বিব্রতকর ব্যাটিংয়ে হতাশায় মোড়ানো হারে শেষ বাংলাদেশের প্রস্তুতি

‘সেকেন্ড হোমে’ সাকিব আল হাসান বল হাতে রিশাভ পান্তের কাছে তুলোধুনো হলেন। ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার পর মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফেরা পান্ত বাংলাদেশকে ব্যাটিং শেখালেন। আইপিএল ব্যর্থতা ভুলে হার্দিক পান্ডিয়াও নিজেকে ফিরে পেলেন। কিন্তু ব্যাটাররা দেড় ঘণ্টার পাঠ কাজে লাগাতে পারলেন কোথায়! প্রস্তুতি ম্যাচে প্রস্তুত হওয়ার কোনও নামগন্ধ পাওয়া গেলো না। টপ অর্ডারের ব্যর্থতার গ্লানি পুরো ব্যাটিং লাইনআপকে ভোগালো।

সৌম্য সরকার, লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যর্থতায় ভারতের বিপক্ষে ব্যাটিং দুর্দশার পুরানো সেই গল্পই লিখতে হলো বাংলাদেশকে। ভারতের দেওয়া ১৮৩ রানের লক্ষ্যে বাংলাদেশের ইনিংস থেমেছে ১২২ রানে। ফলে ৬০ রানের জয়ে প্রস্তুতিটা বেশ ভালোভাবেই সেরে নেওয়ার সুযোগ পেলো ভারত। অন্যদিকে আরেকটি ব্যর্থতা হয়তো বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমের পরিবেশ আরও অস্থির করে তুলবে! 

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার প্রস্তুতি ম্যাচ দিয়ে নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের অভিষেক হলো আজ। বিশ্বকাপ উপলক্ষেই দৃষ্টিনন্দন এই স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করেছে সহ-আয়োজক যুক্তরাষ্ট্র। নতুন এই মাঠে  বাংলাদেশ একটি ম্যাচ খেললেও ভারত খেলবে তিনটি ম্যাচ। দুই দলের জন্য কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া ছিল জরুরি। এ মাঠে বসেছে অস্ট্রেলিয়া থেকে নিয়ে আসা ড্রপ ইন উইকেট। ভারত তাদের প্রস্তুতি ঠিকঠাকভাবে নিতে পারলেও বাংলাদেশে পারেনি। বাংলাদেশের বোলারদের ভূমিকা কিছুটা প্রশংসা কুড়ালেও ব্যাটাররা করেছেন হতাশ। 

দীর্ঘদিন ধরেই ফর্মহীনতায় ভুগছেন লিটন। পাইপলাইনে যথেষ্ট বিকল্প না থাকায় বিশ্বকাপ দলের অংশ হতে সমস্যায় পড়তে হয়নি তাকে। সৌম্যর ক্ষেত্রে বিষয়টি একইরকম। ভালো বিকল্প না থাকায় ম্যাচের পর ম্যাচ সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন তারা। বিগত ১০ ম্যাচে সৌম্যর সর্বোচ্চ রান ৪৩। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে এই রান করেছিলেন তিনি। জিম্বাবুয়ে সিরিজের এক ম্যাচে খেলেছিলেন ৪১ রানের ইনিংস। বাকি ৮ ম্যাচের সবকটিই ছন্নছাড়া সৌম্যকে পাওয়া গেছে। আজও হয়েছেন ব্যর্থ। প্রথম ওভারেই রানের খাতা না খুলে অর্শদীপ সিংয়ের বলে আউট হন তিনি। লম্বা সময় ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা একজন টপ অর্ডারের এমন ব্যাটিং দেখাও বিস্ময়কর। 

এদিকে লিটনের পারফরম্যান্সও সৌম্যর মতোই। শেষ দশ ম্যাচে লিটন একবারই কেবল মাঝারি মানের একটি ইনিংস খেলতে পেরেছেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নেপিয়ারে ৪১ রানের পর তার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৬ রানের ইনিংস। বাজে ফর্মের কারণে লঙ্কানদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ থেকে বাদও পড়েছিলেন। এরপর জিম্বাবুয়ে সিরিজে ব্যর্থ হওয়ার পর তাকে নিয়ে তীব্র সমালেচনা হয়। কিন্তু লিটনের বিকল্পও না থাকায় তার ওপরই আস্থা রাখতে হয়েছে নির্বাচকদের। কিন্তু আস্থার প্রতিদান দিতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন তিনি। আজ তো ভারতীয় পেসার আর্শদ্বীপের বল বুঝতে না পেরে বোল্ড হলেন তিনি। 

অধিনায়ক শান্তর দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা। কিন্তু সেই দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন তিনি। পাওয়ার প্লের চতুর্থ ওভারে মোহাম্মদ সিরাজের বলে সাজঘরে ফেরেন। প্রথম ৬ ওভারে বাংলাদেশ তুলতে পারে ২৭ রান, ৩ উইকেট হারিয়ে। কুড়ি ওভারের ধুম-ধারাক্কা ক্রিকেট যেখানে চার ছক্কার ফুলঝুড়ি ফুটবে, সেখানে প্রথম পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ মারতে পেরেছে মাত্র দুটি চার! 

হতভম্ব ব্যাটিংয়ের পর স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচ থেকে শুরুতেই ছিটকে গেছে বাংলাদেশ। ১০ রানে তিন উইকেট হারানোর পর তাওহীদ হৃদয় ও তানজিদ হাসান তামিম মিলে ইনিংস মেরামতের কাজটা করছিলেন। কিন্তু বেশিক্ষণ ঠিকতে পারেননি তারা। তানজিদ ১৭ ও হৃদয় ১৩ রানে আউট হন। পুরো ইনিংসে কেবল মাহমুদউল্লাহ ও সাকিবকে দেখা গেছে সাবলীল ব্যাটিং করতে। মাহমুদউল্লাহ ২৮ বলে ৪০ রানের ইনিংস খেলে রিটায়ার্ড হার্ট হয়েছেন। সাকিব খেলেছেন ৩৪ বলে ২৮ রানের ইনিংস। এই দুইজনের ইনিংসের উপর ভর করে বাংলাদেশ ১২০ বলের ক্রিকেটে ১২২ রান করে ৯ উইকেট হারিয়ে।

আগামী ৮ জুন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন শুরু হবে। কিন্তু জিম্বাবুয়ে সিরিজের পর যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে পারফরম্যান্স। এরপর আজ ভারতের বিপক্ষে যেভাবে পারফরম্যান্স করলো শান্তর দল, তাতে করে ড্রেসিংরুমে নিশ্চিত করেই অস্বস্তি সঙ্গী হবে লাল-সবুজ জার্সিধারীদের। আগামী কয়েকদিনে নিজেদের ভুলগুলো নিয়ে সচেতনভাবে কাজ করতে না পারলে আরও একটি ব্যর্থতার বিশ্বকাপ মিশন শেষ করতে হবে বাংলাদেশকে।

এদিকে নতুন উইকেটে টস জিতে ব্যাটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে বড় চ্যালেঞ্জ নিয়েছিল ভারত। প্রস্তুতি ম্যাচে কঠিন মুহূর্তে বেছে নিয়ে মূল মঞ্চের চ্যালেঞ্জ নিয়েছে ভারত। একেবারে খারাপ করেনি। সবাই রান না পেলেও পান্তের ৩২ বলে ৫৩ এবং হার্দিকের ২৩ বলে ৪০ রানের অপরাজিত ইনিংসের ওপর ভর করে ভারত ১৮২ রান করেছে ভারত। 

ভারতের ব্যাটারদের বিপক্ষে বাংলাদেশের বোলিং একেবারে খারাপ হয়নি। ঠিকমতো ক্যাচগুলো ধরতে পারলে আরও কম রানে আটকে রাখা যেত প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়নদের। ৩টি ক্যাচ ও একটি রান আউট মিস করেছে শান্তরা। ম্যাচের বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্দান্ত ফিল্ডিং ছিল মাহমদুউল্লাহর নেওয়া শিবম দুবের ক্যাচটা। 

বোলিংয়ে বাংলাদেশের অধিনায়ক ১৪ ওভারের মধ্যেই ৮ বোলারকে ব্যবহার করেছেন। পাওয়ার-প্লেতে শেখ মেহেদী হাসান উইকেট না পেলেও ৩ ওভারে রক্ষণাত্মক বোলিংয়ে রান দেন মাত্র ১৪। নিজের শেষ ওভারে নেন দুবের উইকেট, সব মিলিয়ে ৪ ওভারে রান দিয়েছেন ২২। এছাড়া মাহমুদউল্লাহ, শরিফুল, ও তানভীর একটি করে উইকেট নিয়েছেন। সাকিব ছিলেন বেশ খরুচে বোলার। ৪ ওভার ৪৭ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য।