Categories: Bangladesh News

মাংস ও মসলার বাজার চড়া, আরও বাড়ার আগেই কিনছেন ক্রেতারা


রমজানের দুই সপ্তাহ পার হতে না হতেই বাড়তে শুরু করে মাংসের দাম। ঈদের আগে আগে মাংসের বাজার আরও উর্ধ্বমুখী। মাংসের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে তার কোনোটারই কোনও প্রভাব পড়েনি বাজারে। রোজা শুরুর আগেও যে ব্রয়লার মুরগির কেজি ছিল ২১৫ টাকা বা তার আশপাশে, আজ তা আড়াইশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রমজানের আগে যে গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিলো, আজ তা ৭৮০ টাকা।

দাম বাড়লেও ঈদের জন্য এখনই মাংস কিনে নিচ্ছেন ক্রেতারা। তাদের শঙ্কা, ঈদের আগে দাম আরও বেড়ে যেতে পারে। বিক্রেতারাও বলছেন, চাহিদার ওপর মাংসের দাম বাড়া-কমা নির্ভর করছে।

ঈদের আগে কেবল মাংসের দাম বেড়েছে এমনটা নয়। বেড়েছে আলু, আদা, রসুন, এলাচ, কাজুবাদাম, জয়ত্রীর মতো পণ্যের দামও।

শুক্রবার (৫ এপ্রিল) রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বরের কাঁচা বাজার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় ঈদের আগে মানুষের কেনাকাটার এই চিত্র। 

সরকার গরুর মাংসের কেজি ৬৬৪ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগির মাংস ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। কিন্তু এই নির্দেশের কোনও রকম তোয়াক্কা না করেই বাজারে নিয়মিতই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মাংস। দেশি মুরগি, কক ও লেয়ার মুরগির মাংসও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। এতে করে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ আরও বেড়েছে। তবুও চাপ উপেক্ষা করেই আসন্ন ঈদের কেনাকাটা করছেন তারা। কারণ শঙ্কা আছে, দুই-এক দিনে এই দামও না আরও বেড়ে যায়।

রমজানের আগে শেষ শুক্রবার, গত ৮ মার্চ ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছিলো ২১৫ থেকে ২২৫ টাকা কেজিতে, কক মুরগি ৩১৫-৩২৫ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩২০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০/ ৬৮০ টাকায়।

আজ (৫ এপ্রিল) ওজন অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগি ২৩৫ থেকে ২৫০ টাকা, কক মুরগি ৩৩০-৩৪০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩৩৫ টাকা, দেশি মুরগি ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার দেড় কেজির বেশি ওজনের মুরগির গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ২০২ টাকা কেজি দরে, যা আজ বিক্রি হয় ২৩৫ টাকায়।

গরুর মাংস ৭৬০-৭৮০ টাকা, খাসির মাংস ১১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মুরগির লাল ডিম ১২০ টাকা এবং সাদা ডিম ১১০ টাকা প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে।

গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় ব্রয়লার মুরগির দাম ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকা, কক মুরগির দাম ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা, লেয়ার মুরগির দাম ১৫ টাকা এবং দেশি মুরগির দাম ৩০ টাকা বেড়েছে প্রতি কেজিতে।

বাজার করতে আসা মো. আজিজ বলেন, ব্রয়লার মুরগির কেজি আড়াইশো টাকা, এটা ভাবা যায়?  তবুও কষ্ট করে কিনে নিয়েছি। কাল সকালে যে ৩০০ টাকা হবে না তার তো কোনও গ্যারান্টি নাই।

আরেক ক্রেতা ইয়াসিন বলেন, শুধু ঈদ দেখেই এত দাম দিয়ে মুরগির মাংস কিনলাম। তা না হলে কিনতামই না। যে ভাব দেখছি, মনে হচ্ছে মাংসের দাম আরও বাড়বে। 

এসময় আরেক ক্রেতা কিছুটা আক্ষেপের সঙ্গে পরিহাস করে বলেন, দেশি মুরগির মাংসের দাম তো আরেকটু হলে গরুর মাংসের দামের কাছেই চলে যাবে!

দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে আল-আমিন চিকেন হাউজ নামে একটি দোকানের বিক্রেতা শামসু কঠোরভাবে বলেন, দাম কেন বাড়ছে জানি না। তবে আরও বাড়বে।

দাম বেড়ে যাওয়ার কারন নিয়ে বি. বাড়িয়া চিকেন হাউজের বিক্রেতা মো. সেলিম বলেন, ঈদের জন্য সব ধরনের মুরগির মাংসের দাম বেড়েছে। ঈদের আগে দাম কিছুটা বেশিই থাকে।

দাম আরও বাড়বে কিনা জানতে চাইলে সেলিম বলেন, বিক্রি যদি বেশি হয় দাম আরও বাড়বে। আর যদি বিক্রি কম হয় তাহলে দাম আরও কমে যাবে। তবে এখন পর্যন্ত বেচাকেনা ভালোই চলছে।

আদা-রসুনের দামও চড়া

আজ মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ৫০- ৬০ টাকা, লাল ও সাদা আলু ৪৫ টাকা, নতুন দেশি রসুন ১৪০-১৬০ টাকা, চায়না রসুন ২০০ টাকা, মিয়ানমারের আদা ২২০, চায়না আদা ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় পেঁয়াজের দাম কমেছে ১০ টাকা। আর বড় সাইজের দেশি রসুনের দাম আবার বেড়েছে ২০ টাকা। এছাড়া আলুর দাম ৫ টাকা ও মিয়ানমারের আদার দাম ২০ টাকা বেড়েছে প্রতি কেজিতে। 

আলু পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. শরীফ বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আসায় পেঁয়াজের দাম কমে গিয়েছে। তবে আলু, রসুনের দাম আরও বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। 

মসলার বাজারও ঊর্ধ্বমুখী

ঈদকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের মসলার বাজার। আজ বাজারে এলাচ ৩২৫০ টাকা, দারুচিনি ৫৫০ টাকা,  লবঙ্গ ১৬০০ টাকা, জিরা ৭০০ টাকা, জয়ফল ১২৫০ টাকা, জয়ত্রী ৩৬০০ টাকা, আলুবোখারা ৪৮০ টাকা, কিসমিস ৫৫০ টাকা, পেস্তা বাদাম ২৯৫০ টাকা, কাজুবাদাম ১২৫০ টাকা, কাঠবাদাম ১০৮০ টাকা, চিনা বাদাম ১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। 

এর মধ্যে এলাচ গত সপ্তাহে ২৮৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এর দাম বেড়েছে ৪০০ টাকা। এছাড়াও জয়ত্রী বিক্রি হয়েছে ৩৪০০ টাকা ও কাজু বাদাম বিক্রি হয়েছে ১২০০ টাকায়। এক সপ্তাহে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ২০০ ও ৫০ টাকা।

এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের প্যাকেটজাত ও রেডিমিক্স মসলাও রয়েছে বাজারে। এগুলোর মধ্যে মাংসের মসলা ৯০ টাকা, মুরগির মাংসের মসলা ৯০ টাকা, কালা ভুনা মসলা ৮০ টাকা, বিরিয়ানি মসলা ৫৫ টাকা, মেজবানি মাংস মসলা ৮০ টাকা, রোস্টের মসলা ৬০ টাকা, কাবাব মসলা ১০০ টাকা, চটপটি মসলা ৫০ টাকা, জর্দা মিক্স ১৫০ টাকা, ফালুদা মিক্স ১০০ টাকা, ফিরনি মিক্স ৬০ টাকা, হালিম মিক্স ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে প্রতি প্যাকেট।

এদিকে আজ মুদি দোকানের অন্যান্য পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। আজ প্যাকেট পোলাওয়ের চাল ১৫৫ টাকা, খোলা পোলাওয়ের চাল মান ভেদে ১১০- ১৪০ টাকা, ছোট মুসরের ডাল ১৪০  টাকা, মোটা মুসরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৬০ টাকা,  ছোট মুগ ডাল ১৮০ টাকা, খেশারি ডাল ১২০ টাকা, বুটের ডাল ১১৫ টাকা, ডাবলি ৮০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৩ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৯ টাকা, কৌটাজাত ঘি ১৩৫০ টাকা, খোলা ঘি ১২৫০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৪৫ টাকা, খোলা চিনি ১৪০, টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১৩০ টাকা খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়াও প্রায় সব মুদি দোকানেই বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন রকমের প্যাকেটজাত ও খোলা সেমাই, নুডুলস, ম্যাকারনি। মানভেদে ৫০০ গ্রামের প্যাকেট লাচ্ছা সেমাই ১৫০- ৬০০ টাকা, খোলা সাদা লাচ্ছা সেমাই ১৫০ টাকা, খোলা ঘিয়ে ভাজা লাচ্ছা সেমাই ২০০ টাকা, খোলা রঙিন লাচ্ছা সেমাই ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া প্যাকেটজাত বার্মি চিলি সেমাই (লম্বা সেমাই) ৪৫ টাকা, খোলা বার্মি চিলি সেমাই ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে বিভিন্ন নুডলস ৫০-১৫০ টাকা, ম্যাকারনি ৮০- ৩০০ টাকা প্রতি প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে।

ঈদের কেনাকাটা নিয়ে সেলিম জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা মো. সেলিম বলেন, এখনও হাতে সময় আছে বলে মানুষ সেমাই বা মসলা জাতীয় জিনিস এখনও কিনছে না। তবে কয়েকদিন পরেই এসব পণ্য কিনবে। এখন পর্যন্ত মানুষ মাছ, মাংস বা দুধ এ ধরনের পণ্যই বেশি কিনছে।

কমেছে সবজির দাম

এদিকে আজ বাজারে প্রায় সব সবজির দামই রয়েছে নিম্নমুখী।  আজকের বাজারে শিম ৪০ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা, টক টমেটো ৬০ টাকা, চেরি টমেটো ২০০ টাকা, মূলা ৪০ টাকা, দেশি গাজর ৫০ টাকা, লম্বা বেগুন ৫০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৫০ টাকা, কালো গোল বেগুন ৬০ টাকা, শসা ৪০-৯০ টাকা, ক্ষিরাই ৫০ টাকা, উচ্ছে ৬০ টাকা, করল্লা ৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা,  মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, পটল ৫০ টাকা,  চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, কচুর লতি ৮০-১০০ টাকা, সজনে ১২০ টাকা, কচুরমুখী ১৫০, কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা, ধনেপাতা ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৬০-৭০ টাকা, চাল কুমড়া ৫০ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।  এছাড়া প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা করে।

সবজি বিক্রেতারা বলছেন ঝড়- বৃষ্টি না হলে সবজির দাম আরও কমে যাবে। তবে বৃষ্টি হলেই বাড়বে সবজির দাম।

এছাড়া আজকের বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী  ১৩০০- ১৬০০ টাকা, রুই মাছ ৩৬০-৬০০ টাকা,  কাতল মাছ ৪৫০-৫৫০ টাকা, কালিবাউশ ৫০০- ৮০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮০০ -১০০০ টাকা, কাঁচকি মাছ  ৫০০ টাকা, কৈ মাছ ২৫০-৮০০ টাকা, পাবদা মাছ ৫০০-৫০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০-৮০০ টাকা, মেনি মাছ ৫০০-৮০০ টাকা, বেলে মাছ ১৫০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৭০০- ৮০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ৮০০-১৪০০ টাকা, কাজলী ১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

ছবি: প্রতিবেদক

আরও পড়ুন

নিত্যপণ্যের বাজারে মধ্যস্বত্বভোগী থাকবে না

যেভাবে গড়ে উঠবে ‘সমন্বিত বাজার ব্যবস্থাপনা’

দাম বেঁধে দিলেই কি বাজারের লাগাম টানা যাবে?

খলিল, খোরশেদ, নয়নরা পারলে বাকিরা পারবেন না কেন?

‘একটা মুরগি কেনার মুরোদ নাই, শার্ট-প্যান্ট পরে ভাব দেখাইতে আইছে’

স্বল্পমূল্যের কুলভ্যানে বেশি আগ্রহ গরু ও মুরগির মাংসে

কেউ পাচ্ছেন নিয়মের বেশি, কারও হাত শূন্য

সুলভ মূল্যের পণ্যে গরু-মুরগির চাহিদা বেশি, ইচ্ছেমতো নেওয়া যাচ্ছে দুধ-ডিম

কেন বাড়ছে দেশি-বিদেশি সব ফলের দাম?

৫০০ টাকার ওপরে কোনও খেজুরই আমদানি হয় না, বাজারে ২ হাজার

পাঁচ বছরে খেজুরের দাম বেড়েছে সাতগুণ

ইসবগুল কেন কেজিতে বাড়লো ৮০০ টাকা

১৪৫০ টাকার এলাচ ৩১০০ টাকায় বিক্রি

ঈদের আগেই মসলায় ঝাঁজ, কেজিতে বেড়েছে ১৫০০ টাকা

Uncomm

Share
Published by
Uncomm

Recent Posts

That is the POCO X7 Professional Iron Man Version

POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…

5 months ago

New 50 Sequence Graphics Playing cards

- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…

5 months ago

Good Garments Definition, Working, Expertise & Functions

Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…

5 months ago

SparkFun Spooktacular – Information – SparkFun Electronics

Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…

5 months ago

PWMpot approximates a Dpot

Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…

5 months ago

Keysight Expands Novus Portfolio with Compact Automotive Software program Outlined Automobile Check Answer

Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…

5 months ago