Categories: Bangladesh News

রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ রাজউকের


নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই রাজধানীতে গড়ে উঠেছে লাখ লাখ ভবন। রাজউকের ভাষ্যমতে, শহরের ৭৪ ভাগ ভবন গড়ে উঠেছে নকশার বাইরে। বাকি ২৬ ভাগ ভবনের অবস্থা ঠিকঠাক। নকশাবহির্ভূত এসব ভবনে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি। যার ফলে রাজধানী পরিণত হয়েছে এক ঝুঁকিপূর্ণ নগরীতে। এবার রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করার জন্য নতুন উদ্যোগ নিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। সব ভবনের নকশা নিজেদের মতো পেতে চায় রাজউক। ইতোমধ্যে তার নীতিমালা প্রস্তুত করা হয়েছে।

রাজউকের এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে সেখানে তৃতীয় পক্ষ দিয়ে জরিপ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, কবে শুরু হবে রাজউকের নতুন পরিকল্পনার কাজ? কতদিন লাগবে এই জরিপ করতে? নতুন এই জরিপ কতটুকু সুষ্ঠু হবে? এর জন্য বাজেট কত নির্ধারণ করা হয়েছে? পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে নগরবাসী কী সুবিধা পাবেন? রাজউকের এই উদ্যোগের পর এমন নানান প্রশ্ন উঠে এসেছে।

রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করার নতুন উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে বিস্তারিত কথা হয় রাজউকের মুখপাত্র ও নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে।

বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, রাজধানীতে রাজউকের কাছ থেকে সাধারণত যেসব বিল্ডিং অনুমোদন নিয়ে তৈরি হয়েছে সেগুলো আমাদের অ্যানলিস্টেড সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের ডিজাইনে তৈরি করা। এর বাইরে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা অন্য কোনও জায়গা থেকে যদি অনুমোদন নিয়ে থাকে তাহলে ভবনটিতে ভূমিকম্প ঝুঁকি রয়েছে কিনা এবং সেখানে ফায়ার সেফটি মেইনটেইন করা হয়েছে কিনা এই ধরনের কোনও তথ্য রাজউকের কাছে নেই।

সে জন্য ঢাকা শহরে যত বিল্ডিং আছে বা যত বিল্ডিং নির্মাণাধীন সেগুলো নিয়মমাফিক গড়ে উঠেছে কিনা বা দুর্যোগ সহনীয় আকারে প্রস্তুত করা হয়েছে কিনা সে সম্পর্কে জানতে জরিপ করা হবে। জরিপ করে যে বিল্ডিংয়ে সমস্যা থাকবে আমরা সেই ভবন মালিককে সাজেশন দিতে পারবো যে তুমি এটা ঠিক করো অথবা ভেঙে ফেলো। যদি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয় তাহলে বিল্ডিংটি ভেঙে ফেলতে হবে। কম হলে সংস্কার করা হবে।

তিনি বলেন, একজন সাধারণ মানুষ যখন কোনও ভবন ভিজিট করবে বা বিল্ডিং ভাড়া নেবে, তারা তো জানার অধিকার রাখে যে এই বিল্ডিংটি নিয়মমাফিক গড়ে উঠেছে কিনা, দুর্যোগ সহনীয় কিনা বা ভবনে কোনও ঝুঁকি আছে কিনা। সে জন্য আমরা রাজধানীর সব বিল্ডিং সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করবো। আমরা শুধু অগ্নিদুর্ঘটনা দেখি কিন্তু এছাড়া আরও বড় ঝুঁকি রয়েছে। এই শহরে যেকোনও সময় একটা বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনা থেকেই আগাম প্রস্তুতি হিসেবে মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি যেন কম হয় সে জন্য এই উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে।

এই জরিপের কাজ কবে নাগাদ শুরু হবে এবং কত সময় লাগবে? এমন প্রশ্নের জবাবে আশরাফুল ইসলাম বলেন, আগামী দুই তিন মাসের মধ্যে এর কাজ শুরু হবে। আর আমাদের ওই রকম টেকনিক্যাল রিসোর্স পার্সন নেই। রাজউক একা এই কাজটি করা দুরূহ ব্যাপার। সে জন্য একটা তৃতীয় পক্ষ নিয়োগের চেষ্টা করেছি। যারা সরেজমিন প্রত্যেকটি বিল্ডিং পরিদর্শন করে দুটি জিনিস দেখবে। একটি ফায়ার সেফটি আসফেক্ট বিবেচনা করবে, আরেকটি হলো ভূমিকম্পের জন্য ওই ভবনটি দুর্যোগ সহনীয় কিনা। এরপর তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা যতই হোক তা গুঁড়িয়ে দেবে। বাকিদের দেওয়া হবে সংশোধনীর সুযোগ। যেগুলো কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং মধ্যম সারির ঝুঁকিপূর্ণ সেগুলোকে ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হবে। আর যেগুলো অধিক ঝুঁকিপূর্ণ সেগুলোকে বলা হবে যেন সম্পূর্ণ ব্যবহার বন্ধ করে অন্য জায়গায় সরিয়ে নেয়।

জরিপটি করতে কত টাকা বাজেট করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনও নীতিমালা পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি। নীতিমালা পুরোপুরি প্রস্তুত হলে বাজেট নির্ধারণ করা হবে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের সুফল সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষ জানতে পারবে কোন শপিং মল বা কোন ভবন বা কোন জায়গাটা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। তাহলে তারা তা এড়িয়ে চলতে পারবে। সব মানুষ জানতে পারবে কোথায় গেলে ঝুঁকি বাড়বে আর কোথায় গেলে ঝুঁকি কমবে। আমি যদি রোগ জানতে পারি তাহলে রোগের চিকিৎসা নিতে পারবো। যদি নাই জানি তাহলে চিকিৎসা নেবো কীভাবে।

রাজউকের এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে রাজধানীকে একটি নিরাপদ ও বাসযোগ্য শহর হিসেবে দেখা যাবে বলে প্রত্যাশা নগরবাসীর। রাজধানীর পান্থপথের বাসিন্দা মেফতাউল হাসান বলেন, পরিকল্পনাটা যেন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়। আর কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। কারণ রাজউকের ইন্সপেক্টর থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতি আছে, সেটা সবার জানা। সেই দুর্নীতির খোলস ছেড়ে সবাইকে বের হতে হবে। তাদের জনগণের নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিতে হবে। এছাড়া রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত তদারকি এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করা দরকার। প্রতিষ্ঠানটির সদিচ্ছা থাকলেই এসব সম্ভব।

অপরদিকে রাজধানীর ভবন মালিকরা বলছেন এই উদ্যোগ ভালো। তবে রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেন এ নিয়ে আবার নতুন কোনও দুর্নীতির মহড়া না করে। রাজধানীর একজন ভবন মালিক বলেন, সঠিকভাবে এই কাজ করলে বেশ ভালো হবে। নিয়মবহির্ভূতভাবে যারা বাড়ি নির্মাণ করেছে বা যাদের বাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। এখন কথা হচ্ছে এখানে যে তিনটা ক্যাটাগরিতে রাজউক রাজধানীর বাড়িগুলো ফেলার কথা বলছে সেটা কি আদৌ সুষ্ঠুভাবে হবে কিনা। দেখা গেলো টাকা দিয়ে এর রফাদফা করে ফেলছে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে যেন কোনও গরমিল না হয়।

রাজউকের এই পরিকল্পনা যদি বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে রাজধানীতে ভেঙে ফেলা হবে কয়েক লাখ ভবন। কারণ রাজধানীর বেশিরভাগ ভবন গড়ে উঠেছে নিয়মবহির্ভূতভাবে। নগরকে ঢেলে সাজানোর রাজউকের এই নতুন উদ্যোগ ঠিক কতটুকু সুষ্ঠু হবে এবং কতখানি কাজে দেবে সেটি দেখার অপেক্ষায় নগরবাসী। নগরবাসীর প্রত্যাশা, রাজউকের এই উদ্যোগটি যেন কোনও ধরনের ছলচাতুরি ছাড়া দ্রুত বাস্তবায়ন হয়।

শরাফত আলী নামে রাজধানীর মতিঝিলের এক বাসিন্দা বলেন, রাজধানীকে বাসযোগ্য করে তোলার জন্য সিটি করপোরেশন এবং রাজউকের অনেক উদ্যোগের কথা শোনা যায়। কিন্তু দিন শেষে তা বাস্তবায়ন হয় না, পরিকল্পনাতেই থেকে যায়। রাজউকের নতুন উদ্যোগ প্রশংসনীয়। নগরবাসী এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের অপেক্ষায় থাকবে। এটি বাস্তবায়ন হলে আমরা জানতে পারবো কোন ভবনটা আসলে ঝুঁকিপূর্ণ আর কোনটা নিরাপদ। এক্ষেত্রে আমাদের বাসা ভাড়া নিতে সুবিধা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো যদি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় তাহলে একটা নিরাপদ শহর গড়ে উঠবে।

রাজউকের এমন উদ্যোগকে অভিবাদন জানিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। তবে নগরবিদরা বলছেন, কেবল পরিকল্পনা নয়, বাস্তবায়ন দেখতে চান তারা। একইসঙ্গে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে এই কাজ করার জোর তাগিদ দেন তারা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রাজউকের এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এই পরিকল্পনা আরও আগে নেওয়া উচিত ছিল। শহরটা যেভাবে চলছে এটা তো কোনও সিস্টেমের মধ্যে পড়ছে না। রাজউক যদি শক্তভাবে স্বচ্ছতা বজায় রেখে কাজটি করে তাহলে সাধুবাদ জানাই।

কাজের স্বচ্ছতার বিষয়ে এই পরিকল্পনাবিদ বলেন, আসলে রাজউকের তো নিজস্ব ক্যাপাসিটি নাই শহরের এত ভবন জরিপ করার। এক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষ আসলেই টাকা পয়সার একটা বিষয় থাকে। সেক্ষেত্রে স্টুডেন্টদের যুক্ত করলে জরিপটা করা সহজ হবে। স্টুডেন্টদের একটা ওরিয়েন্টেশন দিলে পরবর্তীতে তারা জায়গায় গিয়ে ভবনের তথ্য ক্যাপচার করে ডাটা এন্ট্রি করবে। টোটাল সিস্টেমটা তৈরি করে রাজউকের কাছে হ্যান্ডওভার করা হবে। রাজউকের কর্মকর্তারা জরিপে ইনভলভ না হয়ে কাজটা সুপারভাইজ করলে তাতে স্বচ্ছতা বজায় থাকবে।


👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com

Uncomm

Share
Published by
Uncomm

Recent Posts

That is the POCO X7 Professional Iron Man Version

POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…

6 months ago

New 50 Sequence Graphics Playing cards

- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…

6 months ago

Good Garments Definition, Working, Expertise & Functions

Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…

6 months ago

SparkFun Spooktacular – Information – SparkFun Electronics

Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…

6 months ago

PWMpot approximates a Dpot

Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…

6 months ago

Keysight Expands Novus Portfolio with Compact Automotive Software program Outlined Automobile Check Answer

Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…

6 months ago