Categories: Bangladesh News

বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় রবির গান আর দুই কিংবদন্তিকে স্মরণ


দিনটা যেমন আনন্দের, তেমনই বেদনার। সেই দোটানা বোধহয় প্রকৃতির ওপরও ভর করেছিল। বৃহস্পতিবার (৯ মে) দিনভর জ্বলজ্বলে রোদ। অথচ সন্ধ্যা নামতেই ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি। আর এমন বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা আরও বেশি প্রাণবন্ত ও রঙিন হয়ে উঠেছিল রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মিলনায়তনে। কারণ সেখানে বসেছে রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে দেশের বৃহত্তম আয়োজন ‘জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসব’। আয়োজনে বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা।

আয়োজনটির ৩৫তম এই আসরের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার নির্বাহী সভাপতি আমিনা আহমেদ। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, চিত্রশিল্পী এম এ তাহের, সংস্কৃতিকর্মী মাহমুদ সেলিম প্রমুখ।

সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের লবিতে মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বালন ও নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসবটি। শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় নৃত্যটি পরিবেশন করেন ‘নৃত্যানন্দ’র শিল্পীরা। নৃত্যের সঙ্গে সমবেত সংগীত ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা’ ও ‘বিপুল তরঙ্গ’ পরিবেশন করা হয়।

এরপর মূল অনুষ্ঠান শুরু হয় মিলনায়তনে, জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। এটি পরিবেশন করেন সংস্থার শিল্পীরা। সঙ্গে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতারাও দাঁড়িয়ে কণ্ঠ মেলান। অতঃপর মঞ্চে ওঠেন দেশের নন্দিত দুই নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদ ও শামীম আরা নীপা। তাদের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনায় অংশ নেন ‘নৃত্যাঞ্চল’র শিল্পীরা।

এই ফাঁকে বলা প্রয়োজন, এবারের উৎসবটি বিশেষভাবে আয়োজন করা হয়েছে রবীন্দ্রসংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী ও বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা কলিম শরাফীর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে। আর উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে সম্প্রতি প্রয়াত হওয়া রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সাদি মহম্মদের স্মৃতির প্রতি।

তাই আলোচনা পর্বের শুরুতেই সাদি মহম্মদের সম্মানে সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। এরপর নিজের বক্তব্য পেশ করেন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পীযুষ বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘এবারের আয়োজনটি আনন্দ ও বেদনার মিশেলে হচ্ছে। এই আয়োজনে আপনাদের সবাইকে পেয়ে আমরা আনন্দিত, গর্বিত। আপনাদের সহযোগিতায় আমরা এতটা পথ পাড়ি দিয়েছি। তিন দিনব্যাপী এই উৎসব সবাইকে উপভোগের আহ্বান জানাচ্ছি।’

বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার সহ-সভাপতি কাজল মুখার্জি তার বক্তব্যে প্রধান অতিথি অর্থাৎ শিক্ষামন্ত্রীর কাছে কিছু আর্জি উপস্থাপন করেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেন সংস্কৃতি চর্চার জন্য সুলভে কক্ষ ভাড়া পাওয়া যায় এবং সামগ্রিকভাবে শিল্প-সংস্কৃতি চর্চা তরান্বিত করার অনুরোধ জানান তিনি।

এবারের রবীন্দ্রসংগীত উৎসব আরও প্রাণবন্ত হয়েছে শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার উপস্থিতিতে। তিনি সম্প্রতি ভারত থেকে সম্মানজনক ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কার পেয়েছেন। এজন্য তাকে ফুল ও ক্রেস্ট দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা। বক্তব্যে এই গুণী কণ্ঠশিল্পী বলেন, ‘এই আয়োজনে উপস্থিত হতে পেরে আমি আনন্দিত। বিশেষ করে কলিম ভাইয়ের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কলিম ভাই বাংলাদেশের রবীন্দ্রসংগীত চর্চার অন্যতম পথিকৃৎ। সুতরাং তার সম্পর্কে জানা এবং জানানো আমাদের সকলের কর্তব্য। আর সাদির কথা বলতে গেলে; ও নেই, এটা মানা খুব কঠিন। যে জিনিসগুলো আমরা ভাবতে পারি না, সত্য বলে গ্রহণ করতে পারি না, সেগুলোকে সময়ের হাতে ছেড়ে দিতে হয়। সময়ই সেটাকে সহনীয় করে তোলে। সাদির মৃত্যুটা অনেকটা সেরকম। আমি সময়ের হাতে ছেড়ে দিয়েছি। আর রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার শুরুর দিকে আমি নিজেও জড়িত ছিলাম। তবে পরে নানাবিধ ব্যস্ততায় আর যুক্ত থাকা সম্ভব হয়নি। তবু সেই ছোট্ট চারাটি আজ একটি বৃক্ষে পরিণত হয়েছে, এটা দেখতে পারাও আনন্দের। আমি সংস্থাটির সার্বিক সাফল্য কামনা করি।’

এরপর বন্যাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। সেই সঙ্গে তার উদ্দেশে একটি মানপত্র পাঠ করেন পীযুষ বড়ুয়া।

এ পর্যায়ে মাইক্রোফোনের সামনে আসেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি বলেছেন, ‘আমাকে বলা হয়েছিল, শ্রোতা হিসেবে আসতে; কিন্তু এখন বক্তব্য দিতে হচ্ছে! আমি নাবিল ভাইকে বলেছিলাম, আমার সাহিত্য জ্ঞান খুব কম, সংগীতে আরও কম। সুতরাং এখানে কিছু বলাটা সমীচীন হবে না। তবু এমন আয়োজনের জন্য রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থাকে ধন্যবাদ জানাই। আর বিদ্যালয় পর্যায়ে সংগীত চর্চার বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে বিবেচনা করবো আমরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেসব অবকাঠামো তৈরি হয়েছে, সেগুলো যেন সংস্কৃতি চর্চায়ও ব্যবহৃত হয়, সংগীত-নৃত্য-চিত্রকর্মের চর্চা যেন হয়, সেই চেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। যেহেতু প্রান্তিক পর্যায়ে কিছু গোঁড়ামিতে ডুবে আছে মানুষ। ফলে সামাজিক কিছু প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সেটাকে সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করতে হবে।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি রামেন্দু মজুমদারের ভাষ্য ছিল এরকম, ‘একটা কথা আমি প্রায়ই বলি, রবীন্দ্রনাথকে আমরা কেবল উত্তরাধিকার সূত্রে পাইনি। আমরা তাকে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমাদের জীবনের অংশ করে নিয়েছি। আপনারা জানেন যে, ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথের জন্মবার্ষিকী পালনে যে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছিল, তারই প্রতিবাদে আস্তে আস্তে রবীন্দ্রনাথ আমাদের নিজের হয়ে ওঠেন। তাই সবসময় আমাদের আনন্দ, বেদনায়, শান্তিতে, সংকটে রবীন্দ্রনাথ আমাদের বড় আশ্রয়। আর কলিম ভাই সম্পর্কে একটি কথা আপনাদের জানাই, এই উপমহাদেশে প্রথম যে গ্রুপ থিয়েটার ‘বহুরূপী’, সেটার অন্যতম সংগঠক ছিলেন কলিম শরাফী। আজকের দিনে সাদি মহম্মদকেও স্মরণ করতে হচ্ছে। তার অকালে চলে যাওয়া আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনার।’

সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ বলেছেন, ‘আমাদের সকল ক্ষেত্রে, চিন্তায়-মননে রবীন্দ্রনাথের বিচরণ আছে। আমরা ছোটবেলা থেকে বড় হয়েছি তার গান শুনে, গল্প পড়ে। আমি রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার এই আয়োজনের সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।’

সবশেষে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার সভাপতি আমিনা আহমেদ। তিনি কলিম শরাফীর ভাগনের লেখা একটি কবিতা পাঠ করে শিল্পীকে স্মরণ করেন। এরপর সাদি মহম্মদকে নিয়ে বলেন, ‘তিনি খুব সাধারণ জীবন-যাপন করতেন। জাগতিক কোনও আকাঙ্ক্ষা ছিল না তার। তিনি গানের জগতের একজন সাধক ছিলেন। এমন একটা সময় ছিল, তার গান ছাড়া আমাদের বাড়ির কোনও অনুষ্ঠান হতো না। তার ব্যারিটোন কণ্ঠের গান যুগ যুগ ধরে আমাদের হৃদয় স্পর্শ করবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আন্দোলিত করবে।’

এরপর শুরু হয় গানের পর্ব। প্রথম দিনে সংগীত পরিবেশন করেছেন রফিকুল আলম, চঞ্চল খান, জাফর আহমেদ, অনন্ত বাঁধন, লিটন চন্দ্র বৈদ্য, মিলন দেব, সত্যম দেবনাথ, কুশল রায়, গায়ত্রী আচার্য্য, রবিউল হাসান, সুদীপ্ত চক্রবর্তী, শর্মিলা চক্রবর্তী, বিলু সিদ্দিকী, ফারহানা খান পুরবী, মৌমিতা মমী, নেহরীন হুদা, রায়ান খালিদ স্যান্দ্রা, রিদওয়ানা আফরিন সুমি, স্মৃতি কণা পাল, তাসনিতা মাহবুব নরিন, উৎপলা দাস পম্পা, শবরী মজুমদার, ড. বর্ণালী চক্রবর্তী, সুস্মিত শাফি ইসলাম (খুলনা), ফারহানা রহমানসহ অনেকে।

উৎসবের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার (১০ মে) একই স্থানে প্রথম অধিবেশন চলবে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। এতে দলীয় পরিবেশনায় অংশ নেবে সুরের ধারা, রবিরাগ, সঙ্গীত ভবন, বাফা, বৈতালিক, সুরতীর্থ ও বিশ্ববীণার শিল্পীরা। বিকাল ৫টায় শুরু হবে এই দিনের দ্বিতীয় অধিবেশন। তাতে থাকছে একক ও দলীয় পরিবেশনা।

তৃতীয় দিন (১১ মে) বিকাল ৫টায় শুরু হবে সমাপনী আয়োজন। এতে থাকবে সংস্থার শিল্পীদের একক ও দলীয় পরিবেশনা। পুরো উৎসবটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত।


👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com

Uncomm

Share
Published by
Uncomm

Recent Posts

That is the POCO X7 Professional Iron Man Version

POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…

6 months ago

New 50 Sequence Graphics Playing cards

- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…

6 months ago

Good Garments Definition, Working, Expertise & Functions

Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…

6 months ago

SparkFun Spooktacular – Information – SparkFun Electronics

Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…

6 months ago

PWMpot approximates a Dpot

Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…

6 months ago

Keysight Expands Novus Portfolio with Compact Automotive Software program Outlined Automobile Check Answer

Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…

6 months ago