Categories: Bangladesh News

বৈদ্যুতিক চার্জিং স্টেশনের যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ, তবে…


বৈদ্যুতিক চার্জিং স্টেশন যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ, তবে শুরুতেই সৃষ্টি হয়েছে নানা জটিলতা। কোনও কোনও প্রতিষ্ঠান চার্জিং স্টেশন তৈরি করে বসে থাকলেও পর্যাপ্ত গাড়ি পাচ্ছে না। কোনোটির আবার এখনও সার্ভিস চার্জ ঠিক হয়নি। বিইআরসি, স্রেডা, চার্জিং স্টেশনের উদ্যোক্তা ও গাড়ির মালিকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের তরফ থেকে দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রচলনের চেষ্টা চলছে। তবে দেশে চার্জিং স্টেশন না থাকায় সাধারণ মানুষ বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনায় খুব আগ্রহ দেখাচ্ছে না।

মার্সিডিজ বেঞ্জ ও অডি’র মতো দামি ব্র্যান্ডগুলোর বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। অতি সম্প্রতি চীনের ব্র্যান্ড বিওয়াইডি বাংলাদেশের রানার মোটরের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে গাড়ির বাজারজাত শুরু করেছে। এর বাইরে টয়োটা ও টাটার মতো বহুল পরিচিত গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দেশে হাইব্রিড গাড়ির পাশাপাশি বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজারজাত করছে।

উন্নত বিশ্বে, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোতে টেসলা’র মতো নামি ব্র্যান্ডের বৈদ্যুতিক গাড়ি ‘জীবাশ্ম জ্বালানি’র গাড়িকে পেছনে ফেলে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এর বড় কারণ হচ্ছে—বৈদ্যুতিক গাড়িতে প্রতি কিলোমিটারে চলাচলের খরচ খুবই কম। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হচ্ছে—রাস্তায় বৈদ্যুতিক চার্জিং স্টেশন নেই। ফলে চলাচলের পথ দীর্ঘ হলে গাড়ি চার্জ করা কঠিন হয়ে পড়বে। যদিও এখন চীনা ব্র্যান্ড ‘বিওয়াইডি’ ও ‘শাওমি’ গাড়ি একবার চার্জ দিলে ৭০০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে বলে ঘোষণা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সাধারণত বৈদ্যুতিক গাড়ি দুইভাবে চার্জে দেওয়া যায়। বাসার নিচের গ্যারেজে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টায় একটি গাড়ি চার্জ দেওয়া যায়। অপরদিকে চার্জিং স্টেশনগুলোতে একটি গাড়ি চার্জ দিতে ফাস্ট চার্জিং অপশনে ৩০ মিনিট সময় লাগে। এ জন্য হাইওয়ের পাশে পরিকল্পিতভাবে চার্জিং স্টেশন নির্মাণ করা জরুরি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) সূত্রে জানা গেছে, প্রথমদিকে এ ধরনের চার্জিং স্টেশন যথেষ্ট লাভজনক না হাওয়ায় সরকারি ভর্তুকির প্রয়োজন হয়। পরবর্তী সময়ে গাড়ির সংখ্যা বাড়লে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত হয়।

বিইআরসি সম্প্রতি বৈদ্যুতিক গাড়ির চার্জিং স্টেশনের সার্বিক বিষয় নিয়ে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন পর্যন্ত ১৪টি চার্জিং স্টেশন সরকারের অনুমোদন নিয়েছে।

অনুমোদন পাওয়া ১৪টি  চার্জিং স্টেশন হচ্ছে—রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অডি বাংলাদেশ, ক্যান্টনমেন্টে সুমাত্রা ফিলিং স্টেশন, কুমিল্লায় গুডলাক ফিলিং স্টেশন ও ইস্টজোন ফিলিং স্টেশন, ট্রাস্ট ইলেকট্রিক চার্জিং স্টেশন নামে আছে ৫টি, নারায়ণগঞ্জে আরইবি স্টেশন,  চট্টগ্রামে রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ায় মাহমুদ অ্যান্ড ব্রাদার্সের ২টি, গাজীপুরে রায়ান্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের ১টি এবং যশোরের শার্শায় ইমতিয়াজ অটো এলপি গ্যাস লিমিটেডের ১টি।

এর মধ্যে ঢাকায় ‘অডি বাংলাদেশ’ ও সুমাত্রা ফিলিং স্টেশন, যশোরে ওজোপাডিকো (ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি) এবং রাজশাহীতে মেসার্স লতা ফিলিং কোম্পানির চার্জিং স্টেশন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। এগুলো এখন ‘স্রেডা’র (সাসটেইনেবল অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি) অনুমোদন পাওয়ার অপেক্ষায় আছে। এছাড়া কুমিল্লায় ‘অডি বাংলাদেশ’-এর ১৮০ কিলোওয়াট ক্ষমতার একটি চার্জিং স্টেশন স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে এবং স্রেডা’র অনুমোদনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এই পাঁচটি স্টেশনের মধ্যে ২০২৩ সালের আগস্টে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অডি তাদের চার্জিং কার্যক্রম শুরু করেছে।

তবে ওজোপাডিকো এবং মেসার্স লতা ফিলিং স্টেশন পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক গাড়ির অভাবে তাদের কার্যক্রম শুরু করতে পারছে না বলে জানিয়েছে। ঢাকা সেনানিবাসে নির্মিত সুমাত্রা ফিলিং স্টেশন কাজ শুরু করতে পারছে না সার্ভিস চার্জ নির্ধারণ না হওয়ায়।

জানতে চাইলে ওজোপাডিকো’র নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী মোহা. শামছুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা তো চার্জিং স্টেশন নির্মাণ করে বসে আছি। কিন্তু গাড়ি কই? সারা দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির সংখ্যা খুবই কম। আপাতত আমাদের স্টেশনে অটোরিকশা চার্জ দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আশা করছি সামনে বৈদ্যুতিক গাড়ির সংখ্যা বাড়বে। ভবিষ্যতের কথা ভেবে এসব স্টেশন করা হয়েছে।’

বিইআরসির প্রতিবেদনে ভোক্তা পর্যায়ে চার্জিং স্টেশনে প্রতি কিলোওয়াট হিসাবে বিদ্যুতের দাম নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—ভোক্তা পর্যায়ে সব খরচসহ প্রতি কিলোওয়াট (ফ্লাট) বিদ্যুতের দাম ১৬ টাকা ২৪ পয়সা, অফপিক আওয়ারে ১৫ টাকা ২১ পয়সা, সুপার অফপিক আওয়ারে ১৪ টাকা ২২ পয়সা, পিক আওয়ারে ১৮ টাকা ৯৭ পয়সা।

বিদ্যুতের দাম ও সার্ভিস চার্জের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সদস্য (বিদ্যুৎ) আবুল খায়ের মো. আমিনুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ইতোমধ্যে ১৪টি চার্জিং স্টেশনের নির্মাণকাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দেশে এখনও বৈদ্যুতিক গাড়ির সংখ্যা কম। তাই উদ্যোক্তাদের আগ্রহ বাড়াতে আমরা সার্ভিস চার্জ যুক্ত করার আলোচনা করেছি।

তিনি বলেন, ‘কোরবানির ঈদের আগে গণশুনানি করেছি। স্টেশন পরিচালন ব্যয় কেমন হতে পারে সে সম্পর্কে মালিকদের কাছ থেকে ধারণা নেওয়া হয়েছে। বৈদ্যুতিক চার্জিং স্টেশন করলে কীভাবে তাদের লাভ হবে সেজন্য আমরা সার্ভিস চার্জ যুক্ত করার চিন্তা করছি।’

চলতি সপ্তাহের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

উল্লেখ্য, বৈদ্যুতিক যান চার্জিং সংক্রান্ত নির্দেশনা আছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের। সেখানে বর্ণনা করা হয়েছে এসব স্টেশন কীভাবে চলবে।

ব্যক্তিগত ও সাধারণ—এই দুই ধরনের চার্জিং অবকাঠামো বা  স্টেশন তৈরি করা যাবে। প্রথমটি হলো, বৈদ্যুতিক যান রিচার্জ করার জন্য এক বা একাধিক বৈদ্যুতিক যানের মালিক বা বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহারকারীদের সুনির্দিষ্ট একটি গ্রুপ অবকাঠামোগত সুবিধা নির্মাণ করতে পারবেন, এটি সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত নয়।

আর দ্বিতীয়ত, বৈদ্যুতিক যান রিচার্জ করার জন্য সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপিত অবকাঠামোগত সুবিধা—যা সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এ ধরনের অবকাঠামো সাধারণত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালু থাকার সময় পর্যন্ত, অথবা প্রতিদিন কমপক্ষে ১২ ঘণ্টা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এ ধরনের চার্জিং স্টেশনে বৈদ্যুতিক যানের চার্জিং একটি বাণিজ্যিক কার্যক্রম হিসেবে বিবেচিত হবে। ব্যক্তিগত চার্জিং স্টেশনে যদি তিনের বেশি বৈদ্যুতিক যানের মালিককে চার্জিং সুবিধা দেওয়া হয়, তাহলে ওই চার্জিং স্টেশন সাধারণ চার্জিং স্টেশন হিসেবে বিবেচিত হবে।

তবে সব ‘বৈদ্যুতিক যান চার্জিং স্টেশনকে’ গ্রিড বিদ্যুৎ সংযোগের আগেই বিদ্যুৎ বিতরণ লাইসেন্স দ্বারা পরীক্ষা ও পরিদর্শন করাতে হবে এবং পরবর্তীকালে সময়ে সময়ে নিরাপত্তা মানদণ্ড বজায় রাখা হচ্ছে কিনা, তা নিশ্চিত হতে হবে।

সব বিভাগীয় শহরের কেন্দ্রস্থল এবং গুরুত্বপূর্ণ সব মহাসড়ক—যেখানে দ্রুত বৈদ্যুতিক যান প্রচলনের সম্ভাবনা আছে, সেখানে চার্জিং অবকাঠামো স্থাপন করা হবে। প্রাথমিকভাবে পর্যাপ্ত জায়গা ও বিদ্যুৎ সংযোগ সুবিধা সংবলিত সিএনজি বা পেট্রোল রিফুয়েলিং স্টেশনে ফাস্ট চার্জিং অবকাঠামো স্থাপনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এছাড়া, সরকারি ক্রয় কার্যক্রমের আওতায় বৈদ্যুতিক যানবাহন ক্রয় উৎসাহিত করার লক্ষ্যে সরকারি প্রাঙ্গণে চার্জিং স্টেশন স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

অগ্রাধিকার ভিত্তিতে, হাইওয়েতে প্রতি ১০০ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে সড়কের উভয় পাশ থেকে প্রবেশযোগ্য এবং এককভাবে কমপক্ষে ৫০ কিলোওয়াট ক্ষমতাবিশিষ্ট চার্জিং স্টেশন স্থাপন করা হবে।

আরও পড়ুন:

দেশে হচ্ছে ইলেকট্রিক গাড়ির চার্জিং স্টেশন

বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার বাড়ছে না কেন?


👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Uncomm

Share
Published by
Uncomm

Recent Posts

মমতা ব্যানার্জি কি গঙ্গা চুক্তি নবায়নেও বাধা হয়ে উঠতে পারেন?

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরোধিতার কারণে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে…

9 mins ago

Key Options Of India’s 3 New Felony Legal guidelines

India has fully overhauled its legal justice system (Representational)New Delhi: India has fully overhauled its…

51 mins ago

M2M companies layer standardisation 2024 replace

Machine-to-machine (M2M) communications are evolving so quick that the approaching wave of latest M2M deployments…

54 mins ago

Implementing telco AI: 5 challenges

Synthetic intelligence isn’t solely new — though its manifestation as generative AI actually is —…

57 mins ago

Mohamed Abu Salmiya of Shifa Hospital launched

Israel launched the director of Gaza’s al-Shifa hospital with out cost early Monday, seven months…

2 hours ago

European autonomous automobiles to obtain Japanese increase

The European autonomous car trade will take pleasure in a technological leap with the introduction…

2 hours ago