Categories: Bangladesh News

ব্রাহমা গরু বাংলাদেশে নিষিদ্ধ নয়: প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর


রাজধানীতে সবচেয়ে সস্তাখ্যাত কারওয়ানবাজারেও যখন এককেজি গরুর মাংসের দাম উৎসব উপলক্ষ্যে এরই মধ্যে ছুঁয়ে ফেলেছে ৮০০ টাকা; ১১ শতাংশ ছুঁই ছুঁই খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে ব্যয় সংকোচন নীতির ভীষণ চাপে যখন প্রায় ওষ্ঠাগত সাধারণ মানুষের প্রাণ যখন তুলনামূলক কম মূল্যে গরুর মাংসের খোঁজে ভোক্তারা; তখন ‘নিষিদ্ধ’ কথায় দেশজুড়ে বিতর্কের মুখে পড়েছে মাংস উৎপাদনকারী গরুর জাত ব্রাহমা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে মূল ধারার গণমাধ্যম; সবখানেই বেশ সরব ব্রাহমা গরুকে অবৈধ আর নিষিদ্ধ বলে প্রমাণে বা নিজের দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে। সেখানে ব্রাহমা গরুকে নিষিদ্ধ বলাতে যতোটা আগ্রহ সেখানে এই জাতের লালন-পালন ও বিপণন বাড়লে কতোটা কম দামে গরুর মাংস কিনতে পারা যাবে সেই হিসাব নিকাশের ধার ধারছে না যেন কেউ।

দীর্ঘদিন ধরে কেন এই বিতর্ক চলে আসছে তা আমরা সরকারি আইন-কানুন দেখার পাশাপাশি ও অভিজ্ঞজনের সঙ্গে কথা বলেছি।
প্রথমে বাংলাদেশের প্রচলিত সব আইন-নীতিমালায় চোখ বুলিয়ে পরিষ্কার হয়ে নেই ব্রাহমা গরু বাংলাদেশে নিষিদ্ধ বা অবৈধ কিনা?

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি নীতি আদেশ ২০২১-২০২৪’র। এই আদেশের ৩৪ ধারায় গবাদিপশুর হিমায়িত সীমেন (এইচএস হেডিং ০৫.১১ এর অধীন শ্রেণিবিন্যাসযোগ্য) আমদানি বিষয়ে জানানো হয়েছে। ক-উপধারায় দেখা যাচ্ছে, (ক) গবাদিপশুর হিমায়িত সীমেন ও এমব্রায়ো (Embryo), ফ্রিজিয়ান, ফ্রিজিয়ান ক্রস, শাহিওয়াল, শাহিওয়াল ক্রস, ফ্রিজিয়ান-শাহিওয়াল ক্রস, এএফএস, এএফএস ক্রস জাতের গবাদি পশুর হিমায়িত সীমেন (ডিপ ফ্রোজেন সীমেন) ব্যতীত অন্যান্য গরুর সীমেন আমদানি নিষিদ্ধ। তবে শর্ত থাকে যে, ফ্রিজিয়ান, ফ্রিজিয়ান ক্রস, শাহিওয়াল, শাহিওয়াল ক্রস, ফ্রিজিয়ান-শাহিওয়াল ক্রস, এএফএস, এএফএস ক্রস, ব্রামাহ (Bramah), Murrah, Nilliravi এবং Mediterannean মহিষের জাতের গবাদি পশুর হিমায়িত সীমেন (ডিপ ফ্রোজেন সীমেন), এমব্রায়ো (Embryo) আমদানি করা যাইবে। অর্থাৎ এই নীতি আদেশে ব্রাহমা জাতের গরুর সীমেন আমদানিতে কোন বাধা দেয়া নেই।

২০১৬ সালে করা বেসরকারি পর্যায়ে গবাদিপশুর কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম পরিচালনার সংশোধিত নীতিমালাতে সীমেন আমদানি ও ব্যবহারে শর্ত জুড়ে দেয়া থাকলেও কোথাও উল্লেখ করা হয়নি বাংলাদেশে ব্রাহমা গরু নিষিদ্ধ বা ব্রাহমার সীমেন ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। ২০০৭ সালের জাতীয় প্রাণিসম্পদ নীতিমালাতেও ব্রাহমা গরুকে নিরুৎসাহিত করার মতো কিছু লেখা নেই।

এর মধ্যে আবার ২০১৩ সালের জুলাইয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীনে বিফ ক্যাটল ডেভেলপমেন্ট নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। ২৫ কোটি ৫৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা ব্যয়ে ওই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল কীভাবে টেকসই মাংস উৎপাদনকারী গরুর জাতের উন্নয়ন করা যায় আর সেই সঙ্গে কর্মংস্থানের একটি সুযোগ তৈরি করা যায়। ৩৮টি জেলার ৮০টি উপজেলায় চালানো হয় ওই প্রকল্প। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আরও কিছুটা বরাদ্দ ও সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়।

ওই সময়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. আইনুল হক ওই প্রকল্পের মধ্যবর্তী মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ব্রাহমা জাতের গরুর লালন পালন কতোটা বা কেন দরকার প্রসঙ্গে লেখেন, ‘বাংলাদেশে ইতোপুর্বে একটি টেকসই, লাভজনক এবং অধিক মাংস উৎপাদনকারী গরুর কোন জাত না থাকায় চাহিদার তুলনায় প্রাণিজ আমিষের উৎপাদন অত্যক্ত কম ছিল। ইতোমধ্যে দেশ মাংসে স্বয়ংসম্পুর্ণতা অর্জন করেছে। এখন প্রয়োজন এর ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রাখা। একটি দেশিয় গরুর প্রাপ্ত বয়সে মাংস উৎপাদন ক্ষমতা গড়ে মাত্র ৭০-৮০ কেজি, সেখানে ব্রাহমা জাতের একটি প্রাপ্ত বয়স্ক (২০-২৪ মাস) গরুর মাংস উৎপাদন ক্ষমতা গড়ে ৭০০-৮০০ কেজি বা কোন কোন ক্ষেত্রে আরও বেশি। তাই, মাঠ পর্যায়ের কৃষক/ খামারীদের মধ্যে ব্রাহমা জাতের গবাদিপশু পালনে আগ্রহ ও উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হয়েছে। এই প্রকল্পটি পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হলে ২-৩ বছর বয়সে একটি গরুর ওজন প্রায় ২৭ মণ বা ১ মেট্রিক টন পর্যন্ত হতে পারে। সঠিক মাত্রায় খাদ্য প্রদান করলে বাংলাদেশে একটি ব্রাহমা জাতের বাছুর দৈনিক গড়ে ৯০০-১০০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজন বৃদ্ধি পায়।

ওই প্রকল্প মূল্যায়নের ৭ম অধ্যায়ে করা সুপারিশের ৪ নম্বর পয়েন্টে বলা হয়, বাণিজ্যিক ব্রাহমা খামার স্থাপন ও পরিচালনার জন্যআগ্রহী খামারীকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে প্রয়োজনী সহযোগিতাসহ ফেসিলিটেটরের(Facilitator) ভূমিকা পালন করতে হবে। আর ৮ নম্বর পয়েন্টে ব্রাহমা জাতের গরু লালন-পালনকে এগিয়ে নেয়ার সুপারিশ করে বলা হয় বাংলাদেশের আবহাওয়ায় টেকসই ও উপযোগী, এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, এবং খামারীদের কাছে গ্রহনযোগ্যতা পেয়েছে বিধায় প্রকল্প এলাকা ছাড়াও রিজিওলান ব্রিডিং পলিসির আলোকে রিজিওনভিত্তিক এ কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা যেতে পারে।

এই মূল্যায়ন কমিটিতে ছিলেন ওই সময়ে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সহকারী প্রধান গাজী শরিফুল হাসান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিকল্পনা সেল প্রধান মো. আবুল বাশার, পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ- আইএমইডি’র উপ-পরিচালক আফরোজা আকতার চৌধুরী, প্রকল্প পরিচালক এস এম এ সামাদসহ কয়েকটি বিভাগের প্রতিনিধি।

ব্রাহমা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ ইমরানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বাংলাদেশের কোন আইন ও নীতিমালার কোথাও ব্রাহমা জাতের গরু লালন পালন, সীমেন আমদানি ও বিধি মেনে ব্যবহারেও বাধা দেয়া হয়নি। তবে, কেন যেন এই জাতের গরু লানন-পালন সম্প্রসারণে বাধা দেয়া হয় মানে নিরুৎসাহিত করা হয়। যদিও তিনি দাবি করেন, এই জাতটির আদি নিবাস যেহেতু ভারতীয় উপমহাদেশ তাই বাংলাদেশের আবহাওয়ার জন্য বেশ উপযোগী। এমনকি ফ্রিজিয়ান জাতের গরু পালতে যেখানে তুলনামূলক ঠাণ্ডা আবহাওয়া তৈরিতে খামারিকে ফ্যান-এসি চালাতে হয় সেখানে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও স্বাভাবিক থাকে ব্রাহমা।

এ প্রসঙ্গে বিফ ক্যাটল ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের পরিচালক এস এম এ সামাদ জানান, তারও জানা নেই বাংলাদেশে নতুন কোন আইন করে ব্রাহমাকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে কি-না। তবে, এফআরসি মানে কী পরিমাণ খাবার খেয়ে কী পরিমাণ ওজন হবে সেই রেট ব্রাহমা’র অনেক ভালো। মাংসে চর্বির পরিমাণও তুলনামূলক বেশ কম। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের কম পুঁজির খামারি বা গৃহস্থ বাড়িতে খুব সহজেই এই জাতের গরুর লালন-পালন করে কম মূল্যে বাজারে মাংসের চাহিদা মেটানো সম্ভব।

তাহলে কেনো এতো বিতর্ক হচ্ছে দেশে ব্রাহমার লালন-পালন ও বাজারজাতকরণ নিয়ে। এ প্রসঙ্গে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, বাংলাদেশের কোন আইন-নীতিমালার কোথাও ব্রাহমা নিষিদ্ধ তা নেই। তারপরও আমরা শখের বসে ছাড়া বাণিজ্যিক পরিসরে এই জাতের লালন পালনের অনুমতি দেই না। যদিও মাংস উৎপাদনের জন্য এই জাতের গরুর খ্যাতি রয়েছে।

কিন্তু অনুমতি দেয়া হচ্ছে না- সেই ব্যাখ্যা দেন তিনি। জানান, দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে এতো দিনের চেষ্টায় দেশি জাতের সঙ্গে ফ্রিজিয়ান, হলস্টিয়ানের ক্রস করে অনেক বেশি দুধ উৎপাদনের জাতের সম্প্রারণ করা হয়েছে। ব্রাহমার দুধ খুবই কম হয়। দুই তিন লিটারের মধ্যেই থাকে। এখন যদি ব্রাহমার সিমেন ব্যবহার বাড়িয়ে দেয়া হয় তাহলে অসতর্কতা বশত: দুধের জাতের গাভীতে এটি কোন কারণে চলে গেলে দুধের লাইনটি নষ্ট হয়ে যাবে। তাছাড়া, দুধের গাভীর থেকে যে শুধু দুধ পাওয়া যায় তা নয়, মাংসও পাওয়া যায় বেশ।

দেশে একদিকে গরুর মাংসের দাম বেড়ে নিম্নবিত্তের হাত ছাড়া হয়ে তা চলে যাচ্ছে মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। সেই সময়ে ব্রাহমার মতো মাংস উৎপাদনকারী জাতের গরু বাংলাদেশের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এটা কতোটা যৌক্তিক এমন প্রশ্ন নিয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এনিমেল সায়েন্স ও ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ডিন ড. অধ্যাপক কে বি এম সাইফুল ইসলাম জানান, ব্রাহমা বাংলাদেশে নিষিদ্ধ এমন তথ্য তার কাছে নেই। তবে, মাংস উৎপাদন করতে গিয়ে দুধের গরুর উৎপাদনশীলতা নষ্ট হয়ে যাবে এমন যুক্তিতে বিভিন্ন সভা সেমিনারে নিরুৎসাহিত করতে দেখেন তিনি।

তবে, দেশের মানুষকে তুলনামূলক কম মূল্যে গরুর মাংস দিতে চাইলে ব্রাহমার মতো মাংস উৎপাদনকারী জাতের গরুর লালন-পালনে জোর দেয়া উচিত। তবে, তিনিও সতর্ক করেন, তা করতে গিয়ে এরই মধ্যে দুধ উৎপাদনের সফলতা যেন নষ্ট হয়ে না যায়। সেক্ষেত্রে সুস্পষ্ট নীতিমালা দরকার কীভাবে খামারিদের উৎসাহিত করা হবে; কীভাবে এমন জাতের গরুর সীমেন মাঠ পর্যায়ে সরবরাহ করা হবে।

ব্রাহমা সম্পর্কে তিনি বলেন, এই জাতটি বাংলাদেশের আবহাওয়ার সঙ্গে বেশি উপযোগী। এটি ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো উচ্চ তাপমাত্রাতেই স্বাভাবিক আচরণ করে। আর এফসিআর রেট খুবই ভালো। মাংসের দাম কমাতে চাইলে এমন জাতের কোন বিকল্প নেই। শুধু গরু নয়, ছাগলের এমন মাংস উৎপাদনকারী জাতের সম্প্রসারণ করা দরকার বলে যোগ করেন তিনি। এতে মানুষের কাছে বিকল্প থাকবে; কেউ চাইলে বেশি দামে যেমন দেশি গরুর মাংস খেতে পারবে; তেমনি প্রয়োজন মেটাতে কম দামেও মাংস খাওয়ার সুযোগ থাকবে।

ব্রাহমা গরু ঘিরে এতো আলোচনা সমালোচনার শুরু ২০২১ সালে ঢাকার বিমানবন্দরে। সেসময় সাদিক অ্যাগ্রোর আমদানি করা ১৮টি গরু জব্দ করা হয়। পরে অবশ্য সংক্ষিপ্ত বিচারের মাধ্যমে তা খালাসের অনুমতি দেয়া হয়। হাইকোর্টের দেয়া এক আদেশে দেখা যাচ্ছে, মিথ্যা ঘোষণায় ওই চালান আমদানির কথা বলা হলেও ব্রাহমাকে নিষিদ্ধ বলে উল্লেখ করা হয়নি ওই রায়ে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এএইচ/আরএইচ




👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Uncomm

Share
Published by
Uncomm

Recent Posts

That is the POCO X7 Professional Iron Man Version

POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…

6 months ago

New 50 Sequence Graphics Playing cards

- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…

6 months ago

Good Garments Definition, Working, Expertise & Functions

Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…

6 months ago

SparkFun Spooktacular – Information – SparkFun Electronics

Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…

6 months ago

PWMpot approximates a Dpot

Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…

6 months ago

Keysight Expands Novus Portfolio with Compact Automotive Software program Outlined Automobile Check Answer

Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…

6 months ago