Categories: Bangladesh News

সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দিতে অনীহা কেন?


দেশে প্রচলিত আইন, সরকারের সিদ্ধান্ত, সর্বোপরি উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পরও সরকারি কর্মচারীদের একটি বড় অংশ তাদের সম্পদের সঠিক হিসাব বিবরণী দিচ্ছেন না। অথচ সরকারি চাকরিতে ঢোকার সময় সম্পদের হিসাব দেওয়া এবং প্রতিবছর সেটা হালনাগাদ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু কোনোভাবেই অনেকেই তাদের সম্পদের হিসাব বিবরণী প্রকাশ্যে আনতে চান না। অর্জিত সম্পদ রাখতে চান আড়ালে-আবডালে। এ নিয়ে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা অনেকটাই দ্বিধাবিভক্ত। কিন্তু কেন, কীসের ভয়, সমস্যা কী— এসব প্রশ্নের কোনও সদুত্তর নেই।

যে সরকারি কর্মচারীরা সম্পদের বিবরণী প্রকাশ্যে আনতে চাইছেন না, তাদের বক্তব্য হচ্ছে— তারা প্রতিবছরই আয়কর রিটার্ন জমা দেন। সেখানেই তো সব সম্পদের বিবরণ দেওয়া হয়। এরপরও কেন আলাদা করে হিসাব বিবরণী দিতে হবে? অপরদিকে সরকারি কর্মচারীদের একটি ক্ষুদ্র অংশ বলছেন, কেউ যদি স্বচ্ছ থাকেন, যদি দুর্নীতি না করেন, তার যদি আয়বহির্ভূত সম্পদ না থাকে; তাহলে একবার নয়, সম্পদের হিসাব বিবরণী হাজার বার দিতেও তাদের কোনও সমস্যা থাকার কথা না। প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি পাঁচ বছর পরপর সরকারি কর্মচারীর নিজ সম্পদ বিবরণী নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। এটি চাকরির আচরণ বিধির অংশ। তবে চাকরির সেই আচরণবিধি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দফতর এবং সংস্থারও তাদের অধীনস্ত কর্মচারীদের হিসাব নেওয়ার ব্যাপারে খুব বেশি তৎপরতা দেখা যায়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি কর্মচারীদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বার্ষিক হিসাব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দফতর বা সংস্থার কাছে দাখিল বাধ্যতামূলক করা এখন সময়ের দাবি। কিছুসংখ্যক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারণে দেশের তথা সরকারের সুনাম নষ্ট হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাবি উঠেছে।

সরকারি দফতরগুলোয় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাঁচ বছর পরপর সরকারি কর্মচারীর সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার বিধান ১৯৭৯ সালে চালু হয়। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সম্পদের হিসাব জমা দিতে কড়া নির্দেশ দেওয়া হলে সে সময় সব কর্মচারী তা দিয়েছিলেন। নানা দিকে আলোচনা উঠলে ২০১৫ সালে আরেক দফা সরকারি কর্মচারীর সম্পদের হিসাব জমা দিতে সরকার থেকে বলা হলে গুটিকয়েক মন্ত্রণালয় তাদের নিয়ন্ত্রিত সংস্থা বা দফতরের কর্মচারীর সম্পদের হিসাব নিতে পারলেও অধিকাংশই ব্যর্থ হয়। বিশেষ করে চিকিৎসকরা এর বিরোধিতা করেন, প্রতিবাদ করেন জোড়ালোভাবে।

১৯৭৯ সালে প্রণীত সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার ১৩ বিধির ১নং উপবিধিতে বলা হয়েছে, প্রত্যেক সরকারি কর্মচারীকে চাকরিতে প্রবেশের সময় যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তার অথবা তার পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন শেয়ার সার্টিফিকেট, সিকিউরিটি, বিমা পলিসি ও ১০ হাজার টাকা বা এর অধিক সর্বমোট অলঙ্কারাদিসহ সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি সম্পর্কে সরকারের নিকট ঘোষণা দিতে হবে।

আর উপবিধি-২-এ বলা হয়েছে, প্রত্যেক সরকারি কর্মচারীকে প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে ১নং উপবিধির অধীন ঘোষণায় বা সর্বশেষ দাখিলকৃত বিবরণীতে প্রদর্শিত সম্পত্তির হ্রাস-বৃদ্ধির বিবরণী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের নিকট দাখিল করতে হবে। দুই দশক পর সরকার ২০০২ সালের শেষদিকে উপবিধি-২-এ সংশোধনী এনে সম্পদের হ্রাস-বৃদ্ধির বিবরণী দাখিলের সময় ‘প্রতিবছর পর ডিসেম্বর মাস’-এর পরিবর্তে ‘প্রতি পাঁচ বছর পর ডিসেম্বর মাস’ করে।

অপরদিকে সরকারি কর্মচারী আইন (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯-এর বিধি ১২ ও ১৩ অনুসারে সরকারি কর্মচারীর স্থাবর সম্পত্তি অর্জন, বিক্রি ও সম্পদ বিবরণী জমার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এমনকি জমি-বাড়ি-ফ্ল্যাটসহ যে কোনও সম্পদ কিনতে বা বিক্রি করতেও সরকারের অনুমতি নিতে হয় তাদের। সম্পদ কেনার ক্ষেত্রে টাকার উৎস সম্পর্কেও জানাতে হয়। আবার সম্পদ বিক্রি করা হলে দাম জানাতে হয়। কারণ, কমবেশি দামে সম্পদ বেচাকেনা হলো কিনা, তা যাচাই করার সুযোগ রাখা হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রত্যেক বছরের পরিবর্তে পাঁচ বছর পরপর সম্পদের হ্রাস-বৃদ্ধির হিসাব দাখিলের বিধান বিষয়টির গুরুত্ব বহুলাংশে কমিয়ে দিয়েছে এবং সরকারি চাকরিজীবীদের এ বিষয়ে অনাগ্রহী করে তুলেছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশে বড় ধরনের দুর্নীতি ঠেকাতে দেশের সরকারি চাকরিজীবীদের কাছ থেকে প্রতি বছর সম্পদের হিসাব নেওয়া এবং তা নিয়মিত হালনাগাদ করতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে। তার পরেও সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি কয়েকজন আমলা ও কর্মচারীর দুর্নীতি ও তাদের আয়বহির্ভূত সম্পদ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হলে কর্মকর্তা কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিলের বিষয়টি আলোচনায় আসে। এরই মধ্যে উচ্চ আদালত থেকেও এ সংক্রান্ত নির্দেশনা রয়েছে।

তবে এ প্রসঙ্গে চলতি বছরের জুনে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পত্তির যথাযথ হিসেব পেতে প্রচলিত নিয়মের বাইরে নতুন আইনের প্রয়োজন নেই।

জানা গেছে, গত ২ জুলাই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল ও প্রকাশ সংক্রান্ত কর্মচারী বিধিমালা (আচরণ বিধিমালা) বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিধিমালা বাস্তবায়নে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, এ বিষয়ে আগামী ৩ মাসের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

একজন আইনজীবীর ওই আবেদনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, দুদকের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ ১০ জনকে বিবাদী করা হয়েছে। আবেদনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব আইনে উল্লিখিত যথাযথ নিয়মে কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিলের পাশাপাশি ওয়েবসাইটে প্রকাশের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পিরোজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কর্মচারী সোলায়মান হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিলে কোনও সমস্যা তো দেখছি না। সরকার বা আদালত চাইলে দিতেও কোনও সমস্যা নাই। কেননা আমি কোনও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নই।’

তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার বক্তব্যকেই চূড়ান্ত বিশ্বাস করারও কোনও কারণ নাই। সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারাও এ বিষয়টি অনুসন্ধান করা যেতে পারে। তবে তা হতে হবে সঠিক এবং পক্ষপাতহীন।’

একই বিষয়ে সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, সরকারি নিয়ম বা আইন অনুযায়ী প্রতিবছরই তো আয়কর রিটার্ন জমা দিচ্ছি। সেখানে সব সম্পদের বিবরণী উল্লেখ রয়েছে। এর বেশি আর কিছু দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করিনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছা ব্যক্ত করেন এই কর্মকর্তা।

অপর দিকে কেবিনেট ডিভিশনের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘বিষয়টি যেহেতু স্পর্শকাতর, তাই নাম প্রকাশ করতে চাইছি না। তবে সম্পদের হিসাব বিবরণী সরকার চাইলে হাজার বার দেওয়া যেতে পারে। এতে গড়িমসি করার কিছু নাই। গড়িমসি করলেই বুঝতে হবে এখানে কোনও না কোনও ঘাপলা আছে।‘

এ প্রসঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের একজন জেলা প্রশাসক নাম প্রকাশে অনীহা ব্যক্ত করে বলেছেন, ১৯৭৯ সালে প্রণীত সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার ১৩ বিধির ১নং উপ-বিধিতে উল্লিখিত বিধান মতো প্রত্যেক সরকারি কর্মচারীকে চাকরিতে প্রবেশের সময় যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তার অথবা তার পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন শেয়ার সার্টিফিকেট, সিকিউরিটি, বীমা পলিসি ও ৫০ হাজার টাকা বা এর বেশি মোট অলংকারাদিসহ সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি সম্পর্কে সরকারের কাছে ঘোষণা দেওয়ার কথা বলা আছে। সেটি কড়াকড়িভাবে সচল করা প্রয়োজন, একই সঙ্গে পরবর্তীতে প্রতি ৫ বছর পর পর সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিলের বিষয়টিতেও গুরুত্ব দেওয়া উচিত। নিজেরা স্বচ্ছ থাকলে এতে কারও আপত্তি থাকা উচিত নয়।

সম্প্রতি এ প্রসঙ্গে এক বিবৃতিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, সরকারি চাকরিজীবী (আচরণ) বিধিমালার প্রস্তাবিত সংশোধনী সরকারের নির্বাচনি অঙ্গীকার ও শীর্ষ পর্যায়ের দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা ঘোষণার ঠিক উল্টো। প্রথমে প্রতিবছর সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার বিধান থাকলেও সরকারি কর্মচারীদের অনীহার মুখে পরবর্তী সময়ে শিথিল করে তা পাঁচ বছর পর পর দেওয়ার বিধান করা হয়। সেই বিধানও সঠিকভাবে পালনে অনাগ্রহ ছিল। চাকরির শুরুতে সম্পদের বিবরণী দিলেও পাঁচ বছর পরপর হিসাব হালনাগাদের বাধ্যবাধকতার গুরুত্বই দেন না সরকারি কর্মচারীরা। এখন এই বাধ্যবাধকতা সরিয়ে দেওয়ার অর্থ হলো প্রকারান্তরে সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে উঠতে ব্যাপক উৎসাহ দেওয়া। কেননা, সম্পদের বিবরণী জমা দেওয়ার মতো কোনও বিধান না থাকলে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে নির্ভয়ে দুর্নীতি, এর মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের সুযোগ বাড়বে। একইসঙ্গে প্রাপ্য সেবা পেতে সরকারি অফিসে জনগণের ভোগান্তি বাড়বে। অবৈধ অর্থ লেনদেন বহুগুণে বাড়বে।


👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Uncomm

Share
Published by
Uncomm

Recent Posts

That is the POCO X7 Professional Iron Man Version

POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…

9 months ago

New 50 Sequence Graphics Playing cards

- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…

9 months ago

Good Garments Definition, Working, Expertise & Functions

Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…

9 months ago

SparkFun Spooktacular – Information – SparkFun Electronics

Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…

9 months ago

PWMpot approximates a Dpot

Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…

9 months ago

Keysight Expands Novus Portfolio with Compact Automotive Software program Outlined Automobile Check Answer

Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…

9 months ago