ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাত হানার প্রায় এক সপ্তাহ হতে চললো, এখনও সুন্দরবনজুড়ে হাহাকার। উপকূলীয় এলাকা ও আশপাশের মানুষ এখন আবারও উঠে দাঁড়ানোর সংগ্রামে আছেন। কিন্তু বনের নিরীহ প্রাণীরা এখনও স্বাভাবিক আচরণ করছে না। শুক্রবার (৩১ মে) পর্যন্ত সুন্দরবন থেকে ১২৭ মৃত হরিণ উদ্ধারের কথা বলা হলেও সেটাই চূড়ান্ত নয়। ভেসে গেছে, এখনও মৃতদেহ পাওয়া যায়নি; এমন আরও হরিণ থাকতে পারে এমন শঙ্কার কথা জানাচ্ছেন বন কর্মকর্তারা। আর বিস্ময় প্রকাশ করে আগের ঝড়ের সঙ্গে সদ্য হওয়া রিমালের বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্যগুলো নিয়ে এখনও বিশ্লেষণ করছেন তারা।
গত রবিবার (২৬ মে) আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থান থেকে ১২৭টি মৃত হরিণ ও চারটি মৃত বন্য শুকরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া জলোচ্ছ্বাসে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার হওয়া ১৮টি জীবিত হরিণ ও একটি জীবিত অজগর সাপ বনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
উদ্ধার মৃত বন্য প্রাণীগুলো মূলত কটকা, কচিখালী, দুবলা, নীলকমল, আলোরকোল, ডিমের চর, পক্ষীরচর, জ্ঞানপাড়া, শেলার চর এবং বিভিন্ন নদী ও খালে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া গেছে। এই এলাকাগুলো মূলত বনের পূর্বাঞ্চল। এই অঞ্চলেই প্রাণী হতাহত বেশি হয়েছে।
বন কর্মকর্তারা বলছেন, বেশিরভাগ হরিণ যেখানে আশ্রয় নিয়েছিল সেখানে ছোট গাছের সংখ্যা কম থাকায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে প্রাণীগুলো। আর বনের পশ্চিম এলাকায় গরান বন বেশি হওয়ায় সেদিকে বন্যপ্রাণীর মৃত্যু কম হয়েছে। সেখানে মূলত প্রাণীগুলো ছোট ছোট গাছে আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো সাংবাদিকদের বলেন, আজ সারা দিন সুন্দরবনের কটকা, কচিখালী, করমজল, পক্ষীর চর, ডিমের চর, শেলারচর, নীলকমল ও নারিকেলবাড়িয়া এলাকায় মৃত বন্য প্রাণীগুলো পাওয়া গেছে। মৃত বন্য প্রাণীগুলোকে কটকা অভয়ারণ্য এলাকায় মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে।
এত প্রাণীর মৃত্যুর কারণ সুনির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল তবে বনের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে কারণ বলা যেতে পারে উল্লেখ করে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, ঝড় এবং জলোচ্ছ্বাস প্রধান কারণ। আমাদের ঝড়ের অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণে বলা যায়, সবসময় ঝড় এক জোয়ারে শেষ হয়। তবে এবারের ঘূর্ণিঝড় রিমাল সেটা ভেঙেছে। পর পর দুই দিন ধরে সুন্দরবনে জোয়ার ছিল। আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে এ সময় মানে ৪৮ ঘণ্টা কোনও ভাটা হয়নি। মানে ভাটার সময়েও পানি নামেনি। ফলে লম্বা সময় ধরে আশ্রয় খুঁজে না পেয়ে এই প্রাণীগুলো মারা গেছে। এখন পর্যন্ত ১২৭টি হরিণ বলছি, কিন্তু সেটা আরও বাড়তে পারে।
পূর্ব ও পশ্চিমের বনের বৈশিষ্ট্য ভিন্নরকম উল্লেখ করে তিনি বলেন, কটকা, কচুখালি এলাকায় কেওড়াগাছ বেশি। কেওড়া অনেক উঁচু গাছ এবং এই এলাকায় এই উঁচু গাছের নিচে ছোট গাছ জন্মে না। কিন্তু কেওড়াপাতা হরিণের খুব প্রিয়। তারা এখানে কেওড়াপাতা খেতে এসে আটকা পড়েছে বলে আমার ধারণা। এই আটকে পড়ার পরে পানির উচ্চতার কারণে তারা আর কোন গাছও পায়নি যেটাকে আশ্রয় করে বাঁচবে।
এই বন কর্মকর্তা বলেন, আবার সুন্দরবনের পশ্চিম এলাকায় গরান গাছ বেশি। গরান গাছগুলো ঝোপের মতো গাছ। ফলে প্রবলভাবে পানি গরান বনে পানি ঢুকতে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রাণীগুলো সাপোর্ট ও সময় দুটোই পেয়েছে। তাই সেখানে বন্য প্রাণীর মৃতের সংখ্যা কম।
জোয়ার ভাটার এই অস্বাভাবিকতা নিয়ে শুরুর দিন থেকেই কথা বলেছেন এলাকাবাসী। দাকোপ মোড়েলগঞ্জের এলাকাবাসী টানা দুই দিন বিচ্ছিন্ন থেকেছে সবধরনের যোগাযোগ থেকে। এমনকি যারা আশ্রয়কেন্দ্রে না গিয়ে বাড়িতে উঁচু স্থানে অবস্থান নিয়েছিলেন তারাও দীর্ঘস্থায়ী এ ঝড়ের কারণে একদিন পরই বিপর্যস্ত বোধ করতে শুরু করেন।
এমনটা সিডরের সময় দেখেননি উল্লেখ করে মোড়েলগঞ্জের খাদেম মিয়া বলেন, এত লম্বা সময় ঝড় আর এত লম্বা সময় জোয়ার আমি ৫৫ বছরের জীবনে মনে করতে পারি না।
এদিকে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তারা মনে করছেন, ভাটা হয়নি। আসলে ভাটা হয়েছে কিন্তু পানি নামেনি। সুন্দরবনে ছয় ঘণ্টা পর পর জোয়ার ভাটা হয়। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের দুই দিনে ৪৮ ঘণ্টায় চারবার জোয়ার, চারবার ভাটা হওয়ার কথা থাকলেও পানি কেবল বেড়েছে এবং আটকে থেকেছে। ভাটা বোঝা যায়নি। দীর্ঘ সময় পানি আটকে থাকায় বন্য প্রাণীর মৃত্যুর ঘটনা বেশি।
উল্লেখ্য, প্রাথমিক হিসাব বলছে, রিমালের তাণ্ডবে উপকূলীয় ১৯টি জেলার প্রায় ৪৬ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পৌনে ২ লাখ বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।
👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com