প্রতি বছর ঈদের ছুটিতে বান্দরবানের সব হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট শতভাগ বুকিং হয়ে যেতো। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন, বেশিরভাগ হোটেল-মোটেল পর্যটকশূন্য। ঈদ ঘিরে যেসব পর্যটক হোটেল-মোটেলের কক্ষ অগ্রিম বুকিং দিয়েছিলেন; ইতোমধ্যে তা বাতিল করেছেন। এর নেপথ্যে রয়েছে গত ২ এপ্রিল জেলার দুই উপজেলায় পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যদের ব্যাংকে হামলা, অস্ত্র ও টাকা লুটের ঘটনা। এসব ঘটনায় এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে জেলাজুড়ে। ফলে হোটেল-রিসোর্ট ফাঁকা পড়ে আছে।
পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, অস্থির পরিস্থিতিতে এবার হোটেল-রিসোর্টের কক্ষ কম বুকিং হয়েছিল। যেগুলো বুকিং হয়েছিল, সেগুলোও ইতোমধ্যে বাতিল করেছেন পর্যটকরা। ফলে ঈদুল ফিতর, পাহাড়ের প্রাণের উৎসব বৈসাবি ও বাংলা নববর্ষের ছুটিতে জেলায় পর্যটক নেই। হোটেল-রিসোর্টের কক্ষগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। এতে ধস নেমেছে পর্যটন-শিল্পে। গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের লোকসান।
জেলা হোটেল মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, এবার পবিত্র ঈদুল ফিতর, পাহাড়ের প্রাণের উৎসব বৈসাবি ও বাংলা নববর্ষের টানা ছুটিতে ৩১ মার্চের আগেই জেলার হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টের ৭০-৮০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ গত ২ এপ্রিল রাতে রুমায় সোনালী ব্যাংকে ডাকাতি, অস্ত্র লুট, ম্যানেজারকে অপহরণ এবং পরদিন দিনদুপুরে থানচি সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতির করেছিল কেএনএফ। একই সময়ে পুলিশ ও আনসারের ১৪টি অস্ত্র ও গুলি লুট করে নিয়ে যায় তারা। এসব ঘটনায় শুরু হয় অস্থিরতা। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এরপর শুরু হয় যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান। এসব খবর ছড়িয়ে পড়লে একের পর এক হোটেল-রিসোর্টের বুকিং বাতিল হতে শুরু করে। যা এখন শূন্যে নেমেছে। পর্যটক না আসায় ঈদ মৌসুমে কোটি কোটি টাকার লোকসান গুনতে হবে হোটেল-মোটেল মালিকদের।
এবার আবাসিক হোটেল হিল ভিউতে কোনও বুকিং নেই। বুকিং যা ছিল সব বাতিল হয়েছে বলে জানালেন হোটেলের ম্যানেজার লিমন সরকার। তিনি বলেন, ‘ঈদের ছুটি ও বৈসাবি উৎসব ঘিরে ৪৫ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়েছিল। শতভাগ না হলেও শেষ পর্যন্ত ৮০-৯০ শতাংশ বুকিং হতো। কিন্তু রুমা ও থানচির ঘটনার পর সব বুকিং বাতিল হয়ে গেছে। এতে লোকসান গুনতে হবে আমাদের।’
একসময়ের শান্তির জনপদ বান্দরবান এখন সন্ত্রাসীদের কার্যক্রমের জন্য অশান্ত হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে বান্দরবানের অরণ্য হোটেলের মালিক মো. জসিম উদ্দীন বলেন, ‘ঈদুল ফিতর ঘিরে ৭০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়েছিল। এখন সব বাতিল হয়ে গেছে। এতে আমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।’
২০ রমজানের মধ্যে আমাদের হোটেলের ৮০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়েছিল, এখন সব বাতিল হয়ে গেছে জানিয়ে হোটেল হিলটনের ম্যানেজার মো. আক্কাস উদ্দীন বলেন, ‘সবকিছু ভালোই চলছিল। ঈদ ঘিরে পর্যটকদের স্বাগতম জানাতে হোটেল সজ্জিত করে প্রস্তুত করেছিলাম। হঠাৎ করে কেএনএফ পুরো জেলাকে অস্থির করে তুলেছে। এর ফলে সব বুকিং বাতিল করে দিয়েছেন পর্যটকরা। এতে আমরা হতাশ।’
মূলত কুকি চিন আতঙ্কে জেলার সব হোটেল-মোটেল পর্যটকশূন্য জানিয়ে হোটেল গ্র্যান্ড ভ্যালির ম্যানেজার মো. সুমন বলেন, ‘১ এপ্রিলের আগেই আমাদের হোটেলের ৮০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ ২ এপ্রিল থেকে রুমা ও থানচিতে কৃষি ও সোনালী ব্যাংকে হামলা চালায় কেএনএফ। এরপর তাদের ধরতে শুরু হয় যৌথ বাহিনীর অভিযান। এসবের প্রভাবে পর্যটকরা সব বুকিং বাতিল করে দিয়েছেন। এখন পুরো জেলা পর্যটকশূন্য।’
একই কথা জানিয়েছেন বান্দরবান হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানকে কেন্দ্র করে সব বুকিং বাতিল হয়েছে। গত কয়েক দিনের ব্যবধানে ভয় ও আতঙ্কে পর্যটকরা বুকিং বাতিল করেছেন। যদিও ঘটনা ঘটেছে রুমা ও থানচিতে, ওসব এলাকা ছাড়া জেলা শহরে এর প্রভাব নেই।’
রুমা ও থানচি ছাড়া কোথাও কোনও সমস্যা নেই, পর্যটকরা আসলে কোনও সমস্যা হবে না জানিয়ে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘জেলায় আরও বহু পর্যটনকেন্দ্র আছে। সেগুলোতে আসতে পারেন পর্যটকরা। কোনও সমস্যা নেই। পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে হামলার কোনও ঘটনা ঘটেনি। এগুলো নিরাপদ আছে। প্রশাসন থেকেও কোনও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। তাই পর্যটকদের বান্দরবানে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’
এদিকে, বান্দরবানের বিভিন্ন স্থানে ছুটে চলার একমাত্র বাহন চাঁদের গাড়ি (জিপ)। এসব গাড়ির সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। চালক-হেলপার মিলিয়ে রয়েছেন এক হাজারের মতো। তাদের আয়ের প্রধান উৎস পর্যটক পরিবহন। গাড়ির চাকা ঘুরলে চলে সংসার। কিন্তু জেলায় অস্থিরতা শুরু হওয়ার পর থেকে যাত্রী পাচ্ছেন না তারা। প্রতিদিন স্টেশনে পর্যটকদের আশায় দিন পার করছেন। দিন শেষে ঘরে ফিরছেন খালি হাতে।
পর্যটক না থাকায় অলস সময় কাটাচ্ছি উল্লেখ করে পর্যটকবাহী পরিবহনের চালক অমল চক্রবর্তী বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারও গাড়িগুলোর ফিটনেস চেক করে রঙ লাগানো থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। এখন শুনছি যারা হোটেল-রিসোর্টের কক্ষ বুকিং দিয়েছিলেন, তারাও আসবেন না। এ অবস্থায় কীভাবে সংসার চলবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। জানি না এই পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে।’
সারা দিন অপেক্ষা করেও ১০০ টাকা উপার্জন করা যাচ্ছে না জানিয়ে চাঁদের গাড়ি চালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘পুরো বছর ঈদুল ফিতর, বৈসাবি ও বাংলা নববর্ষের অপেক্ষায় থাকি আমরা। কারণ এসব ছুটিতে জেলায় প্রচুর পর্যটক আসেন। কিন্তু এ বছর কেএনএফ পরিস্থিতি অশান্ত করে তুলেছে। তাদের হামলার কারণে কোনও পর্যটক আসছেন না। অভাবের কারণে অনেক চালকের সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। জেলা প্রশাসন ও দায়িত্বশীলদের কাছে আমার অনুরোধ, সন্ত্রাসীদের দমন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে বান্দরবানের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনুন।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, ‘বান্দরবান একটি পর্যটন নগরী। এখানে ৭৪টি পর্যটনকেন্দ্র আছে। এর মধ্যে রুমা এবং থানচিতে চারটি। বাকি ৭০টি সদর, লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি ও রোয়াংছড়ি উপজেলায়। এসব কেন্দ্রে কুকি চিনের কোনও প্রভাব নেই। কাজেই পর্যটকরা এলে কোনও সমস্যায় পড়বেন না। যেখানে হামলা হয়েছিল, সেটি দুর্গম এলাকা। তবে প্রতিটি পর্যটনকেন্দ্র নিরাপদ আছে। জেলা প্রশাসনের সব ধরনের নিরাপত্তা রয়েছে।’
এখন পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক উল্লেখ করে জেলা পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন জানিয়েছেন, ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশও পর্যটনকেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিয়োজিত আছে। ভ্রমণে কোনও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। পর্যটকরা চাইলেই আসতে পারেন। তবে আবাসিক হোটেল-মোটেলের মালিকরা জানিয়েছেন, অনেকে ভয় ও আতঙ্কে বুকিং বাতিল করেছেন। পর্যটকদের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২ এপ্রিল রাতে এবং ৩ এপ্রিল দুপুরে রুমা ও থানচি উপজেলার কৃষি ও সোনালী ব্যাংকের তিনটি শাখায় হামলা চালায় পাহাড়ের সন্ত্রাসী গ্রুপ কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) শতাধিক অস্ত্রধারী। তারা টাকা লুট করে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধর করে, একজন ব্যাংক ব্যবস্থাপককে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে ওই ব্যাংক কর্মকর্তাকে উদ্ধার করা হয়। সেইসঙ্গে পুলিশ ও আনসারের ১৪টি অস্ত্র ও গুলি লুট করে নিয়ে গেছে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যৌথ অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যৌথ অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…
- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…
Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…
Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…
Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…
Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…