Sunday, June 30, 2024

অর্ধেকে নেমেছে পণ্য আমদানি, দুশ্চিন্তায় শ্রমিক ও বন্দর কর্তৃপক্ষ


দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য অর্ধেকে নেমেছে। আগে পণ্যবাহী আড়াই শতাধিক ট্রাক ঢুকলেও বর্তমানে তা ৩০টিতে নেমেছে। ডলার সংকটসহ নানা জটিলতায় আমদানি কমেছে বলে দাবি আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের। আমদানি কমায় দুশ্চিন্তায় আছেন শ্রমিকরা। আয় কমায় বন্দরের ব্যয়ভার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, দেশের মোট চাহিদার বেশিরভাগ পণ্য আমদানি হয় এই বন্দর দিয়ে। প্রতিদিন চাল-ডাল, পেঁয়াজ, খৈল, ভুসি, ভুট্টা ও পাথরসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী আড়াই শতাধিক ট্রাক ঢুকতো। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকতো বন্দর। কিন্তু দিন দিন স্থবিরতা নেমে এসেছে। আমদানি কমায় আয় কমেছে শ্রমিকদের। এতে বিপাকে পড়েছেন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও কর্মীরা। ইতোমধ্যে বন্দরের ৩৭ কর্মচারীকে ছুটিতে পাঠিয়ে ব্যয় কমানোর চেষ্টা চালাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। 

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২ লাখ ৯৭ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছিল। সেখানে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের গত ১১ মাসে ছয় লাখ ২৫ হাজার টন পণ্য আমদানি হয়েছে।

দুশ্চিন্তার কথা জানিয়ে বন্দরের শ্রমিক রেজাউল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগে আমদানি-রফতানি বেশি হওয়ায় আমাদের আয় বেশি হতো। বর্তমানে কমে যাওয়ায় আমাদের কাজ নেই বললেই চলে। এমনও দিন যাচ্ছে কোনও কাজ পাচ্ছি না। এতে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন সারাদিনে ২০-২৫টি পণ্যবাহী ট্রাক ঢুকছে। যেখানে শ্রমিক আছে তিন শতাধিক। যার কারণে সবার অবস্থা খারাপ। দিন শেষে ৪০ থেকে ৫০ টাকা করে জুটছে ভাগে। কোনোদিন সেটিও হচ্ছে না। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি আমরা।’

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অফিসের কর্মচারী কাঞ্চন পাঠান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা খুবই খারাপ। আমাদের অফিসের কর্মচারী নয় জন। আগে প্রতিদিন ৩০-৪০টি ট্রাকের পণ্য খালাস করতে পারতাম। তাতে কর্মচারীদের বেতন দিয়ে অফিসের লাভ হতো। এখন সব মিলিয়ে বন্দরে ট্রাক ঢুকছে ২৫-৩০টি। এতে অফিসের আয় তো দূরের কথা কর্মচারীদের বেতন দিতেই হিমশিম খাওয়া লাগছে।’ 

একই কথা বলেছেন বন্দরের আমদানিকারক রিপন হোসেন। বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগে আমার প্রতিষ্ঠানে ১০টির মতো এলসি খোলা হতো। বর্তমানে তা শূন্যে নেমেছে। কোনও মাসে এক-দুইটা এলসি হলেও পরের মাসে নেই। ডলার সংকটের মধ্যে এলসি খুললেও দেখা যায় বিল ছাড়তে গিয়ে লোকসানে পড়তে হচ্ছে। এলসি খোলার সময় দেখি টাকার এক দাম, বিল ছাড়তে গিয়ে দেখি আরেক দাম। ফলে এলসি খুলে লোকসান হওয়ায় আমদানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এছাড়া আমরা যেসব পণ্য আমদানি করি, একই পণ্য অন্যান্য বন্দর দিয়ে আমদানি করলে কমমূল্যে শুল্কায়নসহ অন্যান্য সুবিধা পাওয়া যায়। কিন্তু হিলি দিয়ে সুবিধা তো দূরের কথা উল্টো বাড়তি মূল্যে শুল্কায়ন করা হয়। ফলে আমদানির পরিমাণ কমে গেছে।’

বন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এনামুল খান বলেন, ‘ডলার সংকটের কারণে এখন এলসি কম খোলা হচ্ছে। এজন্য পণ্যবাহী ট্রাক কম আসছে। আবার আমদানির ক্ষেত্রে খরচ বেশি পড়ায় আমদানির পরিমাণও কমেছে। ফলে দুই-চার জন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কাজ পেলেও অধিকাংশ এজেন্টের কাজ নেই। তারা বসে আছে। এ অবস্থায় সব মিলিয়ে এজেন্ট, মালিক, কর্মচারী ও বন্দরের শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।’

কেন আমদানি কমেছে জানতে চাইলে হিলি কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জামিল হোসেন চলন্ত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মূল কারণ আমদানিকারকরা চাহিদা অনুযায়ী এলসি খুলতে পারছেন না। চাহিদা অনুযায়ী এলসি করতে পারলে আমদানি-রফতানি বাড়বে। এছাড়া বন্দরের চেকপোস্ট গেট থেকে শুরু বন্দরের গেট, চারমাথা হয়ে মহিলা কলেজ পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়কের অবস্থা বেহাল। চারলেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু হয়ে অল্প কিছু এলাকায় হলেও বাকি সড়কের কাজ সাড়ে তিন বছর ধরে বন্ধ আছে। ফলে সড়কটি দিয়ে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল তো দূরের কথা মানুষ চলাচলের অনুপযোগী। আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য হলেও সড়কটির কাজ দ্রুত শেষ করা দরকার।’

বন্দরের আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগে প্রতিদিন আড়াই শতাধিক ট্রাক বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে আসা-যাওয়া করতো। এখন তা অর্ধেকের নিচে নেমেছে। কারণ ডলার সংকট। ব্যাংকগুলো আমাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের এলসি খুলতে দিচ্ছে না। বিভিন্নভাবে ব্যাংকগুলো এলসি খোলা থেকে নিরুৎসাহিত করছেন আমাদের। আগে দিনে শুধু পেঁয়াজ ঢুকতো ৫০-৬০ ট্রাক। কিন্তু ভারত পেঁয়াজ রফতানির ওপর ৪০ ভাগ শুল্ক আরোপ করায় দেশের বাজারে চাহিদা থাকলেও দাম বেশি পড়ায় আমদানি করছেন না আমদানিকারকরা। এছাড়া গোখাদ্য আমদানিও কমে গেছে। আগে শতাধিক ট্রাকে পাথর আমদানি হতো। বর্তমানে হয় না। এ ছাড়া অন্যান্য বন্দর কমমূল্যে শুল্কায়ন করলেও এখানে বাড়তি মূল্যে শুল্কায়ন করা হয়। এটিও আমদানি কমার আরেকটি কারণ।’ 

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমদানি-রফতানি বাণিজ্য অব্যাহত আছে। তবে তা অর্ধেকে নেমেছে। আগে প্রতিদিন ২২০-২৩০ ট্রাকে বিভিন্ন পণ্য এলেও এখন তা ৩০টিতে নেমেছে। এতে সরকারের রাজস্ব কমার সঙ্গে সঙ্গে আয়ও কমেছে বন্দর কর্তৃপক্ষের।’

আমদানি কমায় কাজ না থাকায় বন্দরের কয়েকশ শ্রমিক মানবেতর জীবনযাপন করছেন উল্লেখ করে সোহরাব হোসেন আরও বলেন, ‘বন্দরের দৈনন্দিন যে অবকাঠামো ব্যয়, যে ব্যাংক লোন, ইডকল লোন; এগুলো পরিশোধ করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার মতো অবস্থা নেই আমাদের। এ নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত। পুনরায় আমদানি-রফতানি বাড়লে বন্দরের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে।’




👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles