এক যুগেরও বেশি সময় ধরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরোধিতার কারণে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তা চুক্তি সই করা সম্ভব হচ্ছে না, এ কথা সুবিদিত। এখন ঐতিহাসিক গঙ্গা চুক্তির নবায়ন নিয়ে দুই দেশের সরকার যখন আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করার কথা ঘোষণা করেছে, ঠিক তখনই মমতা ব্যানার্জি দিল্লিকে চিঠি লিখে জানিয়ে দিয়েছেন– পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অংশগ্রহণ ছাড়া তিস্তা কেন, গঙ্গা নিয়েও কোনও চুক্তি করা যাবে না। তার সাফ কথা, বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করতে গিয়ে ‘পশ্চিমবঙ্গের মানুষের স্বার্থ নিয়ে’ কোনও আপস করা সম্ভব নয়!
আর এর পরই প্রশ্ন উঠেছে, তিস্তার পর গঙ্গা চুক্তি নিয়েও কি মমতা ব্যানার্জি এবার রাজনৈতিক তাস খেলতে চাইছেন? আর তিনি যদি গঙ্গা চুক্তির নবায়নে বাধা দিতে চান, ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যের সরকার-প্রধান হিসেবে তার সেই এখতিয়ার কতটাই বা আছে?
এখানে অবশ্য একটা জিনিস মনে রাখা দরকার– প্রায় আঠাশ বছর আগে সম্পাদিত গঙ্গা চু্ক্তি আর প্রস্তাবিত তিস্তা চুক্তির মধ্যে একটা মৌলিক পার্থক্য আছে।
প্রথমটা বহু বছর ধরে দুই দেশের মধ্যে কার্যকর আছে এবং সেই অনুযায়ী গঙ্গার পানিও ভাগাভাগি হচ্ছে। কিন্তু তিস্তার ক্ষেত্রে চুক্তির খসড়া পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পরও তা শেষ পর্যন্ত ভেস্তে গিয়েছিল, আর পরবর্তী তেরো বছরেও তা কিন্তু আলো দেখেনি। ফলে তিস্তা নিয়ে মমতা ব্যানার্জি যে অবস্থানটা নিচ্ছেন, গঙ্গা চুক্তির নবায়নের বেলাতেও কি তাকে সেই একই ধরনের ভূমিকায় দেখা যেতে পারে?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই দিল্লিতে বাংলা ট্রিবিউন কথা বলেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, সাবেক শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিবিদ, রাজ্য সরকারের সাবেক সর্বোচ্চ আমলা ও বিভিন্ন থিঙ্কট্যাঙ্কের গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সঙ্গে। তাদের বক্তব্যের সারাংশই এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো।
দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল জানিয়েছেন, গঙ্গা চুক্তির নবায়ন নিয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরুর আগে ভারত ইতোমধ্যেই একটি ‘অভ্যন্তরীণ’ (অর্থাৎ ভারতের ভেতরে তাদের নিজস্ব) কমিটি গঠন করেছে এবং তাতে অন্য সব স্টেকহোল্ডারের মতো পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মনোনীত প্রতিনিধিকেও রাখা হয়েছে। বস্তুত কমিটির বৈঠকগুলোতে সেই প্রতিনিধি নিয়মিত অংশও নিয়েছেন।
জয়সোয়াল আরও জানান, ‘গত ৫ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার চিঠি লিখে এ কথাও বলেছে যে নবায়ন করা চুক্তিতে যাতে রাজ্যের জন্য পর্যাপ্ত পানীয় জল ও শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় জলের সংস্থান রাখা হয়। এরপর সেই কমিটি তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে– যা এখন ভারতের জলসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিবেচনাধীন রয়েছে।’
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সাবেক মুখ্য সচিব অর্ধেন্দু সেন মনে করেন, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার চাইলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে উপেক্ষা করেও চুক্তির নবায়ন নিয়ে অগ্রসর হতে পারে। তবে ভারতে সাধারণ রেওয়াজ হলো, যে সব আন্তর্জাতিক বিষয়ে কোনও একটি বিশেষ রাজ্যের স্বার্থ যুক্ত আছে সে সব ক্ষেত্রে ওই রাজ্যের সঙ্গে পরামর্শ করেই এগোনো। তবে এর ব্যতিক্রমও আছে।
১৯৯৬ সালে গঙ্গা চুক্তি যখন স্বাক্ষরিত হয়, পশ্চিমবঙ্গের তখনকার মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু সেই চুক্তি সম্পাদনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। সেই জ্যোতিবাবুর সঙ্গে আমলা হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করা অর্ধেন্দু সেন বলেছিলেন, ‘তখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। শুধু রাজ্য সরকারের সম্মতি নয়, বস্তুত জ্যোতিবাবু ছিলেন বলেই চুক্তিটা সম্ভব হয়েছিল। তার অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তও জল ভাগাভাগির ফর্মুলা নির্ধারণে একটা বড় ভূমিকা রেখেছিলেন।’
‘কিন্তু এখন যদি পশ্চিমবঙ্গ সরকার চুক্তির নবায়নে বাদ সাধে, বা মমতা ব্যানার্জি যদি এই ইস্যুতে একটা ‘পলিটিক্যাল স্ট্যান্ড’ নেন– তাহলে কেন্দ্রীয় সরকারও সেটা রাজনৈতিকভাবে ‘অ্যাড্রেস’ করবে বলেই আমার ধারণা’, জানান অর্ধেন্দু সেন।
তিনি আরও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরুও কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মতকে উপেক্ষা করেই বেরুবাড়ি ইউনিয়নের একাংশ তখনকার পূর্ব পাকিস্তান সরকারকে হস্তান্তর করেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের তখনকার মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় এই সিদ্ধান্তের ঘোর বিরোধী ছিলেন, কিন্তু পার্লামেন্টে সংবিধান সংশোধনী এনে নেহরু-নুন চুক্তি অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত ওই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। ফলে গঙ্গা চুক্তির ক্ষেত্রেও বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার চাইলে একই ধরনের রাস্তায় হাঁটতে পারে।
দিল্লির প্রথম সারির স্ট্র্যাটেজিক থিঙ্কট্যাঙ্ক মনোহর পারিক্কর ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালিসিসের গবেষণা ফেলো তথা বাংলাদেশ-পর্যবেক্ষক স্ম্রুতি পট্টনায়ক আবার আশঙ্কা করছেন, গঙ্গা চুক্তির বিষয়টাকেও মমতা ব্যানার্জি তার ‘ইগো’ বা মর্যাদার ইস্যু করে তুলতে পারেন।
ড. পট্টনায়ক বাংলা ট্রিবিউনকে বলছিলেন, ‘এ কথা ঠিকই যে ভারতে কৃষি বা সেচ মূলত রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়। একটা অন্তর্জাতিক চুক্তি যদিও দুই দেশের সরকারের মধ্যে হয়, তারপরও সেখানে সেচের জলের মতো বিষয় থাকলে সংশ্লিষ্ট অঙ্গরাজ্য বলতেই পারে যে সেখানে তাদের স্বার্থহানি হচ্ছে বা ইত্যাদি ইত্যাদি। ফলে রাজনৈতিক বাধা তারা দিতেই পারে।’
‘এখন তিস্তা নিয়ে আমরা দেখেছি বিষয়টাকে মমতা ব্যানার্জি প্রায় নিজের ‘ইগো’র লড়াই করে তুলেছেন। প্রায় তেরো বছরেও তার সেই অবস্থানের কোনও নড়চড় হয়নি। এখন গঙ্গা নিয়েও তিনি যদি একই পথে হাঁটতে চান বা এর থেকে রাজনৈতিক ডিভিডেন্ড তুলতে চান, তাহলে আমি অন্তত অবাক হব না”, সাফ জানান স্ম্রুতি পট্টনায়ক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কূটনীতিবিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তিস্তা চুক্তির সঙ্গে এটার মূল পার্থক্য হলো গঙ্গা চুক্তি কিন্তু এখন বহাল তবিয়তে চালু আছে। প্রায় তিন দশক ধরে এটা ‘টাইম টেস্টেড’ – অর্থাৎ এটি সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে এবং মসৃণভাবে বাস্তবায়িত হয়ে আসছে। ১৯৯৬ থেকে আজ পর্যন্ত কখনও এই চুক্তি নিয়ে বিশেষ কোনও সমস্যাই হয়নি!’
‘আর এখন দু’বছর বাদে চুক্তির যে নবায়ন করতে হবে, সেটাকে একটা ‘টেকনিক্যাল এক্সটেনশন’ বলাই সমীচীন– কারণ এখানে মোটেই কোনও নতুন চুক্তি সই করা হচ্ছে না। এবং মূল চুক্তিতে তদানীন্তন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পূর্ণ সম্মতি ও সহযোগিতাও ছিল। ফলে মমতা ব্যানার্জি এখন আপত্তি তুলতে চাইলেও তার সেই সুযোগ খুব কম বলেই আমার ধারণা’, বলছিলেন ঢাকায় ভারতের সাবেক ওই রাষ্ট্রদূত।
ভারতে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির ঘনিষ্ঠ ফরেন পলিসি এক্সপার্ট শুভ্রকমল দত্তরও দৃঢ় বিশ্বাস, গঙ্গা চুক্তির নবায়ন নিয়ে মমতা ব্যানার্জি যদি ওজর-আপত্তি তুলতেও চান, নরেন্দ্র মোদি সরকার সেটাকে পাশ কাটিয়েই এগোতে চাইবে।
শুভ্রকমল দত্ত বাংলা ট্রিবিউনকে বলছিলেন, ‘দেখুন, নবায়ন করার আগে দুটো দেশ আলোচনার টেবিলে বসবে, কিছু কিছু জিনিস হয়তো ‘ফাইন টিউন’ করতে চাইবে, চুক্তির কোনও কোনও ধারা হয়তো একটু-আধটু পরিবর্তন করতে চাইবে– এই পর্যন্ত। কিন্তু এটা হঠাৎ দুম করে আজকে আকাশ থেকে পড়ছে না যে মমতা ব্যানার্জি (তিস্তার মতোই) বলবেন– কই, আমি তো কিছু জানতাম না!’
তারপরও অবশ্য ভারত সরকার পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে আলোচনা করছে, তাদের মতামত নিয়েই বিষয়টা নিয়ে এগোতে চাইছে।
শুভ্রকমল দত্ত মনে করেন, এর পরও যদি মমতা ব্যানার্জি গঙ্গা চুক্তি নিয়ে বেঁকে বসেন সেটা অতিক্রম করারও সহজ একটা রাস্তা আছে। তার কথায়, ‘গঙ্গা নিয়েও মমতা ব্যানার্জি যদি একেবারে অনমনীয় অবস্থানে চলে যান– তাহলে হয়তো দেখবো দুটো দেশই অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা হিসেবে চুক্তি যে আকারে আছে সেই আকারেই তিন বছর বা পাঁচ বছরের জন্য মেয়াদ বাড়িয়ে দিলো!’
‘সে ক্ষেত্রে মমতা ব্যানার্জিরও কিছু বলার থাকবে না, কারণ তার সরকারই তো এত বছর ধরে ওই আকারেই চুক্তিটি মেনে এসেছে! আর দুম করে একটা এত গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক চুক্তি বাতিল হওয়ারও কোনও ভয় থাকবে না!’
👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com
POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…
- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…
Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…
Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…
Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…
Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…