দ্য ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে পড়ে গৃহকর্মী প্রীতি উড়াংয়ের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনার প্রায় দুই মাস পরে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে বিবৃতি দিয়েছেন ১১৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক। তবে সেই তালিকায় নেই সচরাচর যারা বিভিন্ন ঘটনায় বিবৃতি দেন তাদের অনেকের নাম। এমনকি যৌথভাবে বিবৃতি দূরে থাক— এই ঘটনায় সেই বিশিষ্টজনেরা কোনও কথাই বলেননি। এই বিশিষ্ট নাগরিকদের কারও কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন— যে ঘটনায় অনেকে কথা বলেন, সেই ঘটনায় বাকিদেরও কথা বলতে হবে কেন? এদিকে যারা নিয়মিত প্রতিবাদে সরব থাকেন তারা বলছেন, ক্ষমতার কাছে আপস করায় অনেকে প্রীতি উরাং ইস্যুতে চুপ আছেন। তারা ডেইলি স্টারের মতো পত্রিকাটিকে চটাতে চান না।
এদিকে প্রীতি উড়াংয়ের মর্মান্তিক মৃত্যুর ১০ দিন পর ডেইলি স্টার সম্পাদক প্রথম এ বিষয়ে তাদের অবস্থান পত্রিকার মাধ্যমে তুলে ধরেন এবং দুই মাস পরে এসে পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হককে বরখাস্তের নোটিশ জারি করা হয়। যদিও কী কারণে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হলো সে বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। একই দিনে দেশের ১১৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠায়। অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদার সই করা ওই বিবৃবিতে বলা হয়, ‘প্রীতি উড়াংয়ের মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ডের নামান্তর বলে আমরা মনে করি। কোনও প্রভাবশালী মহলের চাপে তদন্তকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হলে আমরা তা মেউড়াংয়ের মৃত্যুকে অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড বিবেচনা না করে এ মামলা অবিলম্বে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে।’
বিভিন্ন সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে নাগরিক সমাজকে সংগঠিত করে বিবৃতিদানের সঙ্গে যুক্ত মানবাধিকারকর্মী রেজাউর রহমান লেনিন বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের পর আদিবাসী শিশু প্রীতিউড়াংয়ের মৃত্যু বা হত্যাকাণ্ড একটি বড় ঘটনা, যে বাড়িতে প্রীতি শ্রম দিতেন সেই বাড়িটি একজন সিনিয়র সাংবাদিকের বাড়ি, এবং যে পত্রিকায় তিনি কাজ করতেন— সেই পত্রিকা অফিসের সম্পাদকের প্রীতির মৃত্যু বা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কথা বলতে সময় লেগেছে ১০ দিন এবং দেশে যারা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিত্ব করেন, তাদের দলগতভাবে প্রথম একটি বিবৃতি দিতে সময় লেগেছিল প্রায় ৩০ দিন। বড়পরিসরে নাগরিক সমাজের সব পক্ষকে একত্রিত হয়ে বিবৃতি দিতে সময় লেগেছে প্রায় ৫৫ দিন। এই হলো সমাজের প্রান্তিক আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নারী-শিশুদের অধিকারের চালচিত্র। এই অবস্থা আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রান্তিক সাংবাদিক, শিক্ষক, অধিকার কর্মীদের ক্ষেত্রেও। এর মাঝে একটি অংশকে দেখতে পাওয়া যায়, যারা সব বিষয়ে কথা বলেন বা বলতে চান, কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী প্রতিনিধিদের ক্ষেত্রে তারা সব সময় চুপ থাকার জন্য সুযোগ খোঁজেন। চুপ থাকার অধিকার চর্চা করেন, যা আমরা বর্তমানে দেখছি— বরগুনার সাংবাদিক শাজনুস শরীফের ক্ষেত্রে, অধিকারকর্মী সাধনা মহলের ক্ষেত্রেও।’
যারা নাগরিক হিসেবে এ ধরনের বিবৃতি দেওয়াকে কর্তব্য মনে করেন তাদের মধ্যে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, শিক্ষক আসিফ নজরুল, সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব নাসিরুদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউণ্ডেশনের নায়লা খান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান অন্যতম। এছাড়া বিষয়ভিত্তিক বিবৃতিতে যে শিক্ষকদের নাম দেখা যায়— তারাও প্রীতির বিষয়ে একক বা যৌথভাবে কথা বলেননি। ড. আনোয়ার হোসেন, মালেকা বেগম, আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সি আর আবরারের নাম উল্লেখযোগ্য।
কেন এই চেনাজানা মানুষগুলোকে প্রীতিকে নিয়ে কথা বলতে শোনা গেলো না প্রশ্নে নিয়মিত প্রতিবাদে শামিল থাকা খুশী কবীর বলেন, ‘‘প্রীতি ‘গরিব’, প্রীতিকে কেউ চেনে না, তার পক্ষে দাঁড়ানোর রিস্ক অনেকে নিতে চায় না। এমনকি আমরা বারবার দাবি জানানোর পরেও আশফাকের প্রতিষ্ঠান ডেইলি স্টার তাকে বহিষ্কারে দুই মাস সময় নিয়েছে। যে ব্যক্তি শিশুকে এরকম কাজে নিয়োগ দেয়— তার (আশফাক) হয়ে কথা বলার সুযোগ আছে কি? এমনকি ঘটেছিল সেই বাসায় যে, একাধিক শিশু লাফিয়ে পড়তে চায়। এসব নিয়ে অনেকেই কথা বলতে চান না।’’
কেন অনেক ব্যক্তিকে এই সময়ে চুপ থাকতে দেখা গেলো প্রশ্নে অধ্যাপক ও লেখক আসিফ নজরুল মঙ্গলবার (৩ এপিল) ১১৭ জনের বিবৃতির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘যথেষ্ট প্রতিবাদ হচ্ছে।’ তাহলে তিনি কেন কথা বলছেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যখন কোনও বিষয়ে অনেকে কথা বলেন, তখন আমি বলি না। যে বিষয়ে কেউ কথা বলতে এগোয় না আমি সেটাকে নিয়ে কথা বলি। ১১৭ জন বেশ শক্তভাবে প্রতিবাদ জানালো। অভিযুক্তরা তো কারাগারে আছে। এখন মানবাধিকার সংগঠনগুলোর উচিত বিচার ঠিক মতো হচ্ছে কিনা, সেটা মনিটর করা। আমরা কেউ হিউম্যান রিলেশনসের ঊর্ধ্বে উঠতে পারি না। ফলে চট করে পরিচিত কারোর ক্ষেত্রে এমন ঘটলে শুরুতেই অবস্থান নিয়ে ফেলা কঠিন হয়।’
উল্লেখ্য, গত ৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সাংবাদিক সৈয়দ আশফাকুল হকের নবম তলার ফ্ল্যাট থেকে পড়ে মারা যায় গৃহকর্মী প্রীতি উড়াং। এর কিছুক্ষণ পর পুলিশ সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারকে আটক করে। এ ঘটনায় প্রীতির বাবা দণ্ডবিধির ৩০৪ (ক) ধারার মামলা করেন। এর আগে ২০২৩ সালের ৬ অগাস্ট ওই বাসা থেকে পড়ে যায় ৭ বছর বয়সী শিশু গৃহশ্রমিক ফেরদৌসী। প্রাণে বাঁচলেও তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। ওই ঘটনায় মামলা হলেও সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়ে যান ২ লাখ টাকায় আপসরফার মাধ্যমে। প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবার দায়ের করা মামলায় সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী বর্তমানে কারাগারে আছেন।
আরও পড়ুন:
প্রীতি উড়ানের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও তার পরিবারের নিরাপত্তা দাবি দুই সংগঠনের
ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক আশফাককে চাকরি থেকে অব্যাহতি
প্রীতি উড়াংয়ের মৃত্যু: আমরা গরিব বলে কোনও বিচার পাবো না?
প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যুর ঘটনার বিচার চেয়ে ২৫ নাগরিকের বিবৃতি
গৃহপরিচারিকার মৃত্যু: স্ত্রীসহ ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদকের জামিন নামঞ্জুর
ডেইলি স্টার সম্পাদককে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগের’ খোলা চিঠি
আমরা গরিব বলে কি আপনাদের দয়া-মায়া নাই, প্রশ্ন প্রীতি উড়াংয়ের মায়ের
Collectively, Microsoft and NVIDIA are accelerating a few of the most groundbreaking improvements in AI.…
Robert Triggs / Android AuthorityTL;DR Android OEMs are experimenting with a bigger 200MP major sensor…
Final yr, 4 main U.S. companies dedicated a mixed £6.3 billion, or $8.16 billion, to…
Introduction: The Shift from Electronics to Photonics As conventional semiconductor-based computing approaches its bodily and…
This week, we announce our assist of Python and MicroPython, launch two new IoT RedBoards,…
That includes optimized elements akin to transformers, common-mode chokes, and surge safety, this validated design…