ছোট থেকেই ইচ্ছে ছিল সরকারি চাকরি করার। এইচএসসি পরীক্ষার পর পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়ে যায়। ছেদ ঘটে লেখাপড়ায়। পর পর আবার তিনটা বাচ্চা হওয়ায় পড়াশোনা থেকে দূরে সরে যান। অনেক দিনের এ গ্যাপ থাকা সত্ত্বেও আবারও পড়ালেখা শুরু করেন, বিএসএস পাশ করেন। শুরু করেন একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শিক্ষকতা। তার বাচ্চাদের জন্য দেওয়া টিফিন অন্য বাচ্চারা ভাগ করে খেয়ে খুব মজা পেত। সেখান থেকে অন্য বাচ্চাদের মায়েরা তার কাছ থেকে ফ্রোজেন খাবার নিতে শুরু করেন।
এভাবেই শুরু হয় শিউলী খানের উদ্যোক্তা হিসেবে পথচলা। শ্বশুরবাড়ি মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরে হলেও স্বামীর ব্যবসার সুবাদে রাজধানীর মোহম্মদপুর এলাকায় থাকা শুরু করেন। সেখান থেকেই তিনি ঘরে তৈরি খাবার নিয়ে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে দুই ছেলে আইইউবিতে এবং মেয়ে প্লেপেন স্কুলে লেখাপড়া করছে। সেজন্য তিনি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় থাকা শুরু করেছেন এবং সেখান থেকে নিজের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বাসায় তৈরি খাবার ছাড়াও সব ধরনের নদীর মাছ, দেশি মুরগি, গরু ও খাসির মাংস (রেডি টু কুক), বিক্রমপুরের দই, মিষ্টি, পাতক্ষীর, ঘি’সহ অথেনটিক সব গ্রামীণ খাবার রয়েছে তার পণ্য তালিকায়।
২০২০ সালে শিউলীর খানের বড়ছেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘অথেনটিক বিক্রমপুর’ নামে একটি ফেসবুক পেজ খুলে দেন। বর্তমানে তিনি খুব সফলতার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসা। এখান থেকে গড়ে প্রতি মাসে তিনি ৩৫-৪০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেন। তবে সবার মতো তারও উদ্যোক্তা হিসেবে শুরুটা খুব একটা সহজ ছিল না।
শিউলী খান বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার পর বাবা বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজার পদ থেকে অবসরে যান। তখন ব্যাংকের কর্মকর্তারা চাকরির পরীক্ষা দিতে বলেছিলেন। কিন্তু এটুকু যোগ্যতা দিয়ে ভালো পদে চাকরি হবে না। এজন্য বাবাও চাননি আমি চাকরির পরীক্ষা দেই। এর কিছুদিন পর বিয়ে হয়ে যায়। আমার পর পর তিনটা বাচ্চা হওয়াতে পড়াশোনা থেকে দূরে সরে আসি। অনেক দিন গ্যাপ দিয়ে আবারও বিএসএস পাশ করি। এরই মধ্যে একটি বাসার কাছের স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করি। মাস্টার্স করার জন্য ইকোনোমিক্সে দুবার ফর্ম ফিলাপ করেও পরীক্ষা দিতে পারিনি। কারণ তিনটা বাচ্চা ইংরেজি মাধ্যমে পড়তো। ওদের পড়াশোনা আমাকেই দেখতে হতো।
তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি ২০০৯ সালে কিছু রান্নার কোর্স করেন। সঙ্গে বুটিকস্ এর কাজও শুরু করেন। তিনি বলেন, স্কুলে বাচ্চাদের টিফিন রেডি করে দিতাম। সেটা আবার অন্য বাচ্চারা শেয়ার করে খেয়ে তাদের মায়েদের গিয়ে বলতো, ওদের টিফিন খুব মজা। তখন বাচ্চাদের মায়েরা আমার কাছ থেকে খাবার নিতে শুরু করেন। ওই সময় থেকে শিক্ষকতার পাশাপাশি টিফিন সরবরাহ করতাম। এটা অনেকটা ছোট পরিসরে অফলাইনেই চলছিল।
২০২০ করোনার সময় স্কুলের চাকরিটা চলে গেলে ঘরেই বসে ছিলেন শিউলী। করোনায় তার রান্নার হাত যেন আরও ভালো হয়ে গিয়েছিল। রোজ নতুন নতুন রেসিপিতে পরিবারকে মাতিয়ে রাখতেন। একদিন তার বড় ছেলে ফেসবুকে ‘অথেনটিক বিক্রমপুর’ নামে একটা খাবার পেইজ খুলে দেয়।
তিনি বলেন, করোনা সবার মতো আমিও ঘরবন্দি হয়ে যায়। মামাতো বোনের কথা মতো উই’তে জয়েন করি। উই’র আপুদের কাজ দেখে অনুপ্রাণিত হলাম। ছেলে ফেসবুকে পেজ খুলে দেওয়ার পর অনলাইনে ব্যবসা শুরু হয়। এর আগে শুধু স্কুলের বাচ্চাদের মায়েরাই আমার ক্রেতা ছিল। পেজ খোলার পর আস্তে আস্তে সাড়া পেতে থাকি।
শুরু হয় তার নতুন এক পথচলা। কিন্তু কিছুদিন যেতেই আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় তিনি বেশ হতাশ হয়ে পড়েন। কারণ তিনি বুঝতে পারছিলেন না কিভাবে প্রচার করতে হয়, ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়? এরপর আবার শুরু হয়, আত্মীয়-স্বজনসহ পরিচিতজনদের নিরুৎসাহিতমূলক নানা প্রকার কটুবাক্য। সবমিলিয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এসে তিনি এ কাজ আর করবেন না বলে ঠিক করেই ফেলেন। পরে আবার ই-ক্যাবের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান রাজিব আহমেদেরে উৎসাহমূলক পোস্ট পড়ে নতুন করে শুরু করেন। তারপর তার ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়। তিনমাসের মধ্যে দেশ-বিদেশ থেকে অনেক পরিচিতজনরা মাছের অর্ডার করেন। ২০২২ সালের মার্চে তিনি প্রথম লাখপতি হন।
নারী হওয়ায় তাকে পদে পদে নানা সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে শিউলী বলেন, আমি মাছ নিয়েও কাজ করি। তাই আমাকে মাছের অর্ডার নিয়ে ঢাকা থেকে বিক্রমপুর যেতে হয়। বাবার বাড়ি থেকে নদী কাছে হওয়ায় সেখানে গিয়ে থাকতাম। ভোরে নদীর পাড়ে জেলেদের কাছ থেকে রীতিমতো যুদ্ধ করে মাছ আনতে হতো। এরপর সেগুলো দ্রুত বাড়িতে এনে রেডি টু কুক করে ফ্রিজে রাখতাম। পরদিন ঢাকায় নিয়ে এসে ফ্রেশ মাছ পৌঁছে দিতাম ক্রেতাদের দোরগোড়ায়।
তিনি বলেন, বছরখানেক সবকিছু ভালোই চলছিল। হঠাৎ বিদ্রোহ করে বসলো আমার আত্নীয়-স্বজনরা। তারা মাসে ২-৩ বার গেলে আমার জন্য খাবার তৈরি করতে পারবে না। তাদের ওখানে থাকলে ফ্যান, লাইটের বিল উঠে, মাছ রাখলে তাদের ফ্রিজ নষ্ট হয়ে যাবে ইত্যাদি নানা কথা বলে। অগত্যা বাবার বাসা থেকে বেরিয়ে অন্য একজনের বাড়ি ভাড়া নিলাম, ফ্রিজ কিনলাম। খুব নিকট আত্নীয়রা এমন করলেও ওইসময় আমার বন্ধুরা পাশে দাঁড়িয়েছিল, তারা অনেক সাহায্য করেছে।
২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আমি অনেক ভালো খাবারের অর্ডার পেতে শুরু করেন। নিয়মিত লেগে থাকার কারণে এখন আর তেমন ক্রেতা ঘাটতি নেই। এখন গড়ে মাসে ২০দিনই তার অনেকগুলো অর্ডার থাকে। রান্নার কাজ তিনি একাই করেন। কিন্তু গ্রামের নদীর মাছ, দেশি মুরগী, গরু, ছাগল, বিভিন্ন অথেনটিক খাবার রেডি টু কুক করে দেওয়ার জন্য তিনজন লোক রেখেছেন তিনি।
তিনি বলেন, বিদেশেও আমার অনেক ক্রেতা রয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ইন্ডিয়াতে আমার খাবার গেছে। আস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে আমার খাবার ও মাছের কয়েকজন নিয়মিত ক্রেতা রয়েছেন। তাছাড়া চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রংপুর, বগুড়া, নীলফামারীসহ বাংলাদেশের সব জায়গায় মাছসহ আমার তৈরি প্যারা সন্দেশ, হালুয়া, আচার, পিঠা যায়।
তিনি মনে করেন, একজন উদ্যোক্তার জন্য প্রশিক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অনেকাংশে সহায়তা করছে। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হলে একজন উদ্যোক্তার প্রসার এবং পরিচিতি অনেক বাড়ে। এতে অনেক উৎসাহও পাওয়া যায়। উদ্যোক্তা হতে গেলে অবশ্যই প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে। প্রশিক্ষণ ছাড়া সফলতা পাওয়া একরকম অসম্ভব। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা উদ্যোক্তারা আয়, ব্যয়, দাম নির্ধারণসহ সবকিছু ভালোভাবে বুঝতে পারি। কেউ আমাদের সহজে ঠকাতে পারবে না। প্রশিক্ষণের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক গ্রুপ আছে, সেগুলোর সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে। তার মধ্যে ডিএসবি অন্যতম।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানাতে গিয়ে এ সফল নারী উদ্যোক্তা বলেন, মাছ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে কিছু পরিবার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছি। তারা মাছ কেটে পরিষ্কার করার বিনিময়ে পারিশ্রমিক পান। তারা আশায় থাকেন, কখন আমি যাব এবং তাদের কিছু আয় হবে। এই দরিদ্র মানুষদের নিয়ে আরও বড় পরিসরে আমার গ্রামীণ সব অথেনটিক খাবার সবার কাছে পৌঁছে দিব, এ আশা সবসময়।
‘তবে ভঙ্গুর পথটা পাড়ি দেওয়া কারও জন্যই খুব সহজ না, সবার গল্প আলাদা হলেও জয়ের হাসিটা এক’- বললেন শিউলী খান।
POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…
- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…
Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…
Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…
Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…
Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…