Categories: Bangladesh News

‘লন্ডন-সন্তুষ্টিতে’ ব্যস্ত বিএনপি নেতারা, পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা আসছে কবে?


বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ‘সন্তুষ্ট’ করতে তৎপর হয়ে উঠেছেন বিএনপির নেতারা। তাদের মধ্যে অধিকাংশই মধ্যম সারির নেতা, যারা কোনও না কোনোভাবে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে উৎসাহী হয়ে উঠেছেন। দলের মধ্যম সারির নেতারা যখন শীর্ষ নেতৃত্বকে ‘খুশি’ করার প্রক্রিয়ায় লিপ্ত, তখন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা ‘নীরবতা রক্ষা’ করছেন।

চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আন্দোলনের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে নানা আলোচনা, পর্যালোচনা হলেও আগামী দিনের রাজনৈতিক কর্মপরিকল্পনা এখনও তৈরি করতে পারেনি বিএনপি। উপরন্তু দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ উদারপন্থি অংশের বিশিষ্ট কয়েকজন নেতাকে কোণঠাসা করতে কয়েকটি পক্ষ তৎপর।

এই তৎপরতায় দলের ভেতরে ইন্ধন রয়েছে কিনা, এমন সন্দেহও সৃষ্টি হয়েছে দলে। এতে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন ধারণা। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘মির্জা ফখরুল মহাসচিব পদ ছাড়ছেন, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব পাচ্ছে বিএনপি’ ধারণাটি।

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের ও দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, নতুন পলিসি তৈরি না হওয়ায় মহাসচিবসহ দলের সিনিয়র নেতারা আগামী দিনের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও রাজনীতি নিয়ে দৃশ্যত কোনও মন্তব্য করতে পারছেন না। ইতোমধ্যে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।

স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলাপকালে কেউ কেউ দাবি করেন, বিগত আন্দোলনের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে দলের মহাসচিব একটি অবস্থান তুলে ধরেছেন দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে। মির্জা ফখরুলের সেই বিশ্লেষণের পর স্থায়ী কমিটির কেউ কেউ ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

স্থায়ী কমিটির একজন নেতা বলেন, ‘আন্দোলনের সাফল্য ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা হলেও নতুন কর্মসূচি কী হবে, রাজনৈতিক কৌশল কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়নি। তবে আশা করি দ্রুত হবে।’

সোমবার (৮ এপ্রিল) বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির এক গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে একই পদে থাকা ও পরপর কয়েকটি আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ায় নেতৃত্বে পরিবর্তন চান অনেকে। মহাসচিব পদ থেকে মির্জা ফখরুলকে সরিয়ে দিতে দলের ভেতরে স্ট্রংলি কাজ করছে একটি পক্ষ। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান যুক্তি দেখানো হচ্ছে, একদিকে যেমন ফেইলর রয়েছে, অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অনেকটাই কমফোর্টেবল হয়ে গেছে উনার (ফখরুল) ক্ষেত্রে। এ কারণে একটি পক্ষ চাইছে উনাকে সরাতে।’

দলের দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন, ‘মূলত মির্জা ফখরুলকে চাপে ফেলতে একাধিক পক্ষ তৎপর। তাদের মধ্যে দলের ভেতরের একটি অংশ ও সরকারের একাধিক এজেন্সির ইন্ধন রয়েছে।’ একই সঙ্গে দলের উদারপন্থি বেশ কয়েকজন নেতাকে কোণঠাসা করে রাখার তৎপরতাও সমানভাবে চলছে। কোনও কোনও পক্ষ নিজেদের প্রভাবিত প্রচার মাধ্যমগুলোকেও এ ক্ষেত্রে কাজে লাগাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

মহাসচিব পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এসব বাজে কথা। আমরা তো কাজ করছি। কোনও কিছু এরকম আমার জানা নেই। মহাসচিব পদ নিয়ে তো শঙ্কার কিছু দেখছি না। তিনি ইতোমধ্যে রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য, তিনি ভালো মানুষ, যোগ্য মানুষ।’

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মহাসচিব পরিবর্তনের আলোচনা যারা করছেন, তারা বলতে পারবেন কীসের ভিত্তিতে করছেন। একজনকে ছোট করে আরেকজনকে বড় করার প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই কার্যক্রম সঠিক নয়।’

‘লন্ডন-সন্তুষ্টিতে’ ব্যস্ত নেতারা
বিএনপির ঢাকা ও লন্ডনের সূত্রগুলো বলছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দলের সাংগঠনিক কাঠামোতে যোগ-বিয়োগ শুরু করেন তারেক রহমান। বেশ কয়েকজন নেতাকে সিনিয়র পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব নিয়োগপ্রাপ্তকে নিয়েও দলে প্রশ্ন উঠেছে। কোনও কোনও নেতা ক্ষুব্ধও হয়েছেন। সিনিয়রিটি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলেও দাবি করেন কেউ কেউ।

দলের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা জানান, দলের মধ্যম সারির নেতাদের মধ্যে তারেক রহমানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। কে কীভাবে তাকে খুশি করবেন, সন্তুষ্ট করবেন, এসব নিয়ে তাদের মধ্যে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে জানিয়ে এক নেতা বলেন, কেউ পদ রক্ষার জন্য যোগাযোগ রাখছেন, কেউ পদপ্রাপ্তির জন্য।

গত দুই মাসে অন্তত ১০ থেকে ১২ জনকে কেন্দ্রীয় দায়িত্বে আনা হয়েছে বলে বিএনপির দফতর সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে বিএনপির অন্তত সাত জন নেতা এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপ করলেও তারা কেউই এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

দলের মধ্যম সারির নেতারা শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের যখন চেষ্টা করছেন, তখন জ্যেষ্ঠ নেতারা অনেকটাই চুপচাপ আছেন। একাধিক স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ভাইস চেয়ারম্যান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিগত আন্দোলনের সাফল্য-ব্যর্থতা, ভুল-ত্রুটির যৌক্তিকতা খুঁজছেন সিনিয়র নেতারা। সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে কিনা, কোন প্রক্রিয়ায় নতুন কর্মসূচি আসবে, জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধতা হবে কিনা, এসব নিয়ে নেতারা বিভিন্ন আলোচনা করছেন।

‘নতুন পলিসি তৈরি না হওয়ায় সিনিয়র নেতারা প্রকাশ্যে আগামী দিনের রাজনৈতিক অবস্থান ব্যক্ত করা থেকে বিরত রয়েছেন। এমনকি বিএনপির মহাসচিবও সাধারণ বক্তব্যের বাইরে নীতিগত অবস্থান নিয়ে চুপচাপ রয়েছেন’ বলে দাবি করেন একজন দায়িত্বশীল।

কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ রাখার সিদ্ধান্ত, মাঠে নামার সময় নিয়ে আলোচনা
বিএনপির স্থায়ী কমিটি ও কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, ইতোমধ্যে আগামী দিনের রাজনৈতিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। নতুন কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হবে, কবে থেকে দেওয়া হবে, এ নিয়ে এখনও আলোচনা হয়নি।

দলীয় সূত্র জানায়, চলতি রমজান মাসে নেতাকর্মীদের চাঙা করার কৌশল নেয় বিএনপি। কারামুক্ত নেতাকর্মীদের ফুলের তোড়া দিয়ে সংবর্ধনাও দেওয়া হয় বিভিন্ন জায়গায়।

চলতি রমজানে সারা দেশে অন্তত এক হাজারের মতো ইফতার মাহফিল হয়েছে জানিয়ে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘অন্তত ৫০টি ইফতারে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অংশগ্রহণ করেন। কয়েকটি বড় ইফতার ছাড়া অধিকাংশ মাহফিল হয়েছে খোলা মাঠে, অল্প খাবারে। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের রোজার মাসে মূল দায়িত্ব ছিল যারা মিথ্যা গায়েবি মামলায় জেলের ভেতরে আছেন, তাদের আইনি প্রক্রিয়ায় জামিনের ব্যবস্থা করা। কেননা আমরা আইনের শাসনে বিশ্বাসী। এ ছাড়া তাদের স্বজনদের পাশে দাঁড়ানো, যারা জেল থেকে বেরিয়েছেন, তাদের খোঁজ-খবর নেওয়া। এ কাজগুলোতে সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়েছে। যা কিছু বাকি আছে, যেগুলো নিয়ে আমরা অগ্রসর হচ্ছি। পাশাপাশি আমাদের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আন্দোলন চলতেই থাকবে।’

সাবেক মন্ত্রী আবদুল মঈন খান আরও স্পষ্ট করে বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফেরানোর যে আন্দোলন, আমরা এখনও সে অবস্থানেই আছি। তবে এখন কোন পদ্ধতিতে কী হবে, সেটা নিয়ে আলোচনা করছি। ভবিষ্যতে চূড়ান্ত হবে। একটি বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এই আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই হবে।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ভাষ্য, ‘আমাদের এ নিয়ে কাজ চলছে। সময়মতো কর্মসূচি দেওয়া হবে।’

কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা সোমবার (৮ এপ্রিল) রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নতুন কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনা আছে। রমজানের ঈদের পর নাকি কোরবানির ঈদের পর, সেটা নিয়ে আলাপ হচ্ছে। তবে রমজানের পর কিছু কর্মসূচি আসতে পারে।’

Uncomm

Share
Published by
Uncomm

Recent Posts

That is the POCO X7 Professional Iron Man Version

POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…

6 months ago

New 50 Sequence Graphics Playing cards

- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…

6 months ago

Good Garments Definition, Working, Expertise & Functions

Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…

6 months ago

SparkFun Spooktacular – Information – SparkFun Electronics

Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…

6 months ago

PWMpot approximates a Dpot

Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…

6 months ago

Keysight Expands Novus Portfolio with Compact Automotive Software program Outlined Automobile Check Answer

Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…

6 months ago