Thursday, April 17, 2025

আজিজ মোহাম্মদসহ ৯ জনের মৃত্যুদণ্ড চায় রাষ্ট্রপক্ষ, খালাসের দাবি আসামিপক্ষের


রাজধানীর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে ২৫ বছর আগে সন্ত্রাসীদের গুলিতে খুন হন নব্বই দশকের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী। ওই ঘটনায় সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২৫ বছর পর ওই মামলার রায় ঘোষণার জন্য বৃহস্পতিবার (৯ মে) দিন ধার্য করেছেন আদালত। মামলার রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজসহ ৯ আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করছেন। তবে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা মনে করেন, রাষ্ট্রপক্ষ অপরাধ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় আসামিরা সবাই খালাস পাবেন।

বৃহস্পতিবার (৯ মে) ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক অরুণাভ চক্রবর্ত্তীর আদালত এই রায় ঘোষণা করবেন। গত ২৯ এপ্রিল রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক রায় ঘোষণার এই তারিখ নির্ধারণ করেন।

সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাদিয়া আফরোজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলাটি ২৫ বছর আগের। অনেক সাক্ষীই মারা গেছেন। এই মামলায় সাক্ষী হিসেবে যাদেরকে পাওয়া গেছে— রাষ্ট্রপক্ষ তাদেরই সাক্ষ্যগ্রহণ করেছে। এ কারণে রাষ্ট্রপক্ষ আশাবাদী যে, সব আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে। এই মামলায় আসামি আদনাম সিদ্দিকী ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। ঘটনার সময় এই আসামি বনানীর আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবে গিয়েছিলেন। অন্যান্য আসামির সঙ্গে ভিকটিমকে (সোহেল চৌধুরী) দেখেছেন। ট্রাম্পস ক্লাবে মদ খেয়েছেন।  আদনাম সিদ্দিকীর দেওয়া জবানবন্দিতে এই বিষয়গুলো ওঠে এসেছে।  রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। আশা করছি, সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যদণ্ড হবে এবং ভিকটিমের পরিবার ন্যায়বিচার পাবে।’

এদিকে আসামিদের পক্ষের আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চিত্রনায়ক সোহেল চেীধুরী হত্যা মামলাটি অবশ্যই একটি আলোচিত মামলা। আমরাও এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই। অভিযোগপত্রে অনেক আসামির নাম থাকলেও সুনির্দিষ্টভাবে কোনও অভিযোগ নেই। অনেকের শুধুমাত্র অভিযোগপত্রে নামটাই এসেছে। কোনও অভিযোগ নেই। মামলাটিতে ১০ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাদের কেউই আসামিদের নাম ঠিকঠাক বলতে পারেননি। রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আশা করছি, এ মামলার রায়ে আসামিরা খালাস পাবেন।’ 

আসামি আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীর পক্ষের আইনজীবী সেলিম আশরাফ বলেন, ‘আসামির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ মামলার অভিযোগ প্রমাণ করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এখনও কোনও সাক্ষী বোতল চৌধুরীর নাম বলেনি। এমনকি মামলার বাদী তার জবানবন্দিতে এই আসামির নাম বলেনি। আসামি নির্দোষ। তাকে হয়রানি করার জন্য এই মামলায় জড়ানো হয়েছে। আসামির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ সুনির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেননি। আশা করি, এই মামলার রায়ে আসামি খালাস পাবেন।’

মামলার সূত্রে জানা যায়, চিত্রনায়িকা দিতিকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন সোহেল চৌধুরী। কিছুদিন পর তাদের দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়।  এতে করে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন সোহেল চৌধুরী। জড়িয়ে পড়েন নেশার জগতে। নেশা ও জুয়ায় ডুবে থাকতেন তিনি। একপর্যায়ে সেই অন্ধকার জগতের অপরাধীদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। সেই দ্বন্দ্বের রেশ ধরেই তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়।

১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যান নায়ক সোহেল চৌধুরী। ওই ঘটনায় সোহেল চৌধুরীর বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী রাজধানীর গুলশান থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটির তদন্ত শেষে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন।

মামলার অভিযোগপত্রে থাকা আসামিরা হলেন—আদনান সিদ্দিকী, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আসফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, তারিক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, ফারুক আব্বাসী, শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ও আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী।

মামলার তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, বনানীর এক ক্লাবে সোহেল চৌধুরী তার বান্ধবীকে নিয়ে গেলে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে তর্ক হয়। উত্তেজিত হয়ে নায়ক সোহেল চৌধুরী আজিজ ভাইকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। সেদিন আজিজ মোহাম্মদকে হত্যার চেষ্টাও চালান সোহেল চৌধুরী। ঘটনার কিছু দিন পর আসামিরা সোহেল চৌধুরীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। হত্যার দিন সোহেল চৌধুরী রাত একটার দিকে বন্ধুদের নিয়ে ট্রাম্পস ক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করেন। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) তোফাজ্জল হোসেন তাকে ঢুকতে না দেওয়ায় তিনি ফিরে যান। সেদিন রাত আড়াইটার পর সোহেল চৌধুরী ফের ক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করলে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন, মামুন, লিটন, ফারুক আব্বাস ও আদনান সিদ্দিকী তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।

আরও পড়ুন:

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যাকাণ্ড: ২৫ বছরেও শেষ হয়নি বিচার

 

 




👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles