Saturday, April 19, 2025

ঈদযাত্রায় প্রত্যাশিত যাত্রী নেই লঞ্চে


ঈদে যাত্রী খরায় ভুগছে সদরঘাট থেকে দক্ষিণাঞ্চলে চলাচলকারী লঞ্চগুলো। লঞ্চ-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েকদিনে স্বাভাবিকের তুলনায় যাত্রীর সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও তা আশানুরূপ নয়। পর্যাপ্ত যাত্রী না থাকায় কয়েকটি লঞ্চের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। নিয়মমাফিক লঞ্চ চলাচল করলেও লঞ্চ মালিক-শ্রমিকদের প্রত্যাশার চেয়ে যাত্রী অনেক কম। ঈদের আগের সাত দিন গড়ে আড়াই লাখ যাত্রীর আশা করলেও এখনও লাখের কোটাই পূরণ হয়নি।

রবিবার (৭ এপ্রিল) সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, টার্মিনালে তেমন একটা ভিড় নেই। বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলাগামী লঞ্চগুলো অনেকটাই ফাঁকা। শুধুমাত্র চাঁদপুর রুটের যাত্রীদের ভিড় উপচেপড়া। ভোলা, বরগুনা, হাতিয়া রুটগুলোতেও কিছুটা ভিড় ছিল। বরিশাল রুটে ছয়টি লঞ্চ যাওয়ার কথা থাকলেও যাত্রী সংকটে তিনটির যাত্রা বাতিল করা হয়।

যাত্রীরা জানান, পর্যাপ্ত লঞ্চ ও বেশি ভিড় না থাকায় তারা অনেকটা স্বাচ্ছন্দে ও আরাম করেই বাড়ি ফিরতে পারছেন। বরিশালগামী লঞ্চের যাত্রী বাইজিদ হোসেন বলেন, একটা সময় ছিল লঞ্চে মানুষের ভিড়ে ঠিকমতো দাঁড়ানো যেত না। এখন প্রায় লঞ্চ খালি থাকে। যে যেখানে ইচ্ছা সেখানে বসে যেতে পারে। অধিকাংশ মানুষ সময় বাঁচানোর জন্য বাসে যাতায়াত করেন। তবে লঞ্চ যাত্রা নিরাপদ ও আরামদায়কের কারণে সময় বেশি লাগলেও আমাদের প্রথম পছন্দ লঞ্চে যাতায়াত করা।

ঢাকা-চাঁদপুর রুটে যাত্রীদের যাত্রীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো

চাঁদপুরগামী লঞ্চ যাত্রী মোবারক হোসেন বলেন, পরিবার নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছি। আত্মীয়-স্বজন সবার সঙ্গে ঈদ করবো। বাড়িতে বাবা–মা আছে। দাদা–দাদু আছে। আমাদের জন্য বাসের চেয়ে লঞ্চে যাতায়াতের সুবিধা বেশি। তবে এই সুবিধা ঈদের সময় অসুবিধায় রূপান্তরিত হয়। এই রুটে মানুষের সবচেয়ে বেশি ভিড় থাকে। অন্যান্য সময় আরাম করে লঞ্চে যাওয়া গেলেও ঈদের সময় যায় না।

এবার অনেকটা নির্বিঘ্নেই যেতে পারছেন যাত্রীরা। যাত্রী কমে যাওয়ায়, হতাশ লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা। তবে আগামীকাল থেকে লঞ্চে আরও বেশি যাত্রী প্রত্যাশা করছেন লঞ্চ মালিকরা। বরিশালগামী লঞ্চের শাহেদ নামের একজন লঞ্চশ্রমিক বলেন, লঞ্চে কেবিনের চাপ নেই। তাছাড়া ডেকেও যাত্রী নেই। যাত্রী সংকটে আমার লঞ্চ বন্ধ আছে। আমি এখন অন্য লঞ্চে সার্ভিস দেবো। লঞ্চ না চললে তো আমাদের বেতন চলবে না। বরিশাল রুটে এই দুর্দশা কখনও হয়নি।

নিজ রুটের লঞ্চ ধরার জন্য ছুটছেন যাত্রীরা

চাঁদপুর রুটে একচেটিয়া ব্যবসা

সদরঘাট থেকে যতগুলো রুটে ঢাকা থেকে লঞ্চ যায় তার মধ্যে কেবল চাঁদপুর রুটে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। বরিশাল রুটে যখন যাত্রী খরায় ভুগছেন লঞ্চ মালিকরা তখন চাঁদপুর রুটে চলছে একচেটিয়া ব্যবসা। চাঁদপুর রুটের নাফিস নামের একজন লঞ্চশ্রমিক বলেন, গত দুই দিন চাঁদপুরগামী লঞ্চে বেশ ভালো ভিড় ছিল। ভিড় আরও বাড়ছে। এই রুটে চাঁদপুর লক্ষীপুর নোয়াখালীর যাত্রীদের পদচারণা বেশি। চাঁদপুর লক্ষ্মীপুরের বেশিরভাগ মানুষ লঞ্চে চলাচল করেন। কাল-পরশু আরও বেশি ভিড় হবে বলেও জানান তিনি।

চাঁদপুর রুটে লঞ্চ মালিকদের একচেটিয়া ব্যবসার বিষয়ে সোহাগ নামে একজন যাত্রী বলেন, অন্য সব রুটে যখন যাত্রী খরা চাঁদপুর রুটে তখন একচেটিয়া ব্যবসা চলছে। এই সুবাদে লঞ্চ মালিকরা ভাড়া বাড়িয়েছেন। এখানে দুই বছর আগেও লোকাল ভাড়া ছিল ১০০ টাকা মাত্র। এখন সেই ভাড়া ২০০ টাকা। ঈদ উপলক্ষে আড়াইশো টাকা পর্যন্ত ভাড়া হয়েছে। ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে লঞ্চশ্রমিকরা জানান, ভাড়া ঈদ উপলক্ষে নয় আরও অনেক আগেই বাড়ানো হয়েছে। তেলের দাম বেড়েছে তাই ভাড়াও বেড়েছে।

এদিকে যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। সদরঘাট নৌ থানার ওসি আবুল কালাম বলেন, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা যাত্রীদের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে কাজ করছেন। সাদা পোশাকেও অনেকে দায়িত্ব পালন করছেন। যাত্রীর চাপ বাড়লে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হবে।



Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles