কবি মাকিদ হায়দার সত্তর দশকের একজন উল্লেখযোগ্য কবি। জন্মেছেন পাবনা জেলার বিখ্যাত হায়দার পরিবারে। তার পরিবারের প্রত্যেকেই বাংলা সাহিত্যে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্ব। পাঁচ দশক ধরে বাংলা সাহিত্যে অনবদ্য অবদান রেখেছেন মাকিদ হায়দার। নিজস্ব এক অনন্য ভাষায় কবিতা লেখার জন্য তিনি বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য লেখার মধ্যে রয়েছে ‘রোদে ভিজে বাড়ি ফেরা’, ‘আপন আঁধারে একদিন’, ‘রবীন্দ্রনাথ: নদীগুলা’, ‘বাংলাদেশের প্রেমের কবিতা’, ‘যে আমাকে দুঃখ দিলো সে যেন আজ সুখে থাকে’, ‘কফিনের লোকটা’, ‘ও প্রার্থ ও প্রতিম’, ‘প্রিয় রোকানালী’, ‘মমুর সাথে সারা দুপুর’ ইত্যাদি। ছোটবেলা থেকেই পরিবার থেকে পেয়েছেন সাহিত্যের আবহ। যা তাকে একজন ছড়াকার বা কবি হওয়ার শিক্ষা দিয়েছে। তবে তারা মনে করেন তাদের আজকের পর্যায়ে আসার পেছনে রয়েছে ছোট কাকার বিশাল ভূমিকা।
কবি মাকিদ হায়দার সত্যিকার অর্থেই একজন ভাল মানুষ ছিলেন। কবি হওয়ার জন্য জীবনযাপনে একজন ভাল মানুষ হওয়া কত যে প্রয়োজন তা তিনি তার জীবন-যাপন-আচার-ব্যবহারে বুঝিয়ে দিয়েছেন। অনুজদের তিনি খুব আদর করতেন— অনায়াসে তাদের সাথে মিশে যেতেন। কথা বলতেন সাবলীলতায়— তার মধ্যে কোনো হামবড়া ভাব ছিল না। কোনো অহংকারবোধ তাকে কোনোদিন গ্রাস করতে পারেনি। ভালোবাসায় যেন তার একমাত্র অস্ত্র। অনেকবার বইমেলাতে দেখা হয়েছে। যদি ভুল না করি টাঙ্গাইলের সাহিত্য অনুষ্ঠানেও মাকিদ ভাইয়ের সাথে দেখা হয়েছে। তখন তার কথাবলার ধরন এবং হাসি দেখে শুধু একটা কথায় মনের মধ্যে উথালপাথাল করত এই মানুষ এমন বয়সে এসেও এতটা সরল হয়। সরলতায় যেন তার বেঁচে থাকার সঞ্জীবনী শক্তি।
তিনি কবি; প্রকৃত অর্থেই তিনি সর্বজনীন কবি হয়ে উঠতে পেরেছেন। কোনো ভণ্ডামি কিংবা সাহিত্যের রাজনীতি তাকে স্পর্শও করতে পারেনি। যে কারণে তিনি অতি সরল ও সহজ জীবন-যাপন করতে পেরেছেন। অতি সহজ-সারল্য ভাষা শৈলীতে সাজিয়ে তুলেছেন কবিতার শরীর কাঠামো। তার কবিতার মধ্যে প্রবেশ করলে মনে হতে পারে অতি সারল্যতার মধ্যে আপনি প্রবেশ করছেন কিন্তু তার কবিতার অন্তরে অতি সহজতার আদলে তিনি আমাদের ইতিহাস-সামাজিকতা-নৈতিকা বা সমাজের অবক্ষয়ের কথা বলে গেছেন। সরল মানুষগুলো বুঝি একটু আবেগি হয়ে থাকেন। তিনিও আবেগের মধ্যে নিজের জীবনকে প্রবাহিত করতে পেরেছেন। যে কারণে তার ভিতরে সব সময় থেকেছে রোমান্টিকতা। আর তার কবিতা পাঠে এই কথার সত্যতা মেলে—
যে আমাকে প্রেম শেখাল
জোৎস্না রাতে ফুলের বনে
সে যেন আজ সুখেই থাকে…
কবি মাকিদ হায়দার কবিতায় মূলত গল্প বলতে চান। কবি তার কবিতার মধ্য দিয়ে একটা আলাদা স্বর সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ও এই রীতিতে কবিতা লিখেছেন এবং সেই কবিতাও পাঠকদের মনে স্থান করে নিয়েছে। কবির এই বহুবর্ণিল কবিতাই যেন সত্যিকারের কবিতা হয়ে উঠেছে। কবির মধ্যে আর একটা সারল্যবোধ কাজ করত; বিভিন্ন জনের নামে কবিতা উৎসর্গ করতেন সামান্য পরিচিত হলেও। এই সরলতা সচরাচর দেখা যায় না। পরিচিতদের কাছে বসিয়ে গল্প করতেন। একজন আড্ডাপ্রিয় মানুষ ও ছোটদের খুব আদর করতেন। তাদের কাছে টেনে নেওয়ার বিশাল ক্ষমতা মাকিদ ভাইয়ের মধ্যে ছিল। কোনো রাজনৈতিক ধুলা তিনি গায়ে মেখে চলতে চাননি। তিনি লেখাকেই একমাত্র বিষয় করে চলতে চেয়েছেন। পরিবারের সবাই প্রায় লেখক। কবি মাকিদ হায়দার ‘আমরা ক-ভাই লিখি’ লেখায় বলেছেন— ‘২০০৫ সালে কলিকাতায় দাউদ এসেছিল বার্লিন থেকে, ও কলিকাতা এলে আমরা সব ভাইবোনই ওর সঙ্গে গিয়ে দেখা করি। কোনো সরকারই ওকে অনুমতি দেয়নি, বাংলাদেশের তার পৈতৃক বাড়ি দোহারপাড়ায় যেতে। আজ দীর্ঘ বছর ধরে তাকে থাকতে হচ্ছে প্রবাসজীবন নিয়ে। কলিকাতায়, অন্নদাশঙ্কর রায়ের বাড়িতে প্রায় ১২ বছর, পরবর্তী সময়ে গুন্টার গ্রাসের সহায়তায় ঠাঁই পেয়েছে জার্মানীর বার্লিনে। ২০০৮ সালে আমাদের হায়দার পরিবারের অগ্রজ জিয়া হায়দার পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেবার আগে ২০০৫ সালে কলিকাতায় বলেছিলেন, আমাদের ভাইদের লেখক হবার পেছনে ছোটকাকার অবদান তো রয়েছেই, তবে প্রভাব থাকে যেকোনো শিল্পী, কবি-সাহিত্যিকদের জীবনে তাদের নিকটজনদের সংস্পর্শে এলে। যদি তিনি নিজে লেখক, কবি, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক হয়ে থাকেন। সে ক্ষেত্রেই লেখার জগতটায় প্রবেশ করতে হয়ত বা সুবিধেই হয়। তিনি যে ভীষণ ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছিলেন সে কথা পুনর্বার আমাদের ক-ভাই-কে স্বীকার করতেই হয়। তবে সৃষ্টিশীলতা, মননশীলতা এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে যেকোনো লেখকেরই প্রয়োজন হয় ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের। যেটি স্বয়ং ঈশ্বরেরই প্রদত্ত। এই হচ্ছে আমাদের পঞ্চপাণ্ডবের কথা, কবি-নাট্যকার হবার উত্তর।’ এভাবেই তারা লেখক হয়ে উঠেন অর্থাৎ লেখকের বীজ রোপিত হয়েছে তাদের ঘর থেকে। কবি তাঁর ‘চন্দ্রাভিলাষী নারী’ কবিতায় বলেছেন ‘…নীল সাগরে ভাসিয়ে দিতে/আমার অপরাধ’। কবির কোনো অপরাধবোধ থাকে না বা প্রেমিকার কাছেও তার কোনো দোষ থাকতে পারে না। প্রেমিকারা সব ক্ষমা করে দেয় এজন্যই তো কবিরা অপরাধ করতে পারেন।
আজ কবি আমাদের ছেড়ে অনেক দূরে যাবেন। যেখানে গেলে আর পরিচিত মানুষদের সাথে দেখা করা যায় না। কিন্তু আমরা যারা তার সঙ্গ পেতে চাই—হাস্যোজ্জ্বল মুখে রসের কথা শুনতে চাই—তারা আজ সবাই কবির শোকে দাঁড়িয়ে আছি গাছের মতো, সবাই স্তব্ধ হয়ে নিঃস্ব বুকে একজন প্রিয় মানুষ, প্রিয় কবিকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে যেন বৃক্ষে পরিণত হয়েছি। কিন্তু কবি ফিরলেন রাজার মতো—নিজের বাড়িতে। তিনি এই সত্যতাকে নিজের কবিতায়; নিজের জীবন-বাস্তবতা, সমাজের বাস্তব চিত্রকেই যেন চিত্রায়িত করে গেছেন। কবি কোথায় থাকবেন—কে তার খবর নিবেন? তাই সেই জায়গাকে তো সবার কাছে পরিচিত করে যেতে হবে বা তার নিজের থাকার জায়গার পরিচয় দিয়ে গেছেন— ‘দোহারপাড়া গ্রামটি শহরের পূর্বদিকে, পাবনা সদর গোরস্থানের অবস্থানটাও তাই, লোকে যাকে আরিফপুর গোরস্তান বলে অবহিত করেন। আদতে এই গোরস্থনটি রাঘবপুর মৌজার ভেতরে, আর এই বিশাল গোরস্থানটির অধিকাংশ জায়গাজমি আমার বাপ-দাদাদের, তারাই গোরস্থানটিকে দান হিসেবে দিয়ে গিয়েছেন এবং একই সঙ্গে গোরস্থানের দক্ষিণ দিকের বিশাল ইদগাহ মাঠটিও ছিল আমার বাপ-দাদাদের, সেই গোরস্থানের দক্ষিণ দিকের যে গ্রামটি সেই গ্রামটির নাম আরিফপুর।’ এই আরিফপুরই আজ কবির থাকার আবাস স্থল। বিশাল বৃক্ষতলে কবি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকবেন—তবুও আমরা যারা কবিতা পাগল, কবিতা লেখি— কোনো একদিন দল বেধে আড্ডার আসরের মধ্যমণি করে হাজির হয়ে যাব হে কবি। তখন কিন্তু তুমি বলতে পারবে না আজকে দেখ সবাই যেন ক্লান্ত চোখে তাকিয়ে আছে…
কবি মাকিদ হায়দার একদিন পাবনা শহরে ঘুরে বেড়িয়েছেন, টাকার জন্য সিনেমার টিকেট না নিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে সিনেমা দেখতে গিয়ে চড়-থাপ্পড়ও খেয়েছেন। এই শহর—এই পাবনা শহর কবিকে কবি হতে সাহায্য করেছে। যে মাটিতে পোঁতা আছে কবির নাড়ি। সেই শহরে সিনেমা দেখার কথা তুলে ধরে কবি তার আত্মজীবনীতে বলছেন— ‘শাজাহান ভাইদের সেই আড্ডার কথাটি আমার কানের ভেতরে, প্রাণের ভেতরে এমনভাবে আটকে গেল যে, তখনই আমার মনে হল, টকি আর অভিনয় জিনিসটাকে স্বচক্ষে যদি একবার দেখতে পারতাম, আমি তখনও জানতাম সিনেমা দেখতে গেলে টাকা বা পয়সার প্রয়োজন হত টিকেট কেটে সিনেমা দেখতে হয় কিন্তু আমার পুঁজি মাত্র ২ আনা পয়সা। একদিন সন্ধ্যার বেশ কিছু পরে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বাণী হলের মেয়েদের গেটের নীচ তলার দরজার ফাঁক দিয়ে মাথা কিছুটা এগিয়ে দিয়ে সেই দিলীপ কুমার আর মীনা কুমারী নাকি মদুবালার টকি মাত্র তিন তিনেক চারেক দেখার ফাঁকেই এক বেঁটে খাটো গেটম্যান বা টর্চ লাইটধারী আমাকে একটু আগেই চড়-থাপ্পড় দিয়েছিলেন, তাকে উর্দু-বাংলায় মিশ্রিত শব্দে এক ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন— ব্যাপার কি? সেই বেঁটে খাটো যা বললেন, তার সরল অর্থ, এই ছেলেটি দরজা দিয়ে সিনেমা দেখছিল, তাই দু-একটা চড়-থাপ্পড় দিলাম, বুঝলেন বাবু ভাই’…
যে কবি নিজের শহরে নিজেকে উদার করে ঘুরে বেড়াতেন শহরের আনাচে-কানাচে। সেই বাণী সিনেমা হলের বর্ণনাও এসেছে তার লেখায়। আজ সেখানে বাণী সিনেমা হলও নেই। সেই বর্ণনাময় জায়গাগুলোতে আজ মরীচিকা বাসা বেঁধেছে। তিনিও আজ ফিরে এসেছেন নিজের চিরচেনা আলো-বাতাস মাখা নিজের শহরে। যে আরিফপুর নিজের ভাই শুয়ে আছে—আত্মার আত্মীয় সে ভাই তার কাছেই বুঝি আরামে ঘুমাবেন কবি। কতকাল ভাইয়ের কাছে ঘুমানো হয় না, করা হয় না একান্ত কিছু নিজেদের গল্প। এই শহর এই শহরেই আজ ফিরে আসা। যে জীবন ছিল এক সরলতায় ভরপুর। সেই জীবন আজ দীর্ঘতার অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরল আপনের কাছে। এই বাড়ি সেই সাহিত্যের বাড়ি যেখানে ছোট কাকার তানপুরা সবাইকে পরিবর্তন করে দাঁড় করিয়েছিল একই সাম্যের পথে—শিখিয়ে ছিল ন্যায়ের নিশানা হাতে পথ চলতে। এ যেন বেদনা-যাতনাময় জীবন থেকে অনেক পেয়ে, নিজেকে নিঃস্ব এক নিছক ব্যর্থ মানুষ মনে করেও কবি বলতে পারেন—যে আমাকে দুঃখ দিল সে যেন আজ সুখেই থাকে। এই সুখ দুর্বিষহতার সুখ—এই সুখ ক্ষয়িষ্ণুতার সুখ।
👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com
POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…
- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…
Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…
Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…
Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…
Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…