Friday, November 22, 2024

‘অন্য রকম’ শুরুতে এগিয়ে থাকার ভাবনা


সাদা ধবধবে জার্সি গায়ে চাপিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত আগেভাগেই চলে এসেছিলেন সিলেট স্টেডিয়ামের সবুজ মাঠে। পাশেই অস্থায়ী মঞ্চে রাখা বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার টেস্ট সিরিজের ট্রফি। শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা দেরি করলেন না। অতিথি অধিনায়ক আসতেই শান্ত এগিয়ে গিয়ে হাত মেলালেন। দুজনের মুখে এক চিলতে হাসি। একটু পর ট্রফি উন্মোচন করলেন দুই দলের অধিনায়ক। 

আগের টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে ট্রফি উন্মোচনে দুই অধিনায়কের মুখে হাসি থাকলেও শেষটা কেমন হয়েছে, তা সবারই জানা। টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের পর ‘টাইমড আউট’ সেলিব্রেশন করে বাংলাদেশকে ‘তাচ্ছিল্য’ করেছিলেন ম্যাথুউস, আসালাঙ্কা, মেন্ডিসরা। ওয়ানডে সিরিজ বাংলাদেশ জিতে মুশফিক, শান্ত, মিরাজরা তার প্রতিশোধ নেন। এখন বাকি টেস্ট সিরিজ। 

এই ট্রফি যারা জিতবে, তাদের উদযাপনেই কি ‘টাইমড আউট’ সেলিব্রেশনের রফাদফা হবে? গৌরবের টেস্ট ক্রিকেটেও কি থাকবে দুই দলের খোঁচাখুঁচি? শ্রীলঙ্কার টেস্ট দলের অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে বললেন, ‘যদি আমরা জিতি, তারপর আপনি দেখতে পাবেন।’ 

বাংলাদেশ শিবির কী ভাবছে, তা জানা যায়নি। কেননা, পুরো বিষয়টি অপছন্দ করা চন্ডিকা হাথুরুসিংহে এদিন এসেছিলেন সংবাদ সম্মেলনে। জানা গেছে, দুই দলের খেলার মাঠের এই বৈরিতা অনেক দূর গড়িয়েছে। তাই, প্রতি দেখাতেই এমন কিছু হতে পারে! 

সিলেট টেস্ট শুরু হচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার (২২ মার্চ)। এই টেস্ট বাংলাদেশ নতুন অধিনায়ক শান্তর হাত ধরে শুরু করতে যাচ্ছে। আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পাওয়ার পর এটাই তার প্রথম টেস্ট। যেখানে শান্তর চেয়ে বেশি টেস্ট খেলার সংখ্যায় এগিয়ে আছেন মুমিনুল হক (৫৯), মেহেদী হাসান মিরাজ (৪১) ও লিটন দাশ (৩৯)। এই টেস্ট খেলার কথা ছিল মুশফিকুর রহিমেরও (৮৮)। কিন্তু, চট্টগ্রামে তৃতীয় ওয়ানডেতে ফিল্ডিংয়ের সময় আঙুলে চোট পাওয়ায় ছিটকে গেছেন। 

অভিজ্ঞতায় ও শক্তিতে শ্রীলঙ্কার চেয়ে বাংলাদেশ পিছিয়ে, তা মেনে নিয়েছেন বাংলাদেশের কোচ। না মানার কোনো কারণও নেই অবশ্য। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুউজ (১০৭), দিমুথ করুণারত্নে (৮৯), দিনেশ চান্দিমাল (৭৭) ও কুশল মেন্ডিসরা (৬১) টেস্ট অঙ্গনে কাটিয়ে দিয়েছেন এক দশকেরও বেশি সময়। সেখানে বাংলাদেশের হয়ে মুশফিকুর রহিমই ছিলেন একমাত্র ভরসা।

শেষবার বাংলাদেশ চার সিনিয়র—তামিম, সাকিব, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহকে ছাড়া মাঠে নেমেছিল ২০২২ সালে নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে ক্রাইস্টচার্চে। আগের ম্যাচেই বাংলাদেশ মাউন্ট মঙ্গানুইতে টেস্ট জিতেছিল। মুশফিক পরের ম্যাচে কুঁচকির চোটে খেলতে পারেনি। এবারও তার অভিজ্ঞতা মিস করবে বাংলাদেশ, তা জানাতে দ্বিধা করেননি কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। তিনি বলেছেন, ‘আমরা নিশ্চিতভাবেই মুশির (মুশফিক) অভিজ্ঞতা মিস করতে যাচ্ছি। ও দারুণ ফর্মে ছিল। তার মতো একজন খেলোয়াড়কে রিপ্লেস করাও কঠিন।’ 

তবে, তরুণদের ওপর আস্থা রাখছেন কোচ। তিনি বলেছেন, ‘তাওহীদকে আমরা দলে এনেছি। শাহাদাত আছে। সাদমানও আছে। আমরা তরুণদের ওপর আস্থা রাখতে চাচ্ছি। তারা টেস্ট দলের সঙ্গেই আছে। আশা করছি, তারা সুযোগ পেলে কাজে লাগাবে।’ 

ম্যাচে বাংলাদেশ কতজন পেসার খেলায়, সেটাই দেখার। স্কোয়াডে আছেন খালেদ আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, নাহিদ রানা ও মুশফিক হাসান। পিঠে চোট থাকায় শরিফুল দুই দিন অনুশীলন করেননি। রাতে যোগ দিয়েছেন দলের সঙ্গে। খালেদ এই স্কোয়াডের অভিজ্ঞ পেসার। বাকি দুজনের এখনো অভিষেক হয়নি। উপমহাদেশের বাইরের দলগুলোর সঙ্গে ঘরের মাঠে নামলে সবুজ ঘাসের উইকেট অফার করে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রেও তাই। তাই, তিন পেসার নিয়ে মাঠে নামলে অবাক হওয়ার থাকবে না। 

কন্ডিশন, উইকেট, প্রতিপক্ষের সীমাবদ্ধতা এসব বিবেচনায় কম্বিনেশন সাজানোর কথা বলেছেন কোচ। হাথুরু সিংহে বলেছেন, ‘তরুণ দুজন বেশ উদ্দীপ্ত ও সম্ভাবনাময়। তাদের দুজনের একজনকে দেখা যেতে পারে, আবার দুজনকেও। আদর্শ সমন্বয় নির্ভর করছে আমাদের শক্তি এবং প্রতিপক্ষের সীমাবদ্ধতার ওপর। উইকেট কিছুটা আলাদা, যেমনটা আমরা নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছি তার চেয়ে। এখানে ঘাস রাখা হয়েছে। সঙ্গে এই ম্যাচে কন্ডিশনও প্রভাব রাখবে। সবকিছু বিবেচনা করেই দল সাজানো হবে। ওদেরকে হারাতে আমাদের সেরা ক্রিকেটাই খেলতে হবে।’ 

সিলেটে কখনো টেস্ট খেলেনি শ্রীলঙ্কা। তবে, কন্ডিশন একেবারেই অচেনা নয় তাদের কাছে। তাই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচের আশায় আছেন তারা। ধনাঞ্জয়া বলেছেন, ‘কন্ডিশন নয়, আপনি কিভাবে ম্যাচে খেলছেন, সেটাই বড় বিষয়। আমরা ভালো ছন্দে আছি। ওরাও ভালো ক্রিকেট খেলছে। আশা করছি, ভালো ম্যাচই হবে। এখানে আগে আমরা খেলেছি। পার্থক্য কেবল, বলের রংটাই পরিবর্তন হচ্ছে।’ 

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে যে ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সাফল্য পাচ্ছে, টেস্টের রেকর্ড আবার ভিন্ন। শেষ ছয় ম্যাচের তিনটি ড্র করেছে। তিনটি হেরেছে। তাদের বিপক্ষে একমাত্র জয় ২০১৭ সালে কলম্বোতে। ফরম্যাট অনুযায়ী পারফরম্যান্সে পার্থক্যের ব্যবধান বিরাট। শান্তদের প্রথম চ্যালেঞ্জ এই পার্থক্যকে কমিয়ে আনা। এক্ষেত্রে ঘরের মাঠের শেষ কয়েক সিরিজের পারফরম্যান্স তাদের বড় আশা দেখাতে পারে। শেষ চার ম্যাচের তিনটিই জিতেছে বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তান ও নিউ জিল্যান্ডের (১-১) বিপক্ষে। এবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি কিংবা সিরিজ জয় টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় সার্কেলের লড়াইয়ে বাংলাদেশকে কিছুটা হলেও এগিয়ে নেবে। 

সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে হাথুরুসিংহে বলেছেন, ‘আমরা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে ভালো করতে চাই। এরইমধ্যে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে একটি ম্যাচ জিতেছি। আমরা চাই, ঘরের মাঠের সুযোগগুলোকে যতটা সম্ভব কাজে লাগাতে। তাহলে বাইরেও আমরা শক্তি দেখাতে পারব। শ্রীলঙ্কা কঠিন এবং অভিজ্ঞ দল। তবে, আমার ছেলেদের কাছ থেকে প্রত্যাশা অনেক উচুঁতে।’



Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles