Categories: Bangladesh News

পরিবেশ ধ্বংসের বিরূপ প্রভাব বলছেন বিশেষজ্ঞরা


জলবায়ু পরিবর্তনের ফলাফল স্বরূপ বৈশ্বিক আবহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরণ দেখছে বিশ্ব। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও বেড়ে চলেছে তাপমাত্রা। গত তিন বছরে এক ডিগ্রি করে তাপমাত্রা বেড়েছে রংপুর অঞ্চলে। বিভাগের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে তীব্র গরম। এছাড়া এ বছর দেশজুড়ে টানা তাপপ্রবাহের মধ্যে ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে যশোরে।

আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যমতে, সারা দেশে তাপপ্রবাহের ব্যাপ্তি, তীব্রতা ও সময়কাল বিবেচনায় গত ৭৬ বছরের মধ্যে চলতি এপ্রিল মাস নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এর আগে ১৯৮৯ সালের ২১ এপ্রিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল বগুড়ায়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল, যা বাংলাদেশের নথিভুক্ত ইতিহাসের সর্বোচ্চ। এ বছর সারা দেশেই তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। ৩০ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপরই চুয়াডাঙ্গায় ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়। চলমান তাপপ্রবাহে বাতাসে জলীয়বাষ্পের আধিক্য ছিল। এ কারণে মানুষের কষ্ট বেশি হয়েছে। প্রচণ্ড গরম সইতে না পেরে হিটস্ট্রোকে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

রংপুর আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যমতে, গত তিন বছরে এপ্রিল ও মে মাসে তাপমাত্রা বছরে এক ডিগ্রি করে বেড়েছে। চলতি বছরের এপ্রিলে লালমনিরহাটে ৩৮ দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। একই বছরে সর্বোচ্চ রংপুরে তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই এ বছরে রংপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। এর ফলে রংপুরে অসহ্য তাপমাত্রায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন।

তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিসংখ্যান

রংপুর বিভাগের আবহাওয়া দফতরের রেকর্ড অনুযায়ী, লালমনিরহাটে ২০২০ সালের এপ্রিলে ৩৫ দশমিক দুই ডিগ্রি এবং মে মাসে ৩৫ দশমিক দুই ডিগ্রি, ২০২১ সালের এপ্রিলে ৩৬ দশমিক চার ডিগ্রি এবং মে মাসে ৩৭ দশমিক পাঁচ ডিগ্রি, ২০২২ সালের এপ্রিলে ৩৬ দশমিক চার ডিগ্রি এবং মে মাসে ৩৫ দশমিক পাঁচ ডিগ্রি, ২০২৩ সালের এপ্রিলে ৩৯ দশমিক দুই ডিগ্রি এবং মে মাসে ৩৯ দশমিক আট ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। হিসাবে গতবার ছাড়া প্রতি বছর তাপমাত্রা বাড়ছে। এটিকে পরিবেশ ধ্বংসের বিরূপ প্রভাব বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, প্রতি বছর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে দেশের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। নদী, খাল ও বনাঞ্চল নষ্ট হওয়ায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে। পরিবেশের সুরক্ষার জন্য দেশীয় গাছ রোপণ এবং জলাধার রক্ষা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষজ্ঞদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে বন বিভাগের নীতি পুনর্বিবেচনা করা উচিত এবং পরিবেশবান্ধব পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

আবহাওয়াবিদের মতামত

রংপুর আবহাওয়া দফতরের প্রধান আবহাওয়াবিদ মো. মোস্তাফিজার রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ধারাবাহিকতা ঠিক থাকলে সমস্যা নেই। কিন্তু তাপমাত্রা অতিমাত্রায় বৃদ্ধি কিংবা কমলে সমস্যার সৃষ্টি করে। এপ্রিল মাসে কমপক্ষে ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি প্রয়োজন। এ বছর এপ্রিল মাসে ১ মিলিমিটারও বৃষ্টি হয়নি। আমরা ভূগর্ভস্থ পানি তুলছি। তবে দ্রুত নেমে যাচ্ছে পানির স্তর। জলাধার বাঁচাতে হবে। সেইসঙ্গে বেশি বেশি গাছ লাগাতে হবে। তাহলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাবে। এতে তাপমাত্রা কমে আসবে।’

বিশেষজ্ঞদের মতামত

নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বিধান চন্দ্র দাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের জলাশয় কমে গেছে; এটাই তাপমাত্রা বাড়ার কারণ। সভ্যতার নামে কংক্রিটের যুগে প্রবেশ করেছি। বিটুমিনের আস্তরণে তাপ বিকিরণ ঘটে। সবুজ ঘাসের মাঠে তাপ বিকিরণ ঘটে না। যত বেশি পিচ ও কংক্রিটের আস্তরণ পড়বে, ততই তাপ বৃদ্ধি পাবে।জলাশয় রক্ষা করতে হবে। নদী ও খালগুলো উদ্ধার করতে হবে। কলকারখানার চাপ কমিয়ে গাছ লাগাতে হবে। পরিবেশ রক্ষায় দরকার সবুজায়ন। পরিবেশ সবুজায়ন হলেই তাপমাত্রা থেকে রক্ষা পাবো আমরা।’

লালমনিরহাট সরকারি কলেজের শিক্ষক রায়হান শরীফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিশেষজ্ঞরা বারবার বলছেন ইউক্যালিপটাস গাছ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক। এই গাছ ফসলি জমির পাশে লাগালে ফসল নষ্ট হয় এবং পানি শোষণ করে। ফলে এই জাতীয় গাছ না লাগানোই ভালো। তবে অন্য গাছ লাগাতে হবে।’

ঝিমিয়ে পড়েছে বৃক্ষরোপণ আন্দোলন

তাপমাত্রা বৃদ্ধির হাত থেকে বাঁচার জন্য দেশীয় গাছ রোপণের পরামর্শ দেওয়া হলেও মাঠপর্যায়ে এই পরামর্শ টেকসই হচ্ছে না। বৃক্ষরোপণ আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়েছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন ও সরকারি প্রকল্পের কারণে পুরোনো গাছ কাটা হচ্ছে। নার্সারিগুলোতে বিদেশি ইউক্যালিপটাস গাছের আধিক্য দেখা যাচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

নদী-খাল মরে গেছে

লালমনিরহাট জেলার অনেক নদী ও খাল মরে গেছে। যেমন, স্বর্ণামতি, সিঙ্গিমারি, সাকওয়া, সানিয়াজান, সাতানোয়া, বুড়ি তিস্তা, সতী, রতনাই, ভাটেশ্বর, ধরলা, দেউলা, ত্রিমোহনী, চেনাকোনা, গিদারি, খাপরা, খানা, খাটুমারা, সাঙ্গলি, ছিনাকাটা নদীগুলোতে প্রাণ নেই বললেই চলে। বিলগুলো শুকিয়ে গেছে এবং বেশিরভাগ খালের কোনও অস্তিত্ব নেই। কুড়িগ্রাম ও রংপুরের অনেক নদীতেও পানি প্রবাহ নেই।

রংপুরের জগদীশ চন্দ্র এবং লালমনিরহাটের মোগলহাটের সিদ্দিক হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা কিশোর বয়সে যেসব নদী-খালে গোসল করতাম, নৌকা চালাতাম, সেসব এখন ধ্বংস হয়ে গেছে।’

পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর গাছ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান নিয়ে কাজ করা মাসুদ রানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইউক্যালিপটাস গাছ প্রতিদিন ১৮০ লিটার পানি শোষণ করে। এর উপকারী দিক খুব কম। এই গাছের কারণে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। মাটির উর্বরতা রক্ষায় বাসক, বাবলা, আগরের মতো ঔষধি গাছ রোপণ করা প্রয়োজন। মাটিতে ২৫ শতাংশ পানি, ২৫ শতাংশ বাতাস, ৪৫ শতাংশ খনিজ, ৫ শতাংশ জৈব পদার্থ থাকে। যেসব ঔষধি গাছের মাধ্যমে মাটির উর্বরতা রক্ষা হয়, সেগুলো রোপণে জোর দিতে হবে।’

যা বলছে বন বিভাগ

লালমনিরহাট বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইউক্যালিপটাস গাছের কিছু উপকারী দিক আছে। ওষুধ এবং বিদ্যুতের খুঁটি তৈরির কাজে লাগে। তবে লেখালেখির কারণে এই গাছের চারা উৎপাদন থেকে সরে এসেছি আমরা। সেইসঙ্গে গাছটি লাগাতে নিরুৎসাহিত করছি।’


👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Uncomm

Share
Published by
Uncomm

Recent Posts

That is the POCO X7 Professional Iron Man Version

POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…

6 months ago

New 50 Sequence Graphics Playing cards

- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…

6 months ago

Good Garments Definition, Working, Expertise & Functions

Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…

6 months ago

SparkFun Spooktacular – Information – SparkFun Electronics

Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…

6 months ago

PWMpot approximates a Dpot

Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…

6 months ago

Keysight Expands Novus Portfolio with Compact Automotive Software program Outlined Automobile Check Answer

Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…

6 months ago