Categories: Bangladesh News

নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জাও করে না: প্রধানমন্ত্রী


কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগান দেওয়াকে অত্যন্ত দুঃখজনক আখ্যায়িত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকার বাহিনী কীভাবে দেশে অত্যাচার চালিয়েছে তা তারা জানে না। এসব অত্যাচার, রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়ে থাকা এরা দেখেনি। তাই নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জাবোধ হয়নি।’

আজ সোমবার (১৫ জুলাই) সকালে নিজের কার্যালয়ের (পিএমও) শাপলা হলে মন্ত্রণালয়/বিভাগগুলোর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ‘বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর’ ও ‘শুদ্ধাচার পুরস্কার’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে সরকারি কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি, সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারি কর্ম সম্পাদন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির আওতায় বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি প্রবর্তন করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই হচ্ছে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে গেছেন, লাখো মা-বোন নির্যাতিতা, তাদের এই অবদান ভুললে চলবে না, এটা মনে রাখতে হবে। পাকিস্তানি হানাদার ও রাজাকার বাহিনী যেভাবে এ দেশে অত্যাচার করেছে, সেখানে আমার খুব দুঃখ লাগে, গতকাল (রবিবার) যখন শুনি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও বলে তারা রাজাকার।

তিনি বলেন, তারা কী জানে ‘৭১ সালের ২৫ মার্চ কী ঘটেছিল সেখানে? সেখানে ৩শ’ মেয়েকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এই দেশীয় দোসররা। ৪০ জন মেয়েকে পাকিস্তানি ক্যাম্পে ধরে নিয়ে আটকে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করেছিল। তারা সেখানে কী অবস্থায় ছিল? অনেক মেয়ে শাড়ি বা ওড়না দিয়ে ফাঁসি দিয়েছিল, তাদের কাপড় পরতে দেওয়া হতো না। একটা পেটিকোট পরিয়ে বসিয়ে রাখতো। দিনের পর দিন তাদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালাতো।

সরকারপ্রধান বলেন, যখন তাদের উদ্ধার করা হয়, মিত্র শক্তির এক ভারতীয় শিখ সৈন্য নিজের মাথার পাগড়ি খুলে এক মেয়ের গায়ে পরিয়ে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এটা কেবল একটা ঘটনা, এ রকম বহু ঘটনা রয়েছে।

শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদান তুলে ধরে বলেন, আমাদের মেয়েরা বসে থাকতো না। তারাও কিন্তু কাজ করতো। পিরোজপুরে এক মেয়ে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর রান্নার কাজ করতো এবং রাতে নদী সাঁতরে পার হয়ে চিতলমারী গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে গিয়ে হানাদারদের খবর পৌঁছে দিতো। ধরা পড়ার পরে দুটো গাড়ির সঙ্গে তার দুই পা বেঁধে টেনেহিঁচড়ে খণ্ড-বিখণ্ড করে ফেলা হয়। এসব অত্যাচার, রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়ে থাকা এরা দেখেনি। তাই নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জা হয় না।

তিনি বলেন, হ্যাঁ আমাদের গেরিলা যুদ্ধ হয়েছে। এখানে কেউ শান্তি কমিটিতে ছিল, কিন্তু মানুষের ক্ষতি করেনি। কিন্তু যে বাহিনীগুলো তারা (পাকিস্তানি হানাদাররা) তৈরি করেছিল তাদের হাতে অস্ত্র দিয়েছিল এবং তাদের দিয়ে মানুষের ক্ষতি করতো, অত্যাচার, লুটপাট ও গণহত্যা চালাতো। তাদের বিরুদ্ধেই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি, তাদের বিচার করে অনেকের ফাঁসিও দিয়েছি। এর মাধ্যমে তাদের দ্বারা যারা নির্যাতিত তারা ন্যায়বিচার পেয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, যে মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গর্বের, জাতির পিতার একটি ডাকে এই দেশের মানুষ ঘর-বাড়ি পরিবার-পরিজন সবকিছু ছেড়ে দিয়ে রণক্ষেত্রে চলে গেছে। জীবনের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধ করে বিজয় এনে দিয়েছে। আর যারা ওই বাহিনীতে ছিল (রাজাকার-আলবদর-আলশামস), এই দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে। সেটা তো ভুলে গেলে চলবে না।

তিনি বলেন, আমাদের সেই শিক্ষা নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে। তাহলেই এ দেশ এগিয়ে যাবে এবং সেটা যে বাস্তবতা তার প্রমাণ ‘৭৫-এর পর যারা ক্ষমতায় ছিল ২১ বছর এবং পরে আরও প্রায় ৯ বছর, তারা দেশকে কিছুই দিতে পারেনি। কিন্তু আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করি এবং আমরা ভুক্তভোগীরা যখন ক্ষমতায় এসেছি, মাত্র ১৫ বছরে আজ বদলে গেছে বাংলাদেশ। বিশ্বে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত বাংলাদেশ। সেই দরদটুকু থাকতে হবে। যাই হোক এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।

সরকারপ্রধান বলেন, তার প্রথমবার সরকার গঠনের পর থেকেই লক্ষ্য ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে বিশ্বে স্বাধীন জাতি হিসেবে বাংলাদেশ যে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছিল এবং ‘৭৫-এ এই জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর যে মর্যাদা  ভূলুণ্ঠিত হয়ে যায় তাকে আবার সগৌরবে ফিরিয়ে আনা। মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা আর দেশকে একটা মর্যাদার আসনে নিয়ে আসা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা আমাদের যে সংবিধান দিয়েছিলেন সেই সংবিধানের ২১-এর ২ অনুচ্ছেদের আলোকে আমরা সেবামুখী জনপ্রশাসন গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই কর্ম সম্পাদন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি আওয়ামী লীগ সরকারই গ্রহণ করে। কারণ, প্রশাসনের ওপর থেকে নিম্নস্তর পর্যন্ত যদি একটা জবাবদিহি না থাকে, কীভাবে কার্য সম্পাদন বাস্তবায়ন হবে, সে সম্পর্কে যদি ব্যবস্থা না নিই তাহলে সব কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয় না। তাই দ্বিতীয়বার সরকারের আসার পর এই পদ্ধতি নিই এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চালু করি। আর এরই ধারাবাহিকতায় আজ ১১তম বারের মতো ২০২৪-২৫ সালের বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো।

তিনি বলেন, আজ আপনারা যারা স্বাক্ষর করলেন সেসব সচিব আবার নিজের মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিভাগ আছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সেগুলোর সঙ্গে আপনাদেরও এই চুক্তি সম্পাদন করে প্রত্যেকের ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে সেগুলো যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে কিনা নিশ্চয়ই সে ব্যাপারে আপনাদের নজর রাখতে হবে। আর সেটা আপনারা করবেন বলে আমি আশা করি।

তিনি বলেন, স্ব-স্ব মন্ত্রণালয়ে একেবারে নিচের দিক পর্যন্ত আপনাদের নজরদারি বাড়াতে হবে। কারণ, আমাদের ওপর দিকটা ভালো আছে, কিন্তু নিচের দিকে কিছু কিছু সমস্যা হয়। কাজেই সেগুলো যাতে না হয় সবার মাঝে সেই চেতনা গড়ে তুলতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিবরা সম্পাদনকৃত এপিএ প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।

২০২২-২৩ অর্থবছরে এপিএ বাস্তবায়নে সাফল্য প্রদর্শনের স্বীকৃতি স্বরূপ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে পুরস্কৃত করেন। সার্বিক মূল্যায়নে বিদ্যুৎ বিভাগ শীর্ষস্থান লাভ করে।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শুদ্ধাচার চর্চায় উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রবর্তিত শুদ্ধাচার পুরস্কার ২০২৩-২৪ লাভ করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনা বিষয়ক একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন স্বাগত বক্তৃতা করেন। এপিএ কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনায় শীর্ষস্থান অর্জনকারী বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান এবং শুদ্ধাচার পুরস্কার লাভকারী শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাহবুব হোসেন নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তথ্যমতে, বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি (এপিএ) মূলত বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি সমঝোতা দলিল। সংশ্লিষ্ট অর্থবছর সমাপ্ত হওয়ার পর ওই বছরের চুক্তিতে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাসমূহের বিপরীতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের প্রকৃত অর্জন মূল্যায়ন করা হয়। কর্ম সম্পাদন ব্যবস্থার এই পদ্ধতিটি পরবর্তীতে দফতর, সংস্থা, বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারিত হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ২৬ হাজার অফিস এপিএ বাস্তবায়ন করছে।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে আবারও কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই যেখানেই কোনও অনিয়ম দেখা দেবে তার বিরুদ্ধে আপনারা যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।

তিনি বলেন, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেছি। আর এই দুর্নীতি ধরতে গেলে আমাদের সরকারের ওপর দায়টা চাপিয়ে দেওয়া হয়। আমি এটা বিশ্বাস করি না। দুর্নীতি খুব কম লোকই করে। কিন্তু তার বদনাম হয় খুব বেশি।

সরকারপ্রধান বলেন, যারাই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারের কী বদনাম হবে না হবে সেটা আমি পাত্তা দিই না। কোনোমতেই আমি দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবো না।

প্রধানমন্ত্রী এই সময় প্রকল্প বাস্তবায়নে যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করলে দ্রুত সম্পন্ন হবে এবং অর্থনীতিতে অবদান রাখবে এবং মানুষের উপকার হবে, সে ধরনের প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং অসমাপ্ত প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নেরও আহ্বান জানান। পাশাপাশি অপচয় রোধ, দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং কৃচ্ছ্র সাধনেরও আহ্বান জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিজেদের আত্মবিশ্বাস ও বিবেক, বিবেচনা নিয়েই দায়িত্ব পালন করতে হবে।

তিনি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে সবাইকে নজরদারি রাখার পাশাপাশি চক্রান্ত করে কেউ যেন খাদ্যের দাম বাড়াতে না পারে সেদিকে সজাগ থাকার জন্যও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে পদক্ষেপ নিতে বলেন তিনি। সূত্র: বাসস।


👇Comply with extra 👇
👉 bdphone.com
👉 ultraactivation.com
👉 trainingreferral.com
👉 shaplafood.com
👉 bangladeshi.assist
👉 www.forexdhaka.com
👉 uncommunication.com
👉 ultra-sim.com
👉 forexdhaka.com
👉 ultrafxfund.com
👉 ultractivation.com
👉 bdphoneonline.com

Uncomm

Share
Published by
Uncomm

Recent Posts

That is the POCO X7 Professional Iron Man Version

POCO continues to make one of the best funds telephones, and the producer is doing…

6 months ago

New 50 Sequence Graphics Playing cards

- Commercial - Designed for players and creators alike, the ROG Astral sequence combines excellent…

6 months ago

Good Garments Definition, Working, Expertise & Functions

Good garments, also referred to as e-textiles or wearable expertise, are clothes embedded with sensors,…

6 months ago

SparkFun Spooktacular – Information – SparkFun Electronics

Completely satisfied Halloween! Have fun with us be studying about a number of spooky science…

6 months ago

PWMpot approximates a Dpot

Digital potentiometers (“Dpots”) are a various and helpful class of digital/analog elements with as much…

6 months ago

Keysight Expands Novus Portfolio with Compact Automotive Software program Outlined Automobile Check Answer

Keysight Applied sciences pronounces the enlargement of its Novus portfolio with the Novus mini automotive,…

6 months ago