Categories: Bangladesh News

ফুরালো প্রাণের মেলা | ক্যাম্পাস


‘যারে উড়ে যারে পাখি; ফুরালো প্রাণের মেলা/শেষ হয়ে এলো বেলা; আর কেন মিছে তোরে বেঁধে রাখি’ লতা মঙ্গেশকরের কালজয়ী গানটি গেয়েছিলেন নোভেরা আপু। আমাদের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে। পাঁচ বছর পেরিয়ে সে গানের সুর আজ মনে খুব করে বাজছে। সত্যিই সে প্রাণের মেলা ফুরিয়ে এসেছে, বিদায়ের সুর বাজছে চারিদিকে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে আমাদের যাত্রা শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। শীতের শেষে এক সুন্দর সকালে চাপা কৌতুহল আর উত্তেজনা নিয়ে ভয়ে ভয়ে পা ফেলি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে। সমাজবিজ্ঞান অনুষদের চারতলায় আমাদের ক্লাসরুমে পা দিতেই দেখি একঝাঁক নতুন মুখ। হাসি হাসি মুখ নিয়ে বন্ধুত্বের আগাম বার্তা নিয়ে যেন অপেক্ষায় বসে আছে। রজনীগন্ধার সৌরভে আমাদের পরম উষ্ণতায় বরণ করে নিলেন বিভাগের শিক্ষক ও অগ্রজরা। সবার কথা শুনে মনে হচ্ছিল এক বর্ণিল সময় যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

আমাদের প্রথম ক্লাস শুরু হলো পরদিনই। ফেরদৌস ম্যামের ইন্টারপ্রিটেশন ক্লাস দিয়ে। ক্লাস খুঁজে বের করে ঢুকতে ঢুকতে প্রথম দিনেই দেরি। ম্যাম শেখালেন আইন বিভাগে দেরি করা চলে না, এখানে সব চলে নিয়ম মেনে। এরপর প্রীতি ম্যামের ক্লাস। প্রথম দিনে ম্যামের কাছে একটা চমৎকার ব্যাপার শিখলাম। লার্নার তিন ধরণের- ডিপ লার্নার, সারফেস লার্নার আর স্ট্র্যাটেজিক লার্নার। মনে হচ্ছিলো- পড়াশুনা কম করে যদি স্ট্র্যাটেজিক লার্নার হওয়া যায়, সেটাই বরং ভালো।
 
প্রথম বর্ষে আমাদের নিয়মিত কাজ ছিল একসঙ্গে ক্যাম্পাসের এমাথা থেকে ওমাথা ঘুরে বেড়ানো, নতুন নতুন জায়গা খুঁজে ফেরা আর সবগুলো জায়গার নাম জানা। ক্লাস শেষে আমরা দলবেঁধে চলে যেতাম বটতলার ‘তাজমহলে’ দুপুরের খাবার খেতে। খাবারের দোকানে বসে আড্ডা আর খুনসুটি চলতো অবিরাম। বন্ধুদের জন্মদিন ছিল আমাদের কাছে এক বিশেষ উপলক্ষ্য। সবার কাছ থেকে চাঁদা তুলে কেক কিনে আনা হতো। কোন কোন দিন ক্লাস ক্যান্সেল হলেই আমরা পরিকল্পনা করে ঘুরতে পড়তাম দলবেঁধে। ঝটিকা সফরে কখনো গিয়েছি সাভারের গোলাপগ্রাম, বংশী নদী, গেরুয়ার গ্রামীণ এলাকায়। আর ক্যাম্পাসের ভিতরে শান্তি নিকেতন, বাটারফ্লাই ও বোটানিক্যাল গার্ডেন, সুইজারল্যান্ড আর মনপুরায় দলবেঁধে ঘুরতে যাওয়ার স্মৃতি যেন আজও নতুন।

প্রথম বর্ষের শেষের দিকে ক্যাম্পাসে তখন তুমুল আন্দোলন চলছে। দুপুরে সাঈদ স্যারের জুরিসপ্রুডেন্স ক্লাসের ফাঁকে হঠাৎ ‘অনির্দিষ্টকালীন’ বন্ধের ঘোষণা এলো। আমরা তখন মনে মনে ভীষণ খুশি। এইতো বিশ্ববিদ্যালয় জীবন! দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাসের এক মাস না যেতেই বিশ্বজুড়ে তখন মহামারীর প্রকোপ। ক্যাম্পাস, বন্ধু আর প্রিয়জনদের রেখে ঘরবন্দি সময় কাটলো এক বছরের বেশি। এরই মধ্যে অনলাইনে ক্লাস, পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয় বর্ষের পাট চুকালো। ক্যাম্পাসে ফিরলাম আরও অনেক পরে। আমাদের সবচেয়ে সুন্দর কেটেছে তৃতীয় বর্ষের এ সময়টাতে। মহামারির সময়ের সব হারিয়ে যাওয়া সব আনন্দের শোধ তুললাম ঘুরাঘুরি, দাওয়াত আর ভ্রমণে। বন্ধুদের সঙ্গে গল্প-আড্ডা-গান, গভীর রাত পর্যন্ত ক্যাম্পাসে হাঁটাহাঁটি আর জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সব স্মৃতি বোধ হয় তখনকার। শেষ বর্ষে এসে অবশ্য গবেষণা আর চূড়ান্ত বর্ষের চাপে সময় কিভাবে ফুরিয়ে গেল টেরই পাইনি।

একাডেমিক পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে চমৎকার কিছু উৎসব আর আয়োজন আমাদের সময়টাকে আরও রঙিন করে তুলেছে। মহামারী শেষে পরবর্তী ব্যাচের নবীন বরণের আয়োজন, বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের জমজমাট র‌্যালি, অন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন আর মুটিংয়ে দেশসেরা হওয়ার গৌরবও জুটেছে এই সময়ে। শেষ বর্ষে এসে জমকালো এক আয়োজনে বিদায় জানালাম আমাদের পূর্বসূরীদের। বুঝতে পারছিলাম, আমাদের সময়ও ধীরে ধীরে ফুরিয়ে আসছে।

স্নাতকের শেষে বাৎসরিক শিক্ষা সফরের ঘোষণা এলো। আত্মার এ বন্ধনকে স্মৃতির পাতায় আরও দীর্ঘস্থায়ী করে রাখতে আমরা যাত্রা করলাম সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে। প্রবাল দ্বীপের সে তিনদিন যেন আমাদের সবাইকে এক আত্মার বন্ধনে বেঁধে ফেলেছিল। দিনভর সমুদ্রের নীরে জলকেলি, সন্ধ্যায় একসঙ্গে সূর্যাস্ত দেখা আর নারিকেল জিঞ্জিরায় গভীর রাতে একসঙ্গে গান গাওয়ার সে স্মৃতি মনের গভীরে প্রোথিত হয়ে থাকবে আমরণ।

মাঝে মাঝে অবাক হয়ে ভাবতাম, বিভাগের ৬০ জনের মধ্যে এতো চমৎকার মিল কিভাবে হতে পারে! বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমদিন থেকে হাসি-আড্ডা-খুনসুটিতে মনে হয়েছে সবাই বুঝি এক প্রাণ। সব কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, চাইলেই সুখ-দুঃখের ভাগীদার হওয়া যায়, কারো অর্জনকে নিজের বলে মনে করা যায়- এমন অকৃত্রিম সম্পর্ক আর কোথায় পাওয়া যাবে? স্কুল-কলেজের গতানুগতিক বন্ধুত্বের সংজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবনে যেন নতুন করে বন্ধুত্বের মূল্য খুঁজে পেলাম।

‘রাত্রি যবে হবে অন্ধকার, বাতায়নে বসিয়ো তোমার/সব ছেড়ে যাব প্রিয়ে, সমুখের পথ দিয়ে ফিরে দেখা হবে না তো আর’- রবিঠাকুরের কবিতার মতো সব ছেড়ে যাওয়ার সময় এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিসমাপ্তি, নিতে হবে চূড়ান্ত বিদায়। কর্মময় জীবন যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। জীবন তার নিজস্ব গতিপথে আমাদের কোথায় নিয়ে যায় কে জানে? কিন্তু বিধাতার যে অবারিত দানে আমাদের সমৃদ্ধ করলো, এ সুমধুর সময় স্মৃতির পাতায় অমলিন হয়ে থাকবে।

আবার বহু বছর পরে হয়তো কোনো বর্ষণমুখর বিকেলে যখন স্মৃতিকাতরতায় আচ্ছন্ন হয়ে উঠবে হৃদয়, তখন মনের কোণে ভেসে উঠবে এ সুখস্মৃতি। ইশ! আবার যদি ফিরে পেতাম সে সোনালি দিনগুলো।

লেখক: শিক্ষার্থী, স্নাতকোত্তর, আইন ও বিচার বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়




👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Uncomm

Share
Published by
Uncomm

Recent Posts

That is the POCO X7 Professional Iron Man Version

POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…

5 months ago

New 50 Sequence Graphics Playing cards

- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…

5 months ago

Good Garments Definition, Working, Expertise & Functions

Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…

5 months ago

SparkFun Spooktacular – Information – SparkFun Electronics

Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…

5 months ago

PWMpot approximates a Dpot

Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…

5 months ago

Keysight Expands Novus Portfolio with Compact Automotive Software program Outlined Automobile Check Answer

Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…

5 months ago