Categories: Bangladesh News

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য নিয়োগে চ্যালেঞ্জ কোথায়


ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য (ভিসি), উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ শীর্ষ পর্যায়ে শিক্ষক-কর্মকর্তারা পদত্যাগ করছেন। তারা সবাই বিগত সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের কাউকে কাউকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে, আবার কেউ কেউ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে ‘অভিভাবকহীন’ হয়ে পড়েছে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়। পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। শিক্ষার্থীরা সেশনজটের শঙ্কায়। এমনকি এই পরিস্থিতিতে বেকারত্ব সমস্যাও প্রকট হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। নানা কারণেই শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকগণ এখন মানসিক দুশ্চিন্তায় পড়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠন এবং ভিসিদের পদত্যাগের পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন আলোচনার বিষয় হলো কে হচ্ছেন উপাচার্য? ইতিমধ্যেই শিক্ষা উপদেষ্টা জানিয়েছেন, অ্যাকাডেমিক যোগ্যতা এবং প্রশাসনিক দক্ষতা বিবেচনা করে যোগ্য ব্যক্তিদের উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমরা ধারণা করতেই পারি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হলো অন্ততপক্ষে দলীয় লেজুড়বৃত্তির বাইরে রয়েছেন, এমন শিক্ষকদের মধ্য থেকে উপাচার্য নিয়োগ প্রদান করা। কিন্তু এই কাজটি অনেক কঠিন এবং দুরূহ। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেশিরভাগই দলীয় আদর্শ কিংবা দলীয় লেজুড়বৃত্তির বাইরে নয়। কোনও না কোনোভাবে শিক্ষকরা দলের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রয়েছেন। তবে নিতান্তই দলের বাইরে কেউ নেই এমনটিও নয়। কিন্তু তাদের প্রশাসনিক দক্ষতার বিষয়টিও ভাবতে হবে।

প্রশাসনিক দক্ষতা নেই- এমন কাউকে ভিসি নিয়োগ দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেব সবকিছু সামাল দিতে পারবেন কিনা- সেটি একটি বড় প্রশ্ন।

ইতিমধ্যেই আমরা লক্ষ করেছি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরপরই কোনও কোনও শিক্ষক দলীয় সদস্যপদ ত্যাগ করেছেন। যদিও তারা বিগত সময়ে প্রত্যক্ষভাবে দলের সদস্য ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়ে বর্তমান সময়ে দলের সাথে থাকবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সূত্রে জানতে পারলাম যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কেউ কেউ উপাচার্য হওয়ার জন্য তাদের সিভি ছাত্র সমন্বয়কদের কাছে জমা দিয়েছেন। অবশ্য এ খবরের সত্যতা পরীক্ষা করার সুযোগ হয়নি আমার।

এমন পরিস্থিতিতে উপাচার্য নিয়োগের দৌড়ে কে কার পেছনে- এমন নেতিবাচক প্রতিযোগিতাও লক্ষ করা যাচ্ছে। এমনকি বিগত সময়ের মতো এখনও পারস্পরিক কাদা ছিটানোর সংস্কৃতিও শেষ হয়নি। এই সময়েও আমরা লক্ষ করেছি সম্ভাব্য প্রার্থীরা একজন আরেকজনের ভুল ধরায় ব্যস্ত। এমনকি কেউ কেউ সম্ভাব্য প্রার্থীদের নেতিবাচক বিষয়গুলোও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ্যে তুলে ধরছেন। ধারণা করা হচ্ছে, যেসব শিক্ষক ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছিল, মূলত তাদের মধ্য থেকে ভিসি নিয়োগ হতে পারে।

১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে উপাচার্য নিয়োগ হওয়ার কথা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিগত সময়ে কোনও সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতি অনুসরণ করা হয়নি। দু’-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া মূলত সরকারই উপাচার্য নিয়োগ দিয়েছে। ফলে উপাচার্য হওয়ার জন্য একজন শিক্ষকের প্রধান যোগ্যতা হয়ে উঠেছিল রাজনৈতিক পরিচয়, ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা কিংবা আনুগত্য। বিশেষ করে, এক্ষেত্রে উল্লেখ না করলেই নয় যে,  গত প্রায় দুই যুগের বেশি সময় হলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন হয়নি। দেশের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা থাকলেও তা অনেকটা প্রচলন হয়ে গেছে। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে উপাচার্য হতে আগ্রহী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটি। কিন্তু দলীয় সরকারগুলো মূলত পছন্দমতো শিক্ষককে উপাচার্য পদে নিয়োগ দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা অধ্যাদেশ-১৯৭৩ এর ১২(১) ধারা অনুযায়ী, স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য নিয়োগের বিধান হলো, সিনেটররা নির্বাচনের মাধ্যমে তিনজন ব্যক্তির প্যানেল করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন, সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি একজনকে নিয়োগ দেবেন। একজন উপাচার্য নিয়োগে প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত সম্মতি দিলে আদেশ জারি হয় মন্ত্রণালয় থেকে। প্রচলিত নিয়মে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার এখতিয়ার আচার্য তথা রাষ্ট্রপতির। তবে রাষ্ট্রপতি এককভাবে এই নিয়োগ দিতে পারেন না। বিভিন্ন মাধ্যমে আসা নাম শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রস্তাব আকারে নথি তৈরি করে। এটা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে যায়। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য বা অন্যান্য পদে কে নিয়োগ পাচ্ছেন, তা অনেকাংশে নির্ভর করে প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায়ের ওপর।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ উচ্চশিক্ষায় নানামুখী সংস্কারের প্রত্যাশা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকায় ‘কেমন বিশ্ববিদ্যালয় চাই? বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার ভাবনা’ শীর্ষক এক আলোচনার আয়োজন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক নামে শিক্ষকদের একটি মোর্চা। ওই আলোচনায় উঠে আসে সব স্তরে দলীয় আধিপত্য বিস্তারের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। সরকারকে উদার হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজের মতো চলতে দিতে হবে। প্রশাসনের পদে থাকা শিক্ষকদের সমিতির নির্বাচনে যাওয়া যাবে না। সিদ্ধান্ত গ্রহণের সব ক্ষমতা উপাচার্যের হাতে না রাখার প্রস্তাবও করা হয়।

সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি অভিন্ন পদ্ধতি ঠিক করে গণতান্ত্রিক উপায়ে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এখানে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ থাকবে না। বিভিন্ন অসমর্থিত সূত্র থেকে জানা গেছে, বর্তমান সময়েও উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে একধরনের টানাপড়েন চলছে। সরকারের কারও কারও চাওয়া, প্রথাগতভাবে দলীয় শিক্ষকদের উপাচার্য না করে তুলনামূলক অধিক যোগ্য ও সুনাম আছে এমন ব্যক্তিদের উপাচার্য করা দরকার। কিন্তু পরিস্থিতি এবং বাস্তবতায় বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিএনপিপন্থি কিংবা জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের চাওয়া, তাদের মধ্য থেকে যেন উপাচার্য নিয়োগ করা হয়।

দেশের মঙ্গল চাইলে উপাচার্য নিয়োগে রাজনীতি একেবারে বন্ধ করা উচিত। সত্যি বলতে কী, শিক্ষা ক্ষেত্রে জাতীয় রাজনীতি একদম থাকা উচিত না। রাজনীতি থাকবে কিন্তু সেটা ক্ষমতাকেন্দ্রিক না। সেটা হবে ছাত্রদের রাজনীতি, সেটা হবে শিক্ষকদের রাজনীতি। সেটা হবে শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়নের রাজনীতি। আমরা লক্ষ করেছি বিগত সময়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন ব্যক্তিরা নিয়োগ পেতেন না। কিন্তু এখন আমাদের সকলের প্রত্যাশা সব বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন একটি অভিন্ন পদ্ধতি ঠিক করে গণতান্ত্রিক উপায়ে উপাচার্য নিয়োগ হয়।

লেখক: অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

[email protected]

 


👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Uncomm

Share
Published by
Uncomm

Recent Posts

That is the POCO X7 Professional Iron Man Version

POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…

6 months ago

New 50 Sequence Graphics Playing cards

- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…

6 months ago

Good Garments Definition, Working, Expertise & Functions

Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…

6 months ago

SparkFun Spooktacular – Information – SparkFun Electronics

Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…

6 months ago

PWMpot approximates a Dpot

Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…

6 months ago

Keysight Expands Novus Portfolio with Compact Automotive Software program Outlined Automobile Check Answer

Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…

6 months ago