জাতীয় দলের হয়ে লম্বা সময় খেলেছেন ইমরুল কায়েস। ২০০৮ সালের অক্টোবরে জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছে তার। প্রায় ১১ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন। অবদান রেখেছেন বাংলাদেশের অনেক জয়ে। তামিম ইকবালের সঙ্গে প্রথম উইকেটে গড়া তার ৩১২ রানের জুটিটি এখনও রেকর্ডবুকে উজ্জ্বল। তারপরও অন্য সব ব্যাটারদের মতো ইমরুল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিয়মিত থাকতে পারেননি। ফলে ১১ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার হলেও ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ১৩১টি। ২০১৯ সালের পর তো আর জাতীয় দলে ফিরতেই পারেননি! ফেরার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। নিজের ক্যারিয়ারসহ অনেক ইস্যু নিয়ে সম্প্রতি বাংলা ট্রিবিউনের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। আজ থাকছে দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব
প্রশ্ন: প্রতিটি ক্রিকেটারের ক্রিকেট খেলার পেছনে কোনও না কোনও প্রেরণা থাকে। আপনি আসলে কী ভেবে ক্রিকেটটা খেলছেন?
ইমরুল: দেখেন জাতীয় দলে আজকে ছয় বছর ধরে আমি নেই। তারপরও কি আমার ক্রিকেট থেমে আছে? আমি খেলছি। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলছি, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ায় নিয়মিত খেলছি। খেলার মধ্যে আমি আছি। আমাদের ক্রিকেট ক্যারিয়ার তো অল্প সময়ের। ফিটনেস যতদিন থাকবে, খেলা সম্ভব। আমার ইচ্ছা যতদিন ফিটনেস ধরে রাখতে পারবো, ততদিন খেলে যাবো। উপভোগ করেই এখন পর্যন্ত খেলে যাচ্ছি। সময়ের হিসেবে যদি বলেন অন্তত তিন থেকে চার বছর তো খেলবোই।
প্রশ্ন: তারপরও কোনও না কোনও মাইন্ডসেট নিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলছেন নিশ্চয়ই?
ইমরুল: জাতীয় দলে খেলতেই হবে, এই জিনিসটা আর মাথায় নেই। একটা সময় ছিল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমি ১৭/১৮ ঘণ্টাই কেবল ক্রিকেট নিয়ে চিন্তা করতাম। আগে চিন্তা থাকতো, আরও একটু চেষ্টা করলে হয়তো জাতীয় দলে ফিরতে পারবো। কিন্তু এখন আর এই চিন্তাটা নেই।
অন্তত একটি ম্যাচ খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর সুযোগ আশা করেন?
ইমরুল: এগুলো আসলে ইমোশনের ব্যাপার। একটা-দুইটা ম্যাচ খেলে আপনি অবসর নেবেন—এটা খুব বেশি বড় কিছু না। আমি মনে করি যাদের একটু ইমোশন বেশি, তারা এভাবে চিন্তা করে মাঠ থেকে বিদায় নিতে হবে। আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কী করেছি, সেগুলো উন্মুক্ত- সবাই জানেন। হ্যাঁ, আপনি যেটা বললেন, প্রতিটি ক্রিকেটারের ইচ্ছে থাকে মাঠ থেকে বিদায় নেওয়ার। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকে না। আমি এই সম্মান পাবো, এটাও বিসিবির কাছে আশাও করি না।
প্রশ্ন: একটা সময় সিনিয়রদের জুনিয়রদের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে হয়। এটাই বাস্তবতা। তবে আপনার কি মনে হয় না আপনি কিছুটা হলেও অবিচারের শিকার হয়েছেন?
ইমরুল: অবশ্যই। তবে আমি কখনোই ঢালাও করে এটা বলিনি। অনেককেই বলতে শুনি। তারা আমার খেলা দেখেছে, অন্যদের খেলাও দেখছে। তার তুলনা করে বলেই কিন্তু এই কথাগুলো বলে। আমি অবশ্যই পর্যাপ্ত সুযোগ পাইনি। আমার এখনও মনে আছে, দুই সিরিজে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়ে পরের সিরিজে ছিলাম না। এটা কিন্তু সবার ক্ষেত্রে হয় না। আমার ক্ষেত্রে এসব প্রায়ই হতো। জাতীয় দলে খেলতে গেলে কিছুতো সাপোর্ট লাগে, অধিনায়ক-টিম ম্যানেজমেন্টের সাপোর্ট লাগে। আমি আমার ক্যারিয়ারে এক-দুইবার হয়তো সামান্য কিছুতে সহযোগিতা পেয়েছি।
প্রশ্ন: অনেক ক্রিকেটার সৌভাগ্য নিয়ে জন্মায়, ম্যাচের পর ম্যাচ ব্যর্থ হলেও তাদের সুযোগ হয়, সেই অর্থেই কি নিজেকে দুর্ভাগা বলছেন?
ইমরুল: অনেকটা তেমনই। জুনায়েদ সিদ্দিকী যখন জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছে, অন্তত আরও দুই-তিন বছর সে টেস্ট খেলতে পারতো। আমি যখন টেস্ট দল থেকে বাদ পড়লাম, তখনই কিন্তু দারুণ অবস্থায় ছিলাম। টেস্ট ক্রিকেটটা খুব ভালোভাবে বোঝা শুরু করেছিলাম। জুনায়েদ সিদ্দিকী, নাঈম ইসলাম কিংবা শাহরিয়ার নাফীসরা বাংলাদেশের ক্রিকেটে আক্ষেপের নাম হয়ে আছে। আমরা যদি টেস্ট দলে আরও কিছু দিন খেলার সুযোগ পেতাম, তাহলে বাংলাদেশের টেস্ট দলটা আরও ভালো অবস্থায় যেতে পারতো।
প্রশ্ন: সৌম্য সরকার কিংবা লিটন দাসদের প্রতি কোচ-অধিনায়ক-টিম ম্যানেজমেন্ট সবসময়ই ভরসা রাখছে। আপনার ক্ষেত্রে এমন কিছু না হওয়াতেই কি আপনি আপসেট?
ইমরুল: সত্যি কথা বলতে এখন আর কোনও কষ্ট লাগে না। কষ্ট পেতে পেতে এখন এসব সহ্য হয়ে গেছে। যখন আপনি প্রতিযোগিতা করবেন, নিজের সঙ্গে নিজে ফাইট করবেন, তখন হয়তো খারাপ লাগবে। কিন্তু এখন আর এসব খারাপ লাগে না। হয়তো বা সৌম্য অনেক বেশি ভাগ্যবান। এমন ভাগ্যবান হয়তো বাংলাদেশের ক্রিকেটে আর নেই। এরকম সুযোগ সবাই পায় না। সৌম্যর মতো করে হয়তো সবাই সুযোগ পাবে না। আপনি যাকে সুযোগ দিচ্ছেন না কেন, সেও যে ভালো করছে তাও না। এই কারণে সিস্টেমে পরিবর্তন আনা উচিত। আমার মনে হয় এই সিস্টেমগুলো আরও সুন্দরভাবে পেশাদারভাবে হওয়া উচিত। ঘরোয়া ক্রিকেটে যারা ভালো খেলবে, তাদের সুযোগটা আগে হওয়া উচিত। এই প্রসেসটা থাকলেই কিন্তু একজন তরুণ ক্রিকেটার কিংবা বাদ পড়া ক্রিকেটার ফোকাস রেখে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে পারবে। তাহলে বাংলাদেশ দল নাঈম ইসলাম, শাহরিয়ার নাফিসের মতো ক্রিকেটারদের সহজে হারাবে না।
প্রশ্ন: গুঞ্জন আছে, কিছু ক্রিকেটারের প্রতি হাথুরুসিংহের বাড়তি মনোযোগের কারণে নাকি আপনি অবহেলিত হয়েছেন?
ইমরুল: বিষয়টা পুরোপুরি এমন না। তবে হাথুরুসিংহে কিছু খেলোয়াড়কে বাড়তি গুরুত্ব দিতো, এটা সত্য। এই কারণে আমি সুযোগ হারাতাম। তবে হাথুরুসিংহে সবসময় চাইতো আমি দলের সঙ্গে থাকি, আমাকে সে ক্যারি করতো। কিন্তু ম্যাচ খেলার সুযোগটা পেতো অন্য কেউ। সে কিন্তু আমাকে টিম থেকে বের করে দেয়নি। হাথুরুসিংহে যাওয়ার পর এক সিরিজ পরই আমি দল থেকে বাদ পড়ে যাই। এখানে হাথুরুসিংহের দোষ দিয়ে লাভ নেই। নতুন কোচ যখন আসে, তখন সে নির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে। হাথুরুসিংহে যাওয়ার পরই মূলত আমার ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রশ্ন: নতুন কোচ আসার পর তাদের নতুন পরিকল্পনায় ক্রিকেটারদের ক্ষতি আসলে কতটা হয়?
ইমরুল: অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নতুন কোচরা যখন আসে তখন তারা কিন্তু আমাদের ক্রিকেট সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। নেট ঘেঁটে কিছু পরিসংখ্যান দেখে তারা ক্রিকেটারদের ব্যাপারে জাজমেন্টে যায়। একটা ছেলে কত বছর ধরে খেলছে, কী পরিস্থিতিতে খেলছে এসব তারা বিচার করে না। প্রথম দেখায়, প্রথম সেশনে যদি কাউকে ভালো লেগে যায় তাহলে নতুন কোচদের কাছে সে-ই ফেভারিট হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে অন্য কেউ ভালো করলেও কোচরা তাকে সেই অর্থে মূল্যায়ন করেন না। নতুন কোচরা যখন আসেন, তখন তো নির্বাচকদেরই উচিত প্রপার তথ্যগুলো সরবরাহ করা। একটা ছেলেকে ব্যাক করার দায়িত্বটা নির্বাচকদের। নির্বাচকরা এই জিনিসগুলো করে না। তারা গাটস দেখাতে পারে না। তারা চিন্তা করে কোচের মতো কোচ চালাবে, আমার জায়গায় আমি আছি, চাকরি বাঁচাই।
তাহলে কি নান্নু ভাইয়ের নেতৃত্বাধীন নির্বাচক কমিটির সঙ্গে আপনার অনেক দূরত্ব ছিল?
ইমরুল: অবশ্যই ছিল। নান্নু ভাই কখনোই আমাকে কোনও স্পেস দেয় নাই। ‘আয় এক কাপ চা খা, আমার সঙ্গে। বস, তোরে আমি এই কারণে খেলাচ্ছি না। কিংবা এই কারণে তুই দলে নাই। বা এই কাজগুলো কর, তাহলে তোকে দলে রাখবো’—নান্নু ভাইয়ের কাছ থেকে আমি এমন কিছু কখনও শুনিনি। অনেককেই দেখেছি আমার মতো হতভাগা নয়। আমাকে যদি নির্বাচকরা বলে দিতো, তোর এই সমস্যা- এই জায়গায় তুই উন্নতি কর, কাজ কর, তাহলে আমরা তোকে নেবো। তাহলে কিন্তু আমি মেসেজটা পেয়ে যাই। আমি কখনও কোনও মেসেজ পাই না। নান্নু ভাই একবার বলে তোকে টেস্ট দলে বিবেচনা করি না। আরেকবার বলে ওয়ানডে দলে বিবেচনা করি না। আবার কয়দিন পর বলে এই দুই ফরম্যাটের জন্যই বিবেচনায় আছিস। এর মানে তাদের পরিকল্পনায় গলদ আছে।
বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে কি কখনও কোনও বিষয়ে আলাপ হয়নি?
ইমরুল: দুই বছর আগে সর্বশেষ কথা হয়েছিল। ওই সময় আমি বিসিএল খেলছিলাম। আমার কাছে জানতে চায়, ‘কেমন আছো, তুমি রান করছো না কেন?‘ তখন এক ম্যাচ আগেই আমি সেঞ্চুরি করেছি। তখন আবার বলে যে ‘‘তুমি নাকি ওপেনিংয়ে ব্যাটিং করতে চাও না?’’ এরপর আমি পাপন ভাইকে জানাই, আসলে আপনাকে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। আমি দলের প্রয়োজনে এখন তিন নম্বরে খেলছি। দল যখন আমার কাছে ওপেনিংয়ে সার্ভিস চাইবে, ওপেনিংয়ে ফিরবো। উনি আসলে মেসেজগুলো যেভাবে পান, সেখানে অনেক সমস্যা থাকে। অনেক ভুল তথ্য তাকে সরবরাহ করা হয়। কারণ উনিতো খেলা দেখেন না। নানা মাধ্যমে জানার চেষ্টা করেন। কিন্তু যিনি জানান তার কোন ইনটেনশন থাকতে পারে। আমি সবসময়ই বলি পাপন ভাই ক্রিকেটের জন্য একজন ডেডিকেটেড মানুষ। পাপন ভাইকে কোনও ক্রিকেটার সম্পর্কে ইতিবাচক তথ্য দিলে পাপন ভাই তার প্রতি ইতিবাচকই হবেন- সেটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা ধারণা আসল তথ্যটা পাপন ভাইয়ের কানে খুব কম সময়ই যায়।
👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com