টিপটিপ বৃষ্টি ঝিরঝির হাওয়া বইছে এখন/ ইচ্ছে করে তোর হাত ধরে ভিজি দু-জন— কবিতার লাইনটুকু পড়েই লতা বলল, ‘দারুণ তো। অনেক সুন্দর কবিতা লিখেছো তুমি। বৃষ্টিকে খুব পছন্দ করো বুঝি?’ ‘হ্যাঁ, আকাশে মেঘ দেখলেই বৃষ্টিতে ভিজার প্ল্যান করে ফেলি। বৃষ্টিতে ভিজে বছরে কত বার যে জ্বর বাঁধাই শরীরে।’
বাহ্ এত সিরিয়াস! তোমাকে তো তাহলে বৃষ্টি বাহাদুর বলা যায়। অবশ্য বৃষ্টি আমারও খুব প্রিয়— লতা বলল।
তাতো জানি লতা। আর্টস ফ্যাকাল্টির বার্ষিক সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় এবার বৃষ্টির গান গেয়েই তো তুমি প্রথম হলে। ‘আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদল দিনে।’ রবীন্দ্র সঙ্গীতটি চমৎকার গেয়েছিলে। গানটি তোমার গলায় দারুণ মানিয়েছিল। আহা! সেকি কণ্ঠ। গান শুনে আমি তো বৃষ্টিতে ভিজেই গিয়েছিলাম প্রায়— আমি বললাম।
লতা হাসতে হাসতে একপাশে কাত হয়ে গেল। হাসি থামিয়ে বলল, ‘তুমি কবিতা লিখো এটা কার কাছ থেকে যেন শুনেছি। এখন তো দেখছি খুব মজা করে কথাও বলো। গান শুনে ভিজে যাচ্ছিলে, হা-হা, আবার হাসি। ঠিক আছে। ভাল থেকো। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস বারোটায় ছেড়ে যাবে। পরে কথা হবে। বাই।’
একটা বড় নিশ্বাস ফেললাম আমি। উত্তেজনায় এতক্ষণে ঘেমে গেছে শরীর। কয়েকদিন ধরে গুছানো প্ল্যানটা কাজে লাগল বোধহয়। প্রথমবর্ষ থেকেই লতাকে পছন্দ করি। বলার সাহস হয়নি কখনো। দ্বিতীয় বর্ষে এসে কথাটা বলার পরিবেশ হল মনে হয়। যদিও আমার ঠান্ডা সমস্যা ছোটবেলা থেকেই, তবু মিথ্যে হলেও এ প্লানটাকেই উপযুক্ত মনে করে সারারাত ভেবে কবিতাটি লিখেছি। যেহেতু বৃষ্টি লতার খুব প্রিয়—তাই বৃষ্টিকে উপলক্ষ্য করেই লতার মনে ঢুকতে হবে। এক সময় বলে ফেলতে হবে আসল কথাটা।
রাতে লতার মুঠোফোনে কল দিলাম। ‘হ্যালো বৃষ্টি বাহাদুর!’ সম্বোধন করে একরাশ হাসি ছড়িয়ে লতা কথা বলল বেশ কিছুক্ষণ। এভাবেই চলতে থাকল কয়েক দিন।
শনিবার একটাই ক্লাস আমাদের। ক্লাস শেষে লতাকে বললাম— ‘লতা, তোমার সাথে কিছু কথা আছে।’ ‘বলো’। ‘না, কলাভবনে কী ভ্যাপসা গরম। চলো, বটতলায় গিয়ে বসি।’ ‘ঠিক আছে চলো। আকাশটা মেঘলা। এজন্যই গরমটা বেশিই লাগছে। দেখো ক্লাসে বসেই আমি কেমন ভিজে গেছি। ফ্যানের বাতাসেও কাজ হয়নি।’
‘হ্যাঁ, অধ্যাপক মিল্টন কুমার দেব স্যারের ক্লাসে তো পুরোটাই লোডশেডিং ছিল। ইদানীং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রায়ই লোডশেডিং হচ্ছে। এই ভ্যাপসা গরমে লোডশেডিং ভালোলাগে না, ধ্যাত।’— লতার কথায় বিরক্তির ছাপ।
সরকার তো বলছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে প্রভাবে এমন হচ্ছে। ডলার সঙ্কটসহ নানা কারণে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কয়লা আনা যাচ্ছে না। এ কারণে রামপাল ও পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে। যাইহোক, চলো কলাভবনের সামনের মাঠে যাই। ওখানে কিছুটা প্রাকৃতিক বাতাস পাওয়া যাবে।
বটতলায় গিয়ে বসলাম দু-জন। মনের কথাটা বলব কিন্তু ভয়ে বুক কাঁপতে লাগল। গলাটা শুকিয়ে গেল। ‘বলো, কী বলবে?’ লতার তাগিদে একটু নড়েচড়ে বসলাম। আশপাশটা দেখে নিলাম কয়েকবার। আমতা আমতা করে মুখ খুললাম। ‘না মানে, লতা, বেশ কয়েকদিন যাবৎ রাতে ঘুম হয় না। কথাটা তোমাকে জানানো দরকার। প্রতিদিনই ক্লাস শেষে ভাবি কথাটা বলব কিন্তু…’ পরের কথাগুলো আর শেষ করতে পারলাম না। এমনি ঝপঝপ করে নামল বৃষ্টি। মেঘলা আকাশে ভ্যাপসা গরম হওয়ায় এসময় বটতলার আশপাশের গাছের নিচে অনেক ছাত্রছাত্রী ছিল। এরমধ্যেই বৃষ্টি বেড়ে মুষল ধারে রূপ নিল। সবাই দৌড়ে ছুটল কলা ভবনের দিকে। আমি উঠে দাঁড়ালাম। হঠাৎ বৃষ্টি আসলে দৌড় দেয়া আমার স্বভাবজাত হলেও লতা তখনো বসা ছিল তাই দৌড় দেয়া থেকে বিরত রইলাম। ব্যাগে রাখা ছাতাটা বের করে মেলে ধরলাম। ততক্ষণে বটতলার আশপাশের এলাকাটা ফাঁকা হয়ে গেছে। শুধু আমরা দু-জনই আছি এখানে। মনে মনে একটা কবিতার থিম এসে গেল মাথায়। ‘বৃষ্টি ভেজা প্রহরে একাকী দু-জন’। কিন্তু লতার মুখের দিকে ভালো করে তাকাতেই বুকে একটা ধাক্কা লাগল। হৃৎপিণ্ডের ধপধপ বেড়েছে। লতা কেমন উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এতক্ষণে ও ভিজে একাকার হয়ে গেছে। একেবারে জবুথবু অবস্থা আর আমি ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে আছি।
‘কী ব্যাপার বৃষ্টি বাহাদুর, বৃষ্টি তোমার খুব প্রিয় না? এত প্রিয় যে অন্যদের মত দৌড় দিতে পারোনি ঠিকই কিন্তু নিজের মাথার উপর ছাতা মেলে ধরতে ভুল করোনি।’
আমি লজ্জায় মাথা নীচু করলাম। কিছুই বলতে পারলাম না। ‘আজ হলে গিয়ে আরেকটি কবিতা লিখে ফেলো। এক যে ছিল বৃষ্টি বাহাদুর…।’ বলেই লতা পা বাড়াল কলা ভবনের দিকে। আমি দাঁড়িয়েই রইলাম। কী হতে কী হয়ে গেল! কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছিল। আকাশের বৃষ্টিতে না ভিজলেও কষ্টের বৃষ্টিতে পুরো হৃদয়টাই ভিজে গেল। কষ্ট আর রাগ দুটোই মুহূর্তের মধ্যেই আমাকে অস্থির করে তুলল। রাগে মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করল। রাগটা ভর করল গিয়ে ছাতাটার উপর। ছুড়ে মারলাম দূরে। ‘শালার ছাতা, তুই যদি আজ ব্যাগের ভিতরে না থাকতি তাহলে এই ঘটনাটা ঘটতো না।’
বুক ভরা কষ্ট নিয়ে তুমুল বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে হলের দিকে পা বাড়ালাম। বৃষ্টিতে ভিজলাম ঠিকই কিন্তু সেটা অসময়ে।
পরদিন ক্লাসে লতার সঙ্গে কথা হল ঠিকই কিন্তু লতার কথার মধ্যে কেমন যেন গা-ছাড়া ভাব লক্ষ্য করলাম। ক্লাসে মাঝেমধ্যে দু-জনের চোখাচোখি হলো। লতার চোখে আমার চোখ পড়তেই লতা মাথা নীচু করে ফেলে। আমার প্রতি লতার আগ্রহ এখনো আছে সেটি বুঝতে পেরে আবার আশায় বুক বাঁধতে লাগলাম। আস্তে আস্তে সম্পর্কটা স্বাভাবিক হয়ে আসবে—এ আশায়।
বাংলা মাস আষাঢ়-শ্রাব-ভাদ্র চলে গেছে। এখন আশ্বিন মাস। বর্ষা শেষ হলেও নিয়মিত বৃষ্টি হচ্ছে। ইদানীং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা হয়। সেদিন রাতের টানা বৃষ্টিতে পুরো নিউমার্কেট দীর্ঘসময় ডুবে ছিল। ব্যবসায়ীরা সারাদিন দোকানপাট খুলতে পারেননি। বর্ষাকাল শেষ, তবুও এমন বৃষ্টি! বায়ু দূষণের প্রভাবে আবহাওয়ার এমন বিরূপ আচরণ দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা।
আজ বাংলা আশ্বিন মাসের দশ তারিখ, ইংরেজি ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩। মঙ্গলবার। মঙ্গলবারে কী অমঙ্গলই না ঘটে গেল আমার জীবনে। ক্লাস শেষে আমি আর মেহেদী গল্প করতে করতে হলে ফিরছি। কলা ভবন পেরিয়ে মল চত্বরের মাঝামাঝি আসতেই নামল তুমুল বৃষ্টি। রাহাত ও আমি দিলাম দৌড়। আশ্রয় নিলাম রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে। মেহেদী ও আমি দু-জনেই হাঁপাচ্ছি। তখন বেজে উঠল আমার মুঠোফোন। ‘হ্যালো বৃষ্টি বাহাদুর। বৃষ্টির ভয়ে প্রাণপণে দৌড়ে আশ্রয় নিলেন রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে বসে এক বৃষ্টি বাহাদুরের বৃষ্টিভীতির এমন অপূর্ব দৃশ্যটা ভালোই উপভোগ করলাম।’ এই বলেই লতা লাইনটা কেটে দিল। দৌড়ে এসে এমনিতেই হাঁপাচ্ছি। তারমধ্যে এমন ফোন! নিজের কপালটাকে দেয়ালের সাথে আছড়াতে ইচ্ছে করল। এমন সময় বৃষ্টির ভয়ে দৌড়ালাম যখন লতা বাসায় যাওয়ার জন্য মল চত্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে বসা ছিল। দৌড়টা কলা ভবনের দিকে দিলেও তো হতো। তাতে হয়ত লতার চোখে পড়তাম না। কিন্তু পোড়া কপাল আমার।
পরদিন সকাল নয়টায় লুকনা ইয়াসমিন ম্যামের ক্লাস। পৌনে নয়টায় আমি আর মেহেদী হল থেকে বেরুলাম। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল তখন। রাহাত বলল, ‘কিরে, ভিজে যাবো তো। চল, দৌড়ে যাই।’ ‘না, প্রয়োজন হলে ভিজে যাবো।’ কিন্তু মেহেদীর জোরাজুরিতে আমাকে দৌড় দিতেই হল। কোনোক্রমে পৌঁছলাম কলা ভবনের উত্তর গেইটে। হাঁপাচ্ছি দু-জন। আমি একটু বেশিই হাঁপাচ্ছি। মনে হয় কয়েক মাইল দৌড়ে এসেছি। দৌড়টা অনিচ্ছায় দিয়েছিলাম। রাহাতের জোর তাগিদে। ইচ্ছের বাইরে করা কাজগুলো মানুষকে একটু বেশিই ক্লান্ত করে। কাজটাও নিখুঁত হয় না। আমার ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। দৌড়ে দেহের সংযোগ ছিল। মনের সংযোগ ছিল না। কারণ পথিমধ্যে কয়েকবার হোঁচট খেয়ে পড়ে যাচ্ছিলাম প্রায়। দেহ ও মনের সংযোগ না থাকলে যে কোনো কাজের গতি দুর্বল হয়ে পড়ে।
ওমা, হঠাৎ দেখি লতা আমার সামনে! বুকের কাঁপুনি আরো বেড়ে গেল। গলাটা গেল শুকিয়ে। শরীর ফুলে যেতে লাগল। পশমগুলো দাঁড়িয়ে গেল। তবে লতা কোনো কথা বলল না। হাঁটতে থাকলো ক্লাস রুমের দিকে। ‘শালা, তোর জন্য।’ তেড়ে গেলাম মেহেদীর দিকে। ‘কীরে, আমার জন্য আবার কী হল তোর?’ মেহেদীর প্রশ্নের উত্তরটা দিতে গিয়ে থেমে গেলাম। একথা কি কাউকে বলা যায়। তাই চেপেই গেলাম। ক্লাসে গিয়ে বসলাম ঠিকই কিন্তু লুকনা ম্যাডাম কী পড়াচ্ছেন কিছই মাথায় ঢুকছিল না। অজানা আশঙ্কায় বুক কাঁপছিল তখনো। একের পর এক ঘটনায় ধরা খেয়ে যাচ্ছি। বৃষ্টি বাহাদুরের বৃষ্টি ভীতি বিরক্তিকর ভাবেই প্রকাশ পাচ্ছে। একেকদিন একেক কায়দায়।
আসলে ভুলটা আমারই। ছোটবেলা থেকেই আমার ঠান্ডা সমস্যা। নাকে সাইনাসের অসুবিধা আছে। চিকিৎসকের পরামর্শে আমাকে বৃষ্টি ও ধুলা-বালি এড়িয়ে চলতে হয়, শীতকালে সাবধানের থাকতে হয়। সাইনাস সমস্যা আজকাল অনেকেরই থাকে। এটা বড় কোনো রোগ না। জাস্ট, সাবধানে থাকা লাগে। তাই আমি মিথ্যে মিথ্যে বৃষ্টিপ্রেমিক সাজা ঠিক হয়নি। ক্যাম্পাসে অনেকেই প্রেম করে, করছে। কেউ মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে প্রেম করতে গেছে বলে আমার জানা নেই। আসলে লতাকে পছন্দ করি— এটা সরাসরি বলে ফেললেই কাজ হতো মনে হয়। দু-জনের মধ্যে কিন্তু একটু বন্ধন হতে যাচ্ছিল প্রায়। কিন্তু…।
এরপর থেকে এমনভাবে ক্লাসে প্রবেশ করি যেন আমি লতার সামনে না পড়ি। লতাও আর কখনো যেচে কথা বলতে আসে না। এভাবেই দু-জনের দূরত্বটা দিন দিন বাড়তে থাকলো।
এপ্রিলের শেষসপ্তাহ, ২০২৪। দেশব্যাপী তীব্র দাবদাহ চলছে। চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে দিনের বেলায় তাপমাত্রা ৪৩-৪৪ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ এত তাপের সঙ্গে অপরিচিত। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এক সপ্তাহ বন্ধ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস হচ্ছে অনলাইনে। ২ মে, ২০২৪। রাতের খাবার খেয়ে হলের মাঠে কিছুটা বাতাস উপভোগ করার চেষ্টা করছি। দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে বলে ছবি ও ভিডিও ঘুরছে ফেসবুকে। ঢাকার আকাশও মেঘাচ্ছন্ন। তবে আমার কাছে এ নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই। ঘণ্টাখানেক পর ঢাকায় বৃষ্টি নামল। হলের ছেলেরা দেখছি অনেকেই বাইরে বেরিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে শুরু করেছে, হৈ-হুলোড় করছে। আমি স্থির, বসে আছি। মোবাইলটা বের করে যে ছেলেদের উল্লাসের ছবি তুলবো—তাও মনে ধরছিল না। আজকের বৃষ্টি বহুল প্রত্যাশিত হলেও ‘বৃষ্টি’ আমার কাছে বেদনার নাম। শব্দটিকে বড় রহস্যময়ী ঠেকে; যারসঙ্গে কষ্ট ও রহস্য একাকার। এই বৃষ্টি লতাকে ছিনিয়ে নিয়েছে সুদূর অস্ট্রেলিয়ায়। সে এখন এক প্রবাসী শিক্ষকের ঘরণী।
👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…
- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…
Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…
Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…
Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…
Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…