অদৃষ্ট না পুরস্কার বড়- এই বিতর্ক শেষ হয়নি। হয়তো হবেও না। এই গোলোকের রহস্য কতটুকুই বা উন্মোচিত হয়েছে! মহাবিশ্বের রহস্যরাজির সামান্যও মানুষ জানতে পেরেছে এমন দাবি করা ধৃষ্টতা। বিশ্বকবি অদৃষ্টবাদী ছিলেন এ কথা তাঁর কঠোর সমালোচক ও দুর্মুখেরাও দিতে পারবেন না। তবে তিনি যে কোনো এক অদৃশ্য উৎস থেকে উচ্ছ্রিত শক্তির নির্ঝরে নিরস্তর অবগাহন করেছেন তা বোধ করি উপলব্ধি করতেন। সেটি তাঁর আত্মবিশ্বাসে হয়তো দ্যুতি ছড়াতো, কিন্তু তা তাঁকে অদৃষ্টবাদী হতে ইন্ধন যোগায়নি।
বিশ্বকবি প্রচণ্ড ঠাণ্ডা, তুষার, ঝড়ো শীতল হাওয়া, বৃষ্টির মধ্যে এক ডজন বার কালিম্পং, শিলং, দার্জিলিঙ ও গ্যাংটকের বিভিন্ন অবস্থান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার স্বর্ণশিখররাজি সন্দর্শনে ব্যর্থ হয়েছিলেন। এই ব্যর্থতার জন্য তিনি অদৃষ্টকে দায়ি করেননি। তবে মনে অতৃপ্তির অসাহয়তাবোধ হয়তো ছিল। মুশকিল যে, আবহাওয়ার অনুকূল্য ছাড়া কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা সম্ভব নয়। দিনমণির প্রথম স্বর্ণাভ কিরণই তো ভরসা। এই কিরণকে লোকচক্ষুর আড়াল করে মেঘ, গাঢ় কুয়াশা, তুষার ঝড় ও বৃষ্টি।
কাঞ্চনজঙ্ঘা হিমালয় পর্বতমালার কয়েকটি শৃঙ্গ।কাঞ্চন+জঙ্ঘা কাঞ্চনজঙ্ঘা শব্দবন্ধ হবে বলে মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এই নামের উৎপত্তি কাং চেং জেং গা থেকে। প্রথম এভারেস্টজয়ী তেনজিং নোরগে তাঁর “ম্যান অব এভারেস্ট” গ্রন্থে যার অর্থ করেছেন তুষারের পাঁচ ধনদৌলত। এটি ভারতের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। উচ্চতা ৮,৫৮৬ মিটার। কাঞ্চনজঙ্ঘার শিকরগুলো ভারতের সিকিম রাজ্য ও নেপালের পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত। পর্বতের উত্তরে লহনাক চু নদী ও জংসং লা শৃঙ্গ, পশ্চিমে তামুর ও পূর্বে তিস্তা নদী। এটি মাউন্ট এভারেস্টের ১২৫ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত।
টাইগার হিল থেকে পর্যটকদের কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার চেষ্টা
১৮৪২ সালের আগে কাঞ্চজঙ্ঘাকে হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মনে করা হতো। ১৮৪৯ সালে ভারতের বৃহৎ ত্রিমাত্রিক জরিপে ধরা পড়ে যে হিমালয়ের ৮৮৪৯ মিটার উচ্চতার শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টই হিমালয়ের সর্বোচ্চ। ১৮৫৬ সালে আবার পরীক্ষা শেষে এই গণনাকে চূড়ান্ত স্বীকৃতি দেওয়া হয়। মাউন্ট এভারেস্ট শৃঙ্গ নেপাল ও তিব্বত সীমান্তে অবস্থিত। প্রতি বছর অসংখ্য পর্যটক কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শনের আশায় দার্জিলিং ভ্রমণে যায়।
দার্জিলিঙের সবচেয়ে উঁচু শিখর টাইগার হিল। সূর্যোদয় দেখার জন্য রাত সাড়ে তিনটা চারটার মধ্যে রওনা দিতে হয়। প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যে প্রায় আট কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে টাইগার হিলে যেতে হয়। কারণ আগে না গেলে গাড়ি পার্কিং করতে হয় শিকরের নিচে। হেঁটে উঠতে কষ্ট হয়। শিকরে ওঠার পরও প্রায় ২০০ মিটার এবড়োথেবড়ো পথ মাড়িয়ে উঠে ভোরে রবির প্রথম কিরণের দ্যুতিতে কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।
অনেকের মতে যাঁরা পর্বত আরোহণে বা ট্র্যাকিংয়ে দক্ষ তাঁরা সান্দাকফু থেকে সহজে কাঞ্চনজঙ্ঘা পরিদর্শন করতে পারেন। নেপাল-ভারত সীমান্তে সান্দাকফু-ফালুট অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ৩৭০০ মিটার। পর্বত শৃঙ্গে অক্সিজেন সংকটে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এখানে মুহূর্তের মধ্যে প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়। বাঁশ ঝাড় ও রডোডেন্ড্রন বৃক্ষের মধ্যে দিয়ে আলোছায়ার নিচ দিয়ে উপরের দিকে উঠতে হয়। সম্প্রতি সান্দাকফুর কতকাংশে জীপ চলাচল শুরু হয়েছে জানা গেলো। সান্দাকফু থেকে মাউন্ট এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘাসহ অন্যান্য শৃঙ্গ স্পষ্ট দেখা যায়।
আমরা দার্জিলিঙ যাচ্ছিলাম না, তবে যে দুই স্পটে যাওয়া নির্দিষ্ট তা দার্জিলিংয়ের কাছাকাছি। লোলেগাঁও ও সিকিমের গ্যাংটক থেকেও কাঞ্চনজঙ্ঘা পরিদর্শন করা যায়। আমাদের মনেও সেই নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগের অপ্রতিরোধ্য সুপ্ত বাসনা। সেপ্টেম্বরের শেষে আকাশ সাধারণত মেঘমুক্ত থাকে। তবে মানব-সৃষ্ট নানান ক্ষতিকর কর্মকান্ডের দরুন আবহাওয়া মণ্ডলের বিরূপ আচরণ লক্ষ করা যাচ্ছে। ফলে প্রকৃতিতে অকাল বর্ষণ, ঘুর্ণিঝড়, সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, উঁচু পর্বতে ও মেরু অঞ্চলে বরফগলন ইত্যাদি দেখা দিচ্ছে। তা দেখে মনে সংশয়। সফর বাতিলের চিন্তাও হয়েছিল।
এসি টু টায়ার এবং এসি থ্রি টায়ার
১৯৯৫ সালে ভ্রমণে যাওয়ার লক্ষ্যে আমাদের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সেই বছরের গোড়ার দিকে রেলওয়ের আসা-যাওয়ার টিকেট, লোলেগাঁওর গেস্ট হাউস ও গ্যাংটকের হোটেল বুকিং করা হয়। যাওয়া বাতিল করলে অর্থদণ্ড তো আছেই, ছাপোষা এই জীবনে বেড়ানোর সুযোগ হারানো তো অর্থ-বিনষ্টির চেয়েও কষ্টের। মাভৈ বলে স্ত্রী, দুই পুত্র, পুত্রবধূ, পুত্রের সহপাঠীর পিতা-মাতা ও তাঁদের দুই ছেলেকে নিয়ে শেয়ালদহ রেলওয়ে স্টেশন থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে চেপে এনজেপির (নিউ জলপাইগুড়ি) উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। যথারীতি আমার স্ত্রী আমাদের কামরার জানালার পাশে কোনার সীটে বসে পড়ে। সহযাত্রী যদুনাথ বাবুর স্ত্রী সরসী তাঁদের কামরার কোনার সীটে বসে জিনিসপাতি গুছিয়ে রাখেন। নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন ছাড়ে। ৫৬০ কিলোমিটার পেরোবো ৮-১০ ঘণ্টায়। বাইরে নির্মল আকাশে চাঁদের আলো। পুরু কাচের মধ্যে দিয়ে বাইরের দৃশ্য আবছা দেখা যায়। দুধের সাধ ঘোলে মেটানোর মতো। ট্রেন চলছে আপনার ছন্দে। আমাদের গাইড আমার ছোট ছেলে স্বাগত ও সহযাত্রী ভদ্রলোকের বড় ছেলে সুব্রত। ওরা ক্লাশ ফ্রেন্ড। জানের দোস্ত।
আমার ছেলের বন্ধুর বাবা ভারতীয় রেলওয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তিনি রেলওয়ের পাস নিয়ে বিনা পয়সায় রেলের এসি টু টায়ারে ভ্রমণ করছেন। ভারতে সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা বছরে একবার দুই বা চার সপ্তাহ এক মাসের বেতনের সমপরিমাণ ভাতাসহ বিনোদন ছুটি মঞ্জুর করে। পর্যটন বিলাসীরা আগে থেকে ভ্রমণের স্থান নির্বাচন করে যানবাহন ও হোটেল বুকিং দিয়ে রাখেন। নির্দিষ্ট সময়ে একা বা পরিবারসহ বেরিয়ে পড়েন। ভারতের পর্যটন শিল্প বাঙালিদের অবদানে সমৃদ্ধ। চাকুরিজীবী ছাড়া অন্য পেশার বাঙালি আমজনতাও ভ্রমণে বেশ উৎসাহী। বৃন্দাবন, কাশী, হরিদ্বার ও বেনারস যাননি এমন মধ্যবয়সী বাঙালির দর্শন পাওয়া ভার। ভারতের যে কোনো অঞ্চলে বেড়াতে গেলে বাঙালি পর্যটক দেখতে পাবেন। বাংলাদেশে সম্প্রতি ঈদের ছুটিছাটায় বা অন্য সময় বাংলদেশীরা কিছুটা ঘোরাঘুরি শুরু করেছে। এটি পর্যটন শিল্পের জন্য শুভ লক্ষণ। তবে এই সেক্টরে ব্যাপক কাজ বাকি। পর্যটনকে শিল্পের পর্যায়ে উত্তরণের জন্য সুপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা কার্যকর করা একান্ত জরুরি। আমাদের প্রতিবেশী ভুটান, মালদ্বীপ, ভারতের সিকিম রাজ্যের অর্থনীতি মূলত পর্যটন-নির্ভর।
সান্দাকফু ট্রেকিং
আমাদের পাঁচজনের টিকেট শীততাপ নিয়ন্ত্রিত থ্রি টায়ারে। অর্থাৎ খোপের প্রতি পাশে তিনজন শোওয়ার ব্যবস্থা। একই খোপে যাতায়াতের রাস্তার পেছনে উপর-নিচ দু’জন শোবেন। এক খোপে সর্বমোট আট জনের শোওয়ার সংস্থান। এসি-তে জানালা কাচ দিয়ে আঁটসাঁট বন্ধ। কাচের পরে সাটার আছে। সাটার দিয়ে আলো রোধ করা যায়। রেল কর্তৃপক্ষ প্রতি যাত্রীর জন্য একটি বালিশ, একটি কম্বল, দুখানা বিছানার চাদর ও মুখ মোছার তোয়ালের জোগান দেন। টয়লেটগুলো পরিচ্ছন্ন। মুখ ধোওয়ার বেসিন ও আয়নার মান ভালো। ধরে নেওয়া হয় যে এসি কম্পার্টমেন্টে সাধারণত মন্ত্রী, মন্ত্রীর পরিবার, উচ্চ পদস্থ আমলা, সমাজের উচ্চশ্রেণির লোকজন ভ্রমণ করে থাকেন। এ জন্য টিকেটের মূল্যও বেশি। রেল পুলিশ একটু চোখ রাখেন। এর মধ্যেও অঘটন ঘটে। ব্যাগ, মোবাইল, ল্যাপটপ চুরি হয়। এ কারণে সাইকেলের চেইনের মতো চেইন কিনে পরিবারের সবার লাগেজে ঢুকিয়ে তালা মারা হয়। এর মধ্যেও ব্যাগ কেটে জিনিসপত্র হাপিস হওয়ার ঘটনা মাঝে মাঝে শোনা যায়। বিদেশী পর্যটক রেলে ভ্রমণরত থাকলে আলাদা সতর্কতা অবলম্বন করেন শুনেছি।
ছেলের বন্ধুর বাবার বংশপদবিও চক্রবর্তী। ছেলে স্বাগতের বন্ধু সুব্রত এসে আমি ও আমার স্ত্রীকে টু টায়ারে ভ্রমণের অনুরোধ জানালে আমি বিব্রত বোধ করি। টু টায়ার মনে এক খোপে ৮ জনের স্থলে ছয়জন থাকবেন। সুব্রত ও তার ভাই থ্রি টায়ারে স্বাগত সম্রাটের সঙ্গে আড্ডা দিতে পারবে। ধুমপান করতে পারবে। আমি সম্মত হতে পারছিলাম না। রেলের বিধানে এটা আইনসঙ্গত হতে পারে না। সমস্যা হতে পারে। শেষাবধি ভদ্রলোক ও তাঁর স্ত্রী এসে আমাদের অনেকটা জোর করে উঠিয়ে নিয়ে যান। যদুনাথ বাবু রেলের একজন মাঝারি পদের কর্মকর্তা। তাঁর আশ্বাস, তিনি ‘ম্যানেজ’ করে নেবেন। অগত্যা উঠতেই হলো। (চলবে)
POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…
- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…
Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…
Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…
Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…
Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…