বাংলাদেশের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে, সারা বিশ্বের নানান প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা একত্রিত হয়ে আন্দোলনের ঝান্ডা তুলে ধরেন। এই আন্দোলনের শক্তি এমনভাবে বিস্তৃত হয়েছিল যে, মধ্যপ্রাচ্যের কঠোর আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত দেশগুলোতেও তার প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, দুবাইতে বাংলাদেশি শ্রমিকরা আন্দোলন করতে গিয়ে জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন।
যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশিরা এই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আন্তর্জাতিক জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তারা বিভিন্ন পর্যায়ে লবিং এবং প্রচারণার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন শক্তিধর দেশকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট সম্পর্কে সচেতন করেন। অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের আন্দোলন ও প্রচারণা বাংলাদেশের সরকারের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছিল। ঐতিহাসিক ট্রাফালগার স্কয়ারে, যা যুক্তরাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান, বাংলাদেশের বাইরের সবচেয়ে বড় বাংলাদেশি জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছিল। এর ফলে, বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল, যা তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকার প্রচেষ্টাকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
প্রবাসীদের এই অবদান শুধুমাত্র রাজনৈতিক আন্দোলনে সীমাবদ্ধ ছিল না; তারা অর্থনৈতিকভাবেও সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স প্রেরণ বন্ধ করে দেন, যা সরকারের মধ্যে এক অর্থনৈতিক আতংকের জন্ম দেয়। প্রবাসীদের এই সাহসী ও দৃঢ় অবস্থানের কারণে স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীকে ব্যাপক বেগ পেতে হয়, এবং তাদের পতনে প্রবাসীদের ভূমিকা অপরিসীম হয়ে ওঠে।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে প্রবাসীদের মধ্য থেকে কাউকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এমনকি এখনও পর্যন্ত আলাদা করে একজন প্রবাসী কল্যাণ বিষয়ক উপদেষ্টাও নিয়োগ দেওয়া হয়নি। প্রবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে অবহেলার শিকার হচ্ছেন, যা শুধুমাত্র সরকারি পর্যায়ে নয়, পরিবার থেকেও শুরু হয়। প্রবাসীরা যাদের জন্য কষ্টার্জিত অর্থ প্রেরণ করেন, সেই পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও দেশও তাদের ত্যাগের মূল্যায়ন করে না। অথচ, এই বৈষম্য বিরোধী সরকারের কাছে প্রবাসীরা অনেক বেশি প্রত্যাশা করেছিল, এবং সেই প্রত্যাশা এখনও নিভু-নিভু করে অটুট রয়েছে।
আমরা প্রবাসীরা আশা করি, এই সরকার স্বৈরাচার হটাও আন্দোলনে আমাদের ন্যূনতম স্বীকৃতি দেবে এবং আমাদের আন্দোলনে যে সক্রিয় ভূমিকা ছিল, তা মান্য করবে।
লন্ডনে বসবাসকারী অনেক প্রবীণ প্রবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত গঠন এবং তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্রবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। যুক্তরাজ্যে গঠিত সেই তহবিল মুক্তিযুদ্ধের অর্থনৈতিক জোগানের অন্যতম প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করেছিল।
প্রবাসীদের অবদান চিরকালই যেন উপেক্ষিত থাকে। তারা যেন চিরকালই সমাজের কলুর বলদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, এবং দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা সত্ত্বেও তারা যেন সম্মান পায় না। প্রবাসীরা পরিবার, আত্মীয়স্বজন এবং দেশ থেকে দূরে অবস্থান করে দিন-রাত পরিশ্রম করে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ে পর্যন্ত দেশের অর্থনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে প্রবাসীদের ভূমিকা অপরিসীম। তারা শুধু রেমিট্যান্স পাঠিয়েই দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখেননি, বরং দেশের রিজার্ভ বৃদ্ধি, বৈদেশিক বাণিজ্যের স্থিতিশীলতা, এবং সরকারের আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও প্রবাসীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে সুসংহত রাখতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্সের অবদান অমূল্য। ২০২৩ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্স বাংলাদেশের মোট রিজার্ভের একটি বিশাল অংশকে ধরে রেখেছিল। এছাড়াও তারা দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ করছেন, নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়তা করছেন এবং দেশের ব্যাংকিং খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে অবদান রাখছেন। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির মৌলিক ভিত্তি রক্ষায় এক অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রবাসীদের অবদান সবসময়ই মুখে মুখে প্রশংসিত হলেও, বাস্তবে তাদের যথাযথ স্বীকৃতি কখনোই দেওয়া হয়নি। বরং, প্রবাসীরা হয়রানির শিকার হন এয়ারপোর্টে প্রবেশের মুহূর্ত থেকেই, যা শেষ হয় গ্রামের পাড়া-মহল্লায় পাতি নেতাদের চাঁদা দিয়ে। যুগের পর যুগ ধরে প্রতিটি সরকারই প্রবাসীদের মূল্যায়ন ও সুরক্ষায় উদাসীনতা প্রদর্শন করেছে। তবে, ছাত্র আন্দোলন প্রবাসীদেরও এক নতুন পথ দেখিয়েছে—কীভাবে রেমিট্যান্স না পাঠিয়ে বা অবৈধ পথে পাঠিয়ে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করা যায়।
আমরা প্রবাসীরা আমাদের অবদানের ন্যায্য স্বীকৃতি এবং মূল্যায়ন দাবি করি। আমরা দাবি করি, প্রতিটি সরকারের অংশীদারিত্বে প্রবাসীদেরও অংশ থাকবে এবং থাকতে হবে। এটি আমাদের যৌক্তিক অধিকার। এই অধিকার থেকে যদি আমাদের বঞ্চিত করা হয়, তবে আমাদেরও রেমিট্যান্স বন্ধ করে বা অবৈধ পথে পাঠিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না। আমরা দাবি করি, বর্তমান বৈষম্য বিরোধী সরকারের আমল থেকেই এই অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক। অন্যথায়, আমাদেরকেও ছাত্রদের দেখানো পথে হাঁটতে হবে।
প্রবাসীদের সার্বিক কল্যাণে সরকারকে যান্ত্রিক হতে হবে এবং তাদের সুরক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে তিনটি স্তরে কিছু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রথম স্তরে, বিদেশে অবস্থিত দূতাবাসগুলোকে প্রবাসীদের পক্ষ থেকে কাজ করতে হবে। দূতাবাসগুলোকে ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন, শ্রমিকদের শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করা, এবং প্রয়োজনে আইনি সহযোগিতা প্রদানে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। সাধারণ শ্রমিকদের জন্য জরুরি চিকিৎসা সেবা এবং বিপদে পড়া প্রবাসীদের জরুরি বাসস্থান ও খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে। সেইসঙ্গে, অক্ষম বা আহত প্রবাসীদের বিনামূল্যে দেশে ফেরত আনার ব্যবস্থা করা এবং দেশে এসে পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করতে হবে।
দ্বিতীয় স্তরে, প্রবাসীদের বিনিয়োগের জন্য সরকারকে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রবাসীদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ প্রজেক্টের সুযোগ থাকতে হবে, যেখানে সরকার প্রবাসীদের বিনিয়োগের সুরক্ষা দেবে। অর্থাৎ, প্রবাসীরা বিনিয়োগকৃত অর্থ কেউ আত্মসাৎ করতে পারবে না, এবং করলেও সরকার তার ক্ষতিপূরণ করবে। প্রবাসীরা বিদেশে থেকেই জমি ক্রয়-বিক্রয়ের সুযোগ পাবেন, যার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি আলাদা সেবা খাত থাকবে। সরকারি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে জমি ক্রয়-বিক্রয় প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হবে, যাতে প্রবাসীরা প্রতারণার শিকার না হন এবং জমি ক্রয়ের পর সহজেই দখল পেতে পারেন। এছাড়াও, প্রবাসীদের জন্য খুবই অল্প সুদে বা বিনা সুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, যা বিদেশ থেকেই সহজে গ্রহণ করা সম্ভব হবে।
তৃতীয় স্তরে, এয়ারপোর্টে প্রবাসীদের জন্য আলাদা টার্মিনাল নির্মাণ করা উচিত, যেখানে তাদের সম্মানের সঙ্গে ট্রিট করা হবে। তাদের আনা মালামালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং তাদের স্বীয় গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত সরকারি তদারকির ব্যবস্থা থাকা উচিত। প্রবাসীদের সুরক্ষায় বিশেষ আইন প্রণয়ন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি বিশেষ ইউনিট গঠন করা প্রয়োজন। প্রতিটি স্তরেই আলোচনা সাপেক্ষে আরও অনেক কিছু যোগ হতে পারে, যা প্রবাসীদের জীবনকে সহজতর করবে এবং তাদের অধিকার রক্ষায় সহায়ক হবে।
প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি গঠনে এবং তার সুরক্ষায় এক অমূল্য সম্পদ। তাদের ত্যাগ ও পরিশ্রমের ফসল আজকের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে এবং দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে সুসংহত রাখছে। সুতরাং, তাদের যথাযথ মূল্যায়ন ও সরকারে প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দেওয়া তাদের ন্যায্য অধিকার। তাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও সম্মান নিশ্চিত করতে হবে। প্রবাসীরা শুধু অর্থনৈতিক শক্তি নয়, তারা জাতির গৌরবের অংশ। তাদের এই অবদানের যথার্থ স্বীকৃতি দিতে হবে, তা না হলে, তাদের সমর্থন হারিয়ে সরকারকে বড় মূল্য দিতে হতে পারে। প্রতিটি সরকারেরই দায়িত্ব হলো প্রবাসীদের অধিকার ও স্বীকৃতিকে নিশ্চিত করা এবং তাদের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।
লেখক: ব্যারিস্টার, কোর্টস অব ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস
👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com
POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…
- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…
Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…
Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…
Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…
Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…