Categories: Bangladesh News

নির্বাচন প্রভাবমুক্ত রাখা যাদের দায়িত্ব, তারাই প্রভাব বিস্তারে


মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আসিবুর রহমান আসিব খান। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খানের বড় ছেলে। তার প্রতিদ্বন্দ্বী পাভেলুর রহমান শফিক খান, যিনি শাজাহান খানের চাচাতো ভাই ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এই নির্বাচনি এলাকায় দুই প্রার্থী একে অন্যের বিরুদ্ধে ‘প্রভাব বিস্তারের’ অভিযোগ করেছেন।

আসিবুর রহমানের অভিযোগ, তার প্রতিদ্বন্দ্বী ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন এবং সরকারি কর্মকর্তাদের কাজে লাগিয়ে প্রভাব দেখাচ্ছেন। অন্যদিকে শফিন খানের অভিযোগ, শাজাহান খান তার ছেলের পক্ষে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো, প্রশাসনের ওপর চাপ প্রয়োগ, কালো টাকা ছড়ানোর কারণে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।  

পাল্টাপাল্টি এই অভিযোগ শুধু মাদারীপুরের নয়, প্রথম ধাপের ভোটে অনেক উপজেলায় প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ বিভিন্ন প্রার্থীর। কোথাও স্বজনদের জন্য মাঠে নেমেছেন মন্ত্রী-এমপি, কোথাও নিজের ‘মাই ম্যানের’ জন্য মাঠে নেমেছেন তারা; আবার কোথাও দলের কেন্দ্রীয় নেতারাই জড়িয়ে পড়েছেন প্রভাব বিস্তারে। 

যাদের দায়িত্ব প্রভাবমুক্ত রাখা, তারাই জড়িয়ে পড়েছেন প্রভাব বিস্তারে। আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকদের একজন হয়েও তিনি জড়িয়ে পড়েছেন নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনে। অভিযোগ উঠেছে, আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার বিরুদ্ধেও। আবার সাংগঠনিক বিষয় দেখার দায়িত্ব যে সাংগঠনিক সম্পাদকের, সেই পদে থাকা নেতা মির্জা আজমেরও নাম এসেছে এলাকার রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারে।

কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্বশীল দুজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই বিষয়গুলো নিয়ে দলের দায়িত্বশীল নেতারা কথা বলতে চান না। ‘কী বলে কার শত্রু হবেন’— এ নিয়ে শঙ্কায় থাকেন তারা। আবার অনেক ক্ষেত্রে এসব বিষয় দেখভালের জন্য যারা দায়িত্বে আছেন, তাদের তুলনায় দলের নির্দেশ অমান্যকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তারাও কথা বলতে চান না। গণমাধ্যমেও এই বিষয়ে তাদের মুখে কুলুপ আটার মতো অবস্থা। 

এ প্রতিবেদককে দলের এক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেই ফেলেন, ‘কথা বলে বিপদে পড়ে লাভ কী? তার চেয়ে চুপ থাকাই ভালো।’ কোনও কোনও ক্ষেত্রে মন্ত্রী-এমপিদের কাছেও অসহায় হয়ে পড়ছেন তারা।     

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বেশি অভিযোগ আসছে যেখানে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা নির্বাচন করছেন সেসব এলাকায়। প্রথম ধাপে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন ১৩ জন। ভাই, চাচাতো ভাই, খালাতো ভাই, জামাতা, ভাইয়ের ছেলে আছেন তালিকায়। মাদারীপুর সদর উপজেলার চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আসিবুর রহমান, সুবর্ণচর উপজেলার আতাহার ইশরাক চৌধুরী, সারিয়াকান্দি উপজেলার মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন, বেড়া উপজেলার চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. আব্দুল বাতেন ও আব্দুল কাদের, নাজিরপুর উপজেলার এস এম নূর ই আলম, সোনাতলা উপজেলার মিনহাদুজ্জামান, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সফিকুল ইসলাম ও আলী আফসার, কুষ্টিয়া সদরের আতাউর রহমান, ধনবাড়ী উপজেলার হারুন অর রশীদ, মাদারীপুর সদরের পাভেলুর রহমান এবং রামগড় উপজেলার চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বিশ্ব প্রদীপ কারবারী। উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও এমপি শাহাজান খানের পুত্র ও চাচাতো ভাই প্রার্থী হয়েছেন। প্রার্থী আছেন সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নানের পুত্র ও ছোট ভাই। সংসদ সদস্য একারামুল করিম চৌধুরী পুত্রও প্রার্থী আছেন। ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর ছোট ভাই ও ভাইয়ের ছেলে প্রার্থী আছেন। আরও প্রার্থী আছেন— সংসদ সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাকের খালাতো ভাই, শ ম রেজাউল করিমের ছোট ভাই, মাজহারুল ইসলামের চাচা ও চাচাতো ভাই, মাহবুব-উল আলম হানিফের চাচাতো ভাই এবং কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার জামাতা।

দলীয় সূত্র বলছে, মূলত ব্যাপক ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে এবং নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও অংশগ্রহণমূলক করতে দলীয় প্রার্থী না দেওয়ার কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ। একইসঙ্গে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা যাতে নির্বাচনের মাঠে না থাকেন, সেই ধরনের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছিল। তবে দু’একজন দলীয় নির্দেশ মেনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলেও বড় একটি অংশ মাঠ থেকে সরেনি। এ নিয়ে প্রথমে কঠোর অবস্থানে থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নমনীয় হয়েছে দলটি। তবে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু রাখতে যাতে কেউ যাতে প্রভাব বিস্তার না করে সেজন্য প্রতিনিয়ত দলীয় নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। একটি অংশগ্রহণমূলক ভোট আয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা করছে দলটি।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের অনেকে প্রত্যাহার করেছেন। আর যারা নির্বাচনের মাঠে আছেন তারাও কোনও ধরনের প্রভাব বিস্তার করবে না বলে আমাদের বিশ্বাস। সে অনুযায়ী কাজও করছি আমরা। একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে, দল হিসেবে আমরা সেটিই চাই।’

তবে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংসদ সদস্যদের অনেকের বিরুদ্ধে দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ আসছে। ভোটের মাঠে প্রকাশ্যে না থাকলেও বেশির ভাগ সংসদ সদস্য ভেতরে-ভেতরে প্রভাব বিস্তার করছেন। এমনকি তারা নিজেদের ‘অনুগত’ প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে নেতাকর্মীদের ফোনে নির্দেশনা দিচ্ছেন। এ ধরনের অভিযোগ তুলেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। এমপি-মন্ত্রী থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা তাদের আস্থাভাজনদের জয় নিশ্চিত করতে প্রভাব বিস্তার করছেন। বিভিন্ন উপজেলা থেকে এমন অভিযোগ আসছে।

কিশোরগঞ্জ-২ (পাকুন্দিয়া-কটিয়াদী) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সোহরাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. মকবুল হোসেন। অভিযোগে তিনি বলেছেন, সংসদ সদস্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একজন প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে ভোটারদের বিভিন্নভাবে প্রভাবিত ও চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছেন।

জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে এনেছেন পাঁচ প্রার্থী। তাদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা না মেনে মাদারগঞ্জে দলীয় প্রার্থী হিসেবে বর্তমান চেয়ারম্যান ওবায়দুর রহমান বেলালের নাম ঘোষণা করেন সংসদ সদস্য মির্জা আজম। এর প্রতিবাদ করলে বাকি পাঁচ প্রার্থীদের নানাভাবে হয়রানি ও ক্ষতিগ্রস্ত করেন মির্জা আজম এবং তার পরিবার ও অনুসারীরা।

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-২ (পাকুন্দিয়া-কটিয়াদী) আসনের এমপি অ্যাড. সোহরাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. মকবুল হোসেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগে তিনি দাবি করেন, স্থানীয় এমপি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এক প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে ভোটারদের বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করতে চাপ প্রয়োগ করছেন।

সংসদ সদস্য ফিরোজ আহম্মেদ স্বপনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে কলারোয়া উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. আমিনুল ইসলাম লাল্টু বলেছেন, সাতক্ষীরা-১ আসনের এমপি ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন নিয়ম ভঙ্গ করে আমার পক্ষের কর্মীদের হামলা-মামলার ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আলতাফ হোসেন লাল্টুর পক্ষাবলম্বন করে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বক্তব্য রেখে চলেছেন।

কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী নাজমুল হাছান বাছির ভূঁইয়া প্রধান নির্বাচন কমিশন বরাবর অভিযোগ জানিয়ে বলেছেন, সংসদ সদস্য আ হ ম মোস্তফা কামালের ব্যক্তিগত সহকারী সচিব রতন কুমার সিংহ আনারস মার্কা প্রার্থীর পক্ষে বিভিন্ন পথসভা ও জনসভায় অংশগ্রহণ করেছেন এবং নির্বাচন পরিপন্থী উচ্ছৃঙ্খল বক্তব্য প্রদান করেন।

রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা প্রার্থী মো. ফরিদ হাসান ওদুদ ইসিতে অভিযোগ করে বলেছেন, রেলমন্ত্রী জিল্লুর হাকিমের পুত্র আশিক মাহমুদ মিতুল হাকিম বিভিন্ন জনসভায় প্রকাশ্যে তাকে এবং তার কর্মী-সমর্থকদের হত্যার হুমকি প্রদান করছেন। যাতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। মন্ত্রীপুত্রকে প্রকাশ্য নির্বাচনি মাঠ থেকে প্রত্যাহার চেয়েছেন তিনি।

চাঁদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে মতলব উত্তর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী এম এ কুদ্দুস বলেছেন, আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া নির্বাচনি এলাকায় তার নিজ বাড়িতে অবস্থান করে মোহাম্মদ মানিকের (ঘোড়া প্রতীক) পক্ষ নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে অর্থ লেনদেন করছেন।

বিষয়গুলো নিয়ে দলের দু’জন দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ নিয়ে দলের কেন্দ্র ক্ষুব্ধ। বিশেষ করে যারা কেন্দ্রীয় নেতা, তাদের নাম আসাতে দলের ভাবমূর্তিও প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। শুরু থেকেই নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখতে কাজ করছে আওয়ামী লীগ। তাতে কয়েকটি জায়গায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল আনতে পারেনি দলটি, সেটিও স্বীকার করেছেন তারা। এরমধ্যে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের নির্বাচনবিমুখ করতে না পারার বিষয়টিও তারা সামনে এনেছেন। তবে, তৃণমূলে এই নির্দেশ অমান্য ভালো চোখে দেখছে না দল। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আপাত কঠিন সিদ্ধান্ত না নিলেও ভবিষ্যতের জন্য একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে দলটি। মন্ত্রী-এমপি মনোনয়ন থেকে শুরু করে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে এগুলো বিবেচনায় নেবে দল।

এ সম্পর্কে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যারা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করবে তাদের কোনও না কোনওভাবে শাস্তির মুখোমুখি হতেই হবে। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৭৩ জন এমপি বাদ পড়েছেন, এটা কী একরকম শাস্তি নয়? মন্ত্রিপরিষদে ২৫ জন নেই। সময়মতো শাস্তি হবে। এটা একটা উদাহরণ।

এদিকে, নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘন হলে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নেবে। যে অভিযোগ আসছে সেগুলো তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ডিসি, এসপি ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে রিপোর্ট এনে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের আত্মীয়স্বজন প্রার্থী থাকতে পারেন, কিন্তু তারা কোনও অবৈধ প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন না। সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী কোনও অবৈধ চাপ দিলে, তা আমলে না নেওয়ার জন্য মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রাশেদা সুলতানা বলেছেন, প্রভাবশালীরা নির্বাচনে কোনও ধরনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করলে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি এমপি-মন্ত্রী যেই হোন না কেন, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।




👇Observe extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com

Uncomm

Share
Published by
Uncomm

Recent Posts

That is the POCO X7 Professional Iron Man Version

POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…

9 months ago

New 50 Sequence Graphics Playing cards

- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…

9 months ago

Good Garments Definition, Working, Expertise & Functions

Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…

9 months ago

SparkFun Spooktacular – Information – SparkFun Electronics

Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…

9 months ago

PWMpot approximates a Dpot

Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…

9 months ago

Keysight Expands Novus Portfolio with Compact Automotive Software program Outlined Automobile Check Answer

Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…

9 months ago