বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ২৮ মার্চ রাত ১টার দিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা প্রবেশ করেছিলেন বলে দাবি করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে এর প্রতিবাদে গত কয়েকদিন ধরেই বুয়েট ক্যাম্পাস উত্তপ্ত। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আন্দোলনে নেমেছে একদল শিক্ষার্থী, তারা ক্যাম্পাসে রাজনীতির সঙ্গে জড়িতদের বহিষ্কারসহ ছয় দফা দাবিতে এই আন্দোলন করছিল।
নানা বাস্তবতায় বাংলাদেশে নতুন প্রজন্মের একটা অংশ রাজনীতি বিমুখ একথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই কিন্তু রাজনীতি বিমুখ আর কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের প্রতি বিষোদ্গার এক কথা নয়। বাংলাদেশের আইন তথা সর্বোচ্চ আইন মানলে সংগঠন করার অধিকার একটি মৌলিক মানবাধিকার এবং বিশেষ অবস্থা বা জরুরি অবস্থা ছাড়া এটাকে সীমিত বা নিষিদ্ধ করার সুযোগ নেই ( অনুচ্ছেদঃ ৩৮)।
বুয়েট কর্তৃপক্ষ বুয়েট আইন ও বিধির জোরে যে রাজনীতি নিষিদ্ধ করে আদেশ জারি করে রেখেছিলো তা অনেক আগেই বাতিল যোগ্য ছিল, কেউ আদালতের নজরে আনলে সেটা স্বাভাবিক ভাবেই সম্ভব।
বুয়েটে জোরালোভাবে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি ওঠে ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র ভারত বিরোধী মতপ্রকাশে সক্রিয় আবরারকে শেরেবাংলা হলের একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে অতি উৎসাহী কিছু ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। সেই ঘটনার একপর্যায়ে ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর বুয়েট কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সব ধরনের ক্রিয়াশীল ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে। আবরার হত্যাকাণ্ড নিঃসন্দেহে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘটে যাওয়া ঘৃণ্যতম কাজগুলোর একটি, কিন্তু একথাও ভুলে গেলে চলবে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হওয়া হত্যাকাণ্ডের যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি আমাদের দেশে ছিল তার বিপরীতে আবরার হত্যাকাণ্ডের দ্রুততম বিচার একটি বিরাট পরিবর্তন।
রাজনীতি তথা ছাত্র রাজনীতি খারাপ বলে পাশকাটিয়ে চলে গেলে বিপদ আপনার আমার সবার। একটি নদীর পানি পচে গেছে বা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে বলে আপনি ঐদিকে গেলেন না তাতে কি আপনি দুর্গন্ধ থেকে বাঁচতে পারবেন? বরং ওই খারাপ পানিতে ভালো পানি প্রবাহিত করে দুর্গন্ধমুক্ত করা আমাদের সবার কাজ হওয়া উচিত। অনেকেই বলার চেষ্টা করেন বুয়েট মেধাবীদের জায়গা এখানে রাজনীতির দরকার নেই, বিষয়টি হাস্যকর, রাজনীতিতে তো মেধাবীদেরই বেশি প্রয়োজন, আগামীর বাংলাদেশে বিশেষ করে ২০৪১ উন্নত বাংলাদেশ গড়তে মেধাবীদের রাজনীতিতে সব থেকে বেশি প্রয়োজন। আর বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি তো বুয়েটের শিক্ষার্থীরাই করবেন, অন্য প্রতিষ্ঠানের কেউ তো সেখানে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ নেই। মেধাবীদের সাথে মেধাবীরাই রাজনীতি করুক।
বুয়েটে চলমান আন্দোলন দেখে আমার মনে একটি প্রশ্ন জেগেছে, সাধারণ শিক্ষার্থী নামে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা আসলে কতটুকু সাধারণ? আমার অভিজ্ঞতা বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রকৃত সাধারণ শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই কম। বুয়েটের এই আন্দোলনও যারা শুরু করেছে তারা দ্রুততম সময়ে সংগঠিত হয়েছে, প্ল্যাকার্ড হাতে তীব্র প্রতিক্রিয়া, আল্টিমেটাম দিচ্ছে– এগুলো সবই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। এখানে সাধারণের ‘বেশ’ ধরার কিছু নেই। এরা প্রত্যেকেই কোনও না কোনও রাজনৈতিক মতাদর্শের। সাধারণ সেজে তারা মানুষের সহানুভূতি নিয়ে একটি ছাত্র সংগঠনকে ঠেকাতে ব্যস্ত। বুয়েটে ছাত্রলীগ না থাকায় অন্য ছাত্র সংগঠন নেই অবস্থা কিন্তু তা নয়। বুয়েটে ইসলামী ছাত্র শিবিরের কমিটি রয়েছে এবং তারা নিয়মিত সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডবিহীন বুয়েটে শিবির ও নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিজবুত তাহরিরের কর্মকাণ্ডের প্রমাণ গণমাধমে প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু শুধু বাধায় পড়েছে অসাম্প্রদায়িক সংগঠনের প্রবেশ। বুয়েটের এই সাধারণরা যদি সাধারণই হতো তাহলে কয়েকজন ছাত্র নেতার গভীর রাতে ক্যাম্পাসে প্রবেশে তাদের কিছু আসা যাওয়ার কথা ছিল না।
গভীর রাতে সেখানে কোনও রাজনৈতিক প্রোগ্রাম ছিল না, বা তারা কোনও হলে প্রবেশ করে কাউকে বিরক্ত করেননি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েট পাশাপাশি, ছাত্র নেতারা আসা যাওয়া করতেই পারেন। শুধু এই কারণে সাধারণের নামে যে তীব্র প্রতিক্রিয়া আমরা দেখছি তা কোনোভাবেই সাধারণ ছাত্রদের কাজ না। এই সাধারণরা যদি সাধারণই হতো তবে তারা দ্বীপ হত্যার বিচারে কখনও কোনও কথা বলেনি কেন?
২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল বুয়েটের নজরুল ইসলাম হলে ছাত্রলীগ নেতা ও গণ জাগরণমঞ্চে কর্মী বিশ্ববিদ্যালয় যন্ত্রকৌশল বিভাগের ছাত্র আরিফ রায়হান দ্বীপকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে মৌলবাদী জামায়াত শিবির। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১৩ সালের ২ জুলাই মারা যায় দ্বীপ। বুয়েটের সাধারণ ছাত্ররা যদি সত্যিকারের সাধারণ ছাত্রই হতো তবে তারা ২০২২ সালের জাতীয় শোক দিবসের জন্যে আয়োজিত আলোচনা ও দোয়া মাহফিল পন্ড করতো না। জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে ভাঙচুর চালাতো না। সুতরাং বিষয়টি গভীরভাবে ভাবতে হবে।
সাধারণ ছাত্রকে বলতে হবে কেন সে সাধারণ, তাকে আমরা সাধারণ মানুষ এমনি চিনে নিবো, জোর করে সাধারণ ছাত্র সেজে মৌলবাদীদের এই আন্দোলন অত্যন্ত ভয় ও উদ্বেগের। এরা সাধারণ সেজে মানুষের সহানুভূতি নিয়ে অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলতে পারে।
কোটা আন্দোলন নেতৃত্বদানকারীদের পরবর্তীতে রাজনৈতিক পরিচয় ও উচ্চাভিলাষ ভুলে গেলে চলবে না।
খুব বেশিদিন না ২০২৩ সালের ৩০ জুলাই সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার নতুন বাজার এলাকায় একটি হাউসবোটে ৩৪ জনকে আটক করে পুলিশ। আটকৃতদের মধ্যে ২৪ জন বুয়েটের শিক্ষার্থী, ৭ জন বুয়েটের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, ২ জন সদ্য এসএসসি উত্তীর্ণ এবং একজন সহযোগী ছিল। তাদের গ্রেফতারেও প্রাথমিকভাবে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল ওই সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে, এমনকি জনমনেও। সবার প্রশ্ন বুয়েটের মেধাবী ছাত্ররা ঘুরতে গেছে, পুলিশ কেন তাদের আটক করলো?
সামাজিক মাধ্যমে পুলিশের উদ্দেশ্য নিয়ে নানান গল্প ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু আটকৃতদের কাছে থেকে পাওয়া আলামত ও তথ্য উপাত্তে দেখা গেলো ওই অবকাশের আয়োজক ছিল ইসলামী ছাত্র শিবির, বুয়েট শাখা। এবং ওই নৌ ভ্রমণের ও গোপন বৈঠকের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন বুয়েট ছাত্র শিবিরের বায়তুল মাল (অর্থ সম্পাদক) আফিফা আনোয়ার, যিনি বুয়েটের ম্যাটেরিয়ালস অ্যান্ড মেটালার্জিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। নাশকতা ও দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই হাউসবোটে মিলিত হয়েছিল তারা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো, পরবর্তীতে ওই বিষয় কথিত সাধারণ ছাত্রদের কোনও প্রতিক্রিয়া পাইনি আমরা।
মূলত ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের নামে সম্পূর্ণ বিনাবাধায় কার্যক্রম চালানো সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলো বুয়েটে তাদের শক্তির জানান দিচ্ছে অনেকদিন ধরেই। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় ডাকসু, রাকসু, চাকসু, জাকসু, ঢামেকসু সহ সারা বাংলাদেশে সকল বিশ্ববিদ্যায়লয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ বিজয়ী হলেও একমাত্র ইউকসুতে (বুয়েটে) ছাত্র শিবির-ছাত্রদল জোট ভিপিসহ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদে জয় পায়। বছরের পর বছর অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি বন্ধ থাকায় এই মৌলবাদী শক্তির ধারক বাহকরা অনেকেই এখন শিক্ষক, যাদের প্রতক্ষ ও পরোক্ষ মদদ ছাড়া এমন সাহস দেখানো ছাত্রদের জন্যে কঠিন।
আসলে আমাদের মানতেই হবে সাম্প্রদায়িকতার এই শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়ানো বুয়েটে ভয়াবহ আদর্শিক বিচ্যুতি ঘটে গেছে, যার মুখোমুখি অসাম্প্রদায়িক শক্তিগুলো না দাঁড়ালে তা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু আদর্শ ও বাঙালি জাতীয়তাবাদকে হুমকির মধ্যে ফেলবে একদিন।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…
- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…
Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…
Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…
Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…
Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…