Tuesday, June 24, 2025

আন্দোলন পরবর্তী মানসিক ট্রমা, ৫ ধরনের সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ


কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে সৃষ্ট সহিংসতা বেড়ে গেলে সর্বস্তরের শিক্ষার্থীরা রাজপথের দখল নেয়। মধ্য জুলাই থেকে শুরু করে ৫ আগস্ট সরকার পতন পর্যন্ত হামলা, গুলিবর্ষণ, রাতের আঁধারে বাসায় বাসায় তল্লাশি, ইন্টারনেটবিহীন আন্দোলনের মাঠ, সহপাঠীদের হত্যার মধ্য দিয়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতা নিয়ে ঘরে ফিরেছেন শিক্ষার্থীরা। সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবি নিয়ে গেলেও একদফা দাবির রূপ নেয় আন্দোলন। সেই ভয়াবহ বর্বরতা ও নৃশংসতার শিকার হওয়ার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নিয়ে ঘরে ফিরেও যেন ফিরতে পারেননি পুরোটা। এখনও বন্ধুদের সঙ্গে যেখানেই বসছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যখনই ঢুকছেন, পরিবারের লোকজনের সঙ্গে একসঙ্গে হলেই সেই একই আলোচনা।  এখনও সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলেনি। দাবির মুখে অর্ধেক হওয়া এইচএসসি পরীক্ষা আর না নেওয়ার সিদ্ধান্তও নিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে কীভাবে ‘স্বাভাবিক’ হবে পরিস্থিতি, সে নিয়ে বিস্তর আলাপ অভিভাবকদের মধ্যেও।

রাজধানীর শাহবাগে কোটা সংস্কার আন্দোলন, ছবি: ফোকাস বাংলা শিক্ষাবিদ ও মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এধরনের বড় একটা আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিজেকে আবিষ্কারের পরে ‘স্বাভাবিক’ জীবনে ফিরতে সব বয়সীদেরই সমস্যা হবে স্বাভাবিক। তারা বলছেন, দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে সহানুভূতি তৈরির চেষ্টা করা, শিক্ষার্থীকে তার বনের লক্ষ্যের বিষয় মনে করিয়ে দেওয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিনিয়ত ছড়িয়ে পড়া ছবি ও কনটেন্ট থেকে দূরে রাখার পরামর্শ দেওয়া এবং পরিবারের সদস্যরা ‘কোয়ালিটি টাইম’ কাটানোর মধ্য দিয়ে নিয়মিত জীবনে ফেরা জরুরি।

মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসকের মতে, আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের ‘একিউট স্ট্রেস ডিস-অর্ডার’ এবং পরবর্তী সময়ে ‘পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিস-অর্ডার’ বা ‘পিটিএসডি’ হতে পারে। প্রিয়জন হারানোর বেদনায় অনেকে বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হতে পারেন। সহিংসতার ভয়ংকর স্মৃতি ফিরে ফিরে আসতে পারে।  মনোরোগ বিশ্লেষক মেখলা সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে  বলেন, ‘তারা একটা বড় আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বড় অর্জন করেছে। সেখান থেকে তাদেরকে এখন নিয়মিত জীবনে ফেরাতে হলে বেশকিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তাদের অর্জনটা অনেক বড়। কিন্তু সেটা অর্জন করতে যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির মধ্য দিয়ে তাদের যেতে হয়েছে, সেটা সামাল দেওয়ার জন্য একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই যেতে হবে। এত অল্প সময়ে এতকিছু থেকে বের হয়ে আসা কঠিন, যদি রাষ্ট্র ও সমাজের সহযোগিতা না পায়।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ছবি: সাজ্জাদ হোসেন দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে

১৬ জুলাই দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ইউজিসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় দেশের সব পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত মেডিক্যাল, টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও অন্যান্য কলেজসহ সব কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।’

এরপর সম্প্রতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়া হলেও এখনও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হয়নি। গত সপ্তাহে ব্র্যাকের শিক্ষার্থীরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরছিলেন, তখন শিক্ষকরা প্রধান ফটকে দাঁড়িয়ে তাদের অভিনন্দন জানানো, স্বাগত জানানোর কাজটি করছিলেন। অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক প্রথম দিন ফেরার অভিজ্ঞতা লিখতে গিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে আজকে সকালে গিয়ে খানিকটা অবাক ও অভিভূত হতে হয়েছে। ফ্যাকাল্টি ফ্লোরে ঢুকেই দেখা গেলো— প্রত্যেক শিক্ষকের কক্ষের দরজায় ও হাতলের গায়ে স্কচটেপ দিয়ে আটকে রাখা গোলাপ ও রজনীগন্ধার পুষ্পগুচ্ছ। সঙ্গে রঙিন কাগজের ওপরে হাতে লেখা চিঠি। দীর্ঘ সময়-মাস দেড়েক-শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষকরা মুখিয়ে ছিলেন। খেলার মাঠ ওদের জন্য মুখিয়ে ছিল। ওদের জন্য মুখিয়ে ছিল লাইব্রেরি এবং ক্যাম্পাস আলো করা চন্দ্রপ্রভা ফুলের ঝাঁক। এম্ফিথিয়েটার ওদের জন্য মুখিয়ে ছিল। অডিটোরিয়ামগুলো ওদের জন্য মুখিয়ে ছিল।’

প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী একসঙ্গে সেশন

কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সহিংসতার ঘটনায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়েই মানসিক ট্রমার মধ্যে রয়েছেন। এরইমধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়া হলেও ক্লাস পরীক্ষা পুরোদমে শুরু করা সম্ভব হয়নি, শিক্ষার্থী উপস্থিতিও কম। আবার বেশকিছু জায়গায় শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের পদত্যাগে বাধ্য করেছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ট্রমা কাটিয়ে তুলতে তাদের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়ন ঘটাতে বিশ্ববিদ্যালয়কেই এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা।  তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই বিশাল আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যাওয়ার কারণে দেশের সব শিক্ষার্থীর ওপর প্রভাব পড়েছে। এরা নিজেদের চোখের সামনে সহপাঠী, পরিবার-পরিজন, বন্ধু-স্বজনকে মারা যেতে দেখেছেন, নিজেরা আহত হয়েছেন। প্রতিষ্ঠানকে প্রথম উদ্যোগটা নিতে হবে। কীভাবে ক্লাসে ফিরবে এবং সেখানে তাদের প্রতি আচরণ কী হবে, সে বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে। কারও কারও ক্ষেত্রে কাউন্সিলিংয়ের দরকার হলে, সে ব্যবস্থাও করতে হবে।’

রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ছবি: সাজ্জাদ হোসেন পারিবারিক পরিসরে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত

সহিংসতার শিকার সহপাঠীদের রক্ষা করতে না পারার হতাশা থেকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিষণ্নতা দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসকরা। অভিভাবকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে তারা দেখছেন, সন্তানরা কোনও কোনও ক্ষেত্রে অমনোযোগী হয়ে গেছে। মন মতো কিছু না হলে দ্রুত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে। আচরণে এধরনের পরিবর্তন স্বাভাবিক উল্লেখ করে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সন্তানদের প্রতি একটু বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে। এই সন্তান বন্দুকের সামনে বুক পেতে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল না। পরিস্থিতির কারণে তারা সেই পর্যায় পর্যন্ত করতে পেরেছে। ফলে এখন যখন সে ঘরে ফিরেছে, তখন সেই ২০/২৫ দিনের জীবনের প্রভাব রয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। এখন পরিবারে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, সমাজে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করতে হবে।’

সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব ও সতর্কতা নিয়েও ভাবতে হবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শুরু থেকে আন্দোলনকারী ও বিরোধিতাকারী উভয়পক্ষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় ছিল এবং ইস্যু ধরে সাইবার জগতে তর্ক-বিতর্ক জারি আছে। যে আন্দোলন শিক্ষার্থীরা করেছেন সেটার অর্জন মিলেছে। এখন সেখান থেকে বেরিয়ে এসে শিক্ষা জীবনে মনোযোগ দিতে হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নেতিবাচক ও ঘৃণাবাচক বিষয়গুলো থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সেটা একদিনে হবে না। সন্তান ও অভিভাবক আলোচনার মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় সেল্ফ ফিল্টারিং এর সিদ্ধান্ত নিলে সেটা সম্ভব। বাসায় যদি অভিভাবক ফেসবুকে থাকেন, আর সন্তানকে নিষেধ করেন, তাহলে সেটা কার্যকর হবে না।’




👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles