Sunday, June 29, 2025

বন্যা পরবর্তী জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং সমাধান


বাংলাদেশে বন্যা একটি নিয়মিত এবং প্রচণ্ড ধ্বংসাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যা প্রতি বছর দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভয়াবহ প্রভাব ফেলে। আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষকে বন্যাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিষয়ে এমনিতেই অবহিত থাকতে হয়। কিন্তু পৃথিবীতে অনেক দেশ রয়েছে যেখানে সাধারণ মানুষদের এসব বিষয়ে কোনও ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় না এবং অবহিত থাকতে হয় না। বাংলাদেশ গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর ত্রিভুজ অঞ্চল বা ডেল্টায় অবস্থিত, যা বিশ্বের বৃহত্তম নদী ডেল্টা। এই নদীগুলোর পানি প্রবাহ বাংলাদেশে এসে একত্রিত হয় এবং সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হতে থাকে। এ কারণে ভারী বর্ষণ, হঠাৎ ভারী বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা অতিরিক্ত পানি বাংলাদেশের নিচু ভূমিতে সাধারণত বন্যা সৃষ্টি করে। সাম্প্রতিক চলমান বন্যা এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

বাংলাদেশে জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে বর্ষাকাল হয়, তখন মৌসুমি বায়ু দেশজুড়ে ভারী বর্ষণের কারণ হয়। এই সময়ে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়, যা নদীর পানি উপচে পড়ার এবং নিম্নাঞ্চলে বন্যা সৃষ্টি করার কারণ হয়। বন্যা শুধু মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত করে না, বরং এর ফলে সৃষ্ট জনস্বাস্থ্য সমস্যাগুলো সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করে এবং চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে। দীর্ঘস্থায়ী বন্যা হলে বন্যার সময়ে এবং বন্যা পরবর্তী বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে।

দীর্ঘস্থায়ী বন্যা চলাকালীন প্লাবিত অঞ্চলের মানুষের সব মৌলিক অধিকারগুলো সাময়িকভাবে নিশ্চিহ্ন করে ফেলে। কিংবা সম্পূর্ণভাবে অথবা আংশিকভাবে খর্ব করে ফেলে। একবার কি ভেবে দেখেছেন কারও খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ, আগুন, পানি, যোগাযোগ ইত্যাদি মৌলিক অধিকার দিনের পর দিন খর্ব হলে কতটা অসহায় যাপিত জীবন চলে? অবিশ্বাস্য হলে এটাই সত্যি যে ভয়াল বানভাসি অঞ্চলের মানুষদের এভাবেই বেঁচে থাকতে হয়। মানুষের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তখন যেন এই অসহায়ত্ব প্রত্যহ জীবনসঙ্গী হয়ে দাঁড়ায়। দুর্যোগের প্রতিবন্ধকতাগুলোর কারণে তাদের কাছে সরাসরি সহযোগিতা দ্রুত পৌঁছানো সম্ভব হয় না বলে বানভাসি অঞ্চলের মানুষদের অসহায়ত্ব লেগেই থাকে।

বন্যার পর সবচেয়ে সাধারণ এবং মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা হলো পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব। বন্যার পানি মলমূত্র ও অন্যান্য দূষিত পদার্থের সঙ্গে মিশে যায়, যা থেকে বিভিন্ন ধরনের পানিবাহিত রোগ ছড়ায়। বন্যার পানি সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব পরিবেশগত সমস্যা আরও প্রকট হয়ে দেখা দেয়। এসব রোগের মধ্যে ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড ও হেপাটাইটিস-এ ও ই অন্যতম। বন্যার পরে তো বটেই, দীর্ঘস্থায়ী বন্যা চলাকালীন সময়েও ডায়রিয়া এবং কলেরা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। বন্যার পানিতে মিশে থাকা জীবাণু দূষিত পানীয় জল ও খাদ্যের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে, যা ডায়রিয়া ও কলেরার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম সম্পন্ন ব্যক্তিদের, বিশেষ করে শিশু এবং বৃদ্ধদের মধ্যে এই রোগগুলো বেশি ছড়ায় এবং কখনও কখনও মৃত্যুর কারণও হয়ে দাঁড়ায়।

টাইফয়েড একটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ জনিত রোগ, যা দূষিত পানি ও খাদ্যের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বন্যার সময় অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন ব্যবস্থার কারণে টাইফয়েডের প্রাদুর্ভাব ঘটে। এই রোগটি দীর্ঘমেয়াদি জ্বর, পেটের ব্যথা এবং দুর্বলতার কারণ হয়, যা রোগীর স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। হেপাটাইটিস-এ এবং ই হলো লিভারের ভাইরাসজনিত সংক্রমণ, যা দূষিত পানি ও খাদ্যের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বন্যার সময় এবং পরে পানি ও স্যানিটেশনের সমস্যা থাকলে এই রোগগুলোর প্রাদুর্ভাব ঘটে। এ কারণে ও হেপাটাইটিস-এ এবং ই-তে আক্রান্ত হলে সাধারণত লিভারের ক্ষতি এবং দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হয়।

বন্যার পরের সময়টাতে মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাবও একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বন্যার ফলে পানি জমে থাকা এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মশার বংশবিস্তার বাড়ে, যা বিভিন্ন মশাবাহিত রোগ, যেমন- ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া এবং চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। বন্যার পর জমে থাকা পানিতে এডিস মশার বংশবিস্তার বেড়ে যায়, যা ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঘটায়। বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে ডেঙ্গুর বিস্তার যেভাবে ঘটেছে তাতে বন্যা পরবর্তী ডেঙ্গুর বিস্তার বেড়ে যেতে পারে বন্যাপ্লাবিত শহর অঞ্চলে। ম্যালেরিয়া রোগ অ্যানোফিলিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। বন্যার সময় এবং পরে এই মশার বংশবিস্তার বেড়ে যায়। চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এমনকি বন্যার পর এডিস মশার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

বাংলাদেশে বন্যা চলাকালীন এবং বন্যার পর সাপের কামড় একটি উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্যঝুঁকি হিসেবে দেখা দেয়। বন্যার সময় এবং পরবর্তী সময়ে সাপের আবাসস্থল প্লাবিত হওয়ায় সাপগুলো নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে চায়, যার ফলে তারা মানুষের বসতিতে চলে আসে। বিশেষ করে গ্রামীণ এবং নিচু এলাকায় সাপের উপস্থিতি বেড়ে যায়। সাপের কামড়ে বিষক্রিয়ার কারণে জীবনহানি এবং গুরুতর শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। বন্যার কারণে সময়মতো প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া এবং দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ে।

বন্যার পর খাদ্য নিরাপত্তা এবং পুষ্টির সমস্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। বন্যার কারণে কৃষি জমি প্লাবিত হয়, ফসল নষ্ট হয় এবং খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়। বন্যার সময় এবং পরে খাদ্যের অভাব দেখা দেয়, যা খাদ্য সংকট সৃষ্টি করে। অনেক মানুষ পর্যাপ্ত খাবার পায় না, যা তাদের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। শিশুরা অপুষ্টির শিকার হয় এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। বন্যার সময় খাদ্য সংকটের কারণে অনেক মানুষ পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলা, শিশু এবং বৃদ্ধরা এই সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ভোগে। অপুষ্টি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, যা তাদের অন্য রোগের ঝুঁকিতে ফেলে।

বন্যার সময় এবং পরে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোও একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। বাস্তুচ্যুতি, সম্পদ হারানো এবং প্রিয়জনদের মৃত্যুর কারণে মানুষের মধ্যে মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা দেখা দেয়। বন্যার সময় অনেক আবাল বৃদ্ধ বণিতা মানুষ তীব্র মানসিক চাপ এবং ট্রমার সম্মুখীন হয়। তাদের ঘরবাড়ি হারানোর অভিজ্ঞতা, প্রিয়জনদের মৃত্যু ও আহত হওয়া এবং জীবিকা হারানোর কারণে তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এই মানসিক চাপ দীর্ঘমেয়াদি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে। বন্যার পরে মানুষ ব্যাপক বিষণ্নতা এবং উদ্বেগে ভুগতে থাকে। বিশেষ করে নারীদের এবং শিশুদের মধ্যে এই সমস্যাগুলোর ঝুঁকি বেশি দেখা যায়। সামাজিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, দিনমজুর কিংবা স্বল্প আয়ের মানুষদের কর্মসংস্থান হারানো এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ মানুষকে বিষণ্নতা এবং উদ্বেগে আক্রান্ত করে।

বন্যার পর স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার দুরবস্থা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক প্রভাব ফেলে। অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের ধ্বংস মানুষকে স্বাস্থ্য সমস্যার মুখে ফেলে। বন্যার সময় স্যানিটেশন ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ে। টয়লেট, নর্দমা এবং পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা প্লাবিত হয়, যা স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়। বন্যার কারণে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ফার্মেসি প্লাবিত হয় এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম নষ্ট হয়, যা রোগীদের সঠিক চিকিৎসাসেবা পাওয়া কঠিন করে তোলে। ফলে, অনেক সময় গুরুতর রোগীরা সঠিক সময়ে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হন। ক্যানসার, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের ঠিকমতো সেবা দেওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে।

বন্যার পর নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা এবং পরিচ্ছন্নতার অভাব নারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। বন্যার সময় এবং পরে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য প্রসূতি সেবা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। নিরাপদ প্রসবের সুযোগের অভাব এবং প্রসব পরবর্তী সেবা অপ্রতুল হওয়ায় মা এবং শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। বন্যার সময় নারীদের মাসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখা চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ে। নিরাপদ টয়লেটের অভাব এবং পরিচ্ছন্ন স্যানিটারি পণ্য অপ্রতুল হওয়ায় মহিলাদের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বন্যার পর স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবও দেখা যায়, যা পরবর্তী সময়ে মানুষের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বন্যার পর দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন ক্রনিক শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ এবং কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ে। বন্যার সময় এবং পরে অস্বাস্থ্যকর অবস্থার কারণে এই রোগগুলোর প্রাদুর্ভাব ঘটে।

বন্যার পর স্বাস্থ্যগত সমস্যাগুলো আরও তীব্র এবং ব্যাপক আকার ধারণ করে। এসময় পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব, মশাবাহিত রোগের বৃদ্ধি, অপুষ্টি, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং স্যানিটেশন সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করে। এসব সমস্যা মোকাবিলা করতে হলে, তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। তাই, বন্যার পর জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সঠিক এবং কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথমত, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। বন্যাকবলিত এলাকায় দ্রুত মোবাইল মেডিকেল টিম প্রেরণ করে প্রাথমিক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করতে হবে। এছাড়া, স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোকে ফাংশনিং করা এবং পর্যাপ্ত ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি। রোগ প্রতিরোধক ভ্যাকসিন এবং মৌলিক চিকিৎসা সরঞ্জামগুলোর সহজলভ্যতা বন্যার পর রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।

দ্বিতীয়ত, বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। বন্যার কারণে পানি দূষিত হয়ে পড়ে, যা থেকে ডায়রিয়া, কলেরা এবং টাইফয়েডের মতো পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয়ভাবে ব্যাপকভাবে পানি পরিশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পাশাপাশি, নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, যাতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যকরভাবে পরিচালনা করা যায়।

তৃতীয়ত, খাদ্য নিরাপত্তা এবং পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। বন্যার সময় এবং পরে অনেক মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগতে থাকে, যা অপুষ্টির ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষ করে শিশু, গর্ভবতী নারী এবং বৃদ্ধদের জন্য পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। বন্যাকবলিত প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সমস্ত অঞ্চলে ত্রাণ কার্যক্রমের মাধ্যমে দ্রুত খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা চালু করা এবং স্থানীয় কৃষি, খামার এবং শিল্প পুনরুদ্ধারে সহায়তা করা প্রয়োজন।

চতুর্থত, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বন্যার কারণে মানুষ প্রচণ্ড মানসিক চাপ এবং ট্রমার সম্মুখীন হয়, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। এ সমস্যার সমাধানে স্থানীয়ভাবে কাউন্সেলিং সেবা এবং মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা নিতে হবে। কমিউনিটিভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্য কর্মসূচির মাধ্যমে ট্রমা মোকাবিলায় সহায়তা করা যেতে পারে।

পঞ্চমত, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রশিক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। বন্যার পর জনগণকে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। মানুষকে নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। এছাড়া, মশার বংশবিস্তার রোধে এবং মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বৃদ্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ।

সবশেষে, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং অবকাঠামো উন্নয়ন এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বন্যা পূর্বাভাস সঠিকভাবে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। বর্তমান পূর্বাভাস ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে উন্নত বিশ্বের মতো করে পূর্বাভাস ব্যবস্থা চালু করা। প্রতিবছর বাংলাদেশ বন্যাকবলিত হওয়ার সম্ভাবনায় থাকায় এ ধরনের উন্নত পূর্বাভাস চালু করা অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও বন্যা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর বাঁধ এবং সেচ ব্যবস্থা নির্মাণ, স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং জরুরি পরিস্থিতিতে ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সরঞ্জাম সংরক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, স্থানীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর কার্যকারিতা বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া উচিত, যাতে বন্যার পর সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসাসেবা প্রদান করা যায়।

সঠিক পরিকল্পনা, দ্রুত পদক্ষেপ এবং কার্যকর সমন্বয়ের মাধ্যমে বন্যার পর জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব। এজন্য সরকার, বেসরকারি সংস্থা এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের যৌথ প্রচেষ্টা অপরিহার্য। এবারের ভয়াল বন্যায় সরকারের পাশাপাশি যেভাবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, অফিস বন্যার্তদের সহযোগিতার জন্য এগিয়ে এসেছে তা অনুকরণীয় এবং অনুসরণীয়। বন্যা পরবর্তী জনস্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবিলার ক্ষেত্রেও একই রকম অনুকরণীয় এবং অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারলেই বন্যা পরবর্তী জনস্বাস্থ্য সমস্যা ভালোভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

লেখক: অধ্যাপক, ফলিত পরিসংখ্যান এবং ডাটা সায়েন্স, পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

[email protected]




👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles