Thursday, June 26, 2025

৪৮ নাগরিকের নিন্দা ও প্রতিবাদ


শিক্ষার্থী-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয় সংগীতসহ জনসাধারণের আবেগ ও অনুভূতিকে কটাক্ষ করে একটি গোষ্ঠী নানামুখী অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। এসব ঔদ্ধত্য ও হীন তৎপরতা প্রতিবাদ জানিয়ে দেশের ৪৮ জন বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতি দিয়েছেন।

এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা ওই বিবৃতি সংবাদমাধ্যমকে পাঠান।

বিবৃতিতে বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেন, ‘আমরা উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ করছি যে একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধানসহ জনরায়ে প্রতিষ্ঠিত বিষয়গুলো, এমনকি জাতীয় সংগীত নিয়ে প্রশ্ন তোলার ধৃষ্টতা দেখানো শুরু করেছে। কয়েক দিন আগে জামায়াতে ইসলামীর আমির জাতিকে অতীতের সবকিছু ভুলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। অনুমান করা যায়, অতীত বলতে তিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, সেই সময়ে তার দলের ভূমিকা ইত্যাদির কথাই বুঝিয়েছেন। সেটা আরও পরিষ্কার হলো গত ৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী সংবিধান ও জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা থেকে।

‘আমরা তার এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, সাম্প্রদায়িক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানাই। একই সঙ্গে তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অর্থ এই নয় যেখানে-সেখানে যা খুশি তা-ই বলা যায়। যে উদ্দেশ্যে তিনি ৩ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন, তার বাইরে গিয়ে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জাতীয় সংগীত ও সংবিধানের মূলনীতির প্রতি কটাক্ষ করে তিনি বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের আবেগের জায়গায় আঘাত করেছেন।

‘সবার মনে রাখা দরকার, ১৯৭১ সালে তরুণ, ছাত্র, কৃষক-শ্রমিক-সেনা-পুলিশ সদস্যসহ সব ধর্ম-জাতি-বর্ণ ও নারী-পুরুষনির্বিশেষে লাখ লাখ মানুষ ৯ মাস মরণপণ লড়াই করে চরম আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন। এর জন্য বর্বর হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসর জামায়াতসহ বিভিন্ন দলীয় ঘাতক বাহিনীর অবর্ণনীয় বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতার শিকার হতে হয়েছে নারী-পুরুষ, ছাত্র-শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী-লেখক, শিল্পী, সাংবাদিকসহ সবাইকে। সেই জ্বলন্ত ইতিহাস এই দেশের মানুষ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মনে রেখেছে এবং ভবিষ্যতেও মনে রাখবে। এই ইতিহাস ভুলে যাওয়ার কথা বলার অধিকার কিংবা দুঃসাহস কারোরই থাকার কথা নয়।

‘আর জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ গেয়েই মুক্তিযোদ্ধারা মরণপণ লড়াইয়ের শপথ নিয়ে যুদ্ধ করেছেন। তাদের অনেকে শহীদ হয়েছেন, অনেকে পঙ্গুত্বের শিকার হয়েছেন। অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধার জাতীয় সংগীত ছিল প্রেরণার সার্বক্ষণিক উৎস। তাই জাতীয় সংগীতটি কার্যত যুদ্ধের মধ্য দিয়েই লাখো শহীদের রক্তে নতুনভাবে আমাদের প্রাণের সংগীত হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। একে নিয়ে প্রশ্ন তোলা মানে মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে প্রশ্ন তোলা। একে কোনোভাবেই এই দেশের মানুষ দলমত-নির্বিশেষে ছাত্র-জনতা মেনে নেবে না।

‘সাবেক ওই সেনা কর্মকর্তা রাষ্ট্রীয় সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর আটক হয়ে ‘আয়নাঘর’-এ আট বছর বন্দি ছিলেন। গুমের শিকার ব্যক্তিদের মুক্তিসহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন এজেন্সির দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচারের দাবিতে আমরা বরাবরই সোচ্চার ছিলাম, এখনও আছি। আমরা চাই সাবেক ওই সেনা কর্মকর্তাসহ যারা ‘আয়নাঘর’-এ আটক ছিলেন, নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তারা সবাই যেন ন্যায়বিচার পান। আমরা আশা করবো, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এ বিচার নিশ্চিত করবে। কিন্তু তার সঙ্গে জাতীয় সংগীত কিংবা মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার যেকোনও প্রচেষ্টা নিতান্তই উদ্দেশ্যমূলক।

‘তাই যারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ কিংবা জাতীয় সংগীত নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চেষ্টা করছেন কিংবা অসত্য তথ্য প্রচার করছেন, তাদের এ ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় এর বিরুদ্ধে জনপ্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আরও বৃহৎ কর্মসূচি দিতে আমরা বাধ্য হবো।

‘সব মহলকে আমরা এ কথাটি মনে করিয়ে দিতে চাই যে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে যে লাখ লাখ শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থান বা বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল জুলাই মাসে, ৫ আগস্ট তার বিজয়কে আমরা দ্বিতীয় বিজয় বলে অভিহিত করেছি। কিন্তু কোনো মহল যদি এই বিজয়কে একাত্তরের বিজয় দিবস কিংবা মহান মুক্তিযুদ্ধের বিপরীতে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা চালায়, তাকে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও তার গৌরবময় বিজয়ের দুশমন বলেই চিহ্নিত করতে হবে। তাই সংগত কারণেই আমরা এ গোষ্ঠীটির অপতৎপরতার বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানাই।

শত শত শিক্ষার্থী, শিশু, কিশোরী-কিশোর ও জনতার প্রাণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও গণতন্ত্রের যে বিজয় অর্জিত হলো, তাকে সংকীর্ণ দলীয় ও গোষ্ঠীগত স্বার্থ হাসিলের জন্য কোনও সাম্প্রদায়িক অথবা অন্য গোষ্ঠী যাতে ব্যবহার করতে না পারে, সে জন্য আমাদের সবাইকে সতর্ক, সজাগ ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

বিবৃতিতে যারা সই করেন
১. ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২. সুলতানা কামাল, মানবাধিকার কর্মী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা
৩. খুশি কবীর, সমন্বয়ক, নিজেরা করি
৪. আনু মোহাম্মদ, অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৫. রাশেদা কে. চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক গণস্বাক্ষরতা অভিযান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা
৬. অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
৭. ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি
৮. পারভীন হাসান, উপাচার্য, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি
৯. অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
১০. অধ্যাপক ড. মো. হারন-অর-রশিদ, সাধারণ সম্পাদক, মৌলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানী পরিষদ
১১. অ্যাডভোকেট তবারক হোসেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী
১২. ড. শহিদুল আলম, আলোকচিত্রী
১৩. শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, এএলআরডি
১৪. রেহনুমা আহমেদ, লেখক
১৫. ড. শাহনাজ হুদা, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৬. রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৭. ড. খাইরুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৮. ঈশানী চক্রবর্তী, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৯. জোবায়দা নাসরিন, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২০. অধ্যাপক মাহা মির্জা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
২১. সামিনা লুৎফা, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২২. ড. সাদাফ নুর, গবেষক, ল্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়
২৩. ড. নূর মোহম্মদ তালুকদার, সভাপতি, বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়
২৪. মাযহারুল ইসলাম বাবলা, নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত
২৫. এ এস এম কামালউদ্দিন, সভাপতি, বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র
২৬. মফিদুর রহমান লাল্টু, সাধারণ সম্পাদক, বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র
২৭. অ্যাডভোকেট মিনহাজুল হক চৌধুরী, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
২৮. সালেহ আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন
২৯. মনিন্দ্র কুমার নাথ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ
৩০. রেজাউল করিম চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক, কোস্ট ট্রাস্ট
৩১. ফারহা তানজীম তিতিল, সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
৩২. তাসনীম সিরাজ মাহবুব, সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩৩. জাকির হোসেন, প্রধান নির্বাহী, নাগরিক উদ্যোগ
৩৪. অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান, প্রধান নির্বাহী, এমএসএফ
৩৫. ব্যারিস্টার আশরাফ আলী, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
৩৬. ব্যারিস্টার শাহদাত আলম, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
৩৭. অ্যাডভোকেট নাজমুল হুদা, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
৩৮. অ্যাডভোকেট এম এম খালেকুজ্জামান, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
৩৯. অ্যাডভোকেট মো. আজিজুল্লাহ ইমন, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
৪০. অ্যাডভোকেট প্রিন্স আল মাসুদ, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
৪১. অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
৪২. অ্যাডভোকেট শায়লা শারমীন, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
৪৩. তাপসী রাবেয়া, মানধাধিকার কর্মী
৪৪. অ্যাডভোকেট আজমীর হোসেন, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
৪৫. দীপায়ন খীসা, মানবাধিকার কর্মী
৪৬. বাপ্পী মাশেকুর রহমান, মানবাধিকরা কর্মী ও সংগীতশিল্পী
৪৭. হানা শামস আহমেদ, আদিবাসী অধিকার কর্মী
৪৮. মুক্তাশ্রী চাকমা, কোর গ্রুপ, সাঙ্গাত




👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles