‘কথা বলছে গাছ’ কান পাতলে ভেতর থেকে ভেসে আসছে নারী কণ্ঠ, এমনটা দাবি স্থানীয়দের। এ খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে দলে দলে মানুষ আসছেন, কান পাতছেন গাছে। গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার গর্জিনা গ্রামে ঘটেছে এমন ঘটনা।
তবে ইসলামের দৃষ্টিতে এটি ঠিক নয় বলে জানিয়েছেন গর্জিনা জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ বাদশা। তিনি বলেন, এটি জীনের কাণ্ড হতে পারে। অন্যদিকে স্থানীয় সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান শুকলাল বিশ্বাস বলছেন, গাছ কথা বলতে পারে না, এটা সম্পূর্ণ গুজব।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার (১৪ জুন) গর্জিনা গ্রামের সৌদি প্রবাসী সবুর মিয়ার বাগান থেকে একটি একাশিয়া গাছ (স্থানীয়দের ভাষায় লম্বু গাছ) কাটতে যায় ওই গ্রামের জুয়েল মোল্লার ছেলে নীরবসহ (১০) কয়েকজন শিশু। তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে গাছের গায়ে আঘাত করলে গাছ কথা বলে উঠে। এ সময় শিশুরা ভয়ে বাড়ি গিয়ে পরিবারের লোকজনকে জানালে তারা গাছটি দেখতে আসেন। পরে গাছে কান পাতলে ভেতর থেকে আওয়াজ শুনতে পান বলে দাবি করেন। মুহূর্তেই এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় আলোড়ন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত মানুষ ছুটে আসেন গাছটি দেখতে। এর মধ্যে, অনেকেই গাছের কথা শুনতে পেয়েছেন বলে দাবি করেন।
স্থানীয় অভিজ্ঞ মহলের অভিযোগ, কিছু ইউটিউবার ভিউ পাবার আশায় গাছের কথা বলার গুজবটি সত্য প্রমাণের চেষ্টা করছেন। এছাড়া, আগত দর্শনার্থীদের মধ্যে অনেকেই মনের আশা পূরণে করছেন মানত। এতে তারা প্রতারিত হতে পারেন। কেউ প্রতারিত হওয়ার আগেই প্রশাসন এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিবে বলে আশা করি।
শনিবার (২২ জুন) সরেজমিনে যান এ প্রতিবেদক। স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে পান মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এ সময় একটি মহল গাছের কথা বলার বিষয়টি সত্য দাবি করে বলেন, গাছের গায়ে গোবর লেপার কারণে এক নারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তবে অনেকই এটিকে গুজব ও কুসংস্কার দাবি করেছেন। আবার কেউ কেউ বলেন, এটি জীনের কাণ্ড হতে পারে।
গর্জিনা গ্রামের মামুন মল্লিক বলেন, ‘গ্রামের কয়েকজন শিশু এই গাছটি কাটতে আসে। গাছের গায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দিলে গাছ বলে উঠে, আমাকে মারিস না। পরে ওই শিশুরা বাসায় গিয়ে তাদের পরিবারের লোকজনকে বিষয়টি জানায়। পরে তারা এসে গাছে কান পাতলে শব্দ শুনতে পায়। এরপরই বিষয়টি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে মানুষ দলে দলে এ গাছটি দেখতে আসছেন।’
গাছ দেখতে আসা মো. লিয়াকত নামে এক যুবক বলেন, ‘গাছ কথা বলেছে, এমন খবর পেয়ে এখানে এসেছি। পরে এক ভাইয়ের বিয়ে হবে কিনা, জানতে চাইলে গাছের ভেতর থেকে হু করে শব্দ করেছে। তবে এটি সত্য না মিথ্যা বলতে পারব না।’
মুকসুদপুর উপজেলার দিঘীরপাড় গ্রামের পিংকি আক্তার বলেন, ‘গাছ কথা বলে এমনটি শুনে দেখতে এসেছি। প্রথমে বিশ্বাস না করলেও এখানে এসে গাছে কান পেতে দেখি এটা বাস্তব। ভেতর থেকে নারী কণ্ঠের কান্নার আওয়াজ পেয়েছি।’
মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার টেকেরহাটের বাসিন্দা সোহেল মাতুব্বর বলেন, ‘গাছে কথা বলার খবর পেয়ে এখানে এসেছি। তবে ভেতরে কথা না শুনলেও আওয়াজ পেয়েছি।’
একই গ্রামের মো. সোহেল খান বলেন, ‘মানুষের কথা বিশ্বাস করিনি তাই নিজে এসেছি। এখন দেখি গাছে কথা বলছে। তবে কয়েকজন মিলে কান পাতলে কথা শোনা যায় না, একা কান পাততে হবে। তবে আমার মনে হয় এই গাছে জীন আছে। যে কারণে কথা শোনা যাচ্ছে।’
ফরিদ মোল্যা নামে স্থানীয় এক যুবক বলেন, ‘গাছ কথা বলেছে’ এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে প্রতিদিন মানুষ ভিড় করতে থাকে। এতে বিরক্ত হয়ে স্থানীয় এক নারী গাছের উপর গোবর লেপে দেয়। এরপরই ওই নারীসহ তার পরিবারের কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে স্থানীয় মুরব্বীদের পরামর্শে সে গাছটি পরিষ্কার করে মাফ চায়। পরে ওঝা (কবিরাজ) দেখালে তিনি সুস্থ হন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন শত শত মানুষ গাছের গায়ে কান পেতে কথা শোনার চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে অনেকে শুনতে পেয়েছেন, অনেকে পাননি বলে দাবি করেন।’
গর্জিনা গ্রামের গর্জিনা জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ বাদশা বলেন, ‘এটা কুসংস্কার। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি সঠিক নয়। ধারণা করছি, কোন জীনকে গাছের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছে। যে কারণে জীন বাইরে বের হবার জন্য এমনটি করছে।’
এ বিষয়ে সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান শুকলাল বিশ্বাস বলেন, ‘গাছ কথা বলে এটি সম্পূর্ণ গুজব ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ শব্দ করতে হলে তার ভোকাল সিস্টেম থাকতে হবে। জড়বস্তুর আঘাতজনিত কারণে শো শো শব্দ শোনা যেতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গাছের প্রাণ আছে এটা ঠিক। কারণ গাছ কোষ দ্বারা গঠিত, আর কোষ একটি জীবন্ত সত্তা। তবে গাছ কথা বলতে পারে না।’
Comply with extra
bdphone.com
ultraactivation.com
trainingreferral.com
shaplafood.com
bangladeshi.assist
www.forexdhaka.com
uncommunication.com
ultra-sim.com
forexdhaka.com
ultrafxfund.com
ultractivation.com
bdphoneonline.com