যুদ্ধ, নিপীড়ন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, সহিংসতার কারণে বিশ্বজুড়ে চলমান অস্থিরতায় আশ্রয় নিশ্চিত হলে প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া নিয়ে আলাপ শুরু হয়। কিন্তু সেই দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় নানাবিধ জটিলতার মধ্য দিয়ে জীবন স্থবির হয়ে যায় শরণার্থী কিংবা বাস্তুচ্যুত মানুষের। একসময় তারা হয়ে ওঠে বোঝা। সেই বোঝা যেনে না হয়, তাই ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন, কারিগরি প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করে দিতে চেষ্টা করছে। এটি শুধুমাত্র তাদের প্রত্যাবাসনের জন্যই তৈরি করবে না, বরং বাংলাদেশে তাদের শরণার্থী জীবনে নিশ্চিত করবে মর্যাদা, নিরাপত্তা ও উৎপাদনশীলতা। এর মাধ্যমে তারা নিজেদের কিছু চাহিদা নিজেরাই মেটাতে সক্ষম হবে।
মিয়ানমারের রাখাইন থেকে ২০১৭ সালে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষ পালিয়ে বাংলাদেশে আসে। এর আগে থেকেই মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে বসবাস করে আসছিল। বিশ্বজুড়ে বাস্তুচ্যুত বা শরণার্থী মানুষ যত বাড়ছে, তাদের চ্যালেঞ্জগুলোও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বল্পতার কারণে কখনও চাহিদার তুলনায় তহবিলের জোগান কমাতে বাধ্য হওয়া, শুধুমাত্র অতি গুরুত্বপূর্ণ ও জীবন রক্ষাকারী জিনিস সরবরাহ করার মতো কঠিন সিদ্ধান্তগুলো নিতে হয়। এই সময়ে এত বিশাল কাজে সক্ষম মানুষকে বসিয়ে না রেখে, কীভাবে তাদের দক্ষতা বাড়ানো যায় এবং সেটাকে কীভাবে তাদের কাজেই লাগানো যায়— সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে।
২০১৫ সালের জুনে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা রিপোর্ট করেছে যে, সারা বিশ্বে শরণার্থী সংকটের পেছনে প্রধান কারণ যুদ্ধ এবং নিপীড়ন। আর এর স্বীকার হয়ে ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। ইউএনএইচসিআরের হিসাব বলছে, বাংলাদেশে বর্তমানে দুই লক্ষাধিক পরিবারের ৯ লাখ ৭৯ হাজার ৩০৬ রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন। তাদের মধ্যে ৫২ শতাংশ শিশু, ৪৪ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৪ শতাংশ বৃদ্ধ।
নারীরাই নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা নিচ্ছে
ক্যাম্প ফোর এক্সটেনশনে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়— রোহিঙ্গাদের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ চলছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সবসময় অভিযোগ ছিল— যুবকরা অলস দিন কাটায় এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে তাদের যুক্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে। তেমন পরিস্থিতি ঠেকাতে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের ক্যাম্পের ভেতরেই কাজের ব্যবস্থাও করে দেওয়া হচ্ছে। এখানে যুবকরা পানির লাইন সারানোর কাজ শিখছে, নারীরা নিজেদের ন্যাপকিন আন্ডারগার্মেন্টস বানাচ্ছে, ইলেক্ট্রিকের কাজ শিখছে, সোলারের কাজ করছে। এখানে যে ন্যাপকিন বানানো হয়, তা ক্যাম্পের নারীদের মাঝে বছরে দুইবার ৬টা করে পুনর্ব্যাবহারযোগ্য সুরক্ষা পণ্য বিলি করা হয়।ৎ
কারিগরি দক্ষতায় দক্ষ হচ্ছে রোহিঙ্গারা
ক্যাম্পে কর্মরত বেসরকারি সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রায় ৯৫ শতাংশ রোহিঙ্গা পরিবার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে এবং তারা প্রত্যেকে মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। এই শরণার্থী জনগোষ্ঠীর ৭৫ শতাংশেরও বেশি নারী ও শিশু। তারা ভীষণভাবে স্বাস্থ্য ও লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার ঝুঁকিতে থাকে। বছরে পর বছর অনিশ্চয়তা নিয়ে ক্যাম্প বসবাসের কারণে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য হুমকির মুখে। ক্যাম্পে প্রাপ্তবয়স্ক ৪৪ শতাংশ মানুষের কাজের ব্যবস্থা না থাকায় এবং আয়ের সংস্থান না থাকায় জীবন বিষণ্ন হতে শুরু করেছিল। এছাড়া বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এই বিশাল জনগোষ্ঠী আর্থিক সহায়তাদানকারী সংস্থাগুলোর জন্য বোঝা হয়ে উঠছিল। পরিস্থিতি বিবেচনায় এই জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগানোর নানা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এরমধ্যে আছে দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ। তাদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ সরকার, স্থানীয় জনগণ ও দাতব্য সংস্থাগুলোর উদ্যোগ সফল হয়ে দেখা দিয়েছে।
নারীদের কাজে আনা যায় না, চ্যালেঞ্জটা নেওয়া হলো কীভাবে, প্রশ্নে ইউএনএইচসিআর-এর লাইভলিহুড অফিসার সুব্রত কুমার চত্রবর্তী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রথম দিকে নারীদের কেবল সেলাইয়ে আগ্রহ ছিল। পরে সোলার থেকে শুরু করে স্যানিটারি ন্যাপকিন বানানো, ইলেকিট্রকের কাজ শেখাতে গিয়ে বেগ পেতে হয়েছে। কিন্তু যখন তারা দেখেছে এখানে কাজ শিখে অনেকে ক্যাম্পের ভেতরে কাজের সুযোগ পাচ্ছে, আয়-রোজগারের পথ হচ্ছে, তখন তারা কাজ শিখতে ও প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তারপরেও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এই কাজগুলো শিখতে ন্যূনতম যে শিক্ষা লাগে, সেটার ক্ষেত্রে ক্যাম্পের নারীদের অভাব রয়েছে। অবিষ্যতে স্কিল ট্রেনিংয়ের সঙ্গে সাক্ষরতা প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করার কথা ভাবছি।’
বাল্যবিবাহ, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় রোল মডেল
ক্যাম্পে ‘মেল রোল মডেল’ গ্রুপ রয়েছে। তারা মূলত বাল্যবিবাহ, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সচেতনা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। ক্যাম্পে ক্যাম্পে তাদের প্রশিক্ষণের জন্য নির্ধারিত জায়গা রয়েছে। সেখানে কিশোর- যুবকরা এসে বিভিন্ন ইনডোর খেলার পাশাপাশি নানা ক্যাম্পে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকে। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক এ কাজে ইউএনএইচসিআর-এর পার্টনার হিসেবে কাজ করে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বাল্যবিয়ে নৈমিত্তিক ঘটনা। বাল্যবিয়ে হলে কী ক্ষতি, জানতে চাইলে রোল মডেলদের একজন বলেন, মানসিক শারীরিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার আগেই বিয়ে হওয়া এবং তারপর সন্তান হওয়া মা ও শিশু দুজনের জন্যই ক্ষতিকর। ক্যাম্পে বেশিরভাগ মানুষের কাজ নেই, নিয়মিত প্রজননস্বাস্থ্য নিয়ে তারা পরামর্শও নেয় না। ফলে একের পর এক বাচ্চা জন্ম দিচ্ছে। একঘরের মধ্যে এত বাচ্চা নিয়ে থাকা, সেটাও অস্বাস্থ্যকর। শরীর ও মনের যে ক্ষতি, সেটা বুঝে ওঠার আগেই বালিকা বধূর জীবনে এসব ঘটতে থাকে। ফলে আমরা শিক্ষা- স্বাস্থ্য নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলি। যাতে তাদের অভিভাবকদের বুঝানো যায়, সেটা বড়দের দৃষ্টিতে আনি।
নারীর জন্য সেফ স্পেস
ক্যাম্পে ক্যাম্পে গড়ে তোলা হয়েছে নারীদের জন্য ‘সেফ স্পেস’। সেখানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একটি ঘরে নারীরা সুঁই সুতায় আঁকছেন পাঞ্জাবির কলার। খোলা বারান্দায় কেয়ারগিভারদের জন্য দেওয়া হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা। এমনকি কিশোরীরাও এসে লিডার হিসেবে প্রস্তুত করছেন নিজেদেরকে। একসঙ্গে বসে পারস্পারিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের পাশাপাশি কীভাবে সচেতনতা তৈরিতে মাঠে কাজ করবেন, সেই দক্ষতা প্রশিক্ষণও পান এরা।
ব্র্যাকের ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার সুতপা শর্মা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘এখানে মায়েদের ১৪টা সেশন থাকে, সেখানে প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হয়। আর মেয়েশিশুদের জন্য ২১টা সেশন রয়েছে। ‘গার্লস শাইন স্টার’ বলা হয় এই কিশোরীদের, যাদের অধীনে মাঠ পর্যায়ে পাঁচ জন করে শাইন স্টার থাকে। তারা ক্যাম্পের নারীদের মাঝে সচেতনতার কাজ করে। আমাদের ‘উইমেন অ্যান্ড গার্লস সেফ স্পেসে’ আছে নিয়মিত কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থাও।’’ কী ধরনের সমস্যা নিয়ে নারীরা আসে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগই পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা। আমরা মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার পাশাপাশি কারও যদি আইনি সহায়তা দরকার হয়, সেই ব্যবস্থা নিয়েও আলাপ করি।’
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ক্যাম্প কখনও খুব নির্ভার জায়গা হতে পারে না। কিন্তু দীর্ঘসময় যখন তারা থাকছে, তখন তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস তারা তৈরি করতে পারে কিনা, তাদের কাজের মধ্যে রাখা যায় কিনা— সেটা বিবেচনা করে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু প্রধান কথা হলো, এদের ফিরে যেতে হবে। এটা যে তার দেশ নয়, কাজ শিখলেও সেই কাজ নিয়ে সে ক্যাম্পের বাইরে যেতে পারবে না, এটা তাকে সবসময় বুঝাতে হবে।’
ছবি: প্রতিবেদক।
👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com
POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…
- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…
Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…
Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…
Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…
Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…