Categories: Bangladesh News

৩৩৮ শিক্ষার্থীর ক্ষতির দায় নেবে কে?


রাজধানীর ভিকারুনসিনা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ অনিয়ম করে ভর্তি করায় ১৬৯ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করেছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে অপেক্ষমান তালিকায় থাকা ছাত্রীদের সেই শূন্য আসনে ভর্তি নেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। মঙ্গলবার (২১ মে) এই নির্দেশ দেওয়া হয়। অবৈধভাবে ভর্তি করা শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল হওয়ায় তাদের শিক্ষাজীবনের যেমন চরম ক্ষতি হয়েছে,  পাশাপাশি অপেক্ষমান তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীরা বছরের পাঁচ মাস অ্যাকাডেমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।  অর্থাৎ মোট ৩৩৮ জন শিক্ষার্থীর ক্ষতি করেছে ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। প্রশ্ন উঠেছে তাদের এই ক্ষতির দায় নেবে কে?

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের শর্ত না মেনে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ১৬৯ জনকে ভর্তি করায়। এই ভর্তি নিয়ে অভিযোগ ওঠে শুরুতেই। গভর্নিং বডির সদস্য গোলাম বেনজির অধ্যক্ষকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানান। গভর্নিং বডির এই সদস্যের চিঠিতে বলা হয়, ‘নিয়ম ভঙ্গ করে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হলে অপেক্ষমান তালিকার শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হবে। গভর্নিং বডির সদস্য হিসেবে আমি সম্ভাব্য অনিয়ম ও আইনি কাজ থেকে আপনাকে বিরত থাকার অনুরোধ করছি। আপনার স্বাক্ষরিত ২০২৩ সালের ১৯ অক্টোবরের নোটিশ মোতাবেক বয়সসীমা অনুসরণ করে শিক্ষার্থী ভর্তি করার জন্য অনুরোধ করছি।’

এই চিঠি আমলে নেননি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী। প্রত্ঠিানের ভর্তি বিজ্ঞপ্তির নোটিশ অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি যারা বয়সসীমার মধ্যে, তারা ভর্তি হতে পারবে। কিন্তু অপেক্ষমান তালিকা থেকে এই বয়সসীমার শিক্ষার্থীদের ভর্তি না করিয়ে ১০১৫ ও ২০১৬ সালের শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়। এতে ভর্তি বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ তাতেও গুরুত্ব দেয়নি।

অবৈধভাবে ছাত্রী ভর্তির বিষয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে মূল ক্যাম্পাসের দিবা শাখা (বাংলা ভার্সন) প্রধান মো. শাহ আলম খানকে বরখাস্ত করা হয়। ছাত্রী ভর্তিতে মো. শাহ আলম খানকে দায়ী করা হলে তিনি ভর্তি কমিটির অনিয়মের বিষয়টি লিখিতভাবে তুলে ধরেন গভর্নিং বডির সভাপতি ও ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারের কাছে।

চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারির লিখিত অভিযোগে শাহ আলম বিভাগীয় কমিশনারকে অভিযোগ করে জানান, আরও ২৬ জন ছাত্রীকে অবৈধভাবে ভর্তি করা হয়েছে। এসব শিক্ষার্থীর ভর্তিতে মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে জাল সনদ ব্যবহার করা হয়। ভর্তির ফরম বাছাইয়ে নীতিমালার ৪ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তাদের ভর্তি বাতিলযোগ্য।

এর আগে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণির ১৬৯ জন ছাত্রীর ভর্তি বাতিল চেয়ে গত ১৪ জানুয়ারি ভর্তি-ইচ্ছুক দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। তাদের অভিযোগ— নির্দিষ্ট বয়সের বাইরে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে স্কুলেটিতে।

এই রিট শুনানির পর গত ২৩ জানুয়ারি রুল জারিসহ ভর্তি বাতিলের আদেশ দেন হাইকোর্ট। এর পর ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালতের নির্দেশনার আলোকে ভর্তি বাতিলের নির্দেশ দেয় অধিদফতর। মাউশির নির্দেশনায় ১৬৯ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ।

এই ঘটনার পর ভর্তি বাতিলের বৈধতা নিয়ে ১৩৬ জন অভিভাবক আরেকটি রিট করেন। এ নিয়ে গত ২৫ মার্চ হাইকোর্ট রুল জারি করেন। ভর্তি বাতিল চেয়ে দায়ের করা রিট এবং ভর্তি বাতিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা রিটের বিষয়ে রুল শুনানি শেষে মঙ্গলবার (২১ মে) শিক্ষার্থী অবৈধভাবে ভর্তি বাতিল করেন আদালত এবং ১৫ দিনের মধ্যে অপেক্ষমান তালিকা থেকে শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশ দেওয়া হয়।  এছাড়া অবৈধ ভর্তিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করে দিয়েছেন আদালত।

আদালতের রায়ে বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা বছরের চার মাস পার হওয়ার পর ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। দেরিতে ভর্তি হওয়ার কারণে অ্যাকাডেমিকভাবে তাদের ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু ভিকারুননিসা কর্তৃপক্ষের অবৈধ কার্যক্রমে ভর্তি বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আদালত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। আর আদালতের নির্দেশে আমরা আগেই ভর্তি বাতিলের নির্দেশনা দিয়েছিলাম ভিকারুননিসা কর্তৃপক্ষকে। আদালতের রায় অনুযায়ী সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য গোলাম বেনজির বলেন, ‘অবৈধভাবে ১৬৯ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করায় অপেক্ষমান তালিকায় থাকা ১৬৯ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আর অবৈধভাবে ভর্তির কারণে ১৬৯ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল হওয়ায় তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব শিক্ষার্থী সবাই ক্ষতির শিকার হলো। এই শিক্ষার্থীদের ক্ষতির দায় কে নেবে?’

গভর্নিং বডির এই সদস্য আরও বলেন, ‘আমি ভর্তির প্রক্রিয়ার সময় নিষেধ করেছিলাম। অধ্যক্ষকে লিখিতভাবে চিঠিও দিয়েছিলাম। কিন্তু তারপরও ভর্তি করা হয়েছে। অবৈধ ভর্তিতে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে

সুষ্ঠু তদন্ত করে শাস্তির আওতায় আনা উচিত। শাস্তির আওতায় না আনলে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও অনিয়মের ব্যাপারে সতর্ক হবে না।

হাইকোর্টের রায়ের পর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৯ সালে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ৪৪৩ জন অতিরিক্ত ছাত্রী ভর্তি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সমালোচনার মুখে পড়েছিল। ওই সময় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে কেকা রায় চৌধুরী দায়িত্বে থাকাকালে ৬ জানুয়ারি থেকে ৮ জানুয়ারি প্রথম শ্রেণিতে ১৬২ জনকে ভর্তি করানো হয়। আর পরবর্তী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে হাসিনা বেগম দায়িত্বে থাকাকালে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তি করা হয় ২৮১ জনকে। এই দুই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষেরই ভর্তি ফরমে সই ছিল না। অভিযোগ ছিল, গভর্নিং বডি জোর করে শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। এই অতিরিক্ত ছাত্রী ভর্তির বিরোধিতা করলে ওই সময়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাসিনা বেগমের বিরদ্ধে গভর্নিং বডি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরে অভিযোগ তোলে। ফলে হাসিনা বেগমের এমপিও বন্ধ করে দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। কিন্তু কোনও শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল হয়নি। আর কোকা রায়ের বিরুদ্ধে কখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

আরও পড়ুন:

ভিকারুননিসায় ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল, অনিয়ম তদন্তের নির্দেশ

শিক্ষার্থী ভর্তিতে অনিয়ম নিয়ে ভিকারুননিসায় আবারও বিশৃঙ্খলা

ভিকারুননিসায় জালিয়াতি করে আরও ৩৬ ছাত্রী ভর্তির তথ্য ফাঁস

ভিকারুননিসায় আবারও শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ


👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Uncomm

Share
Published by
Uncomm

Recent Posts

That is the POCO X7 Professional Iron Man Version

POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…

5 months ago

New 50 Sequence Graphics Playing cards

- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…

5 months ago

Good Garments Definition, Working, Expertise & Functions

Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…

5 months ago

SparkFun Spooktacular – Information – SparkFun Electronics

Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…

5 months ago

PWMpot approximates a Dpot

Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…

5 months ago

Keysight Expands Novus Portfolio with Compact Automotive Software program Outlined Automobile Check Answer

Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…

5 months ago