Categories: Bangladesh News

বন্ধ হচ্ছে ঢাবির লাইব্রেরিতে ‘বিসিএস পড়া’!


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার অ্যাকাডেমিক পড়াশোনায় ব্যবহারের উদ্দেশ্য থাকলেও বিসিএস বা বিভিন্ন চাকরির প্রস্তুতি নেয়া শিক্ষার্থীরাও সেখানে ভিড় করেন। বিশেষ করে কোনো একটি বিসিএসের পূর্বে এ ভিড় বেশি দেখা যায়। অনেকে ভোর থেকেই গ্রন্থাগারের সামনে হাজির হন। অনেক সময় আবার শিক্ষার্থীরা লাইনে না দাঁড়ালেও ব্যাগ-বই দিয়ে ঠিক রাখেন এ সিরিয়াল। গ্রন্থাগারের ভেতরে জায়গা না পেলে অনেকে আবার বাইরে কোনোরকমে চেয়ার-টেবিল বসিয়ে শুরু করেন প্রস্তুতি। তবে বিসিএস শেষ হলে এ জটলা কিছুটা কমে আসে।

দীর্ঘদিন যাবৎ বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের এমন চিত্র থাকলেও সেটি পরিবর্তনে এবার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রশাসন বলছে, যেকোনোভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে বিসিএস বা চাকরির প্রস্তুতির পড়াশোনা বন্ধ করা হবে। চাকরির প্রস্তুতি নিতে আসা শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ করে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার উপযোগী করা হবে গ্রন্থাগারকে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে নেওয়া হয়েছে একাধিক পদক্ষেপও। আগামী জুন থেকে যা কার্যকর হবে।

বিসিএস ক্যাডার হওয়ার দৌড়ে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে থাকেন, তার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি নেয়ার ক্ষেত্রেও থাকে প্রতিযোগিতা। অধিকাংশ শিক্ষার্থীই চান বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে একটি আসন নিজের দখলে রাখতে। মূলত এখান থেকে লাইব্রেরিত বাড়তে থাকে ভিড়। অনেকে আসন না পেয়ে ফিরেও যান। এছাড়া হলগুলোর রিডিং রুমেও থাকে আসন দখলের প্রতিযোগিতা।

গ্রন্থাগার নিয়ে প্রশাসনের নতুন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মিত শিক্ষার্থীরা। তাদের অনেকে বিসিএস বা বিভিন্ন চাকরি প্রস্তুতি নেয়া শিক্ষার্থীদের ভিড়ে প্রথম-দ্বিতীয় বর্ষ শেষ করেও গ্রন্থাগারে বসার সুযোগ পাননি। প্রশাসনের নতুন এ উদ্যোগ গ্রন্থাগারে বসা নিয়ে তাদের জন্য আশীর্বাদ বলে মনে করছেন তারা। তবে ভিন্নমতও রয়েছে। সদ্য গ্র্যাজুয়েট-পোস্ট গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীরা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের ভাষ্য, প্রথম-দ্বিতীয় বর্ষে ভিড়ে জায়গা পেতেন না। এখন ছাত্রত্ব না থাকার অজুহাতে জায়গা না পেলে এটা তাদের জন্য হবে দুর্ভাগ্যজনক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্য সেন হলের ১৬-১৭ সেশনের এক শিক্ষার্থী বলেন, ১ম ও ২য় বর্ষে থাকাকালীন সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে পড়ার সুযোগ হয়নি। ক্লাস টাইম শেষে লাইব্রেরিতে গেলে বসার জায়গা পেতাম না। এজন্য মাস্টার্স শেষ করে এখন নিয়মিত লাইব্রেরিতে যাতায়াত করি। কিন্তু এই মুহূর্তে হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য দুঃখজনক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়ে আমরা যদি লাইব্রেরিতে পড়ার সুযোগ না পাই, তাহলে কারা পাবে? বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের এমন উদ্যোগের নিন্দা জানাই।

জিয়াউর রহমান হলের শিক্ষার্থী ওয়াকার রহমান বলেন, এটা খুবই খারাপ এবং জঘন্য সিদ্ধান্ত হবে। কারণ আমরা প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষ দীর্ঘদিন গণরুমে থেকেছি। সেই সময় সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে পড়ার সুযোগ একেবারেই হয়নি। গণরুমে থাকার কারণে পড়ার মন মানসিকতাও খুবই ছিল না। ক্লাস শেষে লাইব্রেরিতে গিয়ে বসারও জায়গা পেতাম না।

ওয়াকার রহমান বলেন, আমরা ভালো কিছু করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেমন সুনাম হয়, একই ক্ষেত্রে আমরা যদি বেকার থাকি তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বিনষ্ট হয়। এই অবস্থায় যেহেতু আমাদের প্রথম-দ্বিতীয় বর্ষে একেবারে খারাপ পরিবেশে থেকেছি, সেহেতু মাস্টার্সের পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু দায়িত্ব থেকেই যায় আমাদের ওপর। আর এজন্য আমাদের মাস্টার্সের পর অন্তত ৩ বছর লেখাপড়ার সুযোগ দেওয়া উচিত। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক এই নতুন সিদ্ধান্তে নিন্দা জানাই। শিক্ষার্থীদের সাথে এটি বিশ্বাসঘাতকতার শামিল।

গ্রন্থাগারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নতুন উদ্যোগ নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি। আগামী বছর থেকে হলে প্রবেশের সময় শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত কার্ড পাঞ্চ করে প্রবেশ করতে হবে। ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ ও বহিরাগতরা হলে প্রবেশ করতে পারবে না। লাইব্রেরিতেও একই প্রক্রিয়ায় চালু হচ্ছে। গ্রন্থাগারে প্রবেশে আগে থেকে তিনটি পাঞ্চ কার্ড মেশিন রয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আরও দুটি মেশিন যোগ করা হবে।

ঢাবি উপাচার্য বলেন, যারা কেবল বিসিএস পড়তে যায়, তারা আগামী মাস থেকে লাইব্রেরিতেও প্রবেশ করতে পারবে না। এখন লাইব্রেরিতে সবাই বিসিএস পড়তে যায়। দুএকজন হয়তো অ্যাকাডেমিক বই পড়ার জন্য যায়। এর অর্থ, যে বিষয়ে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করে, সে বিষয়ে তারা আনন্দ পায় না। আনন্দ পেলে পাঠ্যসূচি নির্ভর পড়াশোনা তাদের ধ্যানজ্ঞান হওয়ার কথা।

বিসিএস বা বড় যেকোনো চাকরির পরীক্ষার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে শিক্ষার্থীদের প্রচণ্ড ভিড় নিয়ে গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়। গ্রন্থাগারে চাকরির প্রস্তুতি নিতে আসা শিক্ষার্থীরা বলছেন, লাইব্রেরিতে অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার চেয়ে চাকরির জন্য পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের আনাগোনাই বেশি। তাদের প্রায় সবার টার্গেট থাকে বিসিএস কিংবা ব্যাংকের চাকরি। আবার পরীক্ষা শেষ হওয়ায় পর লাইব্রেরিতেও শিক্ষার্থীদের চাপ কিছুটা কমে আসে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের একজন কর্মকর্তা বলেন, গ্রন্থাগারে এখন যারা পড়তে আসেন, তাদের বেশির ভাগই বিসিএস প্রার্থী। পড়তে আসা গবেষকের সংখ্যা খুবই কম। এই গ্রন্থাগারের ধারণক্ষমতা ১ হাজার ৫০০ জনের। তবে একসঙ্গে দুই হাজার জন পড়তে পারেন।

ঢাবি ছাত্র আকাশ-উর-রহমান সদ্য প্রকাশিত ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিনি প্রিলির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে বসে প্রস্তুতি নিয়েছেন। এখন রিটেনের জন্যে গ্রন্থাগারে নিয়মিত আসছেন। তিনি বলেন, বিসিএসের প্রিলি পরীক্ষা দেওয়া আগে এক প্রকার যুদ্ধ করে সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে প্রবেশ করতে হতো। এমনও দিন গেছে, লাইব্রেরির সামনে ফজরের সময় ব্যাগ রেখে গেছি। পরবর্তীতে ৮টায় ভেতরে প্রবেশ করেছি। তবে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর আর সেরকম ভিড় দেখা যায় না। আমি প্রিলি পাস করেছি। তাই এখন সময় নষ্ট না করে রিটেনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।

আকাশের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে যারা পড়তে আসেন, তাদের সবার হাতে বিসিএসসহ বিভিন্ন সরকারি চাকরির প্রস্তুতির বই দেখা যায়। কেউবা মুঠোফোনে নোট করে নিয়ে আসেন, কেউ আবার খাতায় লিখে আনেন। পাঁচ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে চাকরির প্রস্তুতি নিতে আসেন মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, আমার মতো অনেকে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষ থেকে সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে। বেসরকারি চাকরির কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই এখন সবার একটাই লক্ষ্য, যেকোনো মূল্যে সরকারি চাকরি পেতে হবে।

তবে এ অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেয়া উদ্যোগ বাস্তবায়নে গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষও কাজ শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির ভারপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক অধ্যাপক ড. মো.নাসিরউদ্দিন মুন্সী বলেন, যেসব শিক্ষার্থীর মাস্টার্স শেষ, তারা আর লাইব্রেরিতে ব্যবহারের অধিকার রাখেন না। তাদের কারণে নিয়মিত শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরিতে পড়ার সুযোগ পায় না। উপাচার্য স্যারের সাথে এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেয়া পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করবো।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসএস




👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com

Uncomm

Share
Published by
Uncomm

Recent Posts

Straightforward and enjoyable block-based coding with the Alvik robotic is right here, now Chromebook suitable!

At Arduino, we consider coding ought to be accessible to everybody – together with the…

15 mins ago

Shift in digital techniques design reshaping EDA instruments integration

A brand new techniques design toolset goals to create a unified person expertise for board…

1 hour ago

Connectivity on the prime of the world: Preserving the previous, partnering for the longer term

Scott McGregor shares his experiences in forging a brand new partnership with Iḷisaġvik Faculty in…

2 hours ago

Coinbase Acquires Utopia Labs, Goals to Velocity Up On-Chain Funds

Coinbase is actively in search of to reinforce its suite of providers. This week, the…

3 hours ago

Indosat, GoTo Launch Sahabat-AI Open Supply LLM in Indonesia

Indonesian operator Indosat Ooredoo Hutchison (Indosat or IOH) and GoTo have introduced the primary part…

3 hours ago

Rocket Lab indicators first Neutron launch buyer

WASHINGTON — Rocket Lab says it has signed the primary buyer for its Neutron launch…

3 hours ago