টিয়ার গ্যাস, গুলির মুহুর্মুহুর শব্দ, আতঙ্ক, চিৎকার—এই রক্তাক্ত রণক্ষেত্রের কোথাও না কোথাও ছিল নিজের কলিজার টুকরা সন্তানটি। সে বেঁচে আছে নাকি নেই, সেটাও অজানা। যেকোনও মুহূর্তে যেকোনও সংবাদ আসার আশঙ্কা মাথায় নিয়ে কীভাবে কেটেছে অভিভাবকদের সময়? বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের পরে ঘরে ফিরলেও তাদের জীবনের সেই ২১ দিনের আতঙ্ক ও উদ্বেগ কী পুরোপুরি কেটেছে?
নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন ও প্রযোজক সারা আফরিন দম্পতির সন্তান ঋষভ আদিত্য। ২১ বছরের ঋষভ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনা তাকে নাড়া দেয় ভীষণভাবে। ‘সে যদি নিজের অধিকার চাইতে গিয়ে এত সাহসী হতে পারে, তবে আমি কেন পারবো না?’ ভারতীয় পত্রিকায় নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে লেখা একটি আর্টিকেলে এভাবেই বলেছেন ঋষভ।
‘১৭ তারিখ (জুলাই) রাতে যখন ঋষভ আমাদের বললো যে আমি মিছিলে যাচ্ছি, তখন আমাদের বলার কিছু ছিল না। আসলে ও যে পারিবারিক শিক্ষায় বড় হয়েছে, সেখানে এই ধরনের কথা বলা খুব স্বাভাবিক। আমাদের আটকানোর কিছু ছিল না। পরদিন ঋষভ চলে যায় আন্দোলনে’— বলছিলেন ঋষভের মা প্রযোজক সারা আফরিন। অস্থির হয়ে বারবার ব্র্যাকের পেইজ চেক করছিলেন সারা ও সাইমন, আপডেটের জন্য। এমন সময় ঋষভ ফোন করে জানায়, মা আমরা কিচ্ছু করিনি, কিন্তু আমাদের গুলি করছে। এরপরই ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে রওনা হন সারা-সাইমন দম্পতি।
‘আমরা গিয়ে দেখি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে ব্র্যাক। বাচ্চাগুলো বাঁচার চেষ্টা করছে। তখনও আমরা ঋষভকে খুঁজে পাইনি। শেষ পর্যন্ত মেডিক্যাল সেন্টারে গেলাম ওকে খুঁজতে। গিয়ে দেখি বীভৎস অবস্থা। কারোর চোখে গুলি লেগেছে, কেউ অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে’, বলেন সারা।
‘তবে সন্তানরা আমাদের রাস্তায় নামা শিখিয়েছে। নীরবতার সংস্কৃতিতে যে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম, তাদের প্রতিবাদ করা শিখিয়েছে। এই আন্দোলনের অনেক বড় একটি প্রাপ্তি এটা। এখনও আমরা মাঠে আছি। এখনও লড়াই চলছে। কারণ, এখনও আমাদের মধ্যে স্থিরতা আসেনি। এই আতঙ্কের স্মৃতি থেকে তখনই পুরোপুরি বের হতে পারবো, যখন এই গণহত্যার সঠিক বিচার হবে’, বলেন সারা আফরিন।
উদ্যোক্তা জাহানারা বেগম জানান, তার ছেলে ইউডা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া কমিউনিকেশনের ছাত্র আবদুল্লাহ আল মূতী যখন আন্দোলনে যেতে চান, তখন তিনি শুরুতে বাধা দিয়েছিলেন। কিন্তু ও যখন ছাত্রদের মৃত্যু ও আহত হওয়ার কথা তুললো, তখন আর না করতে পারিনি। নিজের কাছে নিজেকে স্বার্থপর লাগছিল। এরপর চাকরিজীবী বড় ছেলেও যোগ দেন আন্দোলনে। ‘প্রচণ্ড ভয় কাজ করছিল। কিন্তু আল্লাহর কাছে দোয়া করা ছাড়া আর কিছুই করিনি তখন। মনে মনে বলেছিলাম, আল্লাহ- তুমি হেফাজত করো’, বলেন জাহানারা।
‘ছেলেরা কখনোই কোনও রাজনৈতিক দলের সমর্থক ছিল না বলে জাহানারা বেগম জানান, রাজনীতি খুব অপছন্দ করতো তারা। কিন্তু এখন তারাই প্রতিটা নিউজ দেখে ও পড়ে। আমি খুব অবাক হয়ে ওদের এই পরিবর্তন দেখি।’
বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত আব্দুল আলিম মুন্সি বলছিলেন তার পিঠাপিঠি এক ছেলে ও এক মেয়ের গল্প। তারা একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। তবে তাদের অনুমতি ছাড়া নাম পরিচয় প্রকাশ না করার অনুরোধ জানালেন তিনি। বললেন, ‘পরিবার থেকেই সন্তান শেখে মূল্যবোধ। শেখে কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ। অন্যায়কে অন্যায় বলা যদি পরিবার থেকে না শিখাই, তাহলে তো সন্তানদের ঠিকমতো বড় করতে পারলাম না! আমরা সবাই দেখছিলাম—অন্যায়ভাবে মানুষ মারা হচ্ছে। যাদের মারা হচ্ছে তারা আমার সন্তানদেরই ভাইবোন। তাই তারা যখন আন্দোলনে অংশ নিতে চাইলো, কোন মুখে নিষেধ করবো? তবে যে কয়টা দিন তারা রাস্তায় ছিল, যে কয়টা মুহূর্ত তারা ন্যায়ের জন্য লড়েছে—আমি সারাক্ষণ দোয়া পড়তাম। ভেতরের অস্থিরতা ওদের বুঝতে দিইনি। ওরা ওদের দাবি আদায় করে ফিরে আসার পর আমি অনেকক্ষণ দুজনকে জড়িয়ে ধরে বসে ছিলাম। ওরাও কেঁদেছে, আমিও কেঁদেছি। ওরা এখন ঘরে ফিরেছে। কিন্তু এখনও মনের ভেতরে আতঙ্কের রেশ রয়ে গেছে।’
মাঠে থাকা শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আছে মনে হলেও আসলে কতটা স্বাভাবিক সে প্রশ্ন নিয়েই নতুন করে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে অভিভাবকদের। পোয়েট্রি ব্র্যান্ড প্রহরীর অন্যতম সদস্য শামসুল হুদা মুস্তফা গুলি খেয়েছিলেন ১৮ জুলাই, রামপুরা ব্রিজের কাছে। যখন কথা হচ্ছিল তখনও তিনি পুরোপুরি সুস্থ না। ড্রেসিং শেষে ফোনে কথা বললেন। জানালেন, লেখালিখি করার সুবাদে বেশ বিপদে ছিলেন তিনি। ফোনে আড়িপাতা হচ্ছিল। একরকম পালিয়েই ছিলেন। গুলি খাওয়ার পর প্রথমে জানান বড় ভাইকে। তবে মা ফাতেমা বেগম কিছু একটা আঁচ করতে পেরেছিলেন। এরপর যখন জানলেন গুলির কথা, তখন কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলেছিলেন—তোমাকে আল্লাহর নামে দিয়ে দিলাম। সবাই যখন আছে তুমিও যাও। এটা শোনার পর মনটা ভালো হয়ে গিয়েছিল।
নিজের দুই মেয়েসহ পরিবারের আরও পাঁচ জনকে নিয়ে আন্দোলনে অংশ নিতে রাস্তায় নেমেছিলেন ধানমন্ডির বাসিন্দা রূপা। দুই মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া। তারা প্রথম যেদিন এসে জানালো যে আন্দোলনে অংশ নিতে চায়, তখন রূপার বড় বোন আর ভাগনিও ছিল বাসায়। বড় বোন রূপাকে নানাভাবে বোঝাতে থাকেন, মেয়েদের না পাঠানোর জন্য। ‘আমি মেয়েদের নিষেধ করিনি, বরং ওদের বলেছি চলো আমিও যাবো তোমাদের সঙ্গে। এরপর বড় বোনও আমাদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে যান’, বলেন রূপা। তিনি জানান, ভয় কাজ করছিল অনেক। কিন্তু দায়িত্বের কাছে ভয় হার মেনেছে। মেয়েদের আন্দোলনে যাওয়া নিয়ে কোনও আপত্তি করেননি চিকিৎসক বাবা হাসান আখতারও। সবাই সহি সালামতে ফিরেছেন ঘরে। তবে চোখের সামনে দেখা ঘটনাগুলো এখনও জাগায় আতঙ্ক।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই ঘটনাগুলো যেসব পরিবারের মধ্যে ঘটেছে, তারা এখন নিজেরা নিজেদের নতুন করে চিনছেন। যে সন্তান হয়তো কীটপতঙ্গ দেখে ভয় পেতো, সে বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিয়েছে। সেখান থেকে আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সময়টাতে আমাদের প্রত্যেকের সতর্ক থাকা জরুরি। তার জীবনাচরণের যে পরিবর্তন, সেগুলো চিহ্নিত করে কাউন্সেলিংয়ের মধ্যে আসতে হবে। পরিবারে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, সমাজে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করতে হবে।’
আরও পড়ুন:
অল্প আওয়াজে কেঁপে কেঁপে ওঠে যে শিশু
আন্দোলনের প্রভাব মানসিক স্বাস্থ্যে কতটুকু
👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com
POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…
- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…
Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…
Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…
Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…
Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…