সারা দেশে যে পরিমাণ পশু কোরবানি করা হয়, তার প্রায় অর্ধেক হয় রাজধানীতে। ঈদের দিন রাজধানীতে হাজার হাজার পশু জবাই করে থাকেন বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসার ইমাম ও শিক্ষকরা। এজন্য তারা পারিশ্রমিক নেন না। তবে, তাদের আবদার থাকে, তারা যে মাদ্রাসার সঙ্গে সম্পৃক্ত, সে মাদ্রাসায় কোরবানির পশুর চামড়া বিনামূল্যে বা কম দামে দেওয়ার জন্য।
কোরবানির পশু জবাই করার মানুষের অভাব না হলেও এর গোস্ত বানানোর লোকের অভাব দেখা যায় প্রতিবছর। এ কারণে আগে থেকে কসাই ঠিক করে না রাখলে সকালে পশু জবাইয়ের পরও অনেকের গোস্ত বানিয়ে তা ঘরে নিতে বিকেল বা সন্ধ্যাও হয়ে যায়। রাজধানীতে কোরবানির ঈদে যত পশু জবাই হয়, সেগুলোর গোস্ত বানানোর মতো যথেষ্ট সংখ্যক পেশাদার কসাই ঢাকা শহরে নেই। তাই, ঈদকে কেন্দ্র করে অনেক মানুষকে এক দিনের জন্য ‘মৌসুমি কসাই’ হিসেবে কাজ করতে দেখা যায়।
রাজধানীবাসীর এ সমস্যা সমাধানে প্রতিবছরই ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে অপেশাদার কসাইরা ঈদের এক দিন আগে ঢাকায় আসেন। সারা দিন কাজ করে রাতে বা পরদিন আবার তারা ফিরে যান নিজেদের এলাকায়। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বেশি পরিমাণে মৌসুমি কসাই তাদের সহযোগীসহ রাজধানীতে এসেছেন।
ঈদের ছুটিতে সবাই যখন রাজধানী ছেড়ে বাড়ি যাচ্ছেন, তখন এসব কসাই ছুটে আসছেন ঢাকায়। তাদের কারণে দিন দিন নগরবাসীর ভোগান্তি দূর হচ্ছে বলে মনে করেন সেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা করিম শেখ। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন জেলা থেকে আসা কসাইদের কারণে আমরা দ্রুত পশু কোরবানির কাজ শেষ করতে পারছি। এসব কাজে তারা নিজেরাও কোরবানির আনন্দ পেয়ে থাকেন। পাশাপাশি পান পারিশ্রমিক এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে গোস্তও।’
ঈদের আগের রাতে পাবনা থেকে রওনা দিয়ে ভোরে ঢাকায় পৌঁছেছেন জাহাঙ্গীর আলমসহ পাঁচজন। তারা মৌসুমি কসাই হিসেবে কাজ করতে ঢাকায় এসেছেন। তাদের এলাকা থেকেই এসেছেন আরও প্রায় ২০ জন। ঢাকাতে নেমেই তারা বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছেন।
বছরজুড়ে তারা নিজ নিজ এলাকায় বিভিন্ন কাজ করলেও ঈদের দুই দিন তারা ঢাকায় এসে মৌসুমি কসাই হিসেবে কাজ করেন। এই সময় রাজধানী ঢাকায় প্রচুর কসাইয়ের চাহিদা থাকায় এবং আয়ও ভালো হয় বলে ঈদের সময় ঢাকায় চলে আসেন। আগেও কাজ করে যাওয়ার কারণে নির্দিষ্ট কিছু গ্রাহক তাদের থাকেই। এছাড়া, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পরে কাজও খুঁজে নেন তারা।
এমন বেশ কয়জন মৌসুমি কসাইয়ের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকায় মূলত এলাকাভেদে কাজের বিভিন্ন রকমের মজুরি। কোনো এলাকায় গরুর যে মূল্য, তার ওপর ১০ থেকে ১২ শতাংশ অর্থাৎ প্রতি ১ হাজার টাকার জন্য ১০০ থেকে ১২০ টাকা করে নেন কসাইরা। আবার গুলশান, বারিধারা, বনানীর মতো অভিজাত এলাকায় গরুর দামের প্রতি হাজারে ২০০ টাকা করে পান কসাইরা। এছাড়াও রাজধানীর অন্যান্য এলাকায় গরুর আকৃতি বুঝে ‘ঠিকা’ চুক্তিতে অর্থাৎ কোনো গরুর জন্য ১০ হাজার আবার কোনোটার জন্য ১৫ হাজার টাকায় মাংস কাটার কাজ করেন তারা।
রসিমুদ্দিন মূলত এলাকায় ভাঙারি ব্যবসা করেন। কোরবানি ঈদের সময় ঢাকায় যেহেতু কসাইয়ের সঙ্কট থাকে, তাই তিনি প্রতি বছর কিছু লোক ও গোস্ত কাটার প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন।
তিনি বলেন, গতবার ধানমন্ডিতে যে বাসায় গরু কাটার কাজ করেছিলাম, তারাই আবার ডেকেছেন। আজ সেখানেই কাজ করব। ধানমন্ডিতে গরুর দামের প্রতি হাজারে ১২০ টাকা করে কাজ ঠিক হয়েছে। সেখানে একটা কাজ তিনজন মিলে করব। বাকি লোকদের বিভিন্ন এলাকায় পাঠিয়ে দিয়েছি, তারা ঘুরে ঘুরে চুক্তিভিত্তিক কাজ করবে।
রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় কসাইয়ের কাজ করতে সিরাজগঞ্জ থেকে এসেছেন ফরিদ ও তার তিন সহযোগী। সার্বিক বিষয়ের বর্ণনা দিয়ে ফরিদ বলেন, ঈদের দিন এবং পরের দিন কাজ পাওয়া যায় ঢাকায়। তাই, আমরা প্রতি বছর ঈদে ঢাকায় চলে আসি। দুই দিন কাজ করে ভালোই আয় হয়। অনেকে আগের দিন এসে বাসায় বাসায় গিয়ে কসাইয়ের কাজ করার প্রস্তাব দেয়। কসাইয়ের সঙ্কট থাকার কারণে অনেকেই রাজি হয়ে যায়। তখন রেট নিয়ে আলোচনা হয়। ওই কাজটা মূল হিসেবে ধরে আমরা কাজ করি। এছাড়া, ঈদের পরের দিনেও মাংস কাটার কাজ পাওয়া যায়।
লালু মিয়া ঢাকার বাড্ডায় একটি চায়ের দোকান পরিচালনা করেন। কোরবানি ঈদের সময়টাতে তিনি আশপাশের বাসাগুলোতে কোরবানির মাংসের কাজ করানোর জন্য কসাই সাপ্লাই দেন। এটা তার মৌসুমি ব্যবসা।
আলাপকালে লালু মিয়া জানান, আশপাশে সব বাসার মানুষ পরিচিত। কোরবানি ঈদের সময় তারা আমার কাছে কসাই চায়। আমারও কিছু মৌসুমি কসাইয়ের সঙ্গে পরিচয় আছে। তাদের বললে, তারা গাইবান্ধা ও রংপুর থেকে ঈদের আগের দিন চলে আসে, আমার এখানে থাকে। আমি আগেই ‘কন্ট্রাক্ট’ নিয়ে রাখি। সে অনুযায়ী কসাই সাপ্লাইই দিই। এতে করে আমারও ব্যবসা হয়, আর মৌসুমি কসাইরাও কাজ পেয়ে যায়। ঈদের দুই দিনে তারা একেকজন ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকাও ইনকাম করে নিয়ে যায়।
এমনই এক মৌসুমি কসাই সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বিভিন্নজন এলাকায় বিভিন্ন কাজ করে। আর কোরবানি ঈদের সময়টাতে আমরা দুই দিনের মৌসুমি কসাই হয়ে যাই। প্রতি গরু ১০ থেকে ২০ হাজার টাকায় বানানোর কাজ করি। কাজ শেষে নিজের টিমের মধ্যে টাকা ভাগ করে নেই। এতে করে প্রতিজনের ভাগে এই দুই দিনে মোটামুটি ১৫-২০ হাজার টাকা করে আসে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মোজাম্মেল হক। তিনি এ বছর দুটি গরু কোরবানি দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ঈদের আগের দিন চারজন লোক এসেছে আমার বাসায়। তারা রংপুর থেকে ঢাকায় কসাইয়ের কাজ করতে এসেছে। দুই গরু ২০ হাজার টাকায় তাদের সঙ্গে আমার চুক্তি হয়েছে। আমার কাজ শেষে তারা আরও অন্যান্য কাজ করবে। এরা মূলত মৌসুমি কসাই। ঈদের সময় শুধু ঢাকাতেই কাজ করতে আসে। বাকি সময় নিজ এলাকায় অন্যান্য পেশায় তারা নিয়োজিত থাকে। আমাদের ঢাকায় যেহেতু কসাই সঙ্কট থাকে ঈদের সময়, তাই মৌসুমি কসাই আসায় আমাদের উপকার হয়েছে। কোরবানির কাজ দ্রুত আমরা শেষ করতে পারছি। তারাও একটা মৌসুমি ব্যবসা থেকে ভালো আয় করে নিচ্ছে এই দুই দিনে।
রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে আসা পেশাদার কসাইদের তালিকার শীর্ষে রয়েছে পাবনা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা ও রংপুরসহ উত্তর জনপদের মানুষ। এই তালিকায় বরিশাল, ঝালকাঠি, বরগুনা, পিরোজপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সংখ্যাও কম নয়। এছাড়া, দেশের অন্যান্য এলাকা থেকেও কসাইরা আসেন ঢাকায়।
ঈদকে কেন্দ্র করে ঢাকায় আসা কয়েকজন কসাইয়ের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বছর কোরবানির ঈদের এক দিন আগে তারা ঢাকায় আসেন। কেউ কেউ আবার ২-৩ দিন আগেও আসেন। তারপর বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে পশু জবাই, গোস্ত বানানোর কাজের বিষয়ে চুক্তি করেন। প্রতি ঈদে একই কাজ করতে আসায় তাদের কিছুটা পরিচিতিও হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও থেকে আসা তিন সদস্যের কসাই দলের প্রধান লোকমান হোসেন বলেন, ‘৯-১০ বছর ধরে ধানমন্ডি এলাকায় গরু জবাই ও গোস্ত বানানোর কাজ করি। একটা গরু জবাই থেকে শুরু করে গোশত বানাতে সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা সময় লাগে। এরকম তিনটা বাসায় গরু-ছাগল জবাই ও গোস্ত বানানোর কাজ করি। এতে যা পারিশ্রমিক পাই, সেটা আমাদের জন্য অনেক। পাশাপাশি আমাদেরকে যথেষ্ট পরিমাণে গোস্তও দেন তারা। দুপুরে খাওয়ানোর পাশাপাশি অনেকে খুশি হয়ে গাড়িভাড়াও দিয়ে থাকেন। সেই টাকা আর গোস্ত নিয়ে বাড়িতে ফিরে যাই।’
ধানমন্ডি এলাকায় কথা হয় দিনাজপুর থেকে আসা কসাই মমতাজ উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানান, গরুর আকারের ওপর ভিত্তি করে তারা পুরো কাজের জন্য মালিকের সঙ্গে চুক্তি করেন। গরুর কেনা দামের ওপর গোস্ত বানানোর পারিশ্রমিক নির্ভর করে। গরুর দামের প্রতি হাজারে ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা করে পারিশ্রমিক নেন কসাইরা। এতে ঈদের ১-২ দিনে তাদের বেশ ভালো অঙ্কের টাকা আয় হয়ে থাকে। পারিশ্রমিকের বাইরে খুশি হয়ে অনেকে গোস্ত ও আসা-যাওয়ার গাড়িভাড়াও দেন। কাজ শেষে ঈদের রাতেই তারা নিজেদের এলাকায় ফিরে যান।
বরিশাল থেকে আসা পেশাদার কসাই জুম্মন আলী জানান, তারা চারজনের একটি দল ঢাকায় এসেছেন। তাদের পরিচিত এরকম ৩-৪ জনের বেশ কয়েকটি দল ঈদকে কেন্দ্র করে ঢাকায় এসেছেন ঈদের আগের দিন। ঈদের দিন প্রতিটি গ্রুপ ৪-৫টি করে পশু জবাই ও মাংস কাটার কাজ করতে পারে। এক দিনে তাদের গ্রুপের এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকার বেশি আয় হয়ে থাকে। কোরবানির তিন দিনে ৩-৪ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় হয় তাদের। সকল খরচ বাদ দিয়ে একেকজন গড়ে অর্ধলক্ষাধিক টাকা নিয়ে বাড়ি যেতে পারেন।
👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com
POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…
- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…
Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…
Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…
Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…
Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…