হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেলে কী করবেন? তেঁতুল খেলে কী প্রেসার কমে?

উচ্চ রক্তচাপ একটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা। হৃৎপিণ্ডের ধমনীতে রক্ত প্রবাহের চাপ বেশি থাকলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার বলা হয়। উচ্চ রক্তচাপের কারণে হার্ট অ্যাটাক বা হার্ট ফেইলিওরের মতো অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজের চিকিৎসক ও সহায় হেলথ এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা  ডা. তাসনিম জারা একটি ভিডিওতে জানিয়েছেন কেন রক্তচাপ বাড়ে এবং বেড়ে গেলে করণীয় সম্পর্কে। 

কেন বাড়ে রক্তচাপ?

১। উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা না হওয়া কিংবা অপর্যাপ্ত চিকিৎসা হওয়া রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। অনেক সময় রোগী নিজেই জানে না যে তার উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। নিয়মিত না মাপার ফলে অনেকেরই জানা থাকে না যে তারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। গবেষণা বলছে, প্রায় অর্ধেক রোগীই তার এই রোগ সম্পর্কে জানেন না। এতে চিকিৎসা যেমন হয় না, তেমনি জীবনযাপন পদ্ধতিও পরিবর্তন করা হয় না। ফলে যেকোনো সময় রক্তচাপ অনেকটি বেড়ে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি তৈরি হয়। 

২। উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেওয়াও রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। অনেকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রক্তচাপের ওষুধ খাওয়া শুরু করলেও একটু সুস্থ বোধ করলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই বন্ধ করে দেন ওষুধ। এতে নীরবে রক্তচাপ শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি করতে থাকে। যেমন রক্তচাপের কারণে রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ক্ষতি একদিন মাঝরাতে হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে। 

৩। অনেকে চিকিৎসকের কথা না মেনে ওষুধ সেবন করেন। যেমন ডাক্তার দুটো ওষুধ দিলেও একটি খাওয়া বা দুইবেলা খেতে বললেও একবেলা খাওয়া। এতে হুট করে বেড়ে যেতে পারে রক্তচাপ। রক্তচাপের ওষুধ কমানো, বাড়ানো বা বন্ধ করার কাজটি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী একেবারেই করা যাবে না। 

৪। রক্তচাপের ওষুধ নিয়মিত খেতে হয়। কিন্তু যেহেতু জ্বর বা মাথা ব্যথার মতো লক্ষণ থাকে না, তাই অনেকেই ভুলে যান ওষুধ খেতে। এতে করেও রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

৫। মানসিক চাপ বা স্ট্রেসের কারণে বাড়তে পারে ব্লাড প্রেসার। 

৬। উচ্চ রক্তচাপ থেকে সৃষ্ট কিডনি বা থাইরয়েডের রোগের কারণে হুট করে ব্লাড প্রেসার বেড়ে যায়।

৭। নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ যেমন স্টেরয়েড, ভেষজ ওষুধ, ব্যথানাসক বা আইবুপ্রোফেন ধরনের ওষুধ খেলেও রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। 

হঠাৎ ব্লাড প্রেসার বেড়ে গেলে কী করবেন?  
প্রেসার মাপার পর যদি দেখেন উপরেরটা ও নিচেরটা অনেক বেশি, তবে না ঘাবড়ে শান্ত হয়ে বসুন। ৫ মিনিট পর আবার মাপুন। দ্বিতীয়বার মাপার পরেও যদি বেশি আসে প্রেসার, তবে দেরি না করে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। যদি উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি আর কোনও লক্ষণ না থাকে তবে চিন্তা করে দেখুন কেন বেড়েছে প্রেসার। ওষুধ মিস করেছেন? নাকি অন্যকিছু? এরপর চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। যাওয়ার আগে প্রতি ঘণ্টায় একবার করে প্রেসার মেপে সেটা লিখে রাখুন কাগজে। সে কাগজ, কোন ওষুধ খাচ্ছেন সেই সংক্রনাত ব্যবস্থাপত্র নিয়ে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান। ওষুধ পরিবর্তন করে দেওয়া, ডোজ বাড়িয়ে দেওয়া অন্যান্য জরুরি কাজগুলো চিকিৎসকই করবেন। 

যদি ব্লাড প্রেসার বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য লক্ষণ যেমন মাথা ব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা, বমি বা বমিভাব, আবোলতাবোল বকা, ভুলে যাওয়া, ঝিমিয়ে পড়া, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, হাত পা অবশ হয়ে যাওয়া, মুখের কথা আটকে যাওয়া, অস্থির লাগা, বুকে, ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, পেটে বা পিঠে ব্যথা বা খিঁচুনির মতো উপসর্গ দেখা দেয় তবে নিজে নিজে ওষুধ খেয়ে প্রেসার কমানোর চেষ্টা করবেন না। এতে অনেক সময় হিতে বিপরীত হতে পারে। যেমন স্ট্রোক হলে অনেক সময় তাৎক্ষণিক ব্লাড প্রেসার কমানো হয় না। কারণ এতে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল আরও কমে যেতে পারে। আবার কিছু ক্ষেত্রে খুব দ্রুত কমাতে হয় রক্তচাপ, যেমন রক্তনালী ছিঁড়ে গেলে। সেক্ষেত্রে শিরায় ইনজেকশন দিয়ে ব্লাড প্রেসার কমানো হয়, মুখে ওষুধ দেওয়া হয় না। তাই এমন অবস্থায় দ্রুততম উপায়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চলে যেতে হবে চিকিৎসার জন্য।  

অনেকে মনে করেন তেঁতুল খেলে দ্রুত রক্তচাপ কমে যায়। তবে কথাটির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বরং রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার পর তেঁতুল খুঁজতে গিয়ে হাসপাতালে পৌঁছতে দেরি হলে সেটা বেশি বিপদজনক। তবে দীর্ঘমেয়াদে তেঁতুল খেলে উপকার রয়েছে। এটি একটি উপকারী ফল। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের প্রতিদিন ৪/৫টা করে ফল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কারণ ফলে তুলনামূলক বেশি পটাশিয়াম থাকে। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তেঁতুলে পটাশিয়াম রয়েছে। তেঁতুল ছাড়াও খেজুর, কলা, কমলা, আম, গাজরেও পটাশিয়াম আছে। এগুলো নিয়মিত খেলে তাই সুস্থ থাকতে পারবেন।