Saturday, June 28, 2025

নাফিজ সরাফাতের ‘অর্থপাচার’ তদন্তে সিআইডি


পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের বিরুদ্ধে দুদকের অর্থ লোপাটের অভিযোগ তদন্তের মধ্যে এবার মানিলন্ডারিং আইনে অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

রোববার (১ সেপ্টেম্বর) সিআইডি এক বার্তায় এই তথ্য দিয়ে বলা হয়েছে, চৌধুরী নাফিজ সরাফাত এবং তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

এর আগে ব্যাংক দখল ও শেয়ারবাজার থেকে অর্থ লোপাটের মাধ্যমে ৮০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে অগাস্টের মাঝামাঝি অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট-বিএফআইইউ নাফিজ এবং স্ত্রী-সন্তানদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করেছে। এছাড়া ২২ অগাস্ট নাফিসের বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব অবরুদ্ধ করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

জানা গেছে, পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নাফিজ একের পর এক নতুন ব্যবসায় যুক্ত হন। সংবাদমাধ্যম ছাড়াও বিদ্যুত কোম্পানি, হোটেল ব্যবসা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ব্যবসায় নেমে আলোচনায় আসেন তিনি। বিভিন্ন অনিয়ম ও শেয়ার কেলেঙ্কারির অভিযোগ তদন্তে গত ২১ অগাস্ট ডিএসইর নিবন্ধিত ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান মাল্টি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডে পরিদর্শনে যায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, ডিএসইর একটি তদন্ত দল। কিন্তু সেই তদন্ত দলকে পরিদর্শন কার্যক্রম চালাতে দেয়নি ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করতে পর্যন্ত দেয়া হয়নি বলে প্রতিবেদনের বর্ণনায় বলা হয়।

বিনিয়োগকারীদের শেয়ার সংক্রান্ত তথ্য, ব্যাক অফিস সার্ভার, বিনিয়োগকারীদের অর্থ থাকা সংক্রান্ত ব্যাংক হিসাব ও প্রতিষ্ঠানটির ডিলার হিসাবের তথ্যও দেখতে পায়নি। এমন পরিপ্রেক্ষিতে উপর নানা বিধি-নিষেধ আরোপের সঙ্গে ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানটির ‘মার্জিন ঋণ’ দেওয়া ও সিকিউরিটিজ লাইসেন্স হালনাগাদ করার সুবিধা বন্ধ করা হয়। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানটি ডিএসই শেয়ারহোল্ডার হিসেবে কোনো লভ্যাংশ পাবে না বলেও জানানো হয়েছে। ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানটির আরেক মালিক হাসান তাহের ইমামের সব বিও হিসাবও স্থগিত করা হয়েছে। সহযোগিতা না করায় ব্রোকার হাউজটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরিচালক জালাল একরামুল কবীরের সব বিও হিসাবও স্থগিত করে ডিএসই।

কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও পদ্মা ব্যাংকের (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি রেইস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট পিএলসির মালিকানাতেও যুক্ত। কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান নাফিজ সরাফাত হোটেল ব্যবসা, বিদ্যুৎ, মোবাইলের টাওয়ার, মিডিয়াসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসার বিস্তার ঘটিয়েছেন গত এক দশকে। অনিয়ম আর ঋণ কেলেঙ্কারিতে ফারমার্স ব্যাংক বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন ঘটে ২০১৭ সালে। সে সময় চাপের মুখে চেয়ারম্যানের পদ ছাড়েন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীর। পরের বছর ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তনের পর ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ফারমার্স ব্যাংকের নাম হয় পদ্মা ব্যাংক।

পদ্মা ব্যাংককে উদ্ধার করতে সরকারের উদ্যোগে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) এর মাধ্যমে ৭১৫ কোটি টাকার মূলধন জোগান দেয়া হয়, যা ওই সময়ে ব্যাংকটির মোট মূলধনের ৬৬ শতাংশ। আর্থিক স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ায় আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারছিল না পদ্মা ব্যাংক। ওই অবস্থায় ২০২০ সালে কোনো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার প্রস্তাব দেয় তারা। আরেকটি প্রস্তাবে জোগান দেয়া মূলধনের বিপরীতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমপরিমাণ শেয়ার ইস্যু করার প্রস্তাব দেয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের মতামত জানিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে যে চিঠি দেয়, সেখানে বলা হয়, পদ্মা ব্যাংক সরকারি ব্যাংকের আমানতের বিপরীতে শেয়ার ইস্যু করার যে প্রস্তাব দিয়েছে সেটা ব্যাংক কোম্পানি আইনের সাথে ‘সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়’। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে একমত হয়ে প্রস্তাবটি ফিরিয়ে দেয় অর্থমন্ত্রণালয়। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পদ্মা ব্যাংকের পর্ষদকে বলা হয়েছিল,বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আনার চেষ্টা চালাতে। সেই চেষ্টা করেও তারা ব্যর্থ হয়।

২০১৯ সালে ফারমার্স ব্যাংক থেকে পদ্মা ব্যাংক হওয়ার সময় প্রতিষ্ঠানটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৭০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের শেষে তা বেড়ে ৩ হাজার ৬৭২ কোটি টাকায় দাঁড়ায়, যা মোট ঋণের প্রায় ৬৪ শতাংশ। অর্থাৎ নাফিজ সরাফাতের সময়ে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৬০২ কোটি টাকা। পদ্মা ব্যাংকের দুর্দশা নিয়ে আলোচনার মধ্যে চলতি বছর ৩১ জানুয়ারি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ ছাড়েন নাফিজ সরাফাত। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্থতায় গত মার্চে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার চুক্তি করে পদ্মা ব্যাংকের পর্ষদ।

সিটিজেন টিভির চেয়ারম্যান ও দ্বাদশ সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান গত মে মাসে অভিযোগ তোলেন,নাফিজ সরাফাত তাকে কোনো এক রাতে সাবেক আইজিপি (ঘটনার সময় ছিলেন র‌্যাবের মহা পরিচালক) বেনজীর আহমেদের বাসায় নিয়ে যান এবং সেখানে জোর করে তার কাছ থেকে সিটিজেন টিভির মালিকানার অংশ লিখে নেয়া হয়।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোরের আঁকা একটি কার্টুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোড়ন তোলে। চৌধুরী নাফিজ সরাফাতকে চিত্রায়িত করা ওই কার্টুনে নাভির জায়গায় দেখা যায় ব্যাংকের প্রতীক সিন্দুকের হাতল। তাতে ক্যাপশন ছিল, আমি চৌ নাফিজ সারাফাত/জানি ব্যাংক খাওয়ার ধারাপাত! সে সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আলোচনায় বলা হয়, কিশোরের আঁকা ওই কার্টুনের উপরের ক্যাপশনটি লিখেছিলেন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট মুশতাক আহমেদ। ওই বছর মে মাসে ‘সরকারবিরোধী প্রচার ও গুজব ছড়ানোর’ অভিযোগে মুশতাক, কিশোরসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বার বার জামিন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর কাশিমপুরের হাই সিকিউরিটি কারাগারে মৃত্যু হয় ৫৩ বছর বয়সী মুশতাকের। আর কিশোর জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর তার ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তোলেন।

সূত্র: বিডিনিউজ

বাংলাদেশ জার্নাল/কেএইচ




👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Latest Articles