Sunday, June 23, 2024

দেশের বড় জামাতের জন্য প্রস্তুত গোর-এ-শহীদ, মুসল্লি আসবে ট্রেনে


ঈদুল আজহায় দেশের সবচেয়ে বড় জামাতের আয়োজন করতে প্রস্তুত হয়েছে দিনাজপুরের গোর-এ-শহীদ মাঠ। আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঈদুল ফিতরে এখানে ছয় লক্ষাধিক মুসল্লির সমাগম হয়েছিল- সেই অনুযায়ী এবারও প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। ঈদের দিন সোমবার (১৭ জুন) সকাল সাড়ে ৮টায় এখানে নামাজ আদায় করা হবে। এবারও এই মাঠে যাতায়াতের জন্য দুটি ঈদ স্পেশাল ট্রেন রাখা হয়েছে।

দেশের বড় এই জামায়াতে সুষ্ঠুভাবে ঈদের নামাজ আদায় করতে এবং আদায় শেষে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরে পরিবারের সঙ্গে আনন্দে ঈদ কাটাতে পারেন সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। 

শনিবার দুপুরে সর্ববৃহৎ এই ঈদগাহ মাঠ পরিদর্শন করেছেন জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম। এ সময় দিনাজপুর জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ, পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মমিনুল করিম, দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) আবু তৈয়ব আলী দুলাল, দিনাজপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইমদাদ সরকার, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল রায়হান, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মুসল্লিদের নিরাপত্তার জন্য মাঠে ওয়াচ টাওয়ার ও পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি পুরো মাঠেই থাকবে সিসি ক্যামেরা। সেই সঙ্গে ড্রোনের মাধ্যমে মাঠটি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হবে। ইতিমধ্যেই ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মিনারের সামনে ২২ একর আয়তনের মাঠটি ঘিরে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

জানা গেছে, পুরো ঈদগাহ মাঠজুড়ে কয়েকটি স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় থাকবে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, আনসার সদস্যরা। প্রতিটি কাতারে সাদা পোশাকে মোতায়েন থাকবে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এ ছাড়াও কাতারে থাকবেন স্বেচ্ছাসেবক। ঈদের দিন সকাল ৭টা থেকে মুসল্লিদের জন্য মাঠের ১৭টি প্রবেশ পথ খুলে দেওয়া হবে। মুসল্লিদের মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করে প্রবেশ করানো হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে মুসল্লিরা শুধুমাত্র জায়নামাজ ও ছাতা নিয়ে মাঠে প্রবেশ করবেন।

বৃহৎ এই মাঠে একত্রিত হয়ে নামাজ আদায় করতে মুসল্লিরাও প্রস্তুত। তাদের মতে, বড় জামাতে নামাজ আদায় করলে বেশি সওয়াব হয়। তাছাড়া ইতিমধ্যেই দিনাজপুর গোর-এ-শহীদে দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের সবচেয়ে বড় জামাত হয় বলে খ্যাতি লাভ করেছে। আর গত কয়েক বছর ধরেই এখানে শান্তিপূর্ণভাবে ঈদের নামাজ আদায় হয়ে আসছে, ফলে তাদের মধ্যেও বেশ আগ্রহ। জেলার আশপাশের মুসল্লিদের জন্য দুটি ঈদ স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা থাকে। যার মধ্যে একটি পার্বতীপুর থেকে এবং অপরটি ঠাকুরগাঁও থেকে আসে।

গোর-এ-শহীদ মাঠে কথা হয় ঈদগাহ আবাসিক এলাকার সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রতি ঈদেই এখানে আমরা একসঙ্গে নামাজ আদায় করি। আমার বাড়িতে ঈদের সময় অনেক আত্মীয় আসেন এই ঈদ জামাতে শরিক হওয়ার জন্য। এটা আমার কাছে খুবই ভালো লাগে। 

পাহারপুর এলাকার রফিকুল ইসলাম বলেন, বড় জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। এই বিশ্বাস থেকে অনেকেই এই জামাতে অংশগ্রহণ করেন। আমি নিজেও অংশগ্রহণ করি, এখানে অনেকের সঙ্গে দেখা ও কথা হয়।

দিনাজপুর পুলিশ সুপার শাহ্ ইফতেখার আহমেদ বলেন, আমরা একটি সমন্বয় মিটিং করেছি, যেখানে নিরাপত্তার বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা কিছু কৌশল রেখেছি। ঈদ জামাতকে সামনে রেখে কোনও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড যাতে কেউ না করতে পারে এবং ঝুঁকি তৈরি না করতে পারে সেজন্য আমরা ইতিমধ্যেই জেলা ও আশপাশের এলাকায় তল্লাশি শুরু করেছি। বিভিন্ন বাসাবাড়ি, মেস, হোটেলে এই তল্লাশি চলবে। এ ছাড়াও চেকপোস্ট থাকবে। পুরো মাঠেই ওয়াচ টাওয়ার, সিসি ক্যামেরা ও পর্যবেক্ষণ ক্যাম্প থাকবে। মাঠে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, বিজিবি, এনএসআই, ডিজিএফআই, ডিএসবিসহ সব গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা একযোগে কাজ করবেন। এই মাঠে নিরাপত্তার বিষয়টিকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

দিনাজপুর জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ বলেন, এটি দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত। এই মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। ইতিমধ্যেই ঈদের জামাত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো। মাঠে ওয়াচ টাওয়ার ও সিসি ক্যামেরা রয়েছে। সারা শহরে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। এখানে শুধু দিনাজপুর কিংবা এর আশপাশেই নয়, সারা দেশ থেকেই দলে দলে লোকজন অংশগ্রহণ করবেন। যাতে করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মুসল্লিরা ঈদের নামাজ আদায় করতে পারে সেই প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।

সবচেয়ে বড় এই ঈদগাহ ময়দান ও মিনারের মূল পরিকল্পনাকারী ও প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, গোর-এ-শহীদ ময়দানে দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। পবিত্র ঈদুল আজহায় সর্ববৃহৎ এই মাঠে সুষ্ঠুভাবে নামাজ আদায়ের জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। মুসল্লিরা যাতে দেশের বড় এই জামাতে সুষ্ঠুভাবে ঈদের নামাজ আদায় করতে এবং আদায় শেষে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরে পরিবারের সঙ্গে আনন্দে ঈদ কাটাতে পারেন সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। ওয়াচ টাওয়ার ও পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি পুরো মাঠেই থাকবে সিসি ক্যামেরা। সেই সঙ্গে ড্রোনের মাধ্যমে মাঠটি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হবে। পুরো মাঠজুড়ে কয়েকটি স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় থাকবে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, আনসার সদস্যরা। প্রতিটি কাতারে সাদা পোশাকে মোতায়েন থাকবে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতি অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে হুইপ বলেন, এই সর্ববৃহৎ ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী দুটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করেছেন। মুসল্লিদের আনা নেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হবে এই ট্রেন। মুসল্লিদের নামাজে যেন কষ্ট না হয় এ জন্য আমরা প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সার্বক্ষণিকভাবে মাঠ ও শহরের বিভিন্ন এলাকা মনিটরিং করে সর্বাধিক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন থেকে শহরে বিভিন্ন হোটেল, মেসসহ বিভিন্ন জায়গায় তাদের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে। সুষ্ঠুভাবে যেন নামাজ সম্পন্ন হতে পারে সেই জন্য তারা সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। গোটা মাঠকে সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। এ ছাড়া পুরো শহরেই সিসিটিভির আওতায় রয়েছে।

দিনাজপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানের আয়তন প্রায় ২২ একর। ২০১৭ সালে নির্মিত ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মিনার তৈরিতে খরচ হয়েছে তিন কোটি ৮০ লাখ টাকা।  ঈদগাহ মাঠটি ঐতিহাসিক নিদর্শন ও মনোরম কীর্তির সৌন্দর্য ও নান্দনিক হিসেবে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। এই ৫০ গম্বুজের দুই ধারে ৬০ ফুট করে দুটি মিনার, মাঝের দুটি মিনার ৫০ ফুট করে। ঈদগাহ মাঠের মিনারের প্রথম গম্বুজ অর্থাৎ মেহেরাব (যেখানে ইমাম দাঁড়াবেন) তার উচ্চতা ৪৭ ফুট। এর সঙ্গে রয়েছে আরও ৪৯টি গম্বুজ। এ ছাড়া ৫১৬ ফুট লম্বায় ৩২টি আর্চ নির্মাণ করা হয়েছে। 
উপমহাদেশে এত বড় ঈদগাহ মাঠ দ্বিতীয়টি নেই। পুরো মিনার সিরামিকস দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইটিং। রাত হলে ঈদগাহ মিনার আলোকিত হয়ে ওঠে। ২০১৭ সাল থেকেই প্রতিবারে এখানে ঈদের নামাজ আদায় করছেন দিনাজপুর জেলাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। তবে করোনার প্রকোপের ফলে গত দুই বছরে এই মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ার পর আবারও পরিপূর্ণভাবে হচ্ছে ঈদের জামাত।




👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles