চট্টগ্রাম অঞ্চলের একটি গ্রামের নিম্নবিত্ত ঘরের মেয়ে মেয়ে সালমা (ছদ্মনাম), বয়স ষোলোর আশপাশে। গত বছরের শেষ দিকে একটি আন্তর্জাতিক নারী পাচার চক্রের খপ্পরে পড়ে সে। কিন্তু ঠিক সময়ে উদ্ধারের জন্য আর্তি জানানোয় কলকাতার উপকণ্ঠে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় বেঁচেও যায়। তার ঠিকানা হয় শহরতলির একটি সরকারি শেল্টার হোম বা আশ্রয়কেন্দ্র।
এই পর্যন্ত কাহিনিটা বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার হওয়া অন্য শত শত নারীর মতোই। তবু অনেকের চেয়ে তাকে ভাগ্যবান বলতে হবে, কারণ তাকে ভারতের মেট্রো শহরের কোনও যৌনপল্লীতে বা ম্যাসাজ পার্লারে গিয়ে ঠেকতে হয়নি, ঠিক সময়ে ‘অ্যালার্ম’ রেইজ করতে পারায় সালমা হয়তো আরও করুণ পরিণতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।
সালমার গল্পে ‘টুইস্ট’ অবশ্য এখানেই শেষ নয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, পাচার হওয়া নারীদের উদ্ধার করার পর যখন তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় তখন তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে পরিবারের সদস্যদের দিক থেকেই একটা তীব্র অনীহা কাজ করে। তারা মনে করেন, একবার পাচার হওয়া নারীকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিলে তাদের সামাজিক মানসম্মান ধুলোয় মিশে যাবে। তার চেয়ে বাড়ির মেয়ে বরং দূরেই থাকুক, পরিবারের বাকিরা অন্তত নিজেদের এলাকায় মাথা উঁচু রেখে বাঁচার চেষ্টা করুক! সালমার পরিবার কিন্তু ছিল এখানেও উজ্জ্বল ব্যতিক্রম।
কলকাতার শহরতলীতে সালমা উদ্ধার হওয়ার পর যখন সে বাংলাদেশে নিজের বাড়ির ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানায়। সে অনুযায়ী তাদের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়। তার পরিবারও সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দেয়। কীভাবে বাড়ির মেয়েকে কলকাতা থেকে ফিরিয়ে আনা যায়, গরিব ওই পরিবারটি সেই চেষ্টাও শুরু করে। প্রায় মাস চারেকের চেষ্টার পর কিছু টাকাপয়সা জোগাড় করে, মালিকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে ভারতের ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন সালমার ভাই। অবশেষে দিন সাতেক আগে কলকাতায় এসে পৌঁছেছেন। তার বয়সও মাত্র ২১ বছর, এর আগে কোনও দিন চট্টগ্রামের বাইরে পা-ই রাখেননি তিনি।
এই অল্পবয়সী ছেলেটিই বোনকে বিদেশ থেকে ফেরানোর কঠিন দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে কলকাতায় চলে এসেছেন। আর্থিক সম্বলও একেবারেই নেই– তার ওপর ভারত ও বাংলাদেশ, দুই দেশের সরকারের কারও কাছ থেকেই এখনও অনুমতি না-মেলায় বোনকে নিয়ে তার দেশে ফেরাও এখন ‘বিশ বাঁও জলে’।
আসলে এরকম ক্ষেত্রে যেটা হয়, উদ্ধার হওয়া নারী ভারতের যে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন তারা তার সব কাগজপত্র (পুলিশ রিপোর্ট, কোথায় উদ্ধার হয়েছেন, কী ঠিকানা দিয়েছেন) দিল্লিতে ভারতের স্বরাষ্ট্র আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে থাকে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তখন সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ মিশনে যোগাযোগ করে।
বাংলাদেশ দূতাবাসের দায়িত্ব হল ওই ঠিকানা যাচাই করে জানানো, ওই মেয়েটি সত্যিই ওই অঞ্চলের বাসিন্দা এবং বাংলাদেশের নাগরিক কি না। এভাবে দুই দেশের সরকারের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ার পরই তাকে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা এনজিও এই পুরো প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকে ও ভিক্টিমদের সাহায্য করে।
সালমার ক্ষেত্রে দুর্ভাগ্যবশত এখনও দুই দেশের সরকারের কাছ থেকে সেই ছাড়পত্র আসেনি। ফলে তার বড় ভাই কলকাতায় এসে পড়েছেন নিদারুণ এক অসহায় অবস্থায়। শহরের সরকারি দফতরে আর বাংলাদেশ উপদূতাবাসে দৌড়োদৌড়ি করেই দিন কাটছে তার! আর শেল্টার হোমে আশ্রিতাদের সঙ্গে বাবা-মা ছাড়া কারও দেখা করার অনুমতি নেই, তাও অনেক কাকুতি-মিনতি করে বোনের সঙ্গে মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য দেখা করতে পেরেছে সে।
সালমা যেভাবে লিলুয়ার হোমে
নবম শ্রেণির ছাত্রী সালমা বাড়ি থেকে পালিয়েছিল গত বছরের ৩ ডিসেম্বর। তার ভাইয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, কিছু লোক তাকে টোপ দিয়েছিল তার পছন্দের এক ‘হিরো’র সঙ্গে দেখা করিয়ে দেবে। তাদের কথায় বিশ্বাস করে সে ট্রেনে চেপে বসে, অথচ সে তার আগে ঢাকা তো দূরস্থান– চট্টগ্রাম শহরেও কোনও দিন যায়নি। ট্রেনে ওঠার পর কিছুক্ষণ পরেই সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
যখন তার জ্ঞান ফেরে সে দেখে সম্পূর্ণ অচেনা এক জায়গায় তাকে কয়েকজন বাসে করে নিয়ে যাচ্ছে। আশপাশের লোকের কথাবার্তা শুনে সে বুঝতে পারে এরা বাঙালি হলেও জায়গাটা বাংলাদেশ নয়! বিপদ বুঝে সে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করে ওঠে। বলে, ‘আমাকে এরা ধরে নিয়ে যাচ্ছে!’ সঙ্গে সঙ্গে বাসের অন্য যাত্রীরা হস্তক্ষেপ করেন। তাদের সাহায্যেই শেষ পর্যন্ত সালমাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। মোট পাঁচ পাচারকারী সালমাকে নিয়ে যাচ্ছিল, তাদের মধ্যে তিন জন পালিয়ে গেলেও বাকি দু’জনকে ধরে যাত্রীরা পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
এই ঘটনাটি ছিল গত বছরের ৬ ডিসেম্বরের। অর্থাৎ সালমার বাড়ি থেকে নিখোঁজ হওয়ার ঠিক তিন দিন পর। যে জায়গায় ঘটনাটি ঘটে, সেটি কলকাতার কাছেই বেলুড়ের। স্থানীয় হাওড়া জেলার পুলিশ বিষয়টি তদারকি করছে, পাচারের মামলাও দায়ের করা হয়েছে। সেইসঙ্গে সালমাকে রাখার ব্যবস্থা করা হয় ‘লিলুয়া’ নামক এক স্থানে সরকারি হোম বা আশ্রয়কেন্দ্রে। গত কয়েক মাস ধরে ওই হোমই সালমার ঠিকানা।
ওই কিশোরীর ভাই কলকাতায়
গ্রামীণ চট্টগ্রামে সালমার বাড়িতে কলকাতা থেকে ফোন আসে গত ৮ ডিসেম্বর। প্রথমে কান্নাকাটি, বিহ্বলতা সব সামলে তারপর থেকেই তার ভাই-বোনকে ফিরিয়ে আনার জন্য কলকাতা যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। অনেক ঝক্কিঝামেলা সামলে, আত্মীয়-বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা ধার করে সে অবশেষে কলকাতা এসে পৌঁছায় গত শনিবার (২০ এপ্রিল) রাতে।
কলকাতায় পৌঁছে সে প্রথমে যায় শিয়ালদহ স্টেশনের রেল পুলিশের থানায়, যে স্টেশন দিয়ে তার বোনকে পাচার করা হয়েছিল। সেখানে কর্তৃপক্ষ তাকে যোগাযোগ করিয়ে দেন ‘শক্তিবাহিনী’ নামে একটি এনজিও-র সঙ্গে, যারা পাচারের ভিক্টিম নারীদের পুনর্বাসন ও প্রত্যাবাসন নিয়ে কাজ করেন। শক্তিবাহিনীর কর্মীরাই তাকে নিয়ে যান লিলুয়ার সেই হোমে, যেখানে এখন সালমা রয়েছে।
হোমের সুপার অবশ্য প্রথমে সালমার সঙ্গে তার ভাইয়ের দেখা করিয়ে দিতে রাজি হননি, কারণ সরকারি নিয়ম অনুসারে বাবা-মা ছাড়া কেউ হোমের আশ্রিতাদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন না। পরে শক্তিবাহিনীর কর্মীদের হস্তক্ষেপে ও বাইয়ের কাকুতি-মিনতিতে তারা কয়েক মিনিটের জন্য অনুমতি দেন।
‘ওই চার-পাঁচ মিনিট ও কোনও কথাই বলতে পারেনি। শুধু অনর্গল কেঁদেই গেল’, কলকাতার টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকাকে জানিয়েছেন সালমার ভাই।
তাহলে এখন করণীয় কী?
এনজিও শক্তিবাহিনী-র আইনজীবী গার্গী সরকার জানিয়েছেন, সালমার কেসটি নিয়ে তারা কলকাতায় বাংলাদেশ উপদূতাবাসে যোগাযোগ করেছেন গত মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল)।
‘এই ধরনের পাচারের ঘটনাগুলোয় দুই দেশের সরকারি ছাড়পত্র পেতে অনেক সময় মাসের পর মাস লেগে যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে বিষয়টি যাতে সহানুভূতির সঙ্গে দেখা হয় এবং যত দ্রুত সম্ভব নিষ্পত্তি করা যায় আমরা সেই চেষ্টাই করছি’, বলছেন তিনি।
সালমার ভাই ইতিমধ্যেই ওই এনজিও-র বন্ধুদের সহায়তায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সচিবালয় ‘নবান্ন’ এবং কলকাতায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দফতরেও যোগাযোগ করেছেন।
উভয় বিভাগের কাছেই তার কাতর আবেদন, ‘আপনারা দয়া করে বিষয়টিতে দ্রুত হস্তক্ষেপ করে দিন, যাতে আমি আমার বোনকে নিয়ে দেশে ফিরতে পারি। আমি আর কিছু চাই না।’
শক্তিবাহিনী এনজিও-র মুখপাত্র কৃষ্ণা সরকারও বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাচার হওয়া নারী উদ্ধার হলেও তারা জানেনই না আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তাদের কী কী অধিকার প্রাপ্য। আইনি সহায়তাও তারা পান না অনেক সময়ই। সালমার ক্ষেত্রে যাতে এই প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করে তাকে ঘরে ফেরানো যায়, আমরা সে চেষ্টাই করছি। সব ছাড়পত্র যদি মেলেও, তারপরও আর একটা সমস্যা হলো সালমাকে নিয়ে তার ভাই যে দেশে ফিরবেন– সেই দুটো টিকিট কাটার পয়সাও তার হতে নেই!
‘তবে সেটা তো পরের ব্যাপার, দেখা যাবে কী ব্যবস্থা করা যায়– আগে আমরা ওর দেশে ফেরার জন্য সব নথিপত্র হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় আছি’, বলছিলেন ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার একজন কর্মী।
👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
As cities all through the world embrace digital transformation, good promoting has emerged as a…
China introduced a variety of measures on Tuesday concentrating on US companies together with Google,…
On the World Financial Discussion board in Davos final month, a panel of main AI…
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সিইসি বিভাগের ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. জাহিদুর রহমানকে নির্যাতন…
Peltz oscillator with injection locking Oscillator injection locking is an attention-grabbing topic; nevertheless, it appears…
India’s 3D printing business has witnessed important progress, pushed by developments in additive manufacturing applied…