ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের ২৬ নম্বর বিছানায় শুয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছে ১৫ বছরের কিশোর অলিউল্লাহ। শুক্রবার (১৯ জুলাই) দুপুরে নরসিংদীর পাঁচদোনা এলাকায় সংঘর্ষে তার পেটে গুলিবিদ্ধ হয়। প্রায় ছয়দিন ধরে সে পেটে গুলি নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। তার নাকে ক্যানেল লাগানো। শরীরে একাধিক ব্যান্ডেজ। কথা বলতে পারছে না। শুধু চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছে।
তার মামা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিদিনই অলিউল্লার ড্রেসিং করা হচ্ছে। তবে তার পেট থেকে গুলি বের করা যাচ্ছে না। চিকিৎসক জানিয়েছেন, অলিউল্লাহর পেটের ভেতরে থাকা গুলি নাড়ি-ভুড়ি পেঁচিয়ে আছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, গত কয়েকদিনের সহিংসতায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ। কারও বুকে গুলি, কারও মাথায়, আবার কারও চোখে কিংবা পায়ে গুলিবিদ্ধ। হাসপাতালের ১০১ নম্বর ওয়ার্ডে অলিউল্লাহর (১৫) মতো আরও কয়েকজন রোগী রয়েছে।
শুক্রবার (১৯ জুলাই) দুপুরে বাড্ডা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন মো. আবু হানিফ (২৮)। তার বুকে দুটি গুলি লাগে। এরপর থেকে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের ২৮ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন। একইদিন দুপুরে জুমার নামাজের পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন মো. জুয়েল (২৬)। তিনি এই ওয়ার্ডের ৩ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন আছেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৫ জুলাই থেকে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ১৬, ১৮, ১৯, ২০ ও ২১ জুলাই সংঘাতে শিশু-কিশোর, শিক্ষার্থী, তরুণ-প্রবীণ, নারী ও পুলিশ এবং সাংবাদিকসহ কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। এরমধ্যে সংঘাতের সময় ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় অন্তত ২০১ মানুষের মৃত্যুর খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ঢামেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত এক সপ্তাহে প্রায় দুই হাজার মানুষ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আর ৪১০ জনকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে বর্তমানে হাসপাতালটিতে ১৭৫ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে, যাদের সবাই গুলিবিদ্ধ।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘাতের শিকার ৬০ জনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। এছাড়া গত কয়েকদিনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৯ জন।’
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সংঘাতে আহত দেড় শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এরমধ্যে ৬৬ জনকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, যাদের সবাই গুলিবিদ্ধ ছিল। বর্তমানে এই হাসপাতালে ১৬ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন যাদের মধ্যে অর্ধেক একক গুলিতে আহত, অন্যরা ছররা গুলিতে।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মো. হাসান (১৭) নামের এক কিশোরকে পাওয়া যায়। সে গত ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) রাত সাড়ে ৯টার দিকে মোহাম্মদপুরের কাটাসুর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিটি তার ডান হাতের ওপরের অংশে লাগে। ১৯ জুলাই (শুক্রবার) মোহাম্মদপুরের চান মিয়া হাউজিং এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন মো. হাবিব (৩০)। তিনি মোহাম্মদপুর এলাকায় থাকেন। পেশায় দিনমজুর। ঘটনা দিন তিনি চাঁন মিয়া হাউজিং এলাকায় কাজে গিয়েছিলেন। পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে সময় তার পেটে ও পিঠে ২১২টি ছররা গুলি লাগে। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রফিকুল ইসলাম (২৩)। তিনি মিরপুরের একটি প্রিন্টিং কারখানার কাজ করেন। ১৯ জুলাই (শুক্রবার) বিকালে তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে রূপনগর এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে বাসায় ফেরার পথে রাস্তায় গুলিবিদ্ধ হন। তার পেটের এক পাশ দিয়ে গুলি ঢুকে অপর পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক শফিউর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ ১২ ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও তিন জন মারা যান। কয়েক দিন পরিস্থিতি খুব খারাপ ছিল। রোগী সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে।’
একই সংঘাতে চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ৪২৪ জন রোগী আগারগাঁওয়ে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ২৭৮ জনের চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। কারও এক চোখ আবার কারও দুই চোখই নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে জানান রোগীর স্বজনরা। চোখে গুলির আঘাত নিয়ে গত শনিবার (২০ জুলাই) জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছেন মো. অনিক (২৪)। ছররা গুলিতে তার দুটি চোখই নষ্ট হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে দেখবেন কি না, সেই আশাও দেখাতে পারছেন না চিকিৎসকরা। বর্তমানে তিনি ৪১৫ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৫ জুলাই) জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে হাসপাতালটিতে চোখে গুলিবিদ্ধ ৮ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চতুর্থ তলার ৪১৫ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে চোখে গুলিবিদ্ধ ৫ জন রোগীর সঙ্গে কথা হয়। মাদারীপুরের রেন্ডিতলা থেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে এসেছেন মো. সুমন। শুক্রবার (১৯ জুলাই) সংঘর্ষে তার মাথা, চোখ ও শরীরের বিভিন্ন অংশে ছররা লাগে। সুমনের বোন লিপি আক্তার জানান, তার ভাইয়ের এক চোখে আর কখনও আলো ফিরে আসবে না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) নরসিংদীতে সংঘর্ষের মাঝে পড়ে গুলিবিদ্ধ হন তৌহিদ উদ্দিন। পরদিন শুক্রবার তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। তার ডান চোখ ছররা গুলিতে নষ্ট হয়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বিকালে মিরপুর-২ নম্বরে গুলিবিদ্ধ হওয়া সিহাবও ভর্তি আছেন জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে। তিনি মিরপুরে ঢাকা সেন্ট্রাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। সিহাব মাকে নিয়ে মিরপুর-২ নম্বরে থাকেন। একটি রেস্তোরাঁয় খণ্ডকালীন চাকরি করতেন তিনি। সংঘাতে তার বাম চোখে গুলি লেগেছে। বর্তমানে ওই চোখে দেখতে পাচ্ছেন না বলে জানান তিনি।
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সহিংসতার ঘটনায় ৪২৪ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। ২৭৮ জনের অপারেশন হয়েছে। তাদের পরবর্তী সময়ে ফলোআপে আসতে বলা হয়েছে।’
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) রোগী নিবন্ধনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ হাজার ৬৯২ জন। এরমধ্যে ৪৭২ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এসছিলেন। তাদের মধ্যে ৬৮৬ জনকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শুধু গুলিবিদ্ধ হয়ে ভর্তি হয়েছেন ২৪১ জন। তবে কোটা আন্দোলন ঘিরে কতজন চিকিৎসা নিয়েছেন, তার কোনও তথ্য নেই এই হাসপাতালে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নিটোর ক্যাজুয়ালিটি-২ ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের কারও হাতে, আবার কারও পায়ে গুলি লেগেছে। এই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধ রোগীদের বেশিরভাগেরই পঙ্গুত্বের শঙ্কা রয়েছে। ওয়ার্ডে ৩৪ জনের মধ্যে ছয় জনের একটি করে পা কেটে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ সাত জনের হাত কেটে ফেলা হতে পারে।
ঢাকা কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইমরান সরকার (২৬) পাঁয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে একই ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। তিনি বলেন, রায়েরবাগ এলাকায় শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে বাসায় যাওয়ার সময় তার পায়ে গুলি লাগে। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এরই মধ্যে ছয়টি অস্ত্রোপচার করা হয়েছে তার ।
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) পরিচালক ও অর্থোপেডিক্স সার্জারির অধ্যাপক ডা. কাজী শামীম উজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সহিংসতা আহত ও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় যারা এসেছেন, তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এখন প্রতিটি রোগীর একাধিক অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। তারা চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। রোগীর ক্ষত স্থানের অবস্থা দেখে পর্যায়ক্রমে অস্ত্রোপচারের সময় নির্ধারণ করা হবে।’
👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com
POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…
- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…
Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…
Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…
Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…
Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…