের অভিযোগ, মানবপাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের গজারিয়া গ্রামের রহিম শেখ ও সুন্দরদী গ্রামের মোশারফ কাজী, মাদারীপুরে রাজৈর উপজেলার হোসেনপুরের সুমন মিয়া প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৩ থেকে ১৫ লাখ টাকা নেন। ঘটনার পর থেকেই দালাল চক্রের সদস্যরা আত্মগোপনে রয়েছে।
মুকসুদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, তিউনিসিয়ায় দুর্ঘটনায় নিহত পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো আইনগত সহযোগিতা চাইলে করা হবে। এরমধ্যে সরকারিভাবে মরদেহগুলো দেশে এসেছে। এখন পর্যন্ত কোন পরিবার থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com