Categories: Bangladesh News

বন্দী ৩২ দিনের রোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন জিম্মি নাবিকরা


‘ইউ আর ফ্রি নাউ’ শেষটা এমন ভাবে হলেও এর শুরুটা ছিল প্রচণ্ড ভয় জাগানিয়া ঘটনা দিয়ে। প্রায় ৩২ দিনের সোমালিয়ার জলদস্যুদের জিম্মি দশা থেকে মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। জাহাজটি এখন সোমালিয়ার জলসীমা পার হয়ে দুবাইয়ের পথে। এ অবস্থায় পরিবারের সহায়তায় মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে গণমাধ্যমের সাথে কথা হয় জাহাজে থাকা চট্টগ্রামের পাঁচ নাবিকের সঙ্গে। সেখানে তারা জানিয়েছেন মুক্তির দিন পর্যন্ত প্রায় ৩২ দিনের নির্মম কাহিনি।

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের উত্তর বন্দর গ্রামের নাবিক মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন। তিনি বলছিলেন তার বন্দী সময়কার কথা। বন্দি জীবনে সবসময় বন্দুকের সামনে ছিলাম। বন্দুকের নলের বেয়নেট দিয়ে প্রায় গুঁতা মেরে নির্মম নির্যাতন চালাত জলদস্যুরা। ছাগল এনে তেহারি খাওয়ানো, নামাজ আদায়, হাসিখুশি ছবি তোলা, সব তাদের ইচ্ছায় হয়েছে। এসব ছিল সাজানো।

বাস্তবতা হলো, শেষের দিকে তারা জবাই করার জন্য দুটি ছাগল এনেছিল। এর মধ্যে দেড়টা খেয়ে নিয়েছে তারা। ২৩ নাবিককে দেওয়া হয়েছে সামান্য মাংস। জলদস্যুদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণে সবসময় উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলাম। তখন মনে হয়েছিল মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখছি। মুক্তির পর মনে হচ্ছে দ্বিতীয় জীবন ফিরে পেয়েছি। বন্দি জীবনের কষ্টের কথা বর্ণনা করার মতো নয়।

নাবিক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, মুক্তির প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ সরকার, জাহাজ মালিক কর্তৃপক্ষের সর্বোচ্চ সহায়তা ছিল। আলহামদুলিল্লাহ! কী যে খুশি লাগছে, বলে বোঝানো যাবে না। আমরা এখনো সোমালিয়ার সীমানায় আছি। সোমালিয়ার জলসীমা পার হতে আরও দুই-তিন দিন লাগবে। দুবাই পৌঁছার পর কর্তৃপক্ষ যেভাবে বলবে সেভাবে ফিরবেন বলে জানান তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাড়ি থেকে আসার সময় আমার এক আত্মীয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। এখন বাড়ি গিয়ে পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের সাথে আলোচনা করে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সস্পন্ন করার ইচ্ছা আছে।

একই উপজেলার দক্ষিণ বন্দর গ্রামের নাবিক মোহাম্মদ শামসুদ্দীন বলেন, আলহামদুলিল্লাহ! মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে জীবন ফিরে পেয়েছি। জলদস্যুরা আমাদের মোবাইল নিয়েছিল। সেগুলো ফেরত দেয়নি। বর্তমানে আমরা তিন নাবিক মিলে একটা মোবাইল ফোন ব্যবহার করছি। মুক্তি পাওয়ার পর কত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরব তা নিয়ে ব্যাকুল আছি।

তিনি জানান, জলদস্যুরা তাদের সাথে খুব বাজে আচরণ করেছে। অস্ত্র বুকে, পিঠে তাক করে রাখত। গাদাগাদি করে এক রুমে থাকতে হতো। বেয়নেট দিয়ে খোঁচা দিয়ে ভয় দেখাত। তাদের খাবার খেয়ে নিত। মনে হতো যমের সামনে আছি। যেকোনো মুহূর্তে মরে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু সকলের দোয়ায় বেঁচে আছি। জাহাজের মালিকপক্ষের সহযোগিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। সবার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

নাবিকেরা জানান, গত ১২ মার্চ কয়লা নিয়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে দুবাইয়ের দিকে যাচ্ছিল জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। ওই সময় জাহাজটির মাস্টার আব্দুর রশিদ একটি ফিশিং বোট দেখতে পান, যেটি প্রায় ১২ নটিক্যাল মাইল দূরত্বে অবস্থান করছিল।

ফিশিং বোট ভেবে মাস্টার পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল গন্তব্যে। কিন্তু না, হঠাৎ ওই ফিশিং বোটটি এমভি আবদুল্লাহকে অনুসরণ করতে করতে দ্রুত তিন নটিক্যাল মাইলের মধ্যে চলে আসে। তখন ওই ফিশিং বোট থেকে একটি স্পিডবোট বের হয়, যেখানে চারজন জলদস্যু ছিল, যারা এমভি আবদুল্লাহতে ওঠার চেষ্টা করে।

এমভি আবদুল্লাহতে কোনো অস্ত্র বা গানম্যান না থাকায় তাদের প্রতিহত করা যায়নি। তবে জলদস্যুরা যাতে জাহাজে উঠতে না পারে, সে জন্য জাহাজের মাস্টার স্পিড বাড়িয়ে দেন। ডানে-বাঁয়ে গিয়ে জলদস্যুর স্পিডবোটটি ডুবানোর চেষ্টা করেন। ঢেউও তোলা হয়, যাতে স্পিডবোট উল্টে যায়। কিন্তু এরপরও স্পিডবোট থেকে এক জলদস্যু জাহাজে উঠে যায়। ওই জলদস্যু উঠেই এমভি আবদুল্লাহর জাহাজের ব্রিজের (যেখান থেকে জাহাজ পরিচালনা করা হয়) দিকে বন্দুক তাক করে গুলি করে।

ওই সময় জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের মধ্যে ২২ নাবিক ইঞ্জিনরুমে থাকা সিকিউরড রুমে চলে যান। যেহেতু জাহাজটি চলন্ত অবস্থায় ছিল, সে জন্য ডিউটি অফিসার শুধু ব্রিজে ছিলেন। তিনিও যদি সিকিউরড রুমে চলে আসতেন, তাহলে জাহাজটি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যেত। ওই সময় স্পিডবোটে থাকা বাকি দুজনও উঠে যায়। মোট তিনজন জলদস্যু প্রথমে জাহাজের ব্রিজে চলে যায়। ব্রিজে থাকা ডিউটি অফিসারকে ওই তিনজন চারদিক দিয়ে ঘিরে ধরে। বন্দুক তাক করে থাকে এবং জলদস্যুরা চিৎকার-চেঁচামেচি করে। তখন ডিউটি অফিসার তাদের বলছিলেন, উই আর মুসলিম, প্লিজ ডোন্ট কিল আস। তারা যেহেতু ইংরেজি জানত না, সেজন্য পরে ডিউটি অফিসার আকারে-ইঙ্গিতে বোঝান যে তারা মুসলিম।

জলদস্যুরা ডিউটি অফিসারকে আকারে-ইঙ্গিতে বোঝায়, সিকিউরড রুমে থাকা সবাই যেন ব্রিজে চলে আসে। তখন ডিউটি অফিসার মাইকে ঘোষণা দিয়ে সবাইকে ব্রিজে চলে আসতে বলেন। তখন জাহাজটির মাস্টার আব্দুর রশিদ ব্রিজে চলে আসেন। এরপর সবাই ব্রিজে আসেন। সবাই তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। সিকিউর রুম থেকে আসার আগে মাস্টার সবাইকে জানান, তারা বেশিক্ষণ সিকিউরড রুমে থাকতে পারবেন না। কারণ আশপাশে কোনো নৌবাহিনী নেই। এ ছাড়া বেশিক্ষণ সিকিউরড রুমে থাকলে তারা যেকোনো সময় দরজা ভেঙে সিকিউরড রুমে প্রবেশ করতে পারত। কারণ তাদের হাতে ভারী অস্ত্র ছিল।

ব্রিজে আসার পর ২৩ নাবিকই হাঁটু গেড়ে বসে পড়েন। জলদস্যুর ফিশিং বোট থেকে একটি স্পিডবোটে আরও পাঁচজন জাহাজে আসে। এসেই তারা কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। তখন সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। জিম্মির প্রথম দিন তারা ১২ জন ছিল। জলদস্যুরা ২৩ নাবিককে চারদিক দিয়ে ঘিরে ধরে বন্দুক তাক করে থাকে। জলদস্যুরা প্রথমে ভেবেছিল জাহাজটির সবাই ভারতীয়। তখন সবাই জলদস্যুদের বোঝায়, তারা মুসলিম এবং বাংলাদেশি।

নাবিকরা বলেন, ওই সময় আমরা মনে করেছিলাম সবাইকে মেরে ফেলবে। কারণ আমরা এ রকম পরিস্থিতির মধ্যে কোনো দিন পড়িনি। কেউ কেউ আল্লাহকে স্মরণ করে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতও হয়ে যান। তারা অবশ্যই, আমাদের ফিজিক্যাল আঘাত করেনি। কিন্তু মানসিকভাবে অনেক টর্চার করে।

এমভি আবদুল্লাহর আরেকজন নাবিক বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, ওই ফিশিং বোট তারা এক মাস আগে জিম্মি করে। যেটিকে তারা মাস্টার বোট হিসেবে পরিচালনা করে। এর আগে এই ফিশিং বোট দিয়ে আরও তিনটি জাহাজ আটকের চেষ্টা করে। কিন্তু তারা সফল হয়নি।

জলদস্যুর ওই ফিশিং বোটটি এমভি আবদুল্লাহর কাছে চলে আসে। তারপর ফিশিং বোটটি জাহাজের সঙ্গে বাঁধা হয়। এ সময় শোনা যায় আহমেদ নামে একজন টেলিফোনে দস্যুদের নির্দেশনা দিচ্ছেন। ফোন আসলে বলা হতো ‘হ্যালো, আই অ্যাম আহমেদ। আই অ্যাম দ্যা লিডার। প্লিজ ফলো দিস লাইন। অ্যান্ড ব্রিং দ্যা শিপ দিস ওয়ে।’ সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে এমভি আবদুল্লাহ জিম্মি হওয়ার পর জাহাজটির স্যাটেলাইট টেলিফোন থেকে জলদস্যু নেতা আহমেদকে কল দেওয়া হয়। তার সঙ্গে কথা বলেন জাহাজটির মাস্টার আব্দুর রশিদ, যিনি জাহাজের মাস্টারকে রুট ম্যাপও পাঠান। মাস্টার সেই রুট ম্যাপ অনুসরণ করে সোমালিয়ায় জলদস্যুদের ডেরায় নিয়ে যান।

জাহাজে ২২ জন জলদস্যু ছিলেন। তাদের সবার হাতে ভারী অস্ত্র ছিল। এমনকি বিমান বিধ্বংসী অস্ত্রও ছিল বলে এই নাবিকরা জানান। জাহাজে ওই ২২ জন জলদস্যু আবার জাহাজে থাকা তিনজনের কথা মেনে চলতেন। তারা ছিলেন একজন জলদস্যুদের ইনচার্জ মো. আসিফ, আরেকজন ছিলেন কমান্ডার মো. আফসির এবং আরেকজন ছিলেন অনুবাদক আহমেদ উর করিম।

নাবিকেরা জানান, জিম্মি করার পর আহমেদ জাহাজটিকে সোমালিয়ার ডেরায় নিয়ে যেতে বলেন। যেখান থেকে জাহাজ জিম্মি হয়েছে, ওই ডেরার দূরত্ব ছিল ৫৭৬ নটিক্যাল মাইল। ওইখানে যেতে এমভি আবদুল্লাহর সময় লেগেছে তিন দিন।

সোমালিয়ার ওই নেতা আহমেদের সঙ্গে জাহাজে থাকা জলদস্যুদের ইনচার্জ মো. আসিফ, কমান্ডার মো. আফসির এবং অনুবাদক আহমেদ উর করিমের সঙ্গে নিয়মিত কথা হতো। জাহাজের স্যাটেলাইট ফোন থেকে তারা কথা বলতেন।

নাবিকেরা জানান, জলদস্যুর কমান্ডার মো. আফসিরের বয়স ছিল ৫৬ বছর। উচ্চতা প্রায় ৬ ফুট। গায়ের রং কালো। চুল কোঁকড়ানো, দৈহিক গঠন ছিল খুবই চিকন। চোখগুলো অনেকটা ভেতরে ঢোকানো ছিল। কানগুলো খাড়া টাইপের। গলার অংশটা লম্বা প্রকৃতির ছিল।

অনুবাদক আহমেদ উর রকিমও আফসিরের মতো লম্বা। মুখে কিছুটা দাড়ি ছিল। চুল ছিল ছোট ছোট। দৈহিক গঠন আফসিরের চেয়ে মোটা ছিল। নাকটা লম্বা। ইনচার্জ আসিফের বয়সও একই। তবে সে খুব স্ট্রং ছিল। আরও একজন ছিল, তার নাম ছিল মহিউদ্দিন। তিনি নাবিকদের দিক নির্দেশনা দিতেন। তিনি কিছুটা মোটা ছিলেন। মুখ চ্যাপ্টা ছিল। তার চেহারার আকৃতি ছিল গোলাকার।

গত শনিবার দিবাগত রাতে জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার পর সোমালিয়া উপকূল ছাড়ে এমভি আবদুল্লাহ। জাহাজটি এডেন উপসাগর হয়ে ওমান উপকূলের সামনে দিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে পৌঁছাবে। ওই বন্দরে পৌঁছাতে জাহাজটির আরও এক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।

মুক্তির আগের দুই দিন দলে দলে আসতে থাকে জলদস্যুরা। সবার হাতে ছিল ভারী অস্ত্র। জাহাজে এক গ্রুপ যেত, আরেক গ্রুপ আসত। সর্বশেষ মুক্তির আগের দুই দিন থেকে জাহাজে ৬২ জন জলদস্যু ছিল। শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায় একটি বিশেষ উড়োজাহাজে করে লাল রঙের স্যুটকেসের মাধ্যমে মুক্তিপণের অর্থ সমুদ্রে ফেলা হয়।

এর আগে বিশেষ উড়োজাহাজটি চারবার প্রদক্ষিণ করে। চতুর্থবার থেকে তিন দফায় টাকা ফেলা হয়। এমভি আব্দুল্লাহর জাহাজের পাশে দুটি স্পিডবোট রাখা ছিল। ওই স্পিডবোট একটি গিয়ে পরপর টাকাগুলো সংগ্রহ করে। বিমানটি মোট ছয়বার প্রদক্ষিণ করে। চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠবারে তিন দফা টাকা ফেলে। টাকাগুলো জাল কি না চেক করে। নিজেদের মধ্যে সব টাকা ভাগ করে নেয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/টিআর




👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com

Uncomm

Share
Published by
Uncomm

Recent Posts

That is the POCO X7 Professional Iron Man Version

POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…

6 months ago

New 50 Sequence Graphics Playing cards

- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…

6 months ago

Good Garments Definition, Working, Expertise & Functions

Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…

6 months ago

SparkFun Spooktacular – Information – SparkFun Electronics

Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…

6 months ago

PWMpot approximates a Dpot

Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…

6 months ago

Keysight Expands Novus Portfolio with Compact Automotive Software program Outlined Automobile Check Answer

Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…

6 months ago