দু’একদিন আগে মিডিয়ায় প্রচারিত একটি সংবাদের সূত্র ধরে আমার কিছু প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী, যারা এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আমার সঙ্গে কথা বলেছে, এবং তাদের কিছু উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। সংবাদটিতে বলা হয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপর আরোপিত ১৫ শতাংশ আয়কর পরিশোধ করতে না পারার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের ব্যাংক হিসাবগুলো স্থগিত করা হয়েছে, অর্থাৎ যেসব বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যেই তাদের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের বেতন ও ঈদের বোনাস দেয়নি তারা তা দিতে পারবে না, এবং এদের পরিবারের কাছে ঈদটি হবে নিরানন্দ। আমার ছাত্রছাত্রীরা অনুরোধ করেছে, এ বিষয়টি নিয়ে কিছু লিখতে।
লেখার আগে আমি বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর নিয়েছি, দু’এক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করেছি। আমার মনে হয়েছে কর আরোপের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি আছে, তবে কর আরোপের বিষয়টি যেহেতু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত, যেকোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে এ নিয়ে আরো আলোচনা-পর্যালোচনা করা উচিৎ ছিল- যার সুযোগ এখনও আছে। আমি শুনেছি কর আরোপ নিয়ে দীর্ঘদিনের একটি আইনি প্রক্রিয়ার অন্তে সুপ্রীমকোর্টের আপিল বিভাগ সিভিল আপিলগুলো নিস্পত্তি করে একটি রায় দিয়েছেন। কিন্তু আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ের এবং আদেশের কপি না পাওয়ার আগেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যাংক হিসাব স্থগিত করেছে। আপিল বিভাগের রায় যদি সম্পূর্ণ পরীক্ষা করে এই সিদ্ধান্তটি নেয়া হত তাহলে তা আইনসিদ্ধ হত। অর্থাৎ রায়ে এমন কিছু থাকতেই পারে যার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করা হয়তো সম্ভব হত না।
আইন বিষয়ে আমার জানাশোনা নিতান্তই কম, ফলে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য বা মতামত দেয়া থেকে আমি বিরত থাকব। এই লেখাটিতে আমার দৃষ্টিভঙ্গি হবে বরং একজন শিক্ষকের এবং উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে আগ্রহী একজন নাগরিকের। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলাম, অনেকগুলি বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক পরিষদ এবং সিন্ডিকেটের সদস্য ছিলাম- দু’একটিতে এখনও আছি- এবং এদের আয়োজিত সেমিনার ও প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নিয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণের পর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকবছর পূর্ণকালীন শিক্ষকও ছিলাম। ফলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা-সম্ভাবনা এবং দুর্বলতা, সমস্যা সম্পর্কে আমার যথেষ্ট ধারণা রয়েছে। ভালো এবং উন্নত মানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যেমন আছে, নিম্ন ও মধ্যম মানের বিশ্ববিদ্যালয়ও তেমনি আছে। যারা পেছনে পড়ে আছে, তাদের মানোন্নয়নের প্রয়োজন, তা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)সহ সংশ্লিষ্ট সকলেই স্বীকার করেন। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় চলছে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ছাড়া, কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসির অনেক নির্দেশনা অমান্য করে, শিক্ষকদের বেতন ভাতা নিয়মিত পরিশোধ করে না, আর্থিক নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে। এরকম অনেক অভিযোগ শোনা যায়। আবার, বিপরীত একটি চিত্রও আছে, যা যথেষ্ট উজ্জ্বল। ভালো গবেষণা হচ্ছে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাদের শিক্ষার্থীরা নানা দেশে গবেষণা করে খ্যাতি অর্জন করেছে, দেশেও নানা পেশায় নিজেদের সক্ষমতা স্বাক্ষর রেখেছে। ফলে সমাজের, সরকারের, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকলের মূল চিন্তাটি হওয়া উচিৎ দুর্বল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানোন্নয়ন। এরা যাতে নিয়মনীতি মেনে চলে এবং আর্থিকসহ সকল ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি বজায় রাখে তা নিশ্চিত করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কাগজে কলমে লাভজনক প্রতিষ্ঠান না হলেও এরা লাভজনক- এই চিন্তা থেকে অগ্রসর হয়ে এদের উপর কর আরোপ করা হতে থাকলে তা মানোন্নয়নসহ অন্যান্য উদ্যোগের জন্য সহায়ক হবে না, বরং সকলের কাছে একটি ভুল বার্তা পৌঁছে দেয়া হবে যে সকল কিছুর মতো শিক্ষাও এখন থেকে ব্যয়বহুল হবে।
একটি অপ্রীতিকর সত্য হচ্ছে এই যে উচ্চশিক্ষায় স্বাধীনতার পর থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অভাবে একটা ক্রমবর্ধমান চাপ অনুভূত হচ্ছিল যা সামাল দেয়াটা ছয় সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সম্ভব হচ্ছিল না। তার কারণেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভব হয়েছিল। অনেক শিক্ষার্থী একসময় ভারত ও অন্যান্য দেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে চলে যেত, ফলে বৈদেশিক মুদ্রার একটি ভালো অংকও দেশ থেকে বেরিয়ে যেত। উনিশ’শ নব্বইয়ের মাঝামাঝি থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হতে শুরু করলে এরপর ওই বিদেশমুখি শিক্ষার্থীসহ ঢাকা ও আশেপাশের দু’তিনটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ভর্তি হতে পারেনি তারা দেশেই উচ্চশিক্ষার সুযোগ পায়। গত কুড়ি বছরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও বেড়েছে। ভালো-মন্দ মিলিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশি শিক্ষার্থীকে শিক্ষা দিচ্ছে। এই বাস্তবতাটি কাঙ্ক্ষিত ছিল না, কিন্তু ঘটেছে। এটি মেনে নিয়ে দুর্বল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সবল করা এবং সকল নিয়মনীতি মেনে যেন তারা তাদের শিক্ষাক্রম চালিয়ে যায়, এটি নিশ্চিত করাই উচিৎ ছিল প্রধান বিবেচনা। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি চাইব, আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ উচ্চ শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নেয়। বাকি ১০ থেকে ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী যেগুলোতে পড়বে সেগুলো যেন হয় উচ্চ মানের, বৈশ্বিক র্যাংকিং সূচকে প্রথম ৫০০-৭০০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে যেন তাদের স্থান থাকে। কিন্তু যতদিন সেই অবস্থানে আমরা যেতে না পারি, বর্তমানে চালু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়েই আমাদের কাজ করতে হবে।
মনে রাখতে হবে, এসব বিশ্ববিদ্যালয় চলে শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকায়। সরকার থেকে কোনও অনুদান তারা পায় না। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা থেকে শুরু করে গবেষণা, গ্রন্থাগার নানা একাডেমিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম তাদের চালাতে হয় ওই টাকা থেকেই। তারা কর না দিলেও পরোক্ষ কর দিচ্ছে। তাদের উন্নয়ন, নির্মাণ, ইত্যাদিতে যেসব খরচ হয়, তা থেকে সরকার ভ্যাট পায়। এদের শিক্ষক, কর্মকর্তারা আয়কর দেন। তারপরও যদি তাদের নিয়মিত কর দিতে হয়, কয়েক বছরের কর একসঙ্গে পরিশোধ করতে হয়, তাহলে তারা চাপের মুখে পড়বে। হয়তো তাতে বেতন ভাতা কমবে, সুযোগ সুবিধাও কমে যাবে; নয় তো শিক্ষার্থীদের বেতন বাড়বে। আমি আবারও বলি, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক অনিয়ম হয়, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হোক, কিন্তু তাদের উপর করারোপ করাটা ভালো উদ্যোগ নয়। আমার মনে আছে, বেশ কয়েক বছর আগে, আবুল মাল আবদুল মুহিত যখন অর্থমন্ত্রী ছিলেন, ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্তটি তখন নেয়া হয়। প্রতিবাদে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে। কিছুদিনের মধ্যেই ভ্যাট নেয়ার উদ্যোগ বাতিল করা হয়, এবং কাগজে প্রতিবেদন ছাপা হয় যে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই তা করা হয়েছিল। এর কিছুদিন পর অর্থমন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। তাঁকে আমি পারিবারিকভাবে চিনতাম, তাঁর স্নেহধন্য ছিলাম। তাঁর মতো মার্জিত ও রুচিশীল মানুষ আমি কমই দেখেছি। তাঁকে এই ভ্যাট প্রত্যাহারের বিষয়টি কেন এত দ্রুত ঘটল তা জিজ্ঞেস করলে স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে ইংরেজিতে বলেছিলেন, আমরা ভুলে গিয়েছিলাম, আমরা এত দরিদ্র নই, কাজেই ভুলটা ঠিক করে নিয়েছি। এত দরিদ্র নই যে শিক্ষায় কর আরোপ করে রাষ্ট্র সংসার চালাতে হবে।
কর আরোপের পক্ষে রাজস্ব বোর্ড নিশ্চয় অনেক যুক্তি দেবে। কিন্তু এ যদি সরকারের কর আদায়ের একটি উপায় হয়, তবে এরকম উপায় তো অনেক আছে, যেগুলি আমরা প্রয়োগ করছি না। আবার অনেক ক্ষেত্রে কর সংগ্রহে আমরা শৈথিল্য দেখাচ্ছি। যাদের কর মওকুফের প্রয়োজন নেই, তাদের প্রণোদনা দেয়ার জন্য ট্যাক্স হলিডে দিচ্ছি। কর ফাঁকি থামাতে পারছি না, বাংলাদেশে কোটিপতির সংখ্যা এখন কয়েক হাজার। তারা ক’জন নিয়ম মেনে কর দেন, তার হিসাবটি নিলে অবাক হতে হয়। জিডিপি অনুপাতে কর আহরণের ক্ষেত্রে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার সব থেকে পেছনে। কর আহরণে আমরা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা দেখাতে পারছি না, ফলে অনেক অতি-ধনী ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন, তাদের করের আওতায় আনলে আমাদের জিডিপি কর অনুপাতে গ্রহণযোগ্য হত। যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক অব্যবস্থাপনা বা অসঙ্গতি থাকবে, তাদের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হোক, কিন্তু মোটা দাগে সবাইকে করের আওতায় নিয়ে আসলে বেসরকারি উচ্চশিক্ষা খাতটিকে একটা চাপের মধ্যে ফেলা হবে, যার প্রভাব পড়বে তাদের শিক্ষা ও গবেষণায়।
এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপর কর আদায় শুরু হলে প্রতি বছর রাষ্ট্রীয় কোষাগারে কত টাকা জমা হবে, তা নিয়ে আমার কোনো ধারণা নেই। কিন্তু আমি নিশ্চিত, সেই অংকটি এমন বিশাল কিছু হবে না, যা সরকারের বাজেট ব্যবস্থাপনায় বড় ভূমিকা রাখবে, বরং বিভিন্ন বড় প্রকল্পে যেসব নয় ছয় হয়, তা রোধ করা গেলে এর থেকে অনেক বেশি টাকা সাশ্রয় হত। আমাদের দেশের প্রধান সমস্যাগুলো একটি হচ্ছে দুর্নীতি, যদি দুর্নীতির ছুটে চলা ঘোড়ার লাগামটা একটুখানি টেনে ধরা যেত, তাহলে অনেক বড় অংকের টাকা বেঁচে যেত। অর্থাৎ পৃথিবীর প্রায় সব দেশে যেসব খাত থেকে কর আদায় হয়– অনেক দেশে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণেই হয়- যেসব খাতে কর আদায়ে আমাদের দুর্বলতা আছে, তাই বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর কর বসিয়ে কোষাগারের স্বাস্থ্যোদ্ধার করার প্রয়াস কেন?
আমাদের উচ্চ আদালত অনেক আদেশ দেন, কিন্তু তার সব কি মানা হয়? নদী দূষণ, পাহাড় নিধন নিয়ে উচ্চ আদালতের স্পষ্ট নির্দেশনা আছে, কিন্তু সেগুলোর মান্যতা নেই। আমি নিশ্চিত, আপিল বিভাগের রায় পক্ষে গেলেও রাজস্ব বোর্ড যদি তা প্রয়োগ না করে, তবে আদালত অসন্তুষ্ট হবেন না। আমি আশা করবো আবুল মাল আবদুল মুহিত যেমন আমাকে বলেছিলেন, শিক্ষায় কর আরোপের মতো এত দরিদ্র আমরা নই, সেই চেতনা থেকে কর আরোপের সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহার করা হোক। এবং একই সাথে দুর্বল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানোন্নয়ন, সার্বিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ম-নীতি মেনে চলা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক।
তবে সবার আগে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যাংক হিসাবের উপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হোক, যাতে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারির একটা বড় উদ্বেগের নিরসন হয়।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; শিক্ষাবিদ; কথাসাহিত্যিক
POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…
- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…
Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…
Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…
Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…
Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…