জীবনমান উন্নয়নের আশায় গ্রাম থেকে শহরে আসার ঘটনা নতুন কিছু নয়। স্বাভাবিকভাবেই গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষের সংখ্যা সব সময় বাড়তে থাকে। করোনা মহামারির সময় সেই সংখ্যা কিছুটা কমলেও পরে আবার তা বেড়ে যায়। তবে গতবছর গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষের সংখ্যায় বড় রকমের পরিবর্তন ঘটেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, শহর ছেড়ে গ্রামে যাওয়া মানুষের সংখ্যা দুই বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। ২০২১ সালে প্রতি হাজারের মধ্যে ৫.৯ জন শহর থেকে গ্রামে গিয়েছিলেন আর ২০২৩ সালে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩.৮ জনে।
বিবিএসের পক্ষ থেকে গত মার্চ মাসে প্রকাশিত বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২৩ প্রতিবেদনে অভিবাসন বিষয়ে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি তৈরির জন্য বিবিএস ৩ লাখ ৮ হাজার ৩২টি পরিবারের ওপরে সমীক্ষা চালিয়েছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, এক বছরের ব্যবধানে গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষের সংখ্যা কমেছে হাজারে প্রায় সাত জন। ২০১৯ সালে গ্রাম থেকে শহরে (প্রতি হাজার জনসংখ্যায়) আগমন করেছে ১৫ জন, ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে তা কমে হয়েছে ১২.৭ জন। ২০২১ সালে আবার সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৮.৪ জন, ২০২২ সালে সেই সংখ্যা আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬.৪ জন। তবে ২০২২ সাল থেকে ২০২৩ সালে গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৯.৬ জনে।
অন্যদিকে শহর ছেড়ে গ্রামে যাওয়া মানুষের সংখ্যা দুই বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। করোনা মহামারির সময় মানুষের মধ্যে শহর থেকে গ্রামে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছিল। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও মানুষের শহর ছাড়ার প্রবণতা কমেনি বরং আর্থসামাজিক কারণে বছর বছর শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে যাওয়ার প্রবণতা আরও বাড়ছে। বিবিএসের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২১ সালে প্রতি হাজারের মধ্যে ৫.৯ জন শহর থেকে গ্রামে গিয়েছিলেন। ২০২৩ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩.৮ জন। এই সংখ্যা ২০১৯ সালে ছিল যথাক্রমে ০.৭ জন এবং ২০২০ সালে করোনা মহামারির প্রভাবে তা বেড়ে হয়েছে ৮.৪ জন। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ১০.৯ জনে।
২০২২ সাল থেকে ২০২৩ সালে গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষের সংখ্যা কেন কমে গিয়েছে এবং শহর থেকে গ্রামে ফেরার সংখ্যা কেন বেড়েছে তার পেছনে রয়েছে নানান যৌক্তিক কারণ। শহর থেকে গ্রামে ফেরা বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউনের। তারা বলছেন, আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ঢাকায় পরিবার নিয়ে থাকা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাচ্চাদের পড়াশোনার খরচ বেড়েছে, প্রতিবছর বাসা ভাড়া বাড়ছে। আয়ের সঙ্গে মাসিক খরচের সামঞ্জস্য কোনভাবেই রাখা যাচ্ছে না। মূলত এসব কারণে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন অনেকে।
অন্যদিকে গ্রাম থেকে শহরে আসার সংখ্যা কমার কারণ হিসেবে জানা যায়, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে শহরের চেয়ে গ্রামে মোটামুটি স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করা যায়। তাছাড়া শিক্ষিত বেকার যুবকরা শহরে চাকরির পেছনে না দৌঁড়ে উদ্যোক্তা হচ্ছেন। তারাই আবার গ্রামের মানুষকে বিভিন্ন ধরনের কাজের সুযোগ করে দিচ্ছেন। এছাড়া ধীরে ধীরে গ্রাম পরিণত হচ্ছে নগরে। শহরের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা এখন গ্রামে পৌঁছেছে। গ্রাম থেকেই স্বাচ্ছন্দ্যে শহরের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা যায়। তাছাড়া শহরের জীবনমান এখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে কঠিন হয়ে গেছে। মূলত এইসব কারণে গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষের সংখ্যাটা কমেছে।
গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষের সংখ্যা কমার বিষয়ে নোমান উদ্দিন নামে একজন উদ্যোক্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জীবন মানের একটু উন্নতির জন্য মানুষ গ্রাম থেকে শহরে আসে। অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে আমি নিজেও গ্রাম থেকে শহরে গেছি। আবার শহর থেকে গ্রামে চলে এসেছি। ২০২২ সালে আমি গ্রামে এসে নিজে কিছু করার চিন্তা-ভাবনা করি। এখন গরুর খামার, মাছ চাষ, সবজি চাষ নিয়ে ব্যস্ত। আমার গরুর ফার্ম, মাছ চাষের ঘের— এসব দেখাশোনা করার জন্য আরও ছয়জন লোক আছে। মূল কথা হচ্ছে— আমি যদি গ্রামে এগুলো না করতাম তাহলে আমার ফার্মে যারা কাজ করে তারা কিন্তু চাকরির সন্ধানে ঢাকায় চলে যেতো। কিন্তু এখন গ্রামে যা আয় হচ্ছে তা দিয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে চলা যাবে।
গ্রাম থেকে শহরে চাকরির উদ্দেশ্যে আসতে চেয়েছিলেন সদ্য গ্রাজুয়েশন পাস করা শাকিল আহমেদ। তবে এখন তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শহরে নয়, গ্রামেই কিছু একটা করবেন। গ্রাম থেকে শহরে না যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, নিজ বাপ-দাদার একটা ঘর আছে এখানে, টুকটাক চাষাবাদ করে খাওয়া যাবে। বাসা ভাড়া লাগবে না। শহরে তো পানিটুকুও কিনে খেতে হয়। গ্রামে চাল কিনে নিলে তরকারি এদিক-সেদিক থেকে পাওয়া যায়। বরশি দিয়ে নদীতে পুকুরে মাছ ধরে নেওয়া যায়। গ্রামের লোকজনকে মুরগি কিনতে হয় না, নিজেরা পালে, আবার মাঝে মাঝে কেউ বিক্রিও করে। শহরে গ্যাসের বিল দিতে হয় বা সিলিন্ডারে গ্যাস কিনে রান্না করতে হয় কিন্তু গ্রামে মাটির চুলায় পাতা-লতা গুঁজে রান্না করা যায়। শহরে আলো-বাতাস-গ্যাস-পানি সব কিনে নিতে হয়। কিন্তু গ্রামে অন্তত এইসব কিছুর জন্যই কোনও খরচ করতে হয় না।
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে পরিবারসহ রাজধানী ছেড়ে তল্পিতল্পা গুটিয়ে গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে চলে গিয়েছেন ফারুক হোসেন। ২০১১ সাল থেকে তিনি বাংলাবাজারের একটা লাইব্রেরিতে ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। রাজধানী ছেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি সোজাসাপ্টাভাবে বলেন, যা ইনকাম করছি তা দিয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এজন্য সিদ্ধান্ত নিলাম গ্রামের বাড়ি চলে যাওয়াই ভালো হবে। তাই সবকিছু গুটিয়ে একেবারে ঢাকা ছেড়ে চলে আসছি। এখন বাড়িতে ছোট একটা ব্যবসা করছি আর পাশাপাশি চাষাবাদ করছি। চাষাবাদ বলতে বিভিন্ন ধরনের সিজনাল সবজি শুধু নিজের পরিবারের জন্য করছি।
রাজধানী ছেড়ে গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর পরিবারসহ চলে যাওয়া আরেকজন মোহাম্মদ হুমায়ুন। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, আমার ব্যয়ের খাত বেড়ে গিয়েছিল। তার উপর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ঠিক মতো সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলাম। এদিকে বাসা ভাড়াও বেড়েছে। সবমিলিয়ে ঢাকায় টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই একেবারে গ্রামের বাড়ি চলে এসেছি।
ঢাকায় থাকতে পরিবারের ব্যয়ের হিসাব দেখিয়ে হুমায়ুন বলেন, আমি বেতন পেতাম ২৫ হাজার টাকা। দুই ছেলে-মেয়ে আর স্ত্রীসহ থাকতাম দুই রুমের ছোট একটা বাসায়। সেটার ভাড়া দিতাম ১০ হাজার টাকা। কারেন্ট বিল, গ্যাস বিল, পানির বিল, ময়লার বিল মিলিয়ে আরও দুই হাজার টাকার মতো চলে আসতো। বাকি টাকা দিয়ে পুরো সংসার চলতো। বাচ্চাদের পড়াশোনা চলতো। টানাপোড়েনের মধ্যেও সব কিছু চলছিল। কিন্তু এ বছরের শুরুর দিকে বাড়িওয়ালা বলেছে, ভাড়া আরও দুই হাজার বাড়িয়ে দিতে। তাছাড়া সবকিছুর যেভাবে দাম বেড়েছে ঢাকায় আর টিকতে পারছিলাম না।
পেশা পরিবর্তন করার কারণে অনেকে ঢাকা ছাড়ছেন বলে জানান মির্জা আজম নামে রাজধানীর একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি বলেন, হুট করে শহরে এসে আবার হুট করে চলে যায় না কেউ। কিছু লোক সিজন অনুযায়ী অনেক বার পেশা পরিবর্তন করে— রিকশা চালায়, বিভিন্ন ধরনের কাজ করে। কিছু একটা ফুটপাতে বিক্রি করে। তারপর যখন হচ্ছে না তখন শহর ত্যাগ করে। আবার কেউ পরিবার নিয়ে থাকতো। করোনার পর পরিবারসহ থাকা সম্ভব হচ্ছে না দেখে বউ-বাচ্চা গ্রামে পাঠিয়ে নিজে ছোট একটা রুমে বা মেসে থাকছে, এমন কিন্তু সবসময় হচ্ছে।
গ্রাম থেকে শহরে যাওয়ার বা গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যাওয়ার অন্যতম কারণ নদী ভাঙ্গন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, নদী ভাঙ্গনে ঘরবাড়ি হারিয়ে অনেকে শহরের বস্তিতে চলে আসে। শহরে এসে গার্মেন্টসে কাজ করে বা জীবন-জীবিকার তাগিদে ছোটখাটো কিছু করে। আবার অনেক ক্ষেত্রে এমন হয়— পরিবারে নামডাক ছিল তবে বংশপরম্পরায় সব বিক্রি করে দিয়েছে, গ্রামে তো আর ভিক্ষা করে বা খেটে খাওয়া যায় না— লোকজন চিনবে বা মন্দ বলবে। এজন্যও গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়।
গ্রাম থেকে শহরে আসার সংখ্যা কমাকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন বলে জানিয়েছেন অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি বলেন, গ্রামে এখন অনেক সুযোগ-সুবিধা তৈরি হয়েছে। শহরের অনেক কিছুই গ্রামে পাওয়া যায়। তাছাড়া শহরের কষ্ট-ভোগান্তির কথা পাড়া-প্রতিবেশীর কাছে শুনে শহরে আসার আগ্রহ কমেছে। শহরের জীবনযাত্রার মান আগের মতো নেই। অনেক কঠিন হয়ে গেছে। তাই শহরে আসার দিকে মানুষ এখন কম ঝুঁকেছে।
শহর থেকে গ্রামে ফেরার সংখ্যা বাড়া এবং গ্রাম থেকে শহরে আসার সংখ্যা কমার বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সাধারণত এ ধরনের অভ্যন্তরীণ যে অভিবাসন হয় সেটা স্বাভাবিকভাবে যেখানে রিলেটিভ অপরচুনিটি তৈরি হয় সেই জায়গায় সংখ্যাটা বাড়ে। এখানে একটা হচ্ছে পুশ ফ্যাক্টর আর একটা হচ্ছে পুল ফ্যাক্টর। আবার কখনও কখনও উল্টোটাও হয়। যখন একটা জায়গায় ব্যয় বৃদ্ধি হয় এবং কেউ বাধ্য হয় ওই জায়গা থেকে সরে যাওয়ার জন্য— ওটা পুশ ফ্যাক্টর। আর কেউ যখন শহরে আসে অপরচুনিটির জন্য, জীবনমানের উন্নয়নের জন্য— সেটা হচ্ছে পুল ফ্যাক্টর। এটা মানুষকে শহরে টেনে নিয়ে আসে। গ্রামাঞ্চলে যেহেতু শহরের তুলনায় সুযোগ কম সেজন্য মানুষ গ্রাম থেকে শহরে আসে। উল্টোটা যখন হয় তখনই পুশ ফ্যাক্টর কাজ করে। ব্যয়বৃদ্ধির যখন ঘটনা ঘটে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হয় তখন পুশ ফ্যাক্টর কাজ করে। শহরে এখন নিম্নআয়ের মানুষের আয়ের সাথে ব্যয়ের সামঞ্জস্য করতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জীবনযাত্রার যে ব্যয়— খাদ্য ব্যয় এবং খাদ্য বহির্ভূত ব্যয়, এই দুটো এখন আয়ের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এজন্য মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে পাড়ি জমাচ্ছেন।
অন্যদিকে গ্রাম থেকে শহরে আসার সংখ্যা কমার বিষয়ে তিনি বলেন, কৃষি মজুরি বাড়ছে, কৃষি কাজের সাথে জড়িত উৎপাদনশীল মানুষের আয় বাড়ছে। সেই ঘটনাটা কাউকে কাউকে গ্রাম ভিত্তিক করে কিনা এটা ভাবার বিষয়। আবার যেহেতু গ্রাম শহর হচ্ছে উপ-শহরগুলোতে বিভিন্ন সুযোগ তৈরি হচ্ছে সেই বিষয়গুলো মানুষকে গ্রামে থাকার বিষয় উদ্বুদ্ধ করছে কিনা সেটাও দেখার বিষয়। কিন্তু আমার ধারণা এই প্রবণতাটা এখনও সক্রিয় না। মূলত পুশ ফ্যাক্টর কাজ করছে। ব্যয়বৃদ্ধির কারণে মানুষ শহর থেকে গ্রামে যাচ্ছে এবং সেখানে থাকছে কারণ সেখানকার ব্যয় তুলনামূলক সহনীয়।
👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…
- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…
Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…
Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…
Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…
Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…