শিল্পাঞ্চলের অস্থিরতা নিরসনে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্তের পরদিন ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে ছুটি দেওয়া বেশির ভাগ কারখানা চালু হয়েছে। তবে অসন্তোষ ও বিক্ষোভ কাটেনি বলে মনে করছেন শ্রমিক নেতারা। তারা বলছেন, এই দাবিগুলো শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের। নতুন পরিস্থিতিতে তারা ‘বৈষম্যের জায়গাগুলো চিহ্নিত’ করে দাবিগুলো সামনে আনছেন। সরেজমিন জানা গেছে, দীর্ঘদিন বেতন না হওয়া, চাকরিচ্যুতির মতো ঘটনাগুলোর কারণে সৃষ্ট শ্রমিক অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে স্বার্থ হাসিলের চেষ্টায় আছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক ঝুট ব্যবসায়ীরা। ব্যবসার হাতবদলের রাজনীতির শিকার শ্রমিকেরা।
৪ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পাঁচ উপদেষ্টা জরুরি বৈঠকে বসেন। পরে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে অ্যাকশন শুরু হবে। যারা ইন্ধন দিচ্ছে তাদের গ্রেফতার করা হবে। সেখানে যে জনদুর্ভোগ তৈরি হয়েছে, সেটার জন্য পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।’
শিল্প পুলিশ, কারখানা মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯ আগস্ট থেকেই দাবি নিয়ে সংগঠিত হচ্ছেন গাজীপুর, আশুলিয়া ও টঙ্গীর কিছু এলাকার শ্রমিকরা। তাদের কেউ ১১ দফা, আবার কেউ ২১ দফা দাবি সামনে হাজির করেছেন। এর মধ্যে তৈরি পোশাক কারখানা, ওষুধ কারখানা ও চামড়াজাত দ্রব্য উৎপাদনকারী কারখানা রয়েছে। আন্দোলনের মুখে বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ১৬৭টি তৈরি পোশাক কারখানা ও অন্তত ২৫টি বড় ওষুধ কারখানায় উৎপাদন বন্ধ করা হয়। তবে ৫ সেপ্টেম্বর বেশিরভাগ কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে।
জমে আছে যত দাবি
কালিয়াকৈরের তেলিরচালা এলাকার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, এখানকার একেক প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের দাবি একেক রকম। কেউ ১১ দফা, কেউ কারখানা ভেদে ২০ দফা দাবি হাজির করেছেন। আমরা সম্মিলিত আন্দোলন করছি এমন না। দিনের পর দিন আমরা নানা বৈষম্যের শিকার হয়েছি। জুলাই (২০২৪) মাসেও আমরা আন্দোলন করেছি। আমাদের দাবিগুলো তাহলে বলবো কাকে।
বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরে শ্রমিক স্বার্থের পক্ষের প্রকৃত প্রতিনিধি নিয়ে নিম্নতম মজুরি বোর্ড নতুন করে গঠনসহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ১১ দফা দাবি জানিয়েছে পোশাক শ্রমিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ গার্মেন্টস শ্রমিক শুভ শীল ও ৬ শ্রমিকসহ সব হত্যাকাণ্ডের বিচার, আহতদের চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের উদ্যোগ, ২০২৩ সালে মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে ৪ শ্রমিক হত্যার বিচার ও শ্রমিকদের নামে করা দমনমূলক সব মিথ্যা মামলা নির্বাহী আদেশে প্রত্যাহার। এছাড়া তারা শ্রমিক স্বার্থের পক্ষের প্রকৃত প্রতিনিধি নিয়ে নিম্নতম মজুরি বোর্ডকে নতুন করে গঠন ও ন্যূনতম ২৫ হাজার টাকা মজুরির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পুনর্বিবেচনা করে দেশে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণসহ শ্রমজীবীদের রেশনিং ব্যবস্থা, শ্রমিকদের ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিতের দাবি জানান।
এদিকে শ্রীপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি কারখানায় ভারতীয় কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবিও উঠেছে। শ্রমিকরা মনে করেন, বাংলাদেশের কর্মীদের মধ্যে যোগ্যতা থাকলেও তাদের যথাযথ জায়গায় নিয়োগ দেওয়া হয় না। গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় অবস্থিত ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানেও আন্দোলনের খবর এসেছে। তারা ৭ দফা থেকে ১১ দফা পর্যন্ত দাবি উত্থাপন করেছেন। আন্দোলনের সময় তাদের মূল দাবি ছিল বেতনবৈষম্য দূরীকরণ।
অস্থিরতার প্রধান কারণ ঝুট ব্যবসার দলবদল!
কর্মরত শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর অভিযোগ, কারখানাগুলোকে কেন্দ্র করে ঝুট ব্যবসার যে প্রচলন, তাদের ক্ষমতার হাতবদল হওয়া না হওয়ার একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে তারা অসন্তোষ জিইয়ে রাখতে চায়। ৪ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শ্রমিক সংগঠনগুলোকে নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে যেসব কারখানার দেনা-পাওনা বাকি আছে, সেগুলো মিটিয়ে দেওয়ার বিষয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়। শ্রমিকদের বিরুদ্ধে নানা সময় যে মিথ্যা মামলাগুলো দেওয়া হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহারের আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। আলোচনায় অংশ নেওয়া গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সমন্বয়ক তাসলিমা আখতার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যেসব কারখানা বন্ধ আছে, সেসব কারখানা সরকারি উদ্যোগে চালু করার প্রস্তাব আমাদের দিকে থেকে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ঝুট ব্যবসায়ীরা যেন কাজের পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে, সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এতদিন ধরে শ্রমিকরা কথা বলতে পারতো না, এখন পারছে, এটা খুব ভালো। সেই পরিবেশটা যেন কেউ নষ্ট করতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি দেওয়ার কথাও আমরা বলেছি।’ গাজীপুর ও আশুলিয়ার অস্থির পরিস্থিতির পেছনের কারণ বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক দিন ধরে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল। সেটাকে পুঁজি করে ঝুট ব্যবসায়ীরা তাদের দলবদলের রাজনীতি করছেন। কার কাছে ঝুটের ব্যবসাটা যাবে, সেটা নিরসনে শ্রমিকদের হাতিয়ার করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বেশ কিছু কারখানায় শ্রমিকদের বেতন বকেয়া পড়েছে, কিছু কারখানা হুট করে বন্ধ করে দেওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ ছিলই। এগুলো নিরসন করলে কেউ সুযোগ নিতে পারতো না।’
এদিকে ঝুট ব্যবসা নিয়ে যারা অস্থিরতা তৈরি করছেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে ইতোমধ্যে দলের নেতাকর্মীদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল। আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্যে না থাকলেও গত ১০ বছর ধরে যারা এই ব্যবসায় নেতৃত্ব দিচ্ছে সেই ব্যবসায়ীদেরও প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে বলে মনে করছেন শ্রমিক সংগঠনগুলো।
কারা অস্থির করে তুললো পরিবেশ জানতে চাইলে বিজিএমইএ’র সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ক্ষমতার পালাবদল হলে বাইরের শক্তি অবৈধ কিছু ব্যবসায়ীকে অস্থিরতা তৈরি করতে দেখে থাকি। সবসময় কিন্তু এরকম বড় পরিসরে এর আগে দেখিনি। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির পরে শিল্প পুলিশ ও থানা পুলিশ সবাই ট্রমায় ছিল। শ্রমিকরা কাজে ফিরতে শুরু করেছেন। আশা করি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। সরকারের যত গোয়েন্দা সংস্থা আছে, তাদের কিছু পর্যবেক্ষণ আছে। আমরা বলেছি—করণীয় কী, পরিস্থিতি কীভাবে স্বাভাবিক হতে পারে তা জানাতে আমরা সঙ্গে আছি।’ যে দাবিগুলো সামনে এসেছে সেগুলো অযৌক্তিক ও শ্রম আইন পরিপন্থি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নারী শ্রমিকের তুলনায় পুরুষ শ্রমিক কম, সেখানে সমতা আনার যে কথাটা বলেছে, সেটাতো কোনোভাবেই মানার মতো না। একদিকে বায়ারদের চাপ আছে নারী শ্রমিক বাড়ানোর বিষয়ে, আরেক দিকে তারা দক্ষও না। ফলে এ ধরনের দাবি পূরণের সুযোগ নেই।’
👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com