Categories: Bangladesh News

ব্যাংক খাত রক্ষায় ৫ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত


গো নিউজ২৪ | নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৪, ০৮:৫৮ পিএম

দেশের ব্যাংক খাতের পুরোনো ‘রোগগুলো’ সারিয়ে তুলতে এবার রোডম্যাপ বা পথনকশা ঘোষণা করল বাংলাদেশ ব্যাংক। এই পথনকশায় বহু বছর ধরে ব্যাংক খাতে যেসব সংস্কারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, তা অনেকটাই স্থান পেয়েছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় গতকাল রোববার এই পথনকশা অনুমোদন দেওয়া হয়। তারপর এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র বলছে, তার আগে পথনকশা নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সম্মতিও নেওয়া হয়েছে।

পথনকশায় ১৭টি বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো হলো খেলাপি ঋণ কমানো, বেনামি ঋণ ও জালিয়াতি বন্ধ করা, যোগ্য পরিচালক নিয়োগে ব্যবস্থা, উপযুক্ত স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ এবং দুর্বল ব্যাংককে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা, যাকে মার্জার বলা হয়। 

বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, তাদের লক্ষ্য তিনটি—১. ব্যাংকের সার্বিক খেলাপি ঋণ ৮ শতাংশের নিচে নামানো, যা এখন ১০ শতাংশের একটু কম। ২. রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ এবং বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা, যা এখন যথাক্রমে প্রায় ২২ ও ৭ শতাংশ। ৩. ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিতের জন্য সীমার বাইরে দেওয়া ঋণ, বেনামি স্বার্থসংশ্লিষ্ট ঋণ এবং জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে ঋণ বিতরণ শূন্যে নামিয়ে আনা।

বাংলাদেশ ব্যাংক এসব লক্ষ্য পূরণের সময়সীমা ঠিক করেছে ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের বলেন, এই পথনকশা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক খাতে সুশাসনের অভাব নিয়ে কথা বলেছেন, তাঁরা বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পথনকশাকে স্বাগত জানিয়েছেন। পাশাপাশি সন্দেহও প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলছেন, ব্যাংকের রোগ সারাতে ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেটা কতটা পারবে, তা আগামী দিনগুলোতে দেখা যাবে।

পথনকশার প্রেক্ষাপট

আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত তিন মেয়াদে ব্যাংক খাত নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া, অসৎ ব্যবসায়ীদের ব্যাংকের পরিচালক হতে সুযোগ দেওয়া, একটি গোষ্ঠীকে ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করতে দেওয়া, ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালকদের জায়গায় ‘ভাই-মামাতো ভাইদের’ বসিয়ে যথেচ্ছ অনিয়ম করা, বেনামি ঋণ দেওয়া—ইত্যাদি অভিযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।

সব মিলিয়ে খেলাপি ঋণ বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ২০০৯ সালে খেলাপি ঋণ ছিল সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকার মতো, যা এখন ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। অবশ্য ব্যাংক খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, দুর্দশাগ্রস্ত প্রকৃত ঋণ প্রায় চার লাখ কোটি টাকা। বেনামি ঋণ বিবেচনায় নিলে তা দাঁড়াবে ছয় লাখ কোটি টাকায়।

দেশের অর্থনীতি এখন সংকটে পড়েছে। অর্থনীতিবিদেরা বলে আসছেন, অর্থনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে যেসব উদ্যোগ নেওয়া দরকার, তার একটি ব্যাংক খাতে বড় সংস্কার। আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারেও আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও অপরাধ দমন, খেলাপি ঋণ বারবার পুনঃ তফসিল করে ঋণ নেওয়ার সুযোগ নিয়ন্ত্রণ ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে প্রভাবমুক্ত রাখার কথা বলা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এল বাংলাদেশ ব্যাংকের পথনকশা।

কী আছে পথনকশায়

পথনকশায় খেলাপি ঋণ কমাতে বেশ কিছু কর্মপরিকল্পনার কথা বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর একটি হলো খেলাপি ঋণ অবলোপন, অর্থাৎ ব্যাংকের স্থিতিপত্র থেকে বাদ দেওয়া–সংক্রান্ত। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, কোনো ঋণ একাধারে দুই বছর মন্দ বা ক্ষতিজনক (খেলাপি) থাকলে সেসব ঋণের বিপরীতে শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতি রেখে তা অবলোপন করতে হবে। উল্লেখ্য, ব্যাংক তার মুনাফা থেকে খেলাপি ঋণের সমপরিমাণ অর্থ রেখে দেয়, যা নিরাপত্তা সঞ্চিতি নামে পরিচিত। বাংলাদেশ ব্যাংক আরও বলছে, কোনো ঋণ টানা তিন বছর খেলাপি থাকলে তা অবলোপন করতে হয়।

অবলোপন নীতি বাস্তবায়নের ফলে কত টাকা খেলাপি কমবে, তা–ও জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের হিসাবে, দুই বছর খেলাপি থাকা ঋণ অবলোপন করলে সার্বিক খেলাপি ঋণ কমবে ৪৩ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি, যা ব্যাংকের মোট ঋণের ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতিতে ব্যাংকের বাড়তি কোনো ঝুঁকি তৈরি হবে না।

অবলোপন করা ঋণ আদায়ের জন্য ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে ‘অবলোপনকৃত ঋণ আদায় ইউনিট’ নামে একটি আলাদা ইউনিট গঠনের কথা বলা হয়েছে পথনকশায়। এই ঋণ আদায়ের লক্ষ্য অর্জন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের পারদর্শিতা মূল্যায়নে যুক্ত করা হবে।

অবলোপন মানে খেলাপি ঋণ আদায় নয়। ব্যবসায়ীরা টাকা না দিলে খেলাপি ঋণের পেছনে ব্যয় করতে হবে ব্যাংকের মুনাফা থেকে, যা আসলে শেয়ারধারীদের প্রাপ্য। কার্যত খেলাপি ঋণ আদায় না করে অবলোপন করা হলে লোকসান হবে শেয়ারধারীদের।

এদিকে বেসরকারি খাতে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি প্রতিষ্ঠায় আইন প্রণয়নের কথাও বলা হয় পথনকশায়। আরও বলা হয়, মন্দ ঋণ ও অবলোপন করা সেই কোম্পানির কাছে বিক্রি করে ব্যাংকগুলো তাদের আর্থিক স্থিতিপত্র পরিষ্কার করতে পারবে। বিক্রির মাধ্যমে পাওয়া টাকা ব্যাংক আয় হিসেবে দেখাতে পারবে।

ঋণ পরিশোধের জন্য দেওয়া বাড়তি মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না বলেও জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি মনে করে, এতে ব্যাংকের তারল্যসংকট কমবে। পাশাপাশি ব্যাংকের মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হবে।

ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা তৈরি ও বাস্তবায়নের কথাও বলা হয়েছে পথনকশায়। এতে আরও বলা হয়, খেলাপি ঋণ আদায় করা কর্মকর্তাদের জন্য বিশেষ ভাতা চালু হবে। ঋণের জামানত বাধ্যতামূলকভাবে তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে দিয়ে মূল্যায়ন করাতে হবে।

ব্যাংকিং খাতের সুশাসন নিশ্চিতে ছয় পরিকল্পনার কথা বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ব্যাংকের শেয়ারধারী পরিচালকদের যোগ্যতা ও দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কিত নীতিমালা সংশোধন করা এবং স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ, তাদের সম্মানী নির্ধারণ ও দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কিত নীতিমালা প্রণয়ন করার কথা বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগ ও পুনঃ নিয়োগে বাছাই প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা আরও কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। পারফরম্যান্স বা পারদর্শিতার সূচকের ভিত্তিতে এমডিদের কাজের মূল্যায়ন করা হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পথনকশায় ব্যাংক একীভূত করার বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, একীভূত হওয়ার তিন বছর পর্যন্ত কাউকে চাকরিচ্যুত করা যাবে না। ব্যাংকে পেশাদারদের নিয়োগে একাধিক পদক্ষেপের কথাও বলা হয়েছে।

কে দুর্বল, কে সবল

কোন ব্যাংক দুর্বল, কোন ব্যাংক সবল, তা নির্ধারণ কীভাবে হবে, সেটা বড় প্রশ্ন। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের বলেন, ব্যাংকগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের আর্থিক সূচক পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। কোন ব্যাংক কী পর্যায়ে আছে, তারা নিজেরাই বুঝতে পারবে।

প্রশ্ন হলো, নানা অনিয়ম করা ও তা গোপন করতে ‘সিদ্ধহস্ত’ কিছু ব্যাংক নিজেদের দুর্বল দেখাবে কি না।



Uncomm

Share
Published by
Uncomm

Recent Posts

Experiential Robotics Platform (XRP) Strikes Out of Beta Section! – Information

Increasing on the wide-ranging success of the beta model, the Experiential Robotics Platform will get…

9 mins ago

Printed Circuit Board Design Engineer At Aether Semiconductors In Sahibzada Ajit Singh Nagar

- Commercial - Location: Sahibzada Ajit Singh Nagar Firm: Aether Semiconductors Expertise Degree: 1 –…

3 hours ago

The evolution of PCBs and the calls for of recent electronics

Printed circuit boards (PCBs) have come a great distance over time. Electronics design engineers should…

7 hours ago

A PSpice Swap Mannequin For Excessive-Energy Utility

**** 10/13/23 09:55:59 ****** PSpice Lite (October 2012) ****** ID# 10813 ****An influence swap for…

9 hours ago

PCB Soldering Definition, Course of, Working, Makes use of & Benefits

What's PCB Soldering? Printed Circuit Board (PCB) soldering is a basic course of in electronics…

19 hours ago

SparkFun Electronics is Now the Sole Producer and Gross sales Accomplice for Teensy® – Information

SparkFun brings the manufacturing of PJRC’s product in-house and turns into the only real gross…

22 hours ago