Saturday, June 21, 2025

এমপি আনার হত্যায় অংশ নেওয়া এই ট্রাকচালক কে?


ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীমকে ভারতে নৃশংসভাবে হত্যায় গ্রেফতার ফয়সালের পুরো নাম ফয়সাল আলী সাহাজি। সে খুলনার ফুলতলার এলাকায় ভাড়া থাকতো। তার বাসায় বাবা, স্ত্রী ও তিন ছেলে মেয়ে রয়েছেন।

জানা গেছে, ফয়সালের বাবা আলাউদ্দিন মূলত ভারতীয় বংশোদ্ভূত। পাকিস্তান আমলেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সে সময়ের শিশু আলাউদ্দিন খুলনায় আসেন। তিনি পরিবারের সঙ্গে ফুলতলায় বসবাস শুরু করেন। একপর্যায়ে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন। আলাউদ্দিনের দুই ছেলের মধ্যে ফয়সাল ছোট। এখন তার বয়স ৪০ বছর প্রায়। ১৭ বছর বয়সে ফয়সাল ট্রাকের হেলপারি শুরু করে। এরপর চালক হয়। তিনি শুরুতে চট্টগ্রামে লরি চালাতো। এরপর খুলনার আফিল গেট জয়েন্ট  ট্রান্সপোর্টের সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হয়। ধীরে ধীরে ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য হয়।

২০২১ থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের ফুলতলা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে।

ফুলতলার জামিরা রোডের পল্লিমঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে জালালের বাড়ির ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছে। এই বাড়িতে শুক্রবার (২৪ মে) গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সুনসান নীরবতা। তিনতলা বাড়িটির দোতলায় তার পরিবারের বসবাস।

ফয়সালের স্ত্রী সোনিয়া বেগম বলেন, ‘২ মে কাজের কথা বলে অন্য দিনের মতোই বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর আর ফেরেনি। বৃহস্পতিবার (২৩ মে) টিভিতে তার ছবি দেখি ও গ্রেফতার বলে জানতে পারি।’

তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চান। তার স্বামী দোষী হলে সাজা পাক। দোষী না হলে তার শিশু সন্তানদের মাঝে দ্রুত ফিরে আসার পথ তৈরি হোক।

তিনি বলেন, ‘দুই ছেলে ও এক মেয়েসহ শ্বশুরকে নিয়ে কীভাবে চলবো সেটাই ভাবাচ্ছে। বড় ছেলে নবম, মেয়ে পঞ্চম ও ছোট ছেলে মাদ্রাসায় প্রথম শ্রেণিতে পড়ছে।’

জামিরার সেলিম সরদার বলেন, ‘ফয়সাল ট্রাক শ্রমিক থেকে শিমুলের (এমপি হত্যায় গ্রেফতার আমানুল্লাহ আমান) সহযোগী হিসেবে অপরাধ জগতে যুক্ত। শিমুলের সঙ্গে থাকা মোস্তাফিজও ফুলতলার যুগ্নিপাশার নিবাসী। সে চরমপন্থি সদস্য।’

খুলনা বিভাগীয় ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বক্স দুদু বলেন, ‘ফয়সাল ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের একজন সদস্য। তাকে ফুলতলা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এখন সে সাধারণ সদস্য।’

এমপি হত্যাকাণ্ডে ফয়সালের ভূমিকা

এমপি আনারের সঙ্গে স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ে বিরোধের জের ধরে দুই মাস আগেই হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ঢাকার গুলশান ও বসুন্ধরা এলাকার পৃথক দুটি বাসাতে এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করা হয়। এমপি আনার যেহেতু ঘন ঘন ভারতে যাতায়াত করেন, এজন্য ভারতেই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল তার সহযোগী মোস্তাফিজুর রহমান ফকির ও ফয়সাল আলী সাহাজিকে পাসপোর্ট বানিয়ে দেয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফয়সাল ও মোস্তাফিজুরের দুটি পাসপোর্টই চলতি বছরের ৮ এপ্রিল ঢাকার বিভাগীয় পাসপোর্ট কার্যালয় থেকে ইস্যু করা হয়েছে। পাসপোর্টে ফয়সালের স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে খুলনার ফুলতলা থানার অলকা গ্রাম এবং মোস্তাফিজুরের স্থায়ী ঠিকানা খুলনার ফুলতলার যুগনীপাশা গ্রাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে দুজনেরই বর্তমান ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ঢাকার ক-৩২/১২ নদ্দা। এছাড়া পাসপোর্ট দুটির ই-মেইল যোগাযোগের জন্য রাফসানচৌ ৪২০ নামে একটি জিমেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয়েছে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, এমপি আনারকে কলকাতায় হত্যার পরিকল্পনা সাজিয়েই মোস্তাফিজ ও ফয়সালের পাসপোর্ট করানো হয়। ভারতীয় ভিসা সংগ্রহ করে তারা ১১ মে কলকাতায় প্রবেশ করে। হত্যাকাণ্ড শেষে লাশ টুকরো করে গুমের পর ১৭ মে মোস্তাফিজ ও ১৮ মে ফয়সাল দেশে ফিরে আসে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেছেন, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা দীর্ঘদিনের। আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তার বাল্যবন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন। শাহীনের পরিকল্পনায় হত্যার কাজটি করেন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা আমান ওরফে শিমুল।

গত ১২ মে চিকিৎসার কথা বলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যান এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার। সেদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে কলকাতায় তার পারিবারিক বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন তিনি। পরের দিন ১৩ মে ‘বিশেষ প্রয়োজনের’ কথা বলে দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে গোপালের বাড়ি থেকে বের হন আনার। সন্ধ্যায় ফিরবেন বলেও জানান তিনি। বিধান পার্কের কাছে কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে থেকে ট্যাক্সিতে উঠেছিলেন তিনি।

চলে যাওয়ার পর সন্ধ্যায় আজিমের ফোন থেকে গোপালের কাছে মেসেজ আসে, তিনি দিল্লি যাচ্ছেন এবং সেখানে পৌঁছে তাকে ফোন করবেন। পরে তার সঙ্গে ভিআইপিরা আছেন জানিয়ে বন্ধু গোপালকে ফোন না দেওয়ার জন্য সতর্ক করেছিলেন।

গত ১৫ মে আবার আনারের নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তায় গোপালকে জানানো হয়, তিনি দিল্লি পৌঁছেছেন এবং ভিআইপিদের সঙ্গে আছেন। তাকে ফোন করার দরকার নেই। একই বার্তা পাঠান বাংলাদেশে তার ব্যক্তিগত সহকারী রউফের কাছেও।

১৭ মে আনারের পরিবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে গোপালকে ফোন করেন। ওই সময় তারা গোপালকে জানান, তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না তারা। পরিবারের পক্ষ থেকে ওই দিনই ঢাকায় থানায় অভিযোগ করা হয়। এরপর আর এমপি আনারের খোঁজ পাওয়া যায়নি।

২০ মে এমপি আনারের খোঁজ করতে গিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তার মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করে। তারা জানতে পারে, কলকাতায় বন্ধুর বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তার মোবাইলের লোকেশন একবার পাওয়া গিয়েছিল সেখানকার নিউমার্কেট এলাকায়। এরপর ১৭ মে তার ফোন কিছুক্ষণের জন্য সচল ছিল বিহারে।

পরে বুধবার (২২ মে) ভারতের সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়, কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিভা গার্ডেন্সের একটি ফ্লাটে এমপি আনারকে খুন করা হয়েছে।  




👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles